#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_13
রাফি অফিসে নিজের কেবিনে বসে আছে আর এক এক করে ইন্টারভিউ নিচ্ছে। এমন সময় একজন কেবিনে আসে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য। রাফি আগের জনের অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম গুলো আরেক বার চেক করতে করতে বলে।
“বসুন আর আপনার পেপার গুলা দেন।”
রাফি মাথা তুলে উপরের দিকে তাকিয়ে যাকে দেখে তাতে কিছুটা অবাক হয়ে বলে।
“তুমি! তুমি এখানে?”
রাফির সামনে বসে থাকা ছেলেটা বলতে শুরু করে, “রাফি ভাইয়া তুমি এখানে! তুমি জানো তোমাকে আমার কত কিছু বলার আছে।”
রাফি ভ্রু কুচকে বলে, “কত কিছু বলার আছে মানে? কি বলার আছে তোমার সুমন।”
“নন্দিতার বিষয়ে।”
“নন্দিতার বিষয়ে মানে! ওর বিষয়ে কি বলার আছে তোমার?”
“অনেক কিছু বলার আছে। আর তার আগে এটা বলো নন্দিতা কোথায় আছে সেটা কি তুমি জানো?”
রাফি তাচ্ছিল্য হেসে বলে, “আর কোথায় সব সময় আমার চোখের সামনেই থাকে। যাকে মনে প্রাণে চাইতাম তাকে পেয়েও আমি আজ তাকে পাই নি। ছেড়ে তো দিয়েছিলাম আমি নন্দিতাকে তাহলে ও কেন আবার আমার লাইফে ফিরে এলো আর ওই ছেলেটা ওকে ছেড়ে দিলো কেন? ও তো বলেছে ও আমাকে না ওই ছেলেটাকে ভালোবাসে তাহলে ওরা আলাদা হলো কেন?”
সুমন হতভম্ব হয়ে বলে, “মানে নন্দিতা তোমার চোখের সামনে থাকে মানে ঠিক বুঝলাম না। আর আমি এটাও বুঝতে পারছি না নন্দিতা তোমার লাইফে আবার এসেছে মানে ও এখন কোথায় আছে? ওর সাথে আমি অনেক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু আমি প্রতিবারেই ব্যর্থ হয়েছি।”
রাফি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।”
“হোয়াট? কিভাবে মানে কিভাবে হলো এটা? তাহলে কি তোমাদের মাঝে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেছে। তোমাকে কি সবটা সত্যি বলে দিয়েছে নন্দিতা।”
রাফি অবাক হয়ে বলে, “সত্যি! কোন সত্যির কথা বলছো তুমি সুমন?”
“যে সত্যিটা জানলে হয়তো তোমার আর নন্দিতার মাঝে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাবে।”
“যা বলার ক্লিয়ার করে বল সুমন।”
“তোমার জীবন থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে নন্দিতা।”
“বাধ্য হয়েছে মানে, কার জন্য বাধ্য হয়েছে?”
“দিয়া! দিয়াই বাধ্য করেছে এমনটা করতে। কিন্তু নন্দিতারও হাত পা সব দিক থেকে বাঁধা ছিলো তাই ও বাধ্য হয়ে দিয়ার সব শর্ত মেনে নিয়েছে।”
রাফি কপালে দুশ্চিন্তা বলিরেখা ফেলে বলে,”দিয়া বাধ্য করেছে মানে? দিয়া কি এমন করেছে যে ও ওর ভালোবাসাকে এভাবে বলি দিতে বাধ্য হলো।”
“সব বলবো ভাইয়া আমি আজকে তোমাকে। তোমাকে এই কথা গুলা আমি অনেক বার বলতে চেয়েছি কিন্তু তোমার আর নন্দিতার ভয়ে বলতে পারি নি। কিন্তু আজ যখন সুযোগ পেয়েছি সব বলবো তোমাকে। হয়তো এই সত্যিটা জানার পরে তোমাদের মাঝে দূরত্বটা কমে যাবে সারা জীবনের জন্য।
রাফি অধৈর্য গলায় বলে, “এত কথা না বলে মেইন কথায় আসো সুমন।”
রাফি সুমনের কথা শুনার জন্য ইন্টারভিউটা আপতত অন্য এক কেবিনে শিফট করার অর্ডার দেয় আর ম্যানেজার সেই ইন্টারভিউটা নিছেন।
সুমন বলা শুরু কর, “ওই দিন আমি হাসপাতালে যাই আমার কিছু টেস্ট করার জন্য। আর টেস্ট করে যখনেই হাসপাতাল থেকে বের হতে নিবো তখনেই দেখি নন্দিতা ওর বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছে। নন্দিতার কান্না করা চেহারাটা আমার চোখের সামনে এখনও ভাসে। আমি আবারো ফিরে যাই হাসপাতালে জানার জন্য কি হয়েছে। আর তখন নন্দিতা আমাকে দেখে আমার কাছে এসে বলে।
অতিত……
“দেখো না সুমন বাবার কি হয়ে গেলো একটু আগেই ভালো ছিলো হঠাৎ করেই।”
কথাটা বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে উঠে নন্দিতা। সুমন নরম গলায় বলে।
“তুমি চিন্তা করো না আঙ্গেল ঠিক হয়ে যাবেন,ডক্টর কি বলেছেন?”
“চেক করছে বাবাকে।”
“তুমি যদি এভাবে ভেঙ্গে পড়ো তাহলে আন্টিকে কে সামলাবে বলো তোমাকে শক্ত থাকতে হবে তো।”
“গতকালকে বাবা কতটা স্ট্রং ছিলো। গ্রাম থেকে আমার জন্য কত কিছু নিয়ে এসেছে একা হাতে করে আর এখন আমার স্ট্রং বাবা’টা বেডে শুয়ে যন্ত্রণা ভোগ করছে। এখানে আসাটাই বাবার একদম উচিত হয় নি। বাবা যদি আজ এখানে না আসতো আমার সাথে দেখা করতে তাহলে হয়তো এমন কিছুই হত না। সব দোষ আমার, আমার জন্যই বাবার আজ এই অবস্থা।”
“তুমি শুধু শুধু কেন নিজেকে দোষারুপ করছো নন্দিতা? আর দেখো আঙ্গেল যদি গ্রামে থাকাকালিন এই দুর্ঘটনাটা হত তাহলে গ্রাম থেকে হাসপাতালে আসতে অনেকটা সময় লেগে যেত। যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে এখন আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।”
কিছুক্ষন পরেই ডাক্তার বেরিয়ে আসেম কেবিন থেকে। ডাক্তারকে দেখে নন্দিতা ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলে।
“বাবা কেমন আছেন স্যার? ওনার খারাপ কিছু হয় নি তো।”
“আপনার বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তাই যত সম্ভব তাড়াতাড়ি সার্জারি করতে হবে। আর এই সার্জারি করার জন্য প্রায় এক লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা তো লাগবেই মাস্ট।”
নন্দিতা কাঁপাকাঁপা গলায় বলে, “কি বলছেন এত টাকা?”
“প্লিজ তাড়াতাড়ি টাকার ব্যবস্থা করুন পেশেন্টের অবস্থা ভালো না।”
কথাটা বলেই ডাক্তার চলে যান। নন্দিতা কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। পা দুটি ভেঙ্গে আসছে, ধপ করে করিডোরে রাখা বেঞ্চে বসে পড়ে। এত তাড়াতাড়ি এত গুলা টাকা কোথা থেকে করবে। অন্য দিকে নন্দিতা মায়ের জমেলা বেগমের অবস্থাও খারাপ হচ্ছে স্বামীর এমন অবস্থা দেখে। তাই ওনাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে যেন বেশি টেনশন না করতে পারে। সুমন নন্দিতার পাশে দাঁড়িয়ে বলে।
“কি করবে এখন? রাফি ভাইয়াকে কল দাও এক মাত্র ভাইয়া যদি পারে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করতে।”
রাফিকে অনেক বার কল দেওয়া হয়েছে কিন্তু ফোন বন্ধ। নন্দিতা চিন্তিত হয়ে বলে।
“কি করবো এখন আমি? এত গুলা টাকা কোথায় পাবো আমি?”
হঠাৎ করেই একটা মেয়েলি কন্ঠে ভেসে আসে, “টাকা লাগবে তোমার নন্দিতা।”
নন্দিতা কথাটা শুনে মানুষটার দিকে তাকিয়ে দেখে দিয়া দাঁড়িয়ে আছে বাকা হেসে। দিয়া পুনরায় বলে।
“কি নন্দিতা বাবাকে সুস্থ করতে চাও!”
নন্দিতা বসা থেকে উঠে বলে, “তুমি!”
“হুম আমি! সবটা শুনেছি আমি দাঁড়িয়ে থেকে তোমার এখন টাকার প্রয়োজন তোমার বাবাকে সুস্থ করে তুলতে তাই তো। তুমি যদি চাও সেই টাকাটা আমি তোমাকে দিতে পারি।”
নন্দিতা দিয়ার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “তুমি কেন টাকা দিবে আমাকে?”
দিয়া দু কদম এগিয়ে এসে দু হাত ভাঁজ করে বলে, “তুমি নিশ্চয়ই জানো নিজের স্বার্থ ছাড়া কেউ কিছু করে না। এখন আমি যেহেতু তোমাকে এত গুলা টাকা দিতে চাইছি তার মানে এর পেছনে নিশ্চয়ই একটা স্বার্থ লুকিয়ে আছে আমার।”
“আমার সুস্থ করার পেছনে তোমার কি স্বার্থ আছে?”
দিয়া বাকা হেসে বলে, “রাফি! ও আমার স্বার্থ।”
নন্দিতা ভ্রু কুচকে বলে, “মানে।”
“তোমার বাবার সব ট্রিটমেন্টের টাকা আমি দিবো বিনিময়ে রাফিকে ছেড়ে দিতে হবে তোমায়।”
নন্দিতা দিয়ার এমন কথা শুনে শক্ত গলায় বলে, “কি বলছো কি তুমি এসব? ওকে আমি কোনো দিন হারাতে পারবো না।”
“ওকে ফাইন! তাহলে বাবা আর মাকে হারাতে প্রস্তুত হয়ে থাকো। ভেবে দেখো নন্দিতা তোমার বাবা মারা গেলে তোমার মায়ের কি হবে। ওনি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবেন। তখন তুমি তোমার মায়ের কষ্টটা সহ্য করতে পারবে তো মেয়ে হয়ে হয়তো পারবে না কষ্ট টা সহ্য করতে তাই না।”
নন্দিতা মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে সাথে সাথে দেয়াল ধরে ফেলে। দিয়ার প্রত্যেকটা কথা চোখের সামনে বাস্তব চিত্র হয়ে ভেসে উঠছে। সত্যি তো বাবার যদি কিছু হয়ে যায় মায়ের কি হবে? মাকে কি করে নন্দিতা সান্ত্বনা দিবে যেখানে নন্দিতা নিজেকে শক্ত রাখতে পারবে না। জন্মদাতা বাবা মায়ের কথা চিন্তা করে না হয় নিজের কয়েক মাসের ভালোবাসাকে বলি দান দিলো। নিজেই না হয় একা কষ্ট ভোগ করলো তবুও তো চোখের সামনে বাবা মাকে কষ্ট পেতে দেখতে হবে না। কিন্তু রাফি রাফির কি হবে? হয়তো কয়েকদিন কষ্ট ভোগ করবে তারপর সময়ের সাথে নন্দিতাকে নিজের স্মৃতি থেকে মুছে ফেলে দিবে।
নন্দিতা দু চোখের নোনা জল মুছে বলে, “আমি রাজি তোমার সব শর্তে। কিন্তু তার বিনিময়ে আমার বাবার সার্জারি করার সকল ব্যবস্থা করে দিবে। কিন্তু এই টাকাটা আমি ধার হিসেবে নিলাম সময় হলে সবটা ফিরিয়ে দিবো।”
দিয়া মুচকি হেসে বলে, “কাউকে দান করে দেওয়া জিনিস আমি ফিরিয়ে নেই না।”
নন্দিতা বড্ড অপমানিতবোধ করলো কিন্তু নন্দিতাও দিয়াকে এই কথার প্রেক্ষিতে বলে, “আমিও আমার ভালোবাসাকে দান করলাম তোমায়। জানি না সেই ভালোবাসা আদৌ তোমাকে মেনে নিবে কিনা। কিন্তু আমি চাইব আমার সমস্ত স্মৃতি তুমি যেন তার মস্তিষ্ক থেকে মুছে দিতে পারো।”
দিয়া বিরক্ত হয়ে বলে, “এটা তোমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তুমি বরং তোমার বাবা মায়ের চিন্তা করো।”
সুমন বলে, “নন্দিতা তুমি যা করতে যাচ্ছো ভেবে করছো তো।”
নন্দিতা ঢোক গিলে বলে, “মা বাবার জন্য এই টুকু করতে হবে আমাকে।”
এরপর নন্দিতা আর কিছু না ভেবে দিয়ার সব শর্তে রাজি হয়ে যায় শুধু বাবা মায়ের জন্য আর তার বিনিময়ে রাফিকে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে হয়। রাফির মন থেকে নিজেকে সারা জীবনের জন্য মুছে দেওয়ার জন্য নন্দিতা খুব বাজে একটা নাটক করে বসে। যেই নাটকে নন্দিতা সফলও হয়। এর এক মাস পরেই মজনু আহমেদ পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হতেই গ্রামে চলে যায় নন্দিতা এক্কেবারের জন্য। এর পরের বছর নন্দিতা ভার্সিটির ভর্তি বাতিল করে গ্রামের কলেজে অনার্স ফাস্ট ইয়ারে এডমিশন নিয়ে নেয়।
#চলবে_____