#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_11
রাত এগারোটা চল্লিশ বাজে নন্দিতা তখন এসাইনমেন্ট করতে ব্যস্ত। এই রাফির কথা চিন্তা করতে করতে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো এসাইনমেন্টের কথা কিন্তু যখন সুহা ফোন দিয়ে ওকে আর রাফিকে নিয়ে মজা করছিলো তখন কথার মাঝে এই এসাইনমেন্টের কথাটা মনে পড়ল। নন্দিতা যখন এসাইনমেন্ট করতে ব্যস্ত তখন হঠাৎ করেই ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠে। নন্দিতা ভালো করে নাম্বারটা চেক না করে বা হাত দ্বারা কানে ফোন ধরে বলে।
“হ্যালো! কে বলছেন?”
“আমার এগারো সংখ্যার নাম্বারটা এখনো সেভ করো নি তুমি তোমার ফোনে? মনে বহুত কষ্ট পাইলাম নন্দিতা।”
নন্দিতা রাফি কন্ঠস্বরে শুনে সাথে সাথে লেখা থামিয়ে বলে, “আপনি।”
“হুম আমি। একটু বারান্দায় আসো।”
নন্দিতা ভ্রু কুচকে বলে, “বারান্দায় আসবো মানে?”
পরক্ষণে পেছনে ফিরে ঘুমন্ত মাকে দেখে ফিসফিস করে বলে, “বারান্দায় আসবো এখন কেন দুঃখে?”
রাফি গলার স্বর নরম করে বলে, “তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে নন্দিতা।”
নন্দিতা অবাক হয়ে বলে, “মানে ঠিক বুঝলাম না। আপনি ঠিক কোথায় আছেন এখন?”
“তোমার বাসার নিচে।”
“কিহ?”
উত্তেজনার বশে আবারো জোরে বলে উঠে কথাটা কিন্তু পরক্ষণে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“এত রাতে আপনি এখানে কি করছেন হুম? মানুষজন দেখলে কি ভাববে?”
“এখানে মানুষজনের ভাবার কি আছে আজব। হুম মানুষজন তখনেই কিছু ভাবতো যখন আমি তোমাকে আমার কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতাম কিন্তু আমি তো একাই বসে আছি তাই মানুষজনের এখানে ভাবার মতো কিছু হয় নি বুঝলে মিস নন্দিতা।”
নন্দিতা তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। এই লোক দিনকে দিন অসভ্য আর লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে। একে এখানেই থামাতে হবে না হলে নন্দিতার ঘাড়ে উঠে নাচবে আর কয় দিন পরে দেখা যাবে।
“আপনার এসব অসভ্য কথাবার্তা বন্ধ করে চুপচাপ এখান থেকে যান অনেক রাত হয়েছে।”
নন্দিতার কথার প্রত্যুত্তরে কিছু বলল না রাফি। বরং ভেসে আসলো পুরুষালি ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ। নন্দিতাও আর কোনো কথা বলল না। দুজনে একে অন্যের ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে ব্যস্ত। কিছুটা সময় নিরব থাকার পরে ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে রাফি বলে উঠে।
“নন্দিতা।”
গভীর মাদকতাময় কন্ঠে ডেকে উঠলো রাফি। রাফির এমন কন্ঠ শুনে নন্দিতার কানে ধরে রাখা হাতটা খানিকটা কেপে উঠলো। শুকনো ঢোক গিলল। পেটের ভেতরে থাকা রঙিন প্রজাপতিরা পাক খেতে শুরু করলো। নন্দিতা আনমনেই নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো দাঁত দ্বারা। পুরুষ মানুষের কন্ঠে যে এতটা মাদকতা মিশে থাকতে পারে রাফির কন্ঠ না শুনলে বুঝতেই পারতো না নন্দিতা। নন্দিতার কোনো সাড়া না পেয়ে রাফি ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আবার ডাকলো।
“নন্দিতা কথা বলো প্লিজ।”
নন্দিতা কিছুক্ষণ ঠোঁট চেপে ধরে রেখে ছোট করে উত্তর দেয়, “হু।”
