গল্প – #seeing_with_you
Episode – 1
Writer – Zaira insaan
দুই বান্ধবী মিলে সাইকেল প্রতিযোগিতা লাগাচ্ছে। কার আগে কে প্রথমে ভার্সিটি পৌঁছাবে। শুরু হয় প্রতিযোগিতা দুজনেই খুব স্পিটে সাইকেল চালাচ্ছে। সামনে এক কালো গাড়ি আসতে দেখে রিতু সাইকেল থামিয়ে জোরে করে চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,,,
– মোমো সাইকেল থামা সামনে গাড়ি আসছে! মোমো তা শুনতে পাইনি সে সাইকেল চালাচ্ছে সামনে গাড়ি দেখে মোমো ঘাবড়ে যায় সাইকেল টা অন্য পাশে নিবে এমন সময় গাড়িটার সাথেই তার সাইকেল টি লম্বা ঘষা খায়। সাইকেল টি সামলাতে না পেরে সে রাস্তার এক পাশে সাইকেল নিয়ে পড়ে যায়। খেচাত করে আওয়াজ শুনতে পেয়ে গাড়িটিও থেমে যায়। রিতু দৌড়ে এসে মোমোকে উঠায়। গাড়ি থেকে ড্রাইবার বের হয়ে মোমোকে উদ্ধার করছে মোমো ও ড্রাইবার কে উদ্ধার করছে রাস্তায় সবাই ভিড় জমাই। বাহিরে এতো চেঁচামেচি শুনে গাড়ির থেকে এক সুদর্শন যুবক বেড়িয়ে আসে, যুবকটি পেছন থেকে ড্রাইবারের কাঁধে হাত রেখে থামিয়ে দেয় ড্রাইবারটি বুঝতে পেরে ওখান থেকে সরে দাঁড়াই। তারপর যুবকটি তার গাড়ির দিকে একবার তাকায় দেখে Car Scratch হয়েছে তারপর সে মোমো ও রিতুর দিকে তাকায় রিতু ছেলেটির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে কারণ ছেলেটি দেখতে একদম তুর্কিস ছেলেদের মত। ছেলেটি মোমো কে উদ্দেশ্য করে বলে,,
– এই যে ম্যাডাম সাইকাল চালাবার সময় কি চোখ হাতে নিয়ে চালান নাকি সাইকেলের ঝুড়িতে রেখে চালান! মোমো তার কথা শুনে রেগে যায় বলে,,
– আমার সাইকেল চালাবার সময় আপনার গাড়ি আমার সামনে আসছে কেন আপনার ড্রাইবার কি দেখে নেই নাকি কানা? মেয়েটার মুখে এমন কথা শুনে ব্রু কুঁচকে ফেলে ছেলেটি তারপর বলে,,
– দোষ তো করছেন আপনি আবার লম্বা কথাও বলেন। তাচ্ছিল্য ভাবে চোখ উল্টে ফেলে মোমো। যেন তার কোন দোষ নেই। ছেলেটি তার দিকে তাকিয়ে বলে,,
– বেপরোয়া ভাবে সাইকেল চালাচ্ছেন আবার আমাকে আপনি চোখের ঢং দেখান, গাড়ি যে স্ক্র্যাচ করছেন এটার ক্ষতিপূরণ কে দিবে আপনি নাকি আপনি? (মোমো ও রিতুর দিকে তাকিয়ে) মোমো একবার রিতুর দিকে তাকিয়ে ব্যাগের ভিতর হাত ঢুকিয়ে কি যেন নিচ্ছে। তারপর ৩০০০ টাকা বের করে ছেলেটির হাতে তাচ্ছিল্য ভাবে ধরিয়ে দেয় তারপর বলে,, এই নেন আপনার ক্ষতিপূরণ। বলে রিতুকে নিয়ে সাইকেল করে ভার্সিটি চলে যায়….ছেলেটি হা করে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে সে কিছুই বুঝতে পারে নাই মেয়েটার কর্মকাণ্ড সবকিছুই তার মাথার উপর টুকুস করে উড়া যায়।
________________________________
ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে কেন্টিনে বসে আছে মোমো ও রিতু। দুজনেই নিরব কারো মুখে কথা নেই মোমো বসে বসে সিঙ্গারা খাচ্ছে তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তার কোন আত্তাপাত্তা নেই সে নিরলস ভাবে খাচ্ছে। এদিকে রিতু ছেলেটির কথা ভাবছে একটা ছেলে এতো কেমন সুদর্শন হয়। চিন্তা বেধ করে মোমো বলে উঠে,, কি চিন্তা করস?
‘ছেলেটির কথা’ ভাবনা নিয়ে বলে রিতু। ফোঁস করে এক নিঃশ্বাস ফেলে মোমো কারন রিতু যার তার উপর ক্রাস খায় দুদিন আগে বলে সে তার ভার্সিটির এক স্যার এর প্রেমে পড়ছে আবার এখন বলে ছেলেটির কথা ভাবছি। হঠাৎ রিতু বলে উঠে,,
– মোমো তোর উচিত হয়নি ছেলেটিকে ৩০০০ টাকা দেওয়ার।
– তো ৩০,০০০ টাকা দেওয়ার উচিত ছিল তাই না? তাচ্ছিল্য ভাবে বলে মোমো।
– না, তা না ছেলেটি কে দেখতে বড় বিজনেস ম্যান লাগছে তার উপর তুই তার সাথে ঝগড়া করে ৩০০০ টাকা ধরিয়ে দিছোস কথাটা কেমন যেন হজম হচ্ছে না।
– ছেলেটি তো ক্ষতিপূরণ চাইছে তাতে?
– আ..
– ব্যাস কিছু বলার দরকার নেই, ছেলেটি কি ভাবে না ভাবে তা আমার জানা প্রয়োজন নেই ছেলেটির সাথে আমার আর কখনো দেখা হবে না শেষ। বলে উঠে চলে যায় মোমো।
– মোমো এই মোমো মো..। বলে থেমে যায় রিতু সে আর মোমো কে বোঝাতে পারবে না কারণ মোমো কিছু বুঝতে চাই না।
তারপর দুজনেই বাকির ক্লাস গুলো শেষ করে যে যার বাড়ি চলে যায়….
চলবে???
#seeing_with_you
Episode – 2 (Problem)
Writer – Zaira Insaan
বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে টিভি দেখতে বসে পড়ে মোমো। কিছুক্ষণ পর তার ভাই ইভান বাহির থেকে বাস্কেটবল খেলে ক্লান্ত হয়ে নিজের রুমে চলে যায়। রান্নাঘরে এক পলক তাকাতেই দেখে তার মা মনমরা হয়ে কাজ করছে মোমো উঠে তার মায়ের পাশে যায় টেবিলে রাখা আপেল খেয়ে জিজ্ঞেস করে,, কিরে আম্মু এতো মনমরা হয়ে আছো কেন? উত্তরে কিছু বলেন না রোকেয়া। মোমো আবার জিজ্ঞেস করে,, বলো না। তারপরেও কিছু বলে না রোকেয়া। বাহির থেকে তার বাবা আবরার হোসেন ধীরে ধীরে নিজের রুমে চলে যায়। মোমো দেখে আশ্চর্য হয়ে ফট করে তার মায়ের দিকে তাকায় রোকেয়া এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। মোমো রাগের চোটে জিজ্ঞেস করে,, তুমি আব্বুকে এ অবস্থায় বাহিরে পাঠাইছো? রোকেয়া চুপ করে ফল কাটতে লাগলেন। মোমো অতিরিক্ত রাগে মুখ শক্ত করে বলে,, যদি কিছু প্রয়োজন হয় আমাকে বলতা বা ইভানকে বলতা নিয়ে আসতাম আব্বুকে বাহিরে পাঠানোর কি দরকার ছিল? আব্বুর অবস্থা খারাপ তুমি কি তা চোখে দেখো না? রোকেয়া একবার চোখ বন্ধ করে আবার খুলে চুপ করে খিরা কাটতে লাগলেন। মোমো রাগে জিজ্ঞেস করে,, কথা বলছো না কেন? রোকেয়া এবার কাটা বন্ধ করে মেয়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় জিভ ভিজিয়ে বলে,, তোর বাবার চাকরি চলে গেছে। এটার শুনার সাথে সাথে মোমো এর বুকে ধক করে উঠলো সে ব্রু কুঁচকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। রোকেয়া আবার বলে,, অতিরিক্ত ছুটি নেওয়াতে ওনাকে চাকরির থেকে বের করে দিছে আর এ জন্যই ওনি তাড়াতাড়ি ছুটে যায় অফিসের দিকে কোন লাভ হয়নি পাইনি চাকরি আমাকে রাস্তায় কল করে বলছে এ কথাটা তোকে ও ইভানকে বলতে নিষেধ করছে যেন তোরা টেনশনে না পড়ে যাস। মোমো এটা শুনার সাথে সাথে রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে নিচে বসে যায় মাথায় হাত দিয়ে বিভিন্ন জিনিস চিন্তা করছে। তার বাবার “এপেন্ডিক্স” এর ব্যাথায় অপারেশন করতে হয়েছিল যার জন্য অতিরিক্ত খরচ হয় তাদের জমানোর পুঞ্জি ও শেষ হয়ে আসছে। মোমো মাথায় টেনশন নিয়ে নিল নিজের সাথে বিড়বিড় করে বলতে লাগল,,
– ঘরের খরচ চলবে কিভাবে? ইভান ক্লাস 10 পড়ছে ওর খরচ কিভাবে নিব? দুদিন পর ইভান কলেজ এ উঠবে তার খরচ? আর সে বাস্কেটবল এর ট্রেনিং নিচ্ছে তার খরচ? আমি অনার্স এর তৃতীয় বর্ষে আমার খরচ? ছোট চাচীর বিয়ে যার জন্য আব্বুর থেকে কিছু টাকা দিতে হবে সেটা কিভাবে দিব? আহহ্ মাথাটা ভার হয়ে আসছে এতো টেনশন সব সমস্যার সমাধান কিভাবে করবো? না আমার থেকে কাজে ঢুকতে হবে সব খরচ আমি বহন করবো আব্বুকে টেনশন মুক্ত করতে হবে কিন্তু আমি কি কাজ করবো?
এ নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করতে থাকে মোমো। কিছুক্ষণ পর সে লাফ দিয়ে উঠে বলে,,, Yes, আমি নার্স এর কাজ করতে পারবো আমার দুই বছরের অভিজ্ঞতা আছে। ভাগ্যিস আমাকে এক আন্টি জোর করে শিখিয়েছিলেন। কিন্তু আমি কিভাবে…. বলে থেমে যায় মোমো। হ্যা রিতু কে কল করি যদি ও আমাকে সাহায্য করতে পারে। বলে ফট করে কল দেয় মোমো রিতুকে।
৩বার কল দেবার পর কল রিসিভ হচ্ছেনা দেখে রাগের চোটে ম্যাসেজ বক্সে ইচ্ছামত বকে মোমো আবার কল দেবার পর এবার কলটা রিসিভ হয়। সর্বপ্রথম মোমো তাকে ইচ্ছামত উদ্ধার করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রিতু কিছু বুঝে উঠতে পারছে না কি হয়েছে তার। মোমো শান্ত গলায় বলে,,
– রিতুনি, দেখা করতে পারবি এখন?
– এখন? (অবাক হয়ে যায় রিতু)
– হ্যা এখন।
– ভার্সিটি থেকে ফিরছি মাএ ৩ ঘন্টা হচ্ছে আর এরই মধ্যে তুই আমাকে মিস করছিস।
– ফালতু কথা বাদ দে, আর পার্ক এ আয়। রাখি।
– এ….
কেটে দেয় ফোন মোমো। মোমো আগে গিয়ে পার্ক এ বসে আছে। কিছুক্ষণ পর রিতু আসে তারপর বলে,,
– বলেন ম্যাডাম কি জন্য ডেকেছেন?
পরপর মোমো তাকে সব সমস্যা বলা শুরু করে দেয়। রিতু সব মনোযোগ সহকারে শুনে আছে। মোমো বলার শেষে রিতু বলে,, ওহ আচ্ছা মানে তুই নার্স এর কাজ কোন হসপিটালে করবি সেটা ভেবে পাচ্ছোস না রাইট?
‘হুম’ ছোট করে মনমরা হয়ে উত্তর দেয় মোমো। রিতু এক গাল হাসি দিয়ে বলে,, সুইটহার্ট চিন্তা করিস না আমার এক কাজিন মানে চাচাতো ভাই আছে সে একজন ডাক্তার তুই তার আন্ডারে কাজ করতে পারবি।
মোমো খুশি হয়ে বলে,, এহ্যা, সত্যি তাহলে তুই ফোন করে বল। ‘না সুইটহার্ট তোকে এখন আমি ওর কাছে নিয়ে যাবো চল’ বলে রিতু তার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগল……
চলবে???