ক্লান্ত দুপুর!
ভেতরে হাতুড়ি দিয়ে দুরমুশ পেটানোর শব্দ আর আমার ভীরু পায়ের এক একটা কদম।
গন্তব্য শিবপুর কলেজ গেইট।
যেখানে দাঁড়িয়ে তুমি আমারই অপেক্ষায়।
বাসস্টপে অগণিত মানুষ যেন থেকেও নেই।
শুধু তুমি আর আমি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আমাদের প্রথম দৃষ্টি ।
সেই প্রথম তোমাকে সামনাসামনি দেখা।
কনে দেখা আলোর ন্যায় বুক জুড়ে শুধুই লজ্জা।
প্রচন্ড খিদে পেটে তুমি জানতে চেয়েছিলে- খিদে পেয়েছে তো লক্ষ্মী!
এদিকে কোন রেস্টুরেন্ট আছে কি?
পরিচিত শহর।
পাছে কেউ দেখে ফেলে এই ভয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন তোমায় শিবপুর থেকে মনোহরদীতে।
পাশাপাশি চেয়ারে বসেছিলাম দুজন।
তোমার অপলক দৃষ্টি আমার দিকে।
যে দৃষ্টির কাছে লজ্জায় রাঙা হয়ে গিয়েছিলাম আমি।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। তা সত্ত্বেও ঘাম জমেছিল আমার নাকে মুক্তোদানার ন্যায়।
তোমার শব্দ করে হাসা আমায় ঘায়েল করলো পুনঃবার।
মন বলছিলো- এ যে আমার স্বপ্নের পুরুষ!
তোমাকে এবং তোমার কথোপকথন গুলোকে সেদিন খুব করে মিলিয়ে দেখছিলাম আমি।
মনে হচ্ছিল সবটাই একটা রামধনুর মতো।
হাজার রঙের ক্যানভাসে আঁকা আমার কল্পনা।
নিরব থেকে তোমার মুখপানে তাকিয়ে ছিলেম পলকহীন দৃষ্টিতে। ভাবছিলাম,
এই তুমিটার সাথেই তো কতো রাত কেটেছে আমার না ঘুমিয়ে, জেগে জেগে,
স্বপ্ন বুনে।
কি ছিলো সেদিন বলো তো!
কলেজ গেইটের ডান দিকের সুরু রাস্তা ধরে হেঁটে আসা আলোয় কেনো লুকিয়ে ছিলো আমার এমন সর্বনাশ!
সেদিন তোমার দেওয়া প্রথম উপহার ‘স্মৃতির ডায়েরী’র প্রচ্ছদ পেরিয়ে তোমার হাতে আমার হাত রাখা।
চশমার কাঁচের পিছনে তোমার দুটো গভীর চোখ আর টেবিলে রাখা কফির কাপ দুটোর অস্পষ্ট ছাপ,
সব, সব আজও বুকে রয়ে গেছে ঠিক সেদিনের মতো। আমার স্বপ্নের পুরুষ!
কিছু ভুল মাঝে মাঝে দুরত্ব টেনে দেয় বটে কিন্তু কল্পনার ক্যানভাসে তার ছবিখানা রয়ে যায় চিরটা কাল।
অনুভবে হলেও শক্ত করে ধরি হাত।
দিগন্ত পেরিয়ে আসে বিকেলের রোদ্দুর। মনে পড়ে যায় আমার তোমার কথা ভিষণ,
ভিষণ ভাবে।
বাতাসের কানে কানে তখন খবর পাঠাই-
‘ হে আমার স্বপ্নের পুরুষ! হে প্রিয় কবি!
শুনতে কি পাচ্ছো তুমি!
আজও আমি তোমাকেই ভালোবাসি।’
চলবে….