“একটি বার বারান্দায় আসবে প্লিজ।”
নন্দিতা ধীরে ধীরে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। বারান্দার দরজার কাছে এসে পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে রাস্তার দিকে তাকালো আসলেই কি রাফি এসেছে কি না। কিন্তু না রাফি সত্যি এসেছে মুখটা দেখা যাচ্ছে শুধু। নন্দিতা গুটিগুটি পায়ে এসে বারান্দায় দাঁড়ালো। নিচেে দিকে তাকাতেই রাফিকে স্পষ্টভাবে দেখতে পেলো সাদা শার্ট পড়ে কানে ফোন রেখে বাইকের উপরে বসে আছে আর নজর বারান্দার দিকে। রাফি নন্দিতাকে দেখে কোমল গলায় বলে।
“বারান্দার লাইট ওন করো।”
কিন্তু পরক্ষণে রাফি আবার বলে, “না থাক লাইট ওন করতে হবে না তোমার ফোনের পাওয়ার বাটনে চাপ দাও। ফোনের সেই আলো দিয়ে না হয় তোমাকে দেখলাম।”
নন্দিতা মুচকি হাসে রাফি কথা শুনে। রাফির কথা অনুযায়ী নন্দিতা তাই করলো। রাফি নন্দিতার গালের এক সাইড হালকা একটু দেখতে পেলো। রাফি বারান্দার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে।
“আমার সাথে লং ড্রাইভে যাবে নন্দিতা।”
নন্দিতা হকচকিয়ে উঠলো। এই লোক বলে কি? একে তো রাত বিরাতে এখানে এসে তাকে বিরক্ত করছে এখন তাকে বলছে লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য। রাফি পুনরায় আবার বলা শুরু করে।
“জানো রাতে যখন বাইক নিয়ে বের হই তখন কত গুলা কাপল চোখে পড়ে, কত সুন্দর করে মেয়েটি তার প্রেমিকের পিঠে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে প্রেমিককে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখে। মনে হয় যেন এটাই তার জন্য সুখের স্থান। কিন্তু দেখো আমি যাকে আমার প্রেমিকা ভেবে আসছি সে কি আদৌ আমাকে তার প্রেমিক হিসেবে মেনে নিয়েছে কিনা সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।”
নন্দিতা শুকনো ঢোক গিলে বলে, “আপনি বাসায় যান অনেক রাত হয়েছে।”
রাফি নিঃশব্দে হেসে বলে, “তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো নন্দিতা?”
নন্দিতা চুপসে গেলো এই কথাটা শুনে। সত্যিই তো তার তো এখন বিরক্ত হওয়ার কথা রাফির উপরে। কিন্তু তা না হয়ে বরং ভালো লাগছে রাফির সাথে কথা বলতে। রাফি আবার বলে।
“জানি বিরক্ত হচ্ছো না তুমি আমার উপরে। একজন প্রেমিকা কি কখন তার প্রেমিকের এমন পাগলামো দেখে বিরক্ত হতে পারে। বরং সেই প্রেমিকার আরো ভালো লাগে প্রেমিকের পাগলামো দেখে।”
নন্দিতা জড়ানো কন্ঠে বলে, “আপনি পাগল হয়ে গেছেন রাফি তাই এসব আবোল তাবোল বকছেন।”
“সত্যি আমি পাগল হয়ে গেছি তোমার প্রেমে পড়ে। আচ্ছা তুমি কবে স্বীকার করবে বলো তো যে তুমি আমায় ভালোবাসো? শুনেছি মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। তবে কি ধরে নিবো তুমি আমাকে ভালোবাসো।”
নন্দিতা ক্ষীণ গলায় বলে, “আপনাকে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরেছি এর থেকেও যদি না বুঝতে পারেন আমার মনের কথা তাহলে আমার কিছু বলার নেই।”
কথাটা বলেই নন্দিতা ঠাস করে ফোন কেটে দিয়ে ঘরে চলে যায়। নন্দিতা চলে যেতেই স্বশব্দে হেসে উঠে রাফি। তাহলে নন্দিতা কিছুটা হলেও স্বীকার করলো যে তাকে ভালোবাসে। রাফি ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে নন্দিতার নাম্বার মেসেজ করে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।
মেসেজ আসার শব্দ শুনতে পেয়ে নন্দিতা জলদি করে মেসেজ অপশনে ঢুকে। এমন মনে হচ্ছে যেন নন্দিতা আগে দেখেই জানতো রাফি মেসেজ করবে।
❝বুঝতে তো পেরেছি সেই কবেই যে নন্দিতা নামের একটি মেয়ে আমার প্রেমে পড়েছে তাও গভীর ভাবে। কিন্তু মেয়েটি মুখে স্বীকার করতেই চায় না আসলে মেয়েটি ভাঙবে তবু মচকাবে না। কিন্তু সেই মেয়েটিকে আমি খুব ভালোবাসি খুব আর এটাও জানি মেয়েটিও আমাকে ভালোবাসে।❞
নন্দিতা মেসেজটা পড়ে বুকের মাঝে ফোনটা চেপে ধরে বিড়বিড় করে বলে, “হুম মেয়েটিও আপনাকে খুব ভালোবাসে মিস্টার রাফি তাজওয়ার।”
এরপর থেকে শুরু হয় নন্দিতা আর রাফির প্রণয়ের সম্পর্ক। কিন্তু এই প্রণয়ের সম্পর্কটা দীর্ঘ ছিলো না। একটা কালো ছায়া এসে রাফির জীবন থেকে নন্দিতা সরে যেতে বাধ্য করলো। আর নন্দিতা হাসিমুখে সেটা গ্রহণ করে নিলো।
বর্তমান……….
সকালে নন্দিতা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়। হেনা বেগম নন্দিতাকে দেখার সাথে সাথে নিজের কাছে আসতে বলেন।
“নন্দিতা তোমার সাথে তোমার কিছু কথা আছে।”
নন্দিতা টেনশনে পড়ে যায় শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে। গতকাল রাতে যে রাফি ড্রিংক করে এসেছে সেটা জেনে যায় নি তো। নন্দিতা ভয়ে ভয়ে বলে।
“কি কথা মা?”
“তুমি আর রাফি কি আগে থেকেই একে ওপরকে চিনো। তোমাদের হাবভাব দেখে আমি যতটুকু বুঝলাম তোমরা দুজন দুজনকে চিনো তাও আবার গভীর ভাবে।”
নন্দিতা আমতা আমতা করে বলে, “মা মানে আমি আসলে।”
“আমি তোমাকে জোর করছি না নন্দিতা কিছু বলার জন্য। তবে আমি এটা চাই তোমার আর রাফির মাঝে যদি কোনো ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে মিটিয়ে নাও। আর একটা কথা তোমাদের জন্য আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা তোমাকে এখন বলবো না রাফি আসুক নিচে তারপর বলবো। আশা করবো তোমরা দুজনে আমার কথা রাখবে।
নন্দিতা ছোট করে জবাব দেয়, “জি মা।”
রাফির ঘুম ভাঙ্গার পর আস্তে আস্তে উঠে বসে মাথায় দু হাত চেপে ধরে। রাফি নাক মুখ কুচকে বলে।
“উফ মাথাটা প্রচুর ব্যথা করছে।”
রাফি চারিপাশটা ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিজের ঘরেই আছে। চোখ বন্ধ করে রাতে কি ঘটেছে তা মনে করার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুই মনে করতে পারছে না। রাফি চোখ খুলে বলে।
“এখানে কখন আসলাম? আমি তো,,, উফ আর চিন্তা করতে পারছি না আগে ফ্রেশ হওয়া দরকার।”
রাফি শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় টাওয়াল দিয়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে চিন্তিত হয়ে বলে।
“কালকে নেশার ঘোরে কিছু করে ফেলি নি তো নন্দিতা সাথে। কিছুই তো মনে নেই কিন্তু নন্দিতা কোথায়?”
রাফি দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তাই এসব চিন্তা বাদ দিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে চলে যায়। নিচে যেতেই হেনা বেগম ছেলেকে দেখে বলে উঠেন।
“উঠেছিস আগে নাস্তা করে নে তোর সাথে জরুরী কথা আছে।”
“কি কথা মা?”
“আগে নাস্তা কর তারপর বলছি।”
নন্দিতা চুপচাপ টেবিলে নাস্তা পরিবেশন করছে। রাফি নন্দিতার দিকে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়। সকলে এক সাথে বসে নাস্তা করে নেয়।
রাফি বসে আছে মার সামনে। অনকেটা সময় পেরিয়ে গেছে কিন্তু মাকে কিছু বলতে না দেখে রাফি বিরক্ত হয়ে বলে।
“মা তাড়াতাড়ি বলো কি বলবে? আমার অফিসে লেইট হচ্ছে।”
“বলছি এত তাড়া কিসের তোর?”
রাফি তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “অফিসে একটা ইন্টারভিউ আছে তাই।”
“আচ্ছা বুঝলাম। শোন আমি একটা কথা বলবো কথাটা শুনে লাফ দিয়ে উঠবি না। বাবা মায়েরা যা করে সন্তানের মঙ্গলের জন্যই করে।”
রাফি কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “মা এত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে না বলে যা বলতে চাইছো সেটা সোজাসুজি ভাবে বলো।”
“শোন আগামীকালকে তুই আর নন্দিতা হানিমুনে যাচ্ছিস।”
হানিমুন যাওয়ার কথা শুনে তো নন্দিতার চোখ গুলা স্বাভাবিকের তুলনায় বড় বড় হয়ে যায়। অন্যদিকে রাফি ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠে।
“হোয়াট? মা তুমি কি বলছো এসব? কথা নাই বার্তা নাই হানিমুনে যাওয়ার কথা আসলো কোথা থেকে?”
হেনা বেগমও ছেলেকে রাগ দেখিয়ে বলেন, “সবকিছু যে তোকে বার্তা দিয়ে করতে হবে তার তো কোনো মানে নেই। তাই তোরা দুজন কালকে হানিমুনে যাবি এটাই আমার শেষ কথা।”
“মা এখন কিন্তু বেশি করছো তুমি। আমার অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে। এমনি বিয়ের সময়ের কাজগুলা পেন্ডিং হয়ে পড়ে আছে।
“অফিসে যদি সব কাজ তোকেই করতে হয় তাহলে এতগুলা কর্মচারী রেখেছিস কেন হুম? তোরা কাল হানিমুনে যাবি এটাই আমার শেষ কথা।”
হেনা বেগম আর কিছু না বলে এখান থেকে চলে যান। রাফি নন্দিতার দিকে রাগী চোখে তাকায় আর নন্দিতা বেচারি ড্রয়িংরুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে জড়সড় হয়ে। রাফি যে এবার সবটা রাগ তার উপরে তুলবে সেটা খুব ভালো করেই জানে। রাফি নিজের রাগটাকে আপাতত সামলিয়ে বলে।
“কথা আছে তোমার সাথে রুমে আসো।”
নন্দিতা রাফির পেছন পেছন ভদ্র মেয়ের মতো চলে যায়। রাফি বেড রুমে এসে সোফায় বসে রাগে ফুঁসছে। নন্দিতা রুমে আসার সাথে সাথে রাফি বলা শুরু করে।
“তুই বলেছিস তাই না মাকে হানিমুনের যাওয়ার কথা।”
“বিশ্বাস করো রাফি আমি এই বিষয়ে কিচ্ছু জানতাম না, আমি মাকে কিছু বলি নাই।”
রাফি উঠে নন্দিতার দু বাহু চেপে ধরে বলে, “তোকে আমি বিশ্বাস করবো সেটা ভাবলি কি করে তুই? তুই অনেক আগেই আমার বিশ্বাসের মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছিস। তবে এটা মনে রাখিস তোর সাথে আমি হানিমুনে জীবনেও যাবো না। তাই তোর এসব ফালতু হানিমুনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা বাদ দিয়ে দেয়।”
রাফি কথাটা বলেই ব্লেজার আর অফিসের ব্যাগটা নিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়। আর নন্দিতা রাফির যাওয়ার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে।
#চলবে_______