Revenge of love Part-14

0
1029

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_14

নন্দিতা ছাদের কড়া রোদের মাঝে দোলনাতে বসে আছে নজর তার দূর আকাশের দিকে। নন্দিতার এখনও মনে পড়ে সেই ভয়ংকর দিনটার কথা যে দিনটাতে রাফি‌কে তার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়ে ছিল। মাঝে মাঝে নন্দিতার মনে হয় এমন একটা দিন না আসলেও পারত তার জীবনে। এই দিনটা এসে তার জীবনটা এক্কেবারে তছনছ করে দিয়েছে। নন্দিতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। ভেসে ওঠে সেই বিভীষিকাময় ঘটনাটা।

“রাফি ভাইয়াকে এখানে আসতে বললি কেন হঠাৎ?”

সুহার কথা শুনে নন্দিতা নিচু গলায় বলে, “দরকার আছে।”

“তাহলে আমি চলে যাই।”

“না তুই থাক।”

নন্দিতার মলিন মুখখানার দিকে নজর ফেলে বলে, “কি হয়েছে নন্দিতা? তোকে এমন দেখাছে কেন?”

“কিছু হয় নি আমার।”

“তাহলে এমন দেখাছে কেন তোকে? কিছু তো একটা হয়েছে?”

নন্দিতা কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “বললাম তো কিছু হয় নি তারপরও এক কথা বার বার জিঙ্গেস করছিস কেন?”

নন্দিতার এভাবে রেগে যাওয়াতে বড্ড অবাক হয় সুহা। কিছু তো একটা হয়েছে নন্দিতার এটা বুঝতে পারছে সুহা কিন্তু কি হয়েছে এটা বুঝতে পারছে না। সুহা আর কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

কিছুক্ষণ পরেই রাফি আসে বাইকে করে। বাইকটা পাশে স্ট্যান্ড করে নন্দিতার কাছে এসে হাসি হাসি মুখ করে বলে।

“কি ব্যাপার ম্যাডাম এত জরুরি তলব? আর এই দুদিন কি এমন রাজকার্য করছিলেন যে আমাকে একটু টাইম পর্যন্ত দিতে পারেন নি।”

নন্দিতা কোনো কথা না বলে অসহায় মুখ করে রাফি দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। মন চাইছে রাফির বুকে মাথা রেখে একটু শান্তিতে কান্না করতে কিন্তু নন্দিতা এটা হয়ত চাইলেও পারবে না। তাই ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। রাফি নন্দিতার এমন চাওনি দেখে কোমল গলায় বলে।

“কি হয়েছে নন্দিতা? তোমাকে এমন লাগছে কেন? কত রাত ঘুমাও নি তুমি? চোখে মুখের এই অবস্থা কেন?”

রাফি নন্দিতাকে হাত বাড়িয়ে ছুঁতে যাবে সাথে সাথে নন্দিতা দু কদম পিছিয়ে যায়। রাফি নন্দিতার এমন করা দেখে বড্ড অবাক হয় সাথে সুহা কিছু অবাক হয়। কিন্তু পরক্ষণে রাফি বুঝতে পারলো পাবলিক প্লেস তাই হয়তো নন্দিতা পিছিয়ে গেছে। কিন্তু রাফির ভাবনা ভুল প্রমাণিত করে নন্দিতা বলে।

“আপনার সাথে আমি আর সম্পর্কটা কন্টিনিউ করতে পারবো না রাফি।”

নন্দিতার বলা কথাটা যেন রাফির কানে ঢুকলো না। মনে হচ্ছে যেন কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে। এমনটা তার নন্দিতা কোনো দিন বলতেই পারে‌ না। রাফি হেসে হেসে মাথা দুলিয়ে বলে।

“মজা করছো আমার সাথে তাই না তুমি নন্দিতা আর তুমি আমাকে আপনি করে কেন বলছো? তুমি তো আমায় তুমি বলে ডাকো।”

নন্দিতা গলার স্বর কঠিন করে বলে, “আমি কোনো মজা করছি না আপনার সাথে যা বলছি সত্যি বলছি।”

সুহা নন্দিতার বাহু ধরে বলে, “তোর মাথা ঠিক আছে নন্দিতা। কি যা তা বলছিস।”

নন্দিতা সুহার হাতটা নিজের বাহু থেকে সরাতে সরাতে বলে, “আমার মাথা একদম ঠিক আছে আর আমি যা বলছি সবটা সজ্ঞানে বলছি।”

রাফি শক্ত গলায় বলে, “তাহলে এত দিন যা ছিলো সবটাই কি অভিনয় ছিল তোমার।”

নন্দিতা ঢোক গিলে বলে, “ঠিক তাই সবটাই আমার অভিনয় ছিল।”

“স্রেফ অভিনয় ছিল আর কিছু ছিল না তোমার মনে আমার জন্য।”

“না আর কিছু ছিল না।”

রাফি মাথা ঘুরিয়ে চারপাশটায় নজর বুলিয়ে নিজেকে শান্ত রেখে বলে, “ঠিক আছে মানলাম তুমি অভিনয় করেছো আমার সাথে। কিন্তু কেন করলে এমনটা আমার সাথে? আমার মন নিয়ে খেলা করে তুমি কি পেলে। আনসার মি?”

শেষের কথাটা জোরে বলে উঠে রাফি। নন্দিতা চোখ বন্ধ করে নিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে, “এটা একটা বাজি ছিল।”

রাফি হতভম্ব হয়ে বলে, “বাজি। আমার সাথে তুমি বাজি ধরে সম্পর্ক তৈরি করেছো।”

নন্দিতা নিচু গলায় বলে, “হুম।”

রাফি এবার রেগে বলে, “আমার দিকে ফিরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে যে এটা বাজি ছিল আর কার সাথে তুমি বাজি ধরেছো?”

নন্দিতা সাথে সাথে রাফি দিকে ফিরে চোখে চোখ রেখে বলে, “হুম এটা একটা বাজি ছিল আর আমি সেই বাজিতে জিতেছি। তাই আমার মনে হয় আপনার সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক না রাখাই ভালো।”

রাফি দু কদম পিছিয়ে যায়। পা দুটো ভেঙ্গে আসছে রাফির। নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাফি নন্দিতার দিকে। নন্দিতা রাফি দিক থেকে নজর সরিয়ে বলে।

“এবার বিশ্বাস হয়েছে তো আমার কথা। এবার আমি আসি আমার অনেক কাজ আছে।”

নন্দিতা চলে যেতে নিলে রাফি নন্দিতার হাত চেপে ধরে বলে গম্ভীর গলায় বলে, “এত সহজে তোমাকে ছেড়ে দিব ভাবলে কি করে?”

“হাতটা ছাড়ুন প্লিজ।”

“কার সাথে তুমি বাজি ধরেছো ওর নামটা বলো?”

কথাটা বলে আরো শক্ত করে ধরলো নন্দিতার হাত। নন্দিতা কোনো কথা বলছে না ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রাফির দেওয়া ব্যথাটা‌ গ্রহণ করছে। নন্দিতাকে চুপ থাকতে দেখে রাফি কন্ঠে ক্রোধ এনে বলে।

“আনসার মি।”

নন্দিতা কিঞ্চিত কেপে উঠে। কিন্তু তারপরও নিজেকে শক্ত করে বলে, “হাতটা ছাড়ুন না হলে কিন্তু আমি চিৎকার করতে বাধ্য হব।”

নন্দিতার কথা শুনে সাথে সাথে হাত ছেড়ে দেয় রাফি। রাফির সত্যি কিছু বলার শক্তি‌‌ পাচ্ছে না। নন্দিতা তাকে এভাবে ঠকাবে কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি।

নন্দিতা বলে, “ভুল যান আমাকে আর যা কিছু‌ হয়েছে আমাদের মাঝে সেটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যান।”

রাফি অধৈর্য গলায় বলে, “ঠিক আছে এত দিন যা কিছু হয়েছে সেটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাবো। চলো আমরা আবার নতুন করে না হয় সবটা শুরু করি।‌‌ প্লিজ নন্দিতা আমি সত্যি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”

নন্দিতা চোখ‌ দুটো বন্ধ করে বলে, “সরি আমার পক্ষে‌ সম্ভব নয়।”

রাফি পাগলের মতো বলে, “কেন সম্ভব নয়? তুমি চাইলে সব কিছু সম্ভব। আমি ভুল যাবো‌ যে তুমি বাজি ধরে আমার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলে।”

নন্দিতা এবার কি বলবে বুঝতে পারছে না কিন্তু যে করেই হোক রাফির মন থেকে তার নামটা মুছে দিতে হবে। নন্দিতা অন্য দিকে ফিরে বলে।

“আমার সাথে অন্য আরেক জনের সম্পর্ক আছে আর আমি তাকে খুব ভালোবাসি। তাই অন্য কোনো পুরুষকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

রাফি একের পর এক শক খাচ্ছে নন্দিতার কাছ থেকে। রাফি দুর্বল গলায় বলে।

“কে সে? নাম কি তার?”

নন্দিতা নাম কি বলবে বুঝতে পারছে না। তখনেই নজর পড়ে একটা পোস্টারে সোহান লেখে আর সাথে সাথে বলে, “সোহান, সোহান তার নাম।”

সুহা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নন্দিতার দিকে। বিশ্বাসেই হচ্ছে না এটা যে নন্দিতা। নন্দিতা যে এত বড় মাপের খেলোয়ার এটা আজকে বুঝতে পারল নন্দিতার কার্যকলাপ দেখে। রাফি ধরা গলায় বলে।

“তুমি কি এক বারের জন্যও আমাকে ভালোবাসো নি নন্দিতা।”

“না বাসি নি।”

“আমায় কেন ভালবাসলে না তুমি নন্দিতা? কি ভুল ছিলো আমার? এতটা পীড়া দিও না আমাকে, আমি যে সইতে পারবো না। খুব যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ভেতর।”

“ভুলে যান আমাকে এতে আমাদের দুজনেরই মঙ্গল।”

কথাটা বলেই নন্দিতা দৌঁড়ে চলে যায়। রাফি নন্দিতার যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অজান্তেই দু ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে।

“ভাবি তোমাকে মা ডাকছে।”

রাফার কন্ঠ কানে ভেসে আসতেই চোখ মেলে বর্তমানে ফিরে এসে রাফার দিকে তাকিয়ে নন্দিতা বলে।

“হুম।”

“তোমাকে মা ডাকছে।”

নন্দিতা ঢোক গিলে বলে, “তুমি যাও আমি আসছি।”

“ঠিক আছে।”

নন্দিতা আর কিছুক্ষণ ছাদে থেকে নিচে চলে যায়।

_______

অতিতের সব কথা শুনে নিজেকে এখন দোষারুপ করছে রাফি। যদি ওর ফোন ওই দিন বন্ধ না থাকতো তাহলে হয়তো এমন‌ একটা দিনটা দেখতে হতো না। রাফি অসহায় ভাবে চেয়ারে বসে আছে।

সুমন বলে, “ভাইয়া নন্দিতা ওই দিন ভেঙ্গে পড়েছিলো, ও ওর বাবা মা’র চিন্তা করেই এমনটা করেছে। হয়তো এর জন্য তুমিও অনেক কষ্ট পেয়েছো কিন্তু নন্দিতা এর থেকেও দ্বিগুন কষ্ট পেয়েছে। প্লিজ ভাইয়া ওকে আর কষ্ট পেতে দিও না। তোমার কাছে এত টুকু চাওয়া আমার।”

রাফি নরম গলায় বলে, “তাহলে ওই সোহান নামের ছেলেটা কে ছিলো?”

“সোহান নামক মানুষটা সম্পূর্ণ মিথ্যে ছিলো। নন্দিতার জীবনে তুমি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ ছিলো না। তোমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য জাস্ট ওই নামটা আর বাজি ধরার কথাটা ব্যবহার করেছে এর বেশি আর কিছু না।”

রাফি নিচু গলায় বলে, “ওওও।”

“আচ্ছা ভাইয়া ওই দিয়া কি করেছে এর পর? মানে নন্দিতা চলে যাওয়ার পরে ও নিশ্চয়ই কিছু তো একটা করেছে।”

“নন্দিতা চলে যাওয়ার পরে আমার জীবনে কোনো মেয়ে আসে নি সুমন। আর দিয়া মেয়েটা ভাবলো কি করে নন্দিতা চলে গেলেই ওকে আমি আমার জীবনে ঠাই দেবো। ওর সাবজেক্ট আমি অনেক আগেই ক্লোজ করে দিয়েছে। এখন ও কোথায় আছে আমি সেটাও জানি না। যদি কোনো দিন জানি ও কোথায় আছে তাহলে এর মাশুল ওকে দিতে হবে। আমার জীবনের পাঁচটা বছর নষ্ট করে দিয়েছে ও এর শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে।”

সুমন কিছু বলতে যাবে সাথে সাথে রাফি বলে, “তুমি এখন যাও সুমন। আমাকে একটু একা থাকতে দাও আর তোমার চাকরি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না চাকরিটা তোমার হবে।”

সুমন আর কিছু না বলেই চলে যায়।‌ রাফি নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু শত চেষ্টা করেও পারছে না। রাগে, দুঃখে রাফি টেবিলের উপর যা ছিলো সব কিছু ছুড়ে ফেলে দেয় ফ্লোরে আর জোরে চিৎকার করে উঠে। সাউন্ড প্রুভ থাকার কারনে অফিসের কেউ কিছু শুনতে পায় নি। রাফি দু হাত দিয়ে মাথার চুল আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নয়। নিজেকে স্বাভাবিক করে কেবিন থেকে বের হয়। যাওয়ার আগে ম্যানেজারকে বলে যায় কেবিনটা ঠিক করার জন্য। রাফির ইচ্ছে করছে জুটে নন্দিতার কাছে গিয়ে নন্দিতাকে শক্ত জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু আপাতত রাফি তা করতে পারবে না কারন রাফির অনেক গুলা ইম্পর্টেন্ট মিটিং আছে যেগুলাতে রাফির নিজেকেই থাকতেই হবে না হলে কোম্পানির বড়সড় লস হয়ে যেতে পারে। তারপরও রাফি অনেক তাড়াতাড়ি মিটিং গুলা শেষ করে সাড়ে নয়টার ভেতরে বাড়িতে আসে তা দেখে বাড়ির লোক কিছুটা অবাক হয় কারন রাফি অফিস থেকে এগারোটা বারটার আগে আসে না। রাফি বাড়িতে এসেই বলে।

“মা নন্দিতা কোথায়?”

হেনা বেগম অবাক হওয়ার ভান ধরে বলেন, “কি রে আজকে তুই এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলি যে?”

রাফি অধৈর্য হয়ে বলে, “নন্দিতা কোথায় এটা আগে বলো? ”

“কোথায় আবার ঘরেই আছে, আসলে ওর নাকি মাথাটা ব্যথা করছে তাই…”

রাফি মায়ের কথা পুরোটা না শুনেই ঘরের দিকে দৌঁড় দিলো। রাফিকে এভাবে চলে যেতে‌ দেখে হেনা বেগম বলেন।

“আরে কথাটা শুন, ছেলের আমার হলো টা কি আবার হঠাৎ করে? ”

রাফি রুমে ঢুকে দেখে নন্দিতা ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে আছে। এই ক দিন নন্দিতা ফ্লোরে আর রাফি বেডে থেকে আসছে। রাফি নন্দিতাকে দু‌‌ এক বার ডাকে কিন্তু নন্দিতা সাড়া দেয় নি বলে আর ডাকে নি। রাফি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। নন্দিতা এখনও জেগেই আছে কিন্তু ইচ্ছে করেই রাফির ডাকে সাড়া দেয় নি। মূলত নন্দিতার কথা বলতে একদম ভালো লাগছে না শরীর খুব দুর্বল লাগছে আর এক সময় নন্দিতা ঘুমিয়েও পড়ে। রাফি ফ্রেশ হয়ে নিজেই কফি নিয়ে আসে নিচ থেকে। রাফি ডিনার করেই এসেছে মিটিং করার সময়। রাফি নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না কোনোমতে। নন্দিতার কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে তাই নিজেকে স্থির রাখার জন্য কিছু ফাইল নিয়ে বসে কাজের মাঝে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে। রাফি এক সময় কাজ করতে করতে সোফায় মাথাটা হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।

গভীর রাতে কারো আর্তনাদ শুনে রাফির ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাফি আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কিসের শব্দ। রাফির নজর নন্দিতার দিকে যেতেই দেখে নন্দিতা শীতে কাপছে। রাফি তাড়াতাড়ি করে নন্দিতার কাছে এসে বলে।

“নন্দিতা কি হয়েছে তোমার?”

রাফি নন্দিতার গায়ে মাথায় হাত দিয়ে বলে, “একি ওর সারা শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।”

রাফি তাড়াতাড়ি করে‌ নন্দিতাকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়েই দেয় আর নন্দিতার উপরে একটা ভারী কম্বল দিয়ে দেয়। রাফি কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দুটো বাজে আর এখন বাড়ির সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রাফি ফাস্ট এইড বক্স থেকে ঔষধ নিয়ে নন্দিতা কাছে এসে বলে।

“নন্দিতা একটু সাড়া দাও তোমার ঔষধ খাওয়া দরকার। প্লিজ জান একটু সাড়া দাও।”

নন্দিতা পিটপিট চোখে রাফির দিকে তাকিয়ে বলে,”তু… তুমি এসেছো রাফি?”

রাফি মুচকি হেসে বলে, “হু।”

“খুব ক,, ষ্ট হচ্ছে আমার।”

“কোথায় কষ্ট হচ্ছে জান?”

নন্দিতা নিজের হাতটা বুকের বা পাশে রেখে বলে, “এখানে খুব কষ্ট হচ্ছে।”

রাফি সাথে সাথে নন্দিতার হাতের উপরে হাত রেখে বলে, “সরি জান আ.. ম রিয়েলি সরি। খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমাকে আর কষ্ট দিবো না প্রমিজ।”

রাফি নন্দিতাকে খুব কষ্ট করে ঔষধটা খাইয়ে দেয়। নন্দিতাকে ঔষধ খাইয়ে দেওয়ার পরও রাফি নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না। বার বার নন্দিতার কপালে হাত রেখে জ্বর কমছে কি না তা চেক করছে। এক সময় রাফি ধৈর্য হারা হয়ে ওয়াশরুম থেকে মগ দিয়ে পানি নিয়ে আসে আর রুমাল ভিজিয়ে নন্দিতার কপালে জলপট্টি দেওয়া শুরু করে। রাফি চিন্তিত হয়ে বলে।

“এতটা জ্বর আসলো কি করে ওর?”

রাফি টেবিল ল্যাম্পের আলোতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে নন্দিতার গালটা এখনো হালকা লালচে হয়ে আছে। রাফি নন্দিতার গালে নিজের হাতটা রাখতেই অনুভব করে গলাটা আগুনের মতো গরম হয়ে আছে নন্দিতার।

“সরি জান আর আঘাত করবো না তোমাকে।”

রাফি কথাটা বলে নন্দিতার গালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে চলে আসার সময় চোখ থেকে নিজের আজান্তেই দু ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ে সেই নোনা জল গিয়ে পড়ে নন্দিতার চোখে। চোখের উপর জল পড়তেই নন্দিতা চোখ মেলে তাকিয়ে অস্পষ্ট গলায় বলে।

“পানি,, পানি খাবো।”

“কি হয়েছে নন্দিতা? পানি খাবে দাঁড়াও দিছি।

রাফি নন্দিতাকে আধ শুয়া করে পানি খাইয়ে দিয়ে বলে।

“ক্ষিধে পেয়েছে কিছু খাবে।”

“নাহ খাবো না কিচ্ছু একটা কথা রাখবে আমার।”

“কি কথা বলো?”

“একটু জড়িয়ে ধরবে আমাকে শক্ত করে প্লিজ।”

রাফি সাথে সাথে নন্দিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কোমল স্বরে বলে।

“খুব কষ্ট হচ্ছে জান তাই না।”

“উহু! কষ্ট হচ্ছে না আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না।”

রাফি নন্দিতার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, “ঘুমিয়ে পড়ো।”

জ্বরের ঘোরেও নন্দিতা কয়েকটা কথা বলে রাফির বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

#চলবে_____

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে