স্বামীর ভালোবাসা part : 6

0
4839

স্বামীর ভালোবাসা part : 6

লেখিকা সুরিয়া মিম

!
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে ইমানের কথা শুনে ময়না পাখি ওদের মুখ চেপে হাসতে থাকে,
!
হা হা হা,
!
তখন ইশা এসে ওদের বলে,
!
তোমরা এখানে কি করছ হুমম?
!
ম্যাম সাহেবের জন্যে পানি লইয়া আসছি,
!
ওহহ,
ওক্কে আমাকে দাও,
অ্যান্ড বোধ আর গেট আউট ফরম হেয়ার,
!
আচ্ছা ম্যাম,
!
তারপর ওরা ওখান থেকে চলে যায়,
!
এউক্কা কথা ক দেখি?
!
কি?
!
আমাগো বৌ রানী ও লেখাপড়া করা মাইয়া ইনি ও লেখাপড়া মাইয়া কিন্তু কোনো দিক দিয়াই হে বৌ রানীর পায়ের ধরে কাছে ও যায় না,
!
একদিনে একটা হক কতা কইছিস তুই,
!
এই যে কথার দোকান কি বলছ তোমরা?
!
কিছুনা বৌ রানী,
আইজ কে তুমি ঘোমটা দিলে না?
!
না গো নাহহহহ,
ঘোমটা দিলে নতুন বৌ বলে মনে হয়,
!
ও তাই,
হা হা হা হা,
!
ময়না তুই হেটকাও ক্যান আমাগো বৌ রানী যা সুন্দরী এখনো দশ টা বিয়া কইরা বিশটা বচ্চার মা হইতে পারবো,
!
ময়না পাখির কথা ইমানের কাছে যেতেই ও উকি মেরে দেখে,
মিশকা ময়না পাখি কে বলছে,
!
ইসসস,
কি যে বলো না তোমরা?
এবার বিয়ে করে লাইফ টাই হেল হয়ে গেছে আমার,
আর তোমরা আবারো আমার বিয়ে দিতে চাও?
!
হ দিমুনি তোমার বিয়া,
!
হা হা হা কার সাথে দিবি?
!
সাহেবের বন্ধু আছে না আরিয়ান সাহেব হের লগে দিবো,
বড্ড ভালা মানুষ আরিয়ান সাহেব আমনারে পুরো রানী বানাইয়া রাখবে,
!
কি এতো খুজে শেষমেশ ওই থাককক আর কইলাম না,
!
তখনি হঠাৎ আরিয়ান এসে বলে,
!
মে আই কাম ইন মিশকা?
!
ওহহহ আরিয়ান,
ইয়েস অফ কোরস,
!
কেমন আছো তুমি?
!
আল্লাহ যেমন রেখেছি তেমন আছি,
তা আজ হঠাৎ এখানে?
পথ ভুলে ঢুকে পরেছেন বুঝি?
!
না একচুয়ালি কিছু অফিসের অফিসিয়ালি কাজ ছিল,
তাই ইমানের কাছে এসেছি,
!
তাহলে তার কাছে জান আমার কাছে দাঁড়িয়ে বকবক করছেন কেন?
!
বকবক করবো বলে,
হা হা হা,
!
কি আশ্চর্য?
তুমি না আমার সাথে কথা বলো না আমার মুখ দেখ আর সেই তুমিই আমারি বন্ধুর সাথে হেসে খেলে কথা বলছ?
!
কি হলো?
কি ভাবছ বেবি?
আরিয়ান এসেছে চলো চলো,
!
তখন ইমান ইশার হাত ধরে ওকে নিয়ে নিচে চলে যায়,
আর আরিয়ানের সাথে সোফায় বসে অফিসের অফিসিয়াল কাজের কথাবার্তা বলতে থাকে,
!
কথা বলতে বলতে ইমান হঠাৎ খেয়াল করে দেখে,
!
আরিয়ান মিশকা কে ঘুরে ঘুরে দেখছে আর বাকা ঠোঁটে মৃদু হাসি দিচ্ছে,
!
এসব দেখে মেজাজ খারাপ হচ্ছে ওর,
না ও সইতে পারছে না কিছু কইতে পারছে,
!
তখনি বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে,
তাই ময়না গিয়ে দরজা খুলে,
!
সাথে সাথে রুহান পা টিপে টিপে কিচেনে গিয়ে মিশকার চোখ চেপে ধরে,
!
তখন মিশকা ওকে বলে,
!
বেগুন ভাজি চড়চড়ি ছাড় আমাকে ছাড়,
!
তুই খালি আমাকে এটা বলো কেন হুমমম?
!
গাধা জানি কোথাকার,
!
কি আমি গাধা?
!
নাতো কি?
শোন ভাই বেগুন ভাজি ও ডালের চড়চড়ি তোর ফেভারিট,
তাই তো তুই আমার বেগুন ভাজি চড়চড়ি,
হা হা হা,
!
কেলা কেলা যতো পারো দাঁত কেলা,
আমারো দিন আসবে হুহহহহহ,
!
সে আসবে যখন আসবে তখন দেখেনিস,
কিন্তু এখন এই ভরদুপুরে তুই এখানে কেন এসেছিস?
!
তোর জন্যে আম্মু খাবার রান্না করে পাঠিয়েছে,
আর এই বাজার করে এনেছি তাই,
!
ও তাই?
!
হুমমম?
!
তা আপনার খাওয়া হয়েছে মিস্টার বেগুন ভাজা চড়চড়ি,
!
নাহহ, পরে খাবো,
!
তুই আর পরে খাইছ?
পয়দা হওয়ার পর থেকে তোকে দেখছি তুই একটা মিচকে শয়তান,
!
হুহুহু
হা হা হা হা,
!
এতো হাসিস না তো যা গিয়ে বস,
আমি এখনি আসছি,
!
কোথায় বসবো?
!
এতো জায়গা তোর চোখে পরেনা?
!
না,
!
তাহলে আমার কোলে এসে বয়,
!
মিশকার কথা শুনে সবাই হেসে দেয়,
!
মিশকা ও রুহানের দুষ্টু মিষ্টি বন্ধুত্বের সম্পর্ক টা সবার মন ছুয়ে য়ায়,
কিন্তু,
ইমান রাগে ফায়ার হয়ে যায়,
!
বাট হু কেয়ারর্স?
মিশকা নিজের হাত ধুয়ে এসে রুহান কে নিয়ে খেতে বসে,
!
তখন আরিয়ান এসে বলে,
আমি কি এখানে জয়েন করতে পারি?
!
নো, নেভার কাভিনেহি সো প্লিজ মাইন্ড ইউওর ওউন বিজনেস,
!
মিশকার কথায় বাকা ঠোঁটের হাসি দিয়ে আরিয়ান ওখান থেকে চলে যায়,
!
রাতে ইমান ইশার জন্যে বাসায় ক্যান্ডেল লাইট ডিনার আয়োজন করে,
!
মিশকা তখন জাগে পানি নিতে কিচেনে চলে যায়,
পানি নিয়ে হলে যেতেই দেখে অনেক সুন্দর করে তাজা গোলাপ দিয়ে সাজানো,
!
তাহলে কি উনি ওনার ভুল বুঝতে পেরেছেন?
!
তখনি কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দ হয়,
শব্দ শুনে শব্দের উৎসের কাছে গিয়ে দেখে,
!
ইমান ইশা একে অপর কে আলিঙ্গন করে দাঁড়িয়ে আছে,
!
এসব দেখে নিজের চাপা কষ্ট গুলো চেপে রেখে উল্টোদিকে মুখ ঘুড়িয়ে হাটতে শুরু করে,
!
তখন ইমান মিশকা কে দেখে ওকে ঝাড়ি মেরে বলে,
!
এই মেয়ে এই তোমার প্রবলেম কি হুমমম?
!
যখনতখন যে খানে চলে যাও কি চাও কি তুমি?
!
বাবু ও হয় তো আমাদের ক্যান্ডেল লাইট ডনারের কেক খেতে চায়,
!
ওহহহ রেয়ালি?
!
নো একচুয়ালি আমি পানি নিতে এসেছিলাম,
ইউ গাইজ আর কন্টিনিউ প্লিজ,
অ্যান্ড আই এম সর ফর দিছ ডিস্টার্বেন্স,
!
ওহহহ তার আগে কিছু মনে ছিল না তাই না?
তবে এসে যখন পরেছ,
কেক টা খেয়ে যাও,
!
না থ্যাংকস,
কিন্তু ইমান ওর কথা না শুনে ওর মুখে পুরো কেক লেপটে দেয়,
!
আর বলে,
তুমি এতো কালো দেখো কেক মেখে ফর্সা হতে পারো কিনা?
!
ইউ আর রাইট বাবু,
হা হা হা,
!
মিশকা এটা সহ্যকরতে না পেরে ওর রুমে ছুটে গিয়ে দরজা লাগিয়ে শাওয়ার নিয়ে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে বসে,
এবং সালাতের মাঝে মিশকা তার অভিযোগ অনুযোগ সমস্ত কিছু আল্লাহর কাছে করে,
!
সালাত আদায় শেষে মিশকার ফোন বেজে ওঠে,
ফোন রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশ থেকে রুহান বলে,
!
কিরে এখনো জেগে আছিস?
!
তখন মিশকা ওর কান্না সামলে বলে,
!
নারে ভাবছি একটা বিজনেস করবো,
!
কি?
মানে কিসের বিজনেস?
!
ওর্নামেন্টসের বিজনেস,
!
ওহহহ,
পাইকারি?
!
না, নিজেই তো বানাতে পারি ইভেন কিছু স্যাম্পল ও আছে আমার কাছে,
!
ওহহ,
তাহলে তো গ্রেট আইডিয়া,
একটা কাজ কর,
!
কি?
!
আমাকে কিছু ওর্নামেন্টসের পিক তুলে দে আমি তোকে এখনি ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ খুলে দেই,
!
তাই?
!
হুমমমম,
স্টার্ট আপ যখন করতেই হবে এখন কেন নয়?
!
ওকে আমি এখনি তোকে পিক তুলে দিচ্ছি,
!
তারপর আমি রুহান কে পিক তুলে পাঠাই,
আর ও আমার জন্যে ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ খুল দেয়,
এবং আমাদের সকল ফ্রেন্ডস কে সেই পেজ ও গ্রুপে ইনভাইট করে,
!
যাক আমি আমার জীবনের একটা গতি পেয়েছি,
ইনশাআল্লাহ সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমি আমার লক্ষে পৌছতে পারবো,
!
তাই নতুন জীবনের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায় মিশকা,
!
পরেরদিন সকালে মিশকা হলে যেতেই ইমান অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে মনেমনে ভাবে,
!
মেয়েটা এতে স্বাভাবিক হয়ে কি করে থাকে হুমম?
কাল রাতে আমি ওর সবচেয়ে দূরবল জায়গায় ওর দূরবলতায় আঘাত করেছি তারপর ও সেই আগের মতো হেসে খেলে যাচ্ছে?
!
কি হলো কি ভাবছ?
!
কিছুনা,
!
কিন্তু মিশকা ও গুলো কি করছে?
!
মানে?
!
ভালো করে চোয় দেখো,
!
তখন ইমান দেখে মিশকা ওর ফোন থেকে সিমকার্ড খুলে অন্য একটা পাঁচ সাত হাজার টাকার মোবালে পুরছে,
!
আশ্চর্য এই ফোন টা আবার ওর কি ক্ষতি করল?
!
নিন ধুরন,
!
কেন?
!
কারন আমি এখান থেকে চলে যাওয়ার সময়ে আপনার এবং আপনার সমস্ত স্মৃতি কে ফেলে চলে যেতে চাই,
!
মানে?
!
কোনো পিছুটান রাখতে চাই না মিস্টার খান,
!
এগুলো কি করবো বৌ রানী?
!
কি এই সাড়ি গুলো?
তোমরা নিয়ে নাও,
!
এতদিন ইমানের চোখে পরেনি,
কিন্তু এখন খেয়াল করে দেখে,
মিশকা ওর শরীরে তার কোনো চিহ্ন রাখেনি,
নতুন একটা সাড়ি ও ওর বাবার দেওয়া লকেট পরেছে গলায়,
!
মাএ কদিনে কাও কে এতো ঘৃণা করা সম্ভব?
!
কি ভাবছ বাবু?
!
বারবার একি কথা বললাম তো কিছুনা,
!
তখনি মিশকার ফোন বেজে ওঠে,
!
মিশকা ফোন রিসিভ করতেই জাহাদ ওকে বলে,
!
দোস্ত তোর ভাবির জন্যে আমি তোর কাছ থেকে ওর্নামেন্টস নিবো,
কতো দিবো?
!
বেয়াদব তুই বিয়া করছিস কবে?
!
করিনি একদিন তো করবো তাই না?
তাই বলছি আর কি?
!
ওহহ তাই বল,
!
ওহন কতো দিমু?
!
হুমমমমমম ওক্কে,
ফাস্ট ওয়ার্ডার তো?
হাজার দুই দে,
!
কি?
কমটম হবে না?
একটু ছাড় দে আমরা তো দোস্তো তাই না?
!
নো দোস্তো নো পোস্তো শুধু বিজনেস টাই আসল,
হা হা হা,
!
একটু ছাড় দে প্লিজ?
!
উন্দুর জানি কোথাকার, আগে বলবি তো যে আমি এটা বানাবো ওটা বানাবো নাকি পয়সা বেশী হইয়া গেছে তোর?
!
ওহহহ দোস্তো আমি পিক দিচ্ছি তুই ও ভাবে বানাইয়া দিবি,
!
ওকে উন্দুর,
!
হা হা হা,
!
আচ্ছা মিশকা বিজনেস, বানাইয়া দিবে?
কি বিজনেস কি বানাইয়া দিবে ও?
কি চলছে কি ওর মনে?
!
কি হলো মিস্টার খান?
!
তুমি মানে বিজনেস?
কিসের কথা বলছ তুমি?
!
সেটা যেনে আপনি কি করবেন?
একচুয়ালি ইটস নান অফ ইউওর থিংগস,
সো কিপ ক্লাম,
!
ময়না পাখি আমি ইউনিভারসিটি যাচ্ছি সো প্লিজ আমার জিনিশ গুলো সামলে রেখ,
!
আচ্ছা ঠিক আছে,
!
আমি তোমাকে ড্রপ করে দেই?
!
নো থ্যাংকস,
অনেক ড্রপ করেছেন আর ড্রপ করতে হবে না বুঝলেন?
এখন আমি বাকি টা পথ একাই চলে যেতে পারবো,
!
কিন্তু,
!
কি এমনি তেই কালো আরো একটু কালো হয়ে যাবো নো প্রবলেম,
বিশ্ব সুন্দরী বা ছিলাম কবে?
!
মিশকার এই কথা টা শুনে ওর চোখ জোড়া ছলছল করে ওঠে,
!
তারপর মিশকা মিষ্টি হাসি দিয়ে ওখান থেকে চলে যায়,
!
আর ওর এই হাসি টা ইমানের ভাবনার যগৎ কে অতিরিক্ত ভাবিয়ে তোলে,
!
কি ভাবছে কি মেয়ে টা?
আমার বিশ্বাস ও আমাকে ভালোবাসে,
!
তাই আর যাই করুক কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না,
!
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে