Revenge of love Part-15 & last part

0
1186

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Last_Part

নতুন দিনের সূচনা। চারিদিকে সূর্যের সোনালি আভা ছড়িয়ে পড়েছে। পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ শুনে নন্দিতার ঘুম ভাঙ্গে। আধবোজা চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে নিজের অবস্থা। যখন বুঝতে পারলো নন্দিতা বেডে শুয়ে আছে তখনেই তড়িঘড়ি করে নিজের গায়ের উপরে থাকা কম্বলটা সরিয়ে শুয়া থেকে‌ উঠে বসে মনে মনে ভাবে।

“বেডে,বেডে কি করে আসলাম আমি? আর রাফি.. ও কোথায়?”

কথাটা ভেবে যখন বেড থেকে নামতে নিবে এমন সময় রাফি ওয়াশরুম থেকে বের হয় চুল মুছতে মুছতে। নন্দিতা রাফির দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা ঢোক গিলে। নন্দিতা ভেবে নিয়েছে রাফি ওকে একটা জোরে ধমক দেবেই দেবে। কিন্তু রাফি নন্দিতার ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে মজার ছলে বলে।

“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমার বুঝি শরম লাগে না।”

রাফির মুখে এমন ধরনের কথা শুনে নন্দিতার চোখের আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় বড় হয়ে যায়। দু তিন বার চোখের পাতা ঝাপটে আমতা আমতা করে বলে।

“না মানে আমি আসলে, আমি সত্যি জানি না বেডে কি করে আসলাম? আমি এক্ষুনি বেড থেকে নেমে যাচ্ছি।”

নন্দিতা তাড়াহুড়ো করে বেড থেকে নামতে গিয়ে মাথা ঘুরে যায় আর সাথে সাথে বেডে বসে পড়ে। রাফি দ্রুতে পায়ে নন্দিতার কাছে গিয়ে নন্দিতাকে ধরে চিন্তিত হয়ে বলে।

“কি হয়েছে শরীর খারাপ লাগছে।”

“না আসলে মাথাটা হঠাৎ করে ঘুরে গেছে। ঠিক আছি এখন আমি।”

রাফি কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “ঠিক নেই তুমি তোমার চোখ মুখ বলে দিচ্ছে সেটা, যে তুমি ঠিক নেই।”

রাফির কথা শুনার পরেও নন্দিতা জোর কাটিয়ে উঠতে চায় কিন্তু রাফি ধমক দিয়ে বলে, “উঠছো কেন?”

“ওয়াশরুমে যাবো।”

“চলো আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।”

নন্দিতা অবাক হয়ে বলে, “মানে।”

রাফি হুট করেই নন্দিতাকে কোলে তুলে নেয়। হঠাৎ করে এমন হওয়াতে নন্দিতা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে রাফির পানে। রাফি নন্দিতার চাওনি উপেক্ষা করে বলে।

“এভাবে চলো।”

রাফি নন্দিতাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে, “নাও এবার ফ্রেশ হও।”

নন্দিতা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে, “তোমার সামনে ফ্রেশ হবো?”

“তাতে প্রবলেম কি?”

নন্দিতা চোখ বড় বড় করে তাকায় রাফির দিকে। নন্দিতার তাকানো দেখে রাফি বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে তুমি ফ্রেশ হও আমি বাইরে আছি।”

কথাটা বলে রাফি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে আর নন্দিতা ওয়াশরুমে দরজা আটকিয়ে ভাবতে থাকে।

“হলোটা কি? ও এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন? আবার নেশাটেশা করলো নাকি।”

রাফির কন্ঠ ভেসে আসে, “কি হলো তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হও।”

“হে হচ্ছি।”

নন্দিতা আর কিছু না ভেবে ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলে বের হতে নিবে তখনই দেখে রাফি দাঁড়িয়ে আছে। রাফি নন্দিতাকে দেখার সাথে সাথে নন্দিতাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দেয় আর নন্দিতা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রাফির কান্ডগুলা দেখছে।

রাফি বলে, “এখান বসে থাকো চুপচাপ আমি আসছি।”

রাফি চলে যেতেই নন্দিতা বলে উঠে, “কি হচ্ছে এসব? গত কাল সকালেও তো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলো আর আজকে এমন করছে কেন?”

একটু পর রাফি এক প্লেট খাবার নিয়ে এসে নন্দিতার পাশে বসে। নন্দিতা বোকার মতো বলে, “এসব কি?”

“দেখতে পারছো না কি এগুলা! কালকে রাতে তো কিছু খাও নি তার উপর জ্বর বাধিয়ে বসে আছো নাও এবার হা করো।”

নন্দিতা হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলে, “আমি নিজে খেতে পারবো তো।”

রাফি চোখ রাঙিয়ে বলে, “হা করতে বলছি তো নাকি!”

নন্দিতা চুপচাপ খাবারটা খেয়ে নেয় আর মনে মনে বলে, “কি হচ্ছে এগুলা? আমি কি স্বপ্ন দেখছি না যা হচ্ছে সব বাস্তব।”

“খাবারটা শেষ করো পরে বুঝতে পারবে স্বপ্ন নাকি বাস্তব।”

নন্দিতা আজকে অবাকের শেষ চূড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। মাথা কেমন জানি ভনভন করছে। এ যেন আগের রাফির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে এখনকার রাফির মাঝে।

রাফি নন্দিতাকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে অফিসে চলে যায় আর যাওয়ার আগে নন্দিতাকে আরো অবাক করে দিয়ে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে জলদি চলে আসব বলে চলে যায়।

_______

নন্দিতা সারাদিন শুয়ে বসে কাটিয়েছে। যখন সবাই জানতে পেরেছে নন্দিতার জ্বর এসেছিল তখন থেকে নন্দিতার সব ধরনের কাজ করা বারণ। সারাদিনে রাফি অনেক বার কল করে নন্দিতার খোঁজখবর নিয়েছে। রাফির হঠাৎ এমন আচরণ নন্দিতাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে।

সন্ধ্যায় রাফি বাড়িতে এসেই নন্দিতাকে আরও একদফা অবাক করে দিয়ে বলে, “নন্দিতা রেডি হয়ে নাও, নয় টায় ফ্লাইট ধরতে হবে।”

নন্দিতা ভ্রু কুচকে বলে, “মানে কোথায় যাবো?”

রাফি সরল গলায় বলে, “কেন হানিমুনে ভুলে গেছো নাকি?”

নন্দিতা হতভম্ব হয়ে বলে, “হানিমুন! কিন্তু তুমি তো?”

রাফি কন্ঠে গম্ভীরতা এনে বলে, “তুমি কি রেডি হবে নাকি আমি রেডি করিয়ে দিবো তোমাকে।”

নন্দিতা ভয় পেয়ে দ্রুত গলায় বলে, “না না আমি রেডি হচ্ছি কিন্তু।”

রাফি গম্ভীর গলায় বলে, “আবার কি?”

“না না কিছু না।”

কথাটা বলেই নন্দিতা চুপচাপ আলমারি থেকে কালো রঙের একটা জামদানি শাড়ি নিয়ে চেইন্জ করতে‌ চলে যায় ওয়াশরুমে। নন্দিতা চেইন্জ করে বের হয়ে দেখে রাফি নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগে ঢুকাছে। রাফি নন্দিতার দিকে চোখ তুলে তাকায়। জ্বরের কারণে নন্দিতার চোখ মুখে ফুলে আছে আর সেই ফুলোফুলো মায়াবী মুখটা রাফিকে একটু বেশিই টানছে ইদানিং। রাফি আস্তে আস্তে করে নন্দিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর নন্দিতা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফি নন্দিতার কানের কাছে মুখটা নিয়ে মৃদু গলায় বলে।

“খুব অবাক হচ্ছো তাই না আমি কেন হঠাৎ এমন করছি, একবার হানিমুনে চলো তারপর বুঝতে পারবে।”

নন্দিতা রাফির কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। রাফি পুনরায় বলে।

“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসো ডিনার করে বের হবো।”

রাফি রুম থেকে বের হয়ে যায়। নন্দিতা বিড়বিড়িয়ে বলে, “হানিমুনে গিয়ে কি হবে আবার?”

নন্দিতা রেডি হয়ে নিচে নেমে ডিনার করে সময় মতো বেরিয়ে যায় হানিমুনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ফ্লাইটে বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল নন্দিতা ঠিক মনে নেই। সকালে নন্দিতার ঘুম ভাঙ্গে, চোখ খুলে নিজেকে নরম তুলতুল বেডের উপরে অবিষ্কার করে। নন্দিতা উঠে বসে ঘরের চারদিকটা ভালো করে পর্যবেক্ষন করে দেখে অচেনা একটা ঘরে সে।‌ নন্দিতা ভয়ে ঢোক গিলে মনে মনে বলে।

“আমি এখানে এলাম কি করে? আমি তো ফ্লাইটে ছিলাম। রাফি কোথায় ও কি আমাকে এখানে একা রেখে চলে গেছে।”

এসব চিন্তা করে নন্দিতা শব্দ করে কেঁদে দেয়।‌ রাফি নন্দিতার কান্নার আওয়াজ শুনে দ্রুত পায়ে বেলকনি থেকে এসে নন্দিতার মুখটা ধরে বলে।

“কি হয়েছে জান এভাবে কান্না করছো কেন?”

কান্না করেই যাচ্ছে নন্দিতা। অনেক চেষ্টা করছে কান্না থামনোর জন্য কিন্তু কান্না থামাতেই পারছো না। রাফি অস্থির গলায় বলে।

“আরে তুমি কান্না করছো কেন? বলবে তো আমায় কি হয়েছে? আর আমি তো এখানেই ছিলাম।”

নন্দিতার কান্না থামছে না দেখে রাফি নন্দিতার কান্নারত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে। হাসিও পাচ্ছে আবার খারাপও লাগছে নন্দিতার কান্না দেখে। এত বড় একটা মেয়ে এভাবে কান্না করছে যে কিনা চাইলেই বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে। তবে রাফি এটা বুঝতে পারছে না নন্দিতা কান্না করছে কেন? খারাপ‌ স্বপ্ন টপ্ন দেখেছে নাকি আবার। রাফির নজর যায় নন্দিতার শুষ্ক লাল রাঙা ঠোঁট জোড়ার দিকে। রাফি ঢোক গিলে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু না পেরে রাফি নন্দিতার শুষ্ক ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। হুট করে নিজের সাথে এমন হওয়াতে নন্দিতা বড় বড় চোখ করে তাকায়। নন্দিতা রাফির‌ থেকে দূরে সরে যেতে চাইলে রাফি নন্দিতার কোমড় ধরে নিজের আরো কাছে টেনে নেয়।

কিছুক্ষন পর রাফি নিজে থেকেই নন্দিতাকে ছেড়ে দেয়। নন্দিতা লজ্জায় তাকাতে পারছে না রাফির দিকে। রাফি মুচকি হেসে নন্দিতার ঠোঁটে নিজের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে কোমল গলায় বলে।

“এবার বলো কান্না করছিলে কেন?”

কিন্তু নন্দিতা তারপরও নাক টানছে। নন্দিতার নাক টানা দেখে রাফি কপট রাগ দেখিয়ে বলে।

“আবার কান্না করলে কিন্তু এবার আর চুমু খাবো না অন্য কিছু করবো। তখন কিন্তু আমাকে দোষারুপ করতে পারবে না। যা হবে সব কিন্তু তোমার দোষের জন্য হবে।”

নন্দিতা চোখ তুলে রাফি দিকে তাকায় আবাক হয়ে। রাফি তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে নন্দিতার ডান হাতটা ধরে নরম গলায় বলে।

“কি হয়েছে বলো কান্না করছিলে কেন? না বললে বুঝবো কি করে যে আমার একমাত্র বউটা কেন কান্না করছিলো।”

নন্দিতা ধরা গলায় বলে, “আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো তাই ভয়ে কান্না করে দিয়েছিলাম।”

রাফি নন্দিতার কথা শুনে স্বশব্দে হেসে বলে, “এটার জন্য কান্না করছিলে আমি ভেবেছিলাম কি না নাকি?”

কথাটা বলে নন্দিতা কপালে পড়ে থাকা চুল‌ গুলা কানে গুজে দিয়ে বলে, “আর তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা কোথা থেকে আসছে? একবার তো ছেড়ে দিয়েছিলাম তাহলে ফিরে এলে কেন আবার? আর এক বার যখন ফিরে এসছো তাহলে আর ছাড়বো না কোনো দিন তোমাকে। বেঁধে রাখব সারা জীবন তোমাকে‌ নিজের হৃদয়ের গহিনে।”

নন্দিতা নিচু স্বরে বলে, “তুমি এমন করছো কেন রাফি আমার সাথে? আমি এসব নিতে পারছি না প্লিজ এভাবে স্বপ্ন দেখাবা না আমাকে।”

রাফি মুচকি হেসে নন্দিতাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলে, “এটা স্বপ্ন না, এটা বাস্তব। তুমি কি ভেবেছিলে কিচ্ছু জানতে পারবো না আমি। আমি সব জানতে পেরেছি কেন বা কার জন্য এসব করেছিলে সব?”

“মানে।”

রাফি নন্দিতাকে ছেড়ে বল, “মানেটা এখন না জানলেও হবে‌ তোমার। শুধু রাতটার জন্য অপেক্ষা করো তখন জানতে পারবা। এবার উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও নাস্তা করতে হবে।”

“রাতে কি হবে?”

“সারপ্রাইজ ম্যাডাম। সারপ্রাইজ বলে দিলে কি এটা আর‌ সারপ্রাইজ থাকে তাই না জানলেও চলবে আপনার। আর রাতের জন্য নিজেকে তৈরি রেখো।”

রাফি কথাটা বলে নন্দিতার কপালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে চলে যায়। নন্দিতা চিন্তিত হয়ে বলে।

“কি জেনেছে রাফি? ও কি সবকিছু জেনে গেলো নাকি তার জন্য এমন করছে আমার সাথে। কিন্তু কার কাছ থেকে জেনেছে?”

রাাফির চিৎকার শুনে নন্দিতা তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। নিচে নেমে নন্দিতা আরো এক দফা অবাক হয়। এত বড় বাড়ি চারিদিকে এত দামি আর সুন্দর সুন্দর জিনিস গুলা। নন্দিতা সব কিছু খুব ভালো করে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। রাফি নন্দিতার হাত ধরে ডায়নিং টেবিলে বসিয়ে দিয়ে বলে।

“খাওয়া শুরু করো।”

“কোথায় এসেছি আমরা?”

“পাহাড়ে।”

“পাহাড়ে কেন এসেছি?”

রাফি মজার ছলে বলে, “কারন তোমাকে পাহাড় থেকে টুস করে ফেলে দিব‌ তাই পাহাড়ে এসেছি।”

“কিহ?”

“আর একটা কথা বললে তোমাকে কিন্তু সত্যি সত্যি পাহাড় থেকে ফেলে দিবো।”

নন্দিতা ভয়ে আর কিচ্ছু না বলে চুপচাপ খাওয়া শুরু করে দেয়। আর রাফি ফোনে কারো সাথে কিছু একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে।

নন্দিতা খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেলকনিতে এসে দাঁড়াতে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়‌ সমানে থাকা মনোরম দৃশ্যটা দেখে। বড় বড় পাহাড় চারদিকে সবুজে ঘেরা।‌‌ পাহাড়ের উপর সাদা মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে‌ যে গুলা বাতাসের সাথে ভেসে যাচ্ছে।

এর কিছুক্ষন পরে রাফি নন্দিতাকে‌ এসে বলে যায় সে একটা ইম্পর্টেন্ট কাজে বাইরে যাচ্ছে ফিরতে নাকি সন্ধ্যা হবে। আর সাথে এটাও বলে গেছে নন্দিতা যেন খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে নেয়। নন্দিতার আর কি করার একা একা সারাটা দিন কটাতে হলো। এটা নাকি তাদের হানিমুন একা একা হানিমুন কাটাতে হচ্ছে নন্দিতাকে।

সারা দিন রাফির দেখা মিললো না। হঠাৎ করেই গৌধুলী বেলায় নন্দিতার রুমে তিনজন প্রবেশ করলো। তা দেখে নন্দিতা কিছুটা চমকে বলে।

“কারা আপনার?”

“ম্যাম রাফি স্যার আমাদের পাঠিয়েছেন আমাকে রেডি করে দেওয়ার জন্য।”

“রেডি করাতে মানে কিসের জন্য?”

“এটা তো জানি না আপনাকে শুধু সাজিয়ে দিতে হবে এটা আমাদের বলা হয়েছে।”

নন্দিতা মনে মনে বলে, “রাফি করতে কি চাইছে?”

নন্দিতা আর কিছু বলে না। ওরা নন্দিতাকে সাজাতে শুরু করে।এক ঘন্টা পর নন্দিতার সাজ কমপ্লিট হলো। কালো শাড়িতে নন্দিতাকে অসাধারণ লাগছে।

“ম্যাম এবার চলুন।”

“কোথায় যাবো?”

“আপনি চলুন দেখতে পাবেন।”

নন্দিতাও ওদের কথামতো নিচে যায়। নিচে যাওয়ার সাথে সাথে রাফির মেসেজ আসে।

❝গাড়িতে উঠে পড়ো আর ভয় পাওয়ার কিছু হয় নি। ওদেরকে আমি পাঠিয়েছি।❞

নন্দিতা মেসেজটা পড়ে গাড়িতে উঠে বসে। প্রায় আধ ঘন্টা পর গাড়ি থামে তার নিজের গন্তব্য স্থানে। নন্দিতা গাড়ি থেকে নেমে ভীষণ অবাক হয় রিসোর্ট টা দেখে। রিসোর্টের চারিদিকে ছোট ছোট বাহারি রঙের লাইট জ্বলছে। নন্দিতার ফোনে আবারো মেসেজ আসে।

❝গেইট খুলে ভিতের আসো।❞

নন্দিতা রাফির কথামতো ভেতরে প্রবেশ করে। আবার রাফি মেসেজ করে।

❝এবার সিড়ি বেয়ে সোজা ছাদে আসো।❞

নন্দিতা মেসেজটা পড়ে চারিপাশে তাকিয়ে রাফিকে খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু রাফির কোনো চিহ্ন দেখতে পায় না। আবার নন্দিতার ফোনে মেসেজ আসার শব্দ হয়।

❝কি হলো? দাঁড়িয় আছো কেন? জলদি আসো অপেক্ষায় আছি তো তোমার!❞

নন্দিতা রাফির‌ পাঠানো মেসেজ পড়ে মুচকি হেসে এক পা এক পা করে ভেতরে এগিয়ে যায়। যত এগিয়ে যাচ্ছে নন্দিতা ছাদের দিকে তত হার্টবিটের গতি বেড়ে যাচ্ছে। এমনটা কেন হচ্ছে তা নন্দিতা বুঝতে পারছে না। ছাদের দরজার কাছে এসে নন্দিতা জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করে দরজা খুলে ছাদে প্রবেশ করে তো পুরাই শকড। চারিদিকে লাইটিং করা, ছাদের মেঝে জুড়ে হার্ট শেপের লাল বেলুন। ছাদের ঠিক মাঝ বরাবর একটা টেবিল আর দুইটা চেয়ার রাখা। হঠাৎ করেই নন্দিতার উপরে গোলাপ ফুলের পাপড়ি পড়তে থাকে তাতে তো নন্দিতা মহাখুশি আর দু হাত মেলে ঘুরতে থাকে। একপর্যায়ে ঘুরতে ঘুরতে রাফিকে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নন্দিতা থেমে যায়। ছাদের রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দু হাত বুকে গুজে রাফি নন্দিতার দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে আর মিটিমিটি হাসছে। নন্দিতা রাফিকে দেখে ভরকে যায় কারন রাফি তো এতক্ষণ এখানে ছিলো না হঠাৎ করেই উদয় হলো কোথা থেক? রাফির চাওনিতে নন্দিতা ভীষন লজ্জা পায়। কিন্তু নন্দিতা রাফির দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে না। রাফিও আজ কালো পড়েছে, কালোতে রাফি একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে। কিন্তু নন্দিতা তো লজ্জায় তাকাতেই পারছে না তাই নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে। রাফি কিছুক্ষণ নন্দিতার দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে এক পা এক পা করে নন্দিতার দিকে এগিয়ে আসে। রাফি নন্দিতার কাছে যত এগিয়ে আসছে তত হার্টবিট এর গতি বেড়ে আসচ্ছে। রাফি নন্দিতার কাছে এসে দাঁড়ায় কিন্তু তখনও নন্দিতা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

রাফির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নন্দিতাই মুখ তুলে উপরের তুলে রাফির দিকে তাকায়। কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে রাফি নন্দিতার দিকে। নন্দিতা পুনরায় মুখটা নিচের দিকে করতেই রাফি ফিচেল স্বরে বলে।

“প্লিজ নন্দিতা এভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকো না আমার দিকে তাকাও।”

নন্দিতা নিচের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমরা এখানে কেন এসেছি।”

রাফি নন্দিতার দিকে কিছুটা ঝুঁকে নন্দিতার কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিস করে বলে।

“হানিমুন করতে। কেন তুমি জানো না? জানো আজকে না তোমাকে অনেক আকর্ষণীয় লাগছে কালো শাড়িতে।”

নন্দিতা ঘাড় বাঁকিয়ে রাফির দিকে ফিরে তাকায়। নন্দিতার গায়ের শাড়িটা কিছুটা পাতলা হওয়ার কারনে নন্দিতার সাদা পেটটা দেখা যাচ্ছে সুস্পষ্ট ভাবে। রাফি সহসা নন্দিতার কোমড়ে হাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়‌।‌ নন্দিতা তো আজকে বার বার শকড হচ্ছো রাফির কান্ডে। রাফি আবারও ফিসফিসিয়ে বলে।

“কি ভেবেছো আমি কিচ্ছু জানতে পারবো না। আমি সবটা জানতে পেরে গেছি। সুমন সব বলেছে আমায়।”

নন্দিতা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে,”সুমন।”

“হুমম সুমন! যা যা হয়েছে সব বলেছো ও আমায়। ওই দিন যদি আমার ফোনটা বন্ধ না থাকতো তাহলে না তোমাকে কষ্ট পেতে হতো না আমাকে। আচ্ছা আমি খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমাকে তাই না। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি কিন্তু তোমার করা অবহেলা গুলা খুব কষ্ট দিতো আমাকে। আচ্ছা আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না। আমার ভেতরটা না ছারখার হয়ে যাচ্ছে এই ভালোবাসা নামক যন্ত্রণার কাছে।

নন্দিতা কিচ্ছু বলে না। নন্দিতার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। রাফি বুঝতে পারে নন্দিতা কান্না করছে। নন্দিতার কোমড় ছেড়ে নন্দিতার চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বলে।

“একদম কান্না করবা না।”

“সরি আমি জানি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে কিন্তু আমি যে তখন নিরুপায় ছিলাম। তাই মা বাবার ভালো জন্য নিজের ভালোবাসাকে কোরবানি দিতে হলো। কিন্তু দেখো ভ্যাগের কি লিলা সেই ভালোবাসা আবারও ফিরে এলো আমার কাছে।”

রাফি নন্দিতার চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বলে, “হয়েছে তোমার কান্না এবার চলো ডিনার করি।”

রাফি আর নন্দিতা ডিনার করে ছাদের এক কোণে বসে আছে। রাফি নন্দিতাকে‌ পেছন থেকে শক্ত করে জাড়িয়ে ধরে নন্দিতার চুলের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত। হঠাৎ করেই নন্দিতা বলে উঠে।

“দিয়া কোথায় আছে এখন?”

রাফি নন্দিতার কথায় বিরক্ত হয়ে বলে, “জানি না আর ওর কথা শুনতেও চাই না আমি। তাই ওর কথা শুনতে চাই না আমাদের মাঝে।”

নন্দিতা পেছন ফিরে বলে, “কিন্তু।”

রাফি নন্দিতার ওষ্টদ্বয়ের উপরে তর্জনী রেখে বলে, “কোনো কিন্তু না চুপচাপ থাকো।”

নন্দিতা আর কথা বাড়ায় না। অনেক রাত পর্যন্ত রাফি আর নন্দিতা এভাবে বসে রইলে।‌ কিন্তু হঠাৎ করেই রাফি নন্দিতাকে কোলে তুলে নিয়ে ছাদের চিলেকোঠার ঘরটার দিকে হাটা ধরে। আকস্মিক ঘটনায় মৃদু চিৎকার করে নন্দিতা রাফির গলা জাপটে ধরে। ভয়ে ভয়ে নন্দিতা রাফি পানে তাকালো রাফির চোখে মুখে অন্য কিছুর আভাস পাচ্ছে নন্দিতা, যেটা মেয়ে হয়ে ঠিকেই বুঝতে পারছে।

রাফি নন্দিতাকে কোলে করে এনে চিলেকোঠার ঘরটাতে নামায়। নন্দিতা ঘরের চারদিকটা দেখে অবাক হয়। চারিদিকে লাল গোলাপ, বেলিফুল আরো নাম না জানা ফুল দিয়ে সাজানো সারা ঘরটা। ছোট ছোট মোমবাতির আলোতে ঘরটা আলোকিত হয়ে আছে। রাফি দরজাটা শব্দ করে লাগিয়ে দেয়। দরজা লাগানোর শব্দ শুনে ইষৎ কেপে উঠে। রাফি নন্দিতাকে আলতো হাতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে।

“কেমন হয়েছে ঘর সাজানোটা?”

নন্দিতা নিচু গলায় বলে, “সুন্দর হয়েছে।”

রাফি নন্দিতাকে নিজের দিকে ঘুরায়। নন্দিতা মাথাটা নুয়ে রেখেছে। রাফি দু হাত দ্বারা নন্দিতার মুখ আবদ্ধ করে মুখ উপরে তুলে নন্দিতার কপালে গভীরভাবে ভালোবাসার‌ পরশ এঁকে দেয়। নন্দিতা রাফি ভালোবাসার পরশটা চোখ বন্ধ করে অনুভব করে। রাফি নন্দিতার বন্ধ করে রাখা চোখে চুমু দিয়ে নন্দিতার কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।

“আজকে যদি তোমাকে নিজের করে পেতে চাই তাহলে কি তুমি বাধা দিবে নন্দিতা। আমি না নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করে রেখেছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আর পারবো না সত্যি বলছি। যদি আজকে বাধা দাও তাহলে সত্যি আমি পাগল হয়ে যাবো। তাই প্লিজ বাধা দিও না। খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে তোমাকে এক্কেবারে গভীর ভাবে। যে ভালোবাসার গভীরতা মাপা যায় না শুধু অনুভব করা যায়।”

নন্দিতা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না, নিজের দু চোখের পাতা খুলে রাফির চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। রাফি শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে নন্দিতার দিকে। কিন্তু রাফির চোখের ভাষা সম্পূর্ণ ভিন্ন, বড্ড ছন্নছাড়া লাগছে দেখতে, ঘন ঘন ভারি নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে। নন্দিতা সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে ঢোক গিলে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিয়ে রাফির বুকে ধীরে ধীরে মাথা রেখে এক হাত দিয়ে রাফির পিঠ জড়িয়ে ধরো।রাফি মুচকি হাসি দিয়ে নন্দিতাকে কোলে তুলে নেয়। নন্দিতা চোখ বন্ধ করে আছে। লজ্জায় নন্দিতা চোখ মেলা তাকিয়ে থাকতে পারছে না। রাফি নন্দিতাকে বেড শুইয়ে দিয়ে নিজেও আধ শুয়া হয়ে নন্দিতার পাশে শুয়ে পড়ে। নন্দিতার বন্ধ দু চোখের পাতায় পুনরায় চুমু এঁকে দেয়। নন্দিতা রাফির শার্টের কলার শক্ত করে মুঠো বন্ধ করে নেয়। রাঈির পুরুষালী হাতের ছোঁয়া গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। আস্তে আস্তে দুজনে মাঝে সব আবরণ একে একে সরে যায়। নন্দিতার দু চোখ বেয়ে দু ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। নন্দিতার এ‌ই চোখের জল কষ্টের না বরং সুখের। আজকের চাঁদটাও লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রেখেছে নন্দিতা আর রাফির ভালোবাসা দেখে। এত দিনের, এত বছরের ভালোবাসা আজ দুজনের মিলনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ হল।

মাাঝ রাত, রাফির উনমুক্ত লোমশ বুকে নন্দিতা মাথা রেখে শুয়ে আছে। নন্দিতা লজ্জায় রাফির দিকে তাকাতে পারছে না। কিয়ৎক্ষণ আগে দুজনের মাঝে যা ঘটেছে তা বার বার চোখ ভাসছে নন্দিতার। রাফির প্রত্যেকটা ছোঁয়া নন্দিতার শরীরের বয়ে গেছে যা কোনো দিনেই ভুলার মতো না।

চারিদিক এখনও অন্ধকার হয়ে আছে। মোমবাতি গুলো নিভে গেছে। তবে জানলা দিয়ে চাঁদের আবছা আলো আসছে। রাফি নন্দিতার হাতের আঙ্গুলের মাঝে নিজের আঙ্গুল ঢুকিয়ে নন্দিতার হাতের পাতায় চুমু দিয়ে বলে,

“যন্ত্রণা হচ্ছে নন্দিতা। ব্যথা কিংবা আনকম্ফোর্টেবল।”

রাফির কথা শুনে নন্দিতার ইচ্ছে করছে মাটির নিচে চলে যেতে। এসব প্রশ্ন না করলেই কি নয়। নন্দিতাকে চুপ মেরে থাকতে দেখে রাফি পুনরায় বলে।

“কি হলো, কিছু জিঙ্গেস করছি তো?”

নন্দিতা নিচু গলায় বলে, “ঠিক আছি আমি।”

রাফি নন্দিতাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে।

“ধন্যবাদ জান। নিজেকে আমার কাছে এতটা গভীর ভাবে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য।”

নন্দিতা কিছু না বলে নিজেকে আরো গুটিয়ে নেয় রাফির বাহুডোরে। রাফি মুচকি হেসে নন্দিতার চুলের ভাঁজে হাত বুলাতে বুলাতে বলে।

“ঘুমাও। নিশ্চিন্তে ঘুমাও।”

________

চার বছর পর নন্দিতা ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ের পেছন পেছন দৌঁড়াচ্ছো আর ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটি তার ছোট ছোট পা দুটো ফেলে তার বাবার কাছে গিয়ে বাবার কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরে বলে।

“পাপা তুমি মাম্মাম কে বলো আমি এখন খাবো না।”

রাফি মুচকি হেসে বল, “কেন আম্মু খাবে না কেন?

“আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।

“তা বললে কি করে হবে! না খেলে তুমি বড় হবে কি করে?”

“খাবার খেলে কি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাবো।”

“হে তো। আমার নুফা খাবার খেলে জলদি বড় হয়ে যাবে।”

“ঠিক আছে তাহলে আমি খাবো।”

রাফি তার মেয়ে নুফাকে আদর দিয়ে দেয়। ঠিক সেই সময় নন্দিতা রুমে এসে রাগী গলায় বলে।

“রাফি তোমার এই পাজি মেয়েকে বোঝাও যাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়। আমি প্রতিদিন ওর পিছনে এমন ঘোড়ার মতো দৌঁড়াতে পারবো না বুঝলে।”

“আরে এভাবে বলছো কেন?”

“তো কিভাবে বলবো? সারা দিন ওর পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে জীবন শেষ আর তুমি বসে বসে বসে বলছো, এভাবে বলছো কেন?”

রাফি নুফাকে বলে, “নুফা আম্মু তুমি তোমার দাদুমনির কাছে যাও।তোমার মাম্মামকে একটু ঠান্ডা করি।”

নুফা চলে যেতেই রাফি নন্দিতার হাত ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দিয়ে বলে, “খুব জ্বালায় না আমার দুষ্টু মেয়েটা।”

“ওর থেকে তুমি বেশি জ্বালাও আমাকে।”

“যাহ বাবা আমি আবার কখন জ্বালালাম তোমাকে?”

“এই ছাড়ো তো আমাকে আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।”

“আগেই তো অনেক ভালো ছিলে, এখন এমন মেজাজটা এমন খিটখিটে করে রাখো কেন? আগে আমাকে ভয় পেতে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমাকে তোমায় ভয় পেতে হবে।”

“আগের দিন বাঘে খাইছে মশাই। এখন আপনাকে আর আমি ভয় পাই না।”

রাফি নন্দিতাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, “সত্যি ভয় পাও না?”

“না পাই না। এই ছাড়ো তো আমার কাজ আছে।”

রাফি আচকমকাই তোমার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দেয়। নন্দিতা ব্যথায় কঁকুড়ে ওঠে। গলায় তেজ এনে বলে।

“এটা কি করলে তুমি?”

রাফি কৌতুকের স্বরে বলে, “ভয় পাও না তাই ভয় দেখানোর চেষ্টা করলাম এই আর কি।”

“হয়েছে তোমার ভয় দেখানো এবার ছাড়ো।”

রাফি নন্দিতাকে না ছেড়ে নন্দিতার ডান হাতের আঙ্গুলের মাঝে নিজের আঙ্গুল গুলো ঢুকিয়ে ফিসফিস করে বলে।

“অনেক দিন রোমান্স করি না চলো না একটু রোমান্স করি।”

নন্দিতা রাফি বুকে ধাক্কা দিয়ে বলে, “শখ কত? এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে এখনও রোমন্স করতে চায়।”

রাফি বুক ফুলিয়ে বলে, “তো কি হয়েছে? এখন রোমান্স করে না হয় দু বাচ্চার বাপ হয়ে যাবো।”

“এই একদম না হে, একজনকে নিয়ে আমি খুব জ্বালায় আছি। আরেক জন আসলে আমি তাকে সামলাতে পারব না।”

“তোমাকে পারতে হবে।”

কথাটা বলে কোলে তুলে নন্দিতাকে বিছানায় রেখে দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে নন্দিতাকে বুকে সাথে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার জগতে ডুব দেয়। এভাবেই হাসি খুশিতে চলতে থাকে নন্দিতা আর রাফি সংসার জীবন।

______সমাপ্ত______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে