স্বামীর ভালোবাসা part : 13
লেখিকা সুরিয়া মিম
!
পরে নিজেই মিশকার বলা কথা গুলো মনে করে হা হা করে হাসতে থাকে,
!
ইসসস,
আমি যদি জানতাম এটা ওর বিজনেস তাহলে আমি ওকে যেতেই দিতাম না,
অনেক কথা বলার আছে আমার ওকে,
!
ও আমার এতো কাছে ছিল আমি ওকে ছুঁতে পারলাম না,
!
কি আশ্চর্য তাই না?
আমি আমার এক বৌয়ের কাছ থেকে অন্য বৌয়ের জন্যে ওর্নামেন্টস কিনছি,
!
জানিনা কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে?
আমি কি কোনো ভুল করেছি?
মস্ত বড় ভুল?
!
বাবা রুহান তুমি তো মিশকার বন্ধু তাই না?
!
জ্বি স্যরর,
!
তুমি ওর মা-বাবা কে চিনো?
!
হ্যা স্যরর,
!
কি নাম ওর বাবার?
!
মাহির চৌধুরি,
!
মাহির চৌধুরি নাম শুনে এই মানাফ চৌধুরি চমকে যায়,
!
কি হলো স্যরর?
কিছু বলবেন?
!
তুমি আমাকে ওর বাসার ঠিকানা টা দিবে বাবা?
!
হ্যা স্যরর অবশ্যই,
!
রুহানের কাছ থেকে মিশকার ঠিকানা নিয়ে চলে যায় মানাফ চৌধুরি,
!
মা তোকে ও কোনো খারাপ কথা বলেছে নাকি হুমম?
!
না মা ওনাকে বলার সুযোগ দেই নি আমি,
তার আগেই “আপনি বাঁচলে বাপের নাম ”
করে কেটে পরেছি আমি,
!
আমার কথা শুনে যে যার মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হা হা করে হেসে দেয়,
!
রাতে যখন আমি বাবুদের খাওয়াচ্ছিলাম তখন মা এসে বলেন,
!
মা শুধু ওদের খাওয়ালে হবে নিজের খেতে হবে না?
!
খিদে নেই মা,
!
কেন মন খারাপ?
!
আসলে মা,
!
কি মা?
মাকে বিশ্বাস করে বলা যায় না নাকি?
!
আসলে মা আমি মাম্মা পাপার কে মিস করছি তাই,
!
ওওওও,এই কথা?
কাল কেই তোর আব্বু কে বলবো তোকে ওখানে দিয়ে আসবো কেমন?
!
ওকে মা,
!
দেখি মা এখন হা কর আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি কেমন?
!
জ্বি মা,
!
তারপর মা আমাকে খাইয়ে দিয়ে, ঘুম পারিয়ে নিজের রুমে চলে যায়,
!
ইসসস,
ওর হাতের কাজ কতো সুন্দর?
ও যে এতো গুনবতী এটা তো আমার আগে জানা ছিলোনা?
আর ও আমাকে বলে ও নি,
কেন বলেনি ও আমাকে?
স্বামী হিসেবে কি আমার এতো টুকু জানা অধিকার নেই নাকি?
!
এখন আমি বুঝেছি তোমার কেন আমাকে প্রয়োজন নেই?
কেন নেই আমাকে প্রয়োজন আমি কি এতো টাই খারাপ?
এতো টা খারাপ নই আমি যে তোমার হাতে বানানো গহনা আমি ইভা কে পড়তে দিবো,
!
বেবি এই রেশমি সুতোর গহনা গুলো জাস্ট ওয়াসাম,
!
আসলে এগুলো তোমার নয়,
!
তাহলে কার?
!
আমার বোন ইমার,
!
ও আচ্ছা তাই বলো,
ওকে গুড নাইট ,
!
গুড নাইট,
জানিনা আমি কেন ওকে মিথ্যে কথা বললাম?
তবু ও মিথ্যে বলে ভালো লাগছে আমার,
অদ্ভুত একটা প্রশান্তি লাগছে আমার,
!
পরেরদিন সকালে মিশকা কে ওর বাবার বাড়ি নিয়ে যায় ইফতি খান,
সেখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুমিয়ে যায় মিশকা,
!
দুপুরে চ্যাঁচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ওর,
তাই ও বাবুদের বুকে জড়িয়ে নিচে চলে যায়,
সেখানে গিয়ে দেখে মিস্টার মানাফ চৌধুরি ওর বাবা
মাহির চৌধুরির হাত ধরে বলছে,
!
ভাই আমার মেয়ে টা কে আমি তোর অনাথ আশ্রমে ফেলে এসেছিলাম,
ও কোথায় আমাকে বল?
আমি ওকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাবো ভাই,
!
আমি জানিনা তুই তোর মেয়ে কে কোথায় ফেলেছিস,
তোর মেয়ে আমার কাছে নেই,
!
আমার মেয়ে তোর কাছে আছে ভাই,
!
আমি বলছি আমি জানিনা তোর মেয়ে কোথায়?
আর এর প্রমাণ কি যে তুই ওকে আমার অনাথ আশ্রমে ফেলে এসেছিস?
!
প্রামাণ আমি নিজে,
!
সো হোয়াট শুড আই ডু?
!
মিশকা কার মেয়ে?
!
মানে?
তোর সাহস কি হয় আমার মেয়ে কে নিয়ে প্রশ্ন করার?
!
কারন ও আমার মেয়ে,
!
ও তোর মেয়ে কিছু তেই হতে পারে না ও আমার মেয়ে,
!
তখন আমি খেয়াল করে দেখি,
আমার মাম্মা দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন,
ও পাপা বেশ ভয় পেয়ে আছেন,
!
তাহলে কি উনি আমার…….?
না হতে পারেনা,
আর হলে ও আমি মানি না,
এতদিন উনি কোথায় ছিল যে এখন উনি আমাকে নিজের মেয়ে বলে দাবি করতে এসেছেন?
!
“দুঃখের সময় আমার পাশে ছিলোনা, সুখের সময়ে ভাগ নিতে এসেছে”
এটা আমি কখনওই হতে দিবো মা,
আমার মাম্মা পাপা কে কিছু তেই অপমানিত হতে দিবো না,
!
জন্মের পরে উনি আমাকে ফেলে এসেছেন,
আর ওনার মেয়ে সাজানো সাম্রাজ্য কেরে নিয়েছেন,
আরকি নিতে বাকি আছে ওনার?
!
নাহহহ আর না,
কিছু তেই না,
আজকে আমি ওনা কে ওনার জায়গা টা দেখিয়ে ছাড়বো,
কারন ওনার কোনো যোগ্য নেই আমার পাপা হওয়ার,
!
পাপা?
!
তখন পাপা আমাকে তার ছলছল চোখে বলেন,
মা তুই এখানে কি করছিস?
যা রুমে যা তোর শরীর তো ভালো নেই মা,
!
না মিশকা কোথাও যাবে না,
আজ ওর সত্যি টা জানা প্রয়োজন,
!
আজ আমার না আপনার সত্যি টা জানা প্রয়োজন মিস্টার মানাফ চৌধুরি,
!
মানে?
!
ফাস্ট অফ অল আপনি আমার বাবা নন সেকেন্ড অফ অল আপনার কোনো যোগ্যতা নেই আমার বাবা হওয়ার এবং আমার পাপা মাম্মা কে অপমান করার,
কোন সাহসে আপনি আমার পাপা কে অপমান করেন হুমম?
আপনার কোনো অধিকার নেই নিজেকে আমার পাপা বলে পরিচয় দেওয়ার,
!
মা,
!
এই মেলা ফ্যাচফ্যাচ করবেন না তো,
এই মা ডাক টা আপনার মুখে মানায় না,
!
একচুয়ালি ইউ অ্যান্ড ইউওর ফ্যামিলি গুড ফর নাথিং মিস্টার মানাফ চৌধুরি,
পাপা তুমি ওনাদের এখনি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দাও নাহলে আমি কিছু করে ফেলবো,
!
মিশকার কথায় কষ্ট পেয়ে মানাফ চৌধুরি তার চোখেরজল মুছতে মুছতে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়,
!
তখন মাহির চৌধুরি মিশকা কে জড়িয়ে ধরে বলেন,
!
মা বিশ্বাস কর আমি আমি তোর বাবা,
মানাফ মিথ্যে কথা বলছে,
!
আমি জানি তোমরাই আমার সব আর উনি মিথ্যে কথা বলছেন,
তাহলে তুমি কাঁদছ কেন হুম?
তুমি কাঁদছ মাম্মা কাঁদছে আমার কি এসব দেখতে ভালো লাগছে পাপা?
!
বিশ্বাস কর,
!
ধুররর পাগল?
“মা বাবা হলো বেহেশতের দরজা ”
তাকে কি কখনো অবিশ্বাস করতে আছে হুম?
!
না?
!
তাহলে এসব বলো কেন হুম?
এসব যেন আমি আর কখন না শুনি কেমন?
!
আচ্ছা ঠিক আছে আম্মু,
!
মনে থাকে যেন?
!
থাকবে থাকবে খুব থাকবে মা,
!
ওদিকে ইমান যখন অফিসে কনফারেন্স করছিল তখন হঠাৎ ওর ফোন বেজে ওঠে,
ফোন রিসিভ করে জানতে পারে ইশা হসপিটালে,
!
তাই ও কনফারেন্স ছেড়ে হসপিটালে চলে যায়,
সেখানে গিয়ে জানতে পারে,
ইশা বাথরুমে স্লিপ করে পরে গেছে,
তাই আরিয়ান ওকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে,
!
তারপর ডক্টর চেকআপ করে জানা যে,
ইশার বেবি মিসক্যারেজ হয়ে গেছে,
তাই ওর বেবি অ্যাবট করতে হবে,
!
অ্যাবটের কথা শুনে ইমান স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে পরে,
আর হঠাৎ করে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে শুরু করে,
!
কত স্বপ্ন দেখেছিল ও ওর বেবি কে নিয়ে,
সব একটা দমকা হওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে গেল,
বাবা হওয়ার কথা শুনারর পর থেকেই বাবুর খেলনাপুতুল কিনে আনা শুরু করেছিল ও,
আর এই এক মাসে খেলনা কিনতে কিনতে খেলার পাহাড় বানিয়ে ছিল ও,
!
কিন্তু এখন এসব দিয়ে খেলবে কে হুমম?
যার জন্যে এতকিছু সেই তো আর নেই,
!
আল্লাহ কেন দিয়ে ও সবকিছু কেড়ে নেয়?
কেন আল্লাহ এমন করে হুমম?
তার ইবাদত বন্দেগি তে আমি কোনো কমতি রাখিনি,
তাহলে কেন সে আমাকে এভাবে পরীক্ষকা করছে?
তাও আবার আমার সন্তান কে আমার থেকে কেড়ে নিয়ে,
!
কিরে মা কি এতো ভাবছিস?
!
কিছুনা পাপা,
তোমরা না শুধু বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি করো,
তোমরা যে ভাবে কান্নাকাটি করো এতো কান্নাকাটি আমার সোনা দুটো ও করে না,
!
হা হা হা,
ওদের তো শুধু খাই আর শুই কান্না করবে কখন,
!
হা হা হা,
লিসেন পাপা আমি না বেবিদের ক্লথস কিনতে শপিং এ যাবো,
আমি যাই?
!
হ্যা মা তবে সাবধানে কেমন?
!
আচ্ছা পাপা ঠিক আছে,
!
তারপর আমি শপিং এ চলে যাই,
সেখানে গিয়ে বেবি ওয়্যাের,বেবি ওয়াইপস ও জনসন বেবি ট্রিজ কিনে নিজের জন্যে সাড়ি কিনতে যাই,
!
তারপর একটা বেবি পিংক কালারের সিল্কের সাড়ি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের গায়ে ধরি,
তখনি খেয়াল করে দেখি,
!
মিস্টার আরিয়ান আবরাহাম চৌধুরি আমার অপজিটে দাঁড়িয়ে আমার গায়ে একটা বিয়ের সাড়ি ধরে দেখার চেষ্টা করছেন,
!
বেটা অসভ্য মন টা চায় ওকে ধরে জুটো পেটা করি,
সাহস কতো আমার গায়ে বিয়ের সাড়ি ধরে দেখতে চায়?
!
তখন উনি আমাকে বলে,
!
হায় মিশকা,
!
বাই,
!
মানে?
!
আমি ইন্টারেস্টেড নই আপনার সাথে বকবক করতে কেমন?
!
তুমি ইমানের রাগ টা আমার ওপরে ঝাড়ছ কেন?
!
এই ফালতু বলবেননা কেমন?
তারপর আমি ওখান থেকে মানে মানে কেটে পরি,
!
বদমেজাজি যেন কোথাকার?
আমার ফিলিংসের কোনো দাম নেই তাই না?
!
বাট আই স্টিল লাভ ইউ বাবুনি,
হা হা হা হা
চলবে