স্বামীর ভালোবাসা part : 8

0
4918

স্বামীর ভালোবাসা part : 8

লেখিকা সুরিয়া মিম

!
তবু ও বিছানায় শুয়ে ডুকরে ডুকরে কান্নাকাটি করে,
!
কি হলো বাবু?
তোমার কি হয়েছে হুমমম?
তুমি তো আগে এমন ছিলে না তো কি হয়েছে তোমার?
!
কিছুনা,
!
কিছুনা বললেই হলো?
আমি জানি,
!
কি?
!
মিশকা তোমাকে যাওয়ার আগে যা নয় তা বলে অপমান করে গেছে,
তাই তোমার মন খারাপ তাই তো?
তাতে কি হয়েছে?
আমি তো আছি তোমার ইশা,
তোমাকে এতো আদর করবো যে তুমি মিশকা কে ভুলেই যাবে,
!
বেশি বকবক করোনা না তো আমি কি বলেছি আমি ওকে নিয়ে ভাবছি?
!
না তবে তুমি কাঁদছ কেন?
!
জানিনা,
!
আমি জানি,
!
কি?
!
আব্বু আম্মুর কথা ভাবছ তাই তো?
ভেবে লাভ কি বলো?
…..
তাড়া তো স্বেচ্ছায় আমাদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করেছে আমরা তো করিনি তাই না?
!
ওহহহ এতো জ্ঞান দিয়ো না তো আমি অফিসে যাবো,
তারপর ইমান অফিসে চলে যায়,
!
ওদিকে মিশকা ওর দিন গুলো হেসে খেলে পার করে দেয় আজ নয় মাস মিশকা ওর শশুড় বাড়ি তে এসেছে,
এক পুত্র ও কন্যা সন্তানের জননী হয়েছে,
!
মিস্টার ইফতি চেয়েছিল তার নাতিনাতনির হওয়ার খুশি তে ধুমধামিয়ে গ্রান্ড পার্টি করতে,
…….
কিন্তু,
ইমান ঝামেলা করবে ভেবে অল্পসল্প তে অনুষ্ঠান সেরে নেয়,
!
মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ইফতি তো বৌ-মা বলতে পাগল,
সবসময় মিশকার পছন্দের খেয়াল রাখা হয়,
!
প্রতিদিন সময় করে মিসেস ইফতি খান মিশকা কে রসগোল্লা খাওয়ায় কারন তার বিশ্বাস তাহলে তার নাতিপুতি রসগোল্লার মতো রসালে ও টুসটুসে হবে,
!
আর এই ব্যাপার টা মিস্টার ইফতি খান কে খুবি হাসায়,
তবু ও সে মিশকার জন্যে প্রতিদিন চকলেট নিয়ে আসে,
!
আর ইমা তো আছেই মিশকার তেরো টা থেকে বারোটা বাজানো জন্যে,
মেয়ে টা ওর শশুড় বাড়ি থেকে ও মিশকা কে এটা ওটা বলে জ্বালিয়ে খায়,
!
এই তো মিশকা এখন কানে হেড ফোন দিয়ে গান শুনে হালকা পাতলা নাচানাচি করছে,
…..
তখনি মিস্টার ইফতি খান কে ইমা ফোন করে বলে,
!
আব্বু গিয়ে দেখো তোমার বৌ-মা কি করছে?
!
হ্যা যাচ্ছি,
!
মেয়ের ফোন পেয়ে ইফতি খান ও মিসেস ইফতি খান মিশকার রুমে গিয়ে দেখে,
!
মেয়ে তার কানে হেড ফোন দিয়ে হালকা পাতলা নাচানাচি করছে?
!
তখন হঠাৎ আব্বু আম্মুর সাথে চোখাচোখি হতেই লজ্জা পেয়ে যায় আমি,
!
তখন তারা ওদের আদর করে বলে,
!
মা ডক্টর তোকে হাসিখুশি থাকতে বলেছে,
তা বলে কি একাএকা থাকবি এই বুড়োবুড়ি দুটো কে নিয়ে থাকবি না হুমম,
!
এমন টা নয় আব্বু,
!
তাহলে কেমন টা?
আমাদের ছেলেটার জন্যে মা বিশ্বাস কর আমার পরিবারের কোন পুরুষ এমন না,
!
আব্বু তুমি পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটছ কেন হুমম?
…..
তোমার মেয়ে কি তোমায় কিছু বলেছে হুমম?
!
না তবু ও মনে হয় কেন তোর হা-পা ধরে ওই শয়তান টাকে বিয়ে করতে রাজি করালাম?
!
আব্বু তুমি কেঁদো না প্লিজ,
…..
আমার জন্যে তোমরা তোমার ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছ,
মা তার একমাত্র ছেলে কে বুকে জড়িয়ে আদর করতে পারছেনা শুধু মাএ আমার জন্যে,
!
তোর জন্যে কেন পাগলি?
ওর মতো ছেলে কে বুকে জড়িয়ে আদর করার থেকে তোর মতো মেয়ের মা হয়ে থাকতে বেশি পছন্দ করবো,
!
আমার মেয়ের মা শুধু আমিই,
!
মাম্মা?
!
আমার মেয়ে কে অনেক ভরসা করে আপনার ছেলের হাতে তুলে দিয়ে ছিলাম,
…..
কিন্তু, আপনার ছেলে ছিঃ,
আমার মেয়ে আপনার গুনোধর ছেলে কে বিয়ে করতে চায় নি,
আমরাই,
!
তোমরা কেঁদো না প্লিজ মাম্মা পাপা,
ডক্টর আমাকে স্ট্রেস ফ্রি থাকতে বলেছে,
তোমার বোধ হয় সেটা চাও না,
তাই না?
!
তখন পাপা-মাম্মা আমাকে জড়িয়ে আদর করতে থাকে,
!
রাতে মিসেস ইফতি মিশকাকে ঘুম পারিয়ে ওকে ওনার বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকেন,
!
তখনি মিশকার ফোনে টুংটুং করে ম্যাসেজ আসে,
ম্যাসেজ সিন করে মিসেস ইফতি দেখেন,
সেই ম্যাসেজ এ লেখা,
!
লোকেরা কি দুটো বিয়ে করে না?
করে তো?
তাদের সাথে সংসার ও করে একি বাড়ি তে না হোক আলাদা আলাদা বাড়ি তে?
সমস্যা কি ছিল যে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে এলে?
…….
তুমি চাইলে আমি তোমাকে নতুন বাড়ি গাড়ি কিনে দিতাম দুজনের সাথে আলাদা সংসার করতাম,
তোমাদের কারো মুখ দেখাদেখি হতো না,
তোমরা যে যার মতো সুখে সংসার করতে আমাকে নিয়ে,
সমস্যা কি ছিল?
আমি কি তোমার কোনো জিনিসের অভাব রেখেছি?
রাখিনি তো তাহলে তুমি এমন টা কেন করলে?
ভালোভাবে বলছি আমার কাছে ফিরে এসো,
প্রয়োজনে আমি তোমাকে নতুন সংসার গুছিয়ে দিবো,
আর আগের মতো ভালোবাসার চেষ্টা করবো,
!
ছেলের এই কুরুচিপূর্ণ ম্যাসেজ পরে মিসেস ইফতির চোখেরজল চলে আসে,
…..
আর উনি মিশকার সুখের কথা ভেবে ওর কপালে চুমু খেয়ে,
ওই ম্যাসেজ টা ডিলিট করে দেয়,
!
আর পরেরদিন সকালে ছেলের অফিসে গিয়ে ছেলের গালে দুটো চড় বসিয়ে আসে,
!
জীবন টা কতো বদলে গেছে তাই না?
বিয়ের পর আমাদের প্রথম বৈশাখে তুমি আমাকে মেলা থেকে নিজের পছন্দের চুড়ি কিনে দিয়েছিলে,
আজ ও দিবে কিন্তু হাত টা হবে অন্য কারো,
ভালোবাসা টাও হবে অন্য কারো,
!
ইশা?
!
হ্যা বাবু?
!
তাড়াতাড়ি এই সাড়ি টা পরে আসো তো,
!
বাবু আমি তো সাড়ি পড়তে পারিনা,
!
আমি পরিয়ে দিবো?
!
যাহহহহ, দুষ্টু,
!
দেই না বেবি প্লিজ?
!
আমি কখনো পড়িনি সাড়ি,
কিন্তু আজ পরবো শুধু মাএ তোমার জন্যে.
!
আই লাভ ইউ বেবি,
!
আই লাভ ইউ টু বাবু,
!
এই নয় মাসে ইমান মিশকা কে ওর মাথা থেকে পুরোপুরিভাবে ঝেড়ে ফেলেছে,
কিন্তু,
মাঝেমধ্যে ওর সাথে কাটানো মুহূর্ত ইমান কে কাঁদিয়ে ছাড়ে,
তখন ও লালসাময় হয়ে ওকে আজেবাজে ম্যাসেজ লিখে পাঠায়,
এবং তার উওরে মিস্টার অ্যান্ড মিসেসস ইফতি গিয়ে ওকে যা নয় তাই বলে অপমান করে আসে,
!
এই তুই আবারো কাঁদছিস?
!
কোই না তো?
!
চল,
!
কোথায়?
!
সারপ্রাইজ তাই এই সাড়ি টা পরে আয় প্লিজ,
!
রুহান সবকিছুর একটা লিমিট থাকে হুমম,
!
আমার কোনো লিমিট নেই তাই ভালো করে এই সাড়ি টা পরে আয় প্লিজ,
!
ওকে বাবা সাড়ি পরে আসছি,
!
তারপর মিশকা সাড়ি পরে হালকা সাজুগুজু করে নিচে যায়,
তখন মিসেস ইফতি ওকে বলেন,
!
মা কতদিন তো বাড়ি তে ছিলি যা গিয়ে রুহানের সাথে ঘুরে আয়,
!
তা নয় বুঝলাম কিন্তু?
!
ওদের আমরা দেখে নিবো মা,
!
আচ্ছা মা ঠিক আছে,
!
তারপর ওরা মেলায় চলে যায়,
!
বেবি তোমার হাত টা দেখি?
!
দেখ,
!
এই চুড়ি গুলো পরে দেখো তোমাকে অনেক সুন্দর লাগবে,
!
হোয়াট আমি এই সস্তার কাঁচের চুড়ি পরবো?
আমাদের বিয়ের পরে প্রথম বৈশাখে তুমি এই সস্তার চুড়ি গুলো আমাকে উপহার দিতে চাও?
!
আমি তোমাকে এগুলো ভালোবেসে কিনে দিতে চাই সোনা,
!
চাইনা আমার তোমার ওমন সস্তার ভালোবাসা,
!
ইশার এই কথা গুলো ইমানের বুকে কাটাঁ মতো গিয়ে বিধে,
এবং ওর চোখ জোড়া সাথে সাথে ছলছল করে ওঠে,
!
আর ও কষ্ট পেয়ে উল্টোদিকে ফিরে হাটতে শুরু করে,
হঠাৎ করে তখনি ওর কারো সাথে ধাক্কা লেগে যায়,
!
ধাক্কা খেয়ে রেগে গিয়ে বকা দিতে সামনে তাকিয়ে দেখে,
মিশকা দুহাত ভর্তি রেশমি চুড়ি পরে ওকে রুহান ভেবে বলছে,
!
আমার এই চুড়ি গুলো অনেক পছন্দ হয়েছে রুহান,
আমি আজকে এতো এতো হ্যাপি এই চুড়ি গুলো পেয়ে,
পাক্কা এগারো মাস পর আমাকে কেউ দুহাত ভরে চুড়ি কিনে দিলো,
তাই আমি আমার খুশি কাও কে বলে বোঝাতে পারবোনা হুমম,
!
হঠাৎ করে নয় মাস পরে চেনা মুখ টাকে দেখে থমকে যায় ইমান,
আর ও স্পিচ লেস হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,
আরতখনি রুহান মিশকা কে ওর সামনে থেকে নিয়ে চলে যায়,
!
রাতে বাসায় ফিরে পুরনো স্মৃতি মনে করে কেঁদে ফেলে ইমান,
তখন ও ভাবে,
!
কেন ও রুহানের সাথে মেলায় গেছে?
কে হয় রুহান ওর?
ওকে চুড়ি কিনে দিতে রুহান কে?
…….
তারপর ও হন্তদন্ত হয়ে রুমে মধ্যে মিশকার ব্যবহৃত জিনিশ পএ খুঁজতে শুরু করে,
কিন্তু,
পুরো বাড়ি খুজে মিশকার একটা চুল ও খুজে পায়না,
!
পরেরদিন সকালে মিশকা ইউনিভারসিটি তে যেতেই সব শয়তান গুলো ওকে চেপে ধরে বলে,
!
বেবি গেট রেডি ফর ড্যান্স,
!
হোয়াট আর ইউ সিরিয়াস গাইজ?
আই মিন আমি নতুন মাম্মা হয়েছি ওয়ান মান্থ আর আমি স্টেজ পারফর্মেন্স করবো?
!
হ্যা করবি,
ডক্টর তো বলেই দিয়েছে ইউ আর অ্যাবসোলুটলি ওক্কে বেবি,
যে চিপ গেস্ট আসছে তাকে দেখাতে হবে না?
!
ইউ আর দ্যা মোস্ট স্ট্রংগেস্ট উইমেন ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড,
!
আমি জানি জানিনা তোরা কার কথা বলছিস,
বাট আই এম ডুয়িং ইট,
!
লাভ ইউ জাননননন,
!
লাভ ইউ জিসা,
!
!
!
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে