#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_10
এলোমেলো পায়ে নন্দিতা রিক্সা থেকে নেমে আমবাগানে এসে পৌঁছায়। শ্বাসের গতি স্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক ভাবে চলছে। রাফিকে নিয়ে প্রচুর ভ’য় হচ্ছে নন্দিতার সত্যি যদি কোনো কিছু হয়ে যায় রাফির তখন কি হবে? ভেবেই বুকের ভেতরটা মোচরে উঠছে। আমবাগানে এসে চারপাশটায় নজর বুলিয়ে দেখে রাফি নেই। হঠাৎ করেই নন্দিতার নজর পড়ে যেখানে জনমানব কম সেখানে রাফি দাঁড়িয়ে আছে আর ফোনে কথা বলছে চোখে মুখে বিরক্তিকরভাব নিয়ে। নন্দিতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে রাফির কিছুটা কাছে আসতেই নজর যায় রাফির হাতের দিকে একটা ছোট কাচের বোতল। নন্দিতার বুকটা ধ্বক করে উঠে তবে কি সত্যি রাফি সু’ই’সা’ই’ড করতে যাচ্ছে। নন্দিতা আর কিছু না ভেবে দ্রুত কদমে রাফির দিকে এগুতে থাকে।
এদিকে রাফি সিয়ামকে ফোনে করে বলছে, “কিরে? এখনো কেউ আসছে না কেন? কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো আমি আর এই বোতলটাতে কিসের ঔষধ আছে? আর এটা তো তুই নিজেই দিতে পারতি।”
ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে সিয়াম বলে, “ভাই আমি একটু ব্যস্ত তাই তোকে দিয়ে পাঠালাম। একটু পরেই চলে আসবে আমার আত্মীয়টা তোর কাছে আর এসেই তোর হাত থেকে ঔষুধটা ছিনিয়ে নিবে দেখিস।”
“আরে এখানে ছিনিয়ে নেওয়ার কি আ……”
টাস করে ফোন কেটে দেয় সিয়াম রাফিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। রাফি মুখে একরাশ বিরক্ত নিয়ে ঘুরে সামনের দিকে তাকাতেই নন্দিতাকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখে হতবাক হয়ে বলে।
“আরে এটা তো নন্দিতা আর ওর এই বেহাল অবস্থা কেন?”
নন্দিতা রাফির কাছে এসেই রাফির হাত থেকে বোতলটা কেড়ে নিয়ে আম গাছের গোড়ায় টিল মারে আর সাথে সাথে বোতলটা ভেঙ্গে যায়। রাফি নন্দিতার এমন আচরণ দেখে হতভম্ব হয়ে বলে।
“আরে এটা কি করলে তুমি, ভেঙ্গে দিলে বোতলটা? এখন কি হবে?”
নন্দিতা নাক ফুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “কি করতে যাচ্ছিলেন আপনি হুম? কি করতে যাচ্ছিলেন?
শেষের কথাটা উচ্চস্বরে বলে উঠে নন্দিতা। রাফি অবাক হয়ে বলে, “কি করতে যাচ্ছিলাম মানে? তার আগে তুমি এটা বলো বোতলটা এভাবে ছুড়ে ফেলে দিলে কেন?”
নন্দিতা চিৎকার করে বলে উঠে, “তো কি করবো আমি হুম? আপনাকে আমি সু ই সা ই ড করতে দিবো এটা আপনি ভাবলেন কি করে?”
নন্দিতার কথা শুনে বোকা বনে গেলো রাফি। সারা মুখে রাজ্যের বিস্ময় ফুটে উঠেছে। এই মেয়ে বলে কি? গ্রামের বাড়ি থেকে এসে কি মাথাটা পুরো খারাপ হয়ে গেছে নাকি এই মেয়ের। আর সেও বা কোন দুঃখে সু ই সা ই ড করতে যাবে। সব কিছু কেমন যেম গুলিয়ে যাচ্ছে রাফির। মাথাটা কেমন ভনভন করছে রাফির। কিন্তু রাফিকে নন্দিতা আরো অবাক করে দিয়ে রাফিকে দু হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বলে।
“প্লিজ আপনি এমনটা করবেন না। আমি জানি আপনি আমার ব্যবহারে আঘাত পেয়েছেন তা বলে আপনি এমন একটা বাজে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন।”
রাফি কি বলবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে পুরো নন্দিতার এমন আশ্চর্যজনক ব্যবহার দেখে। হঠাৎ করে মেয়েটার হলো কি? আর এভাবে! স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রাফি। নন্দিতা আবারো বলা শুরু করে।
“আমি সত্যি জানি না আমি আপনাকে ভালোবাসি কি না! কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সত্যি আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো না। ভার্সিটিতে যতক্ষণ ছিলাম ততক্ষণ আপনাকে এক নজর দেখার জন্য ছটফট করছিলাম কিন্তু আপনি এখানে এসে সু ই সা ই ড করার মতো একটা ফালতু কাজ করেছিলেন। কেন এটা করতে যাচ্ছিলেন আপনি এটা?”
রাফির এতক্ষণে টনক নড়লো। তাহলে কি এখানে নন্দিতার আসার কথাই বলেছিলো সিয়াম। কিন্তু তা বলে এভাবে। কতটা ভয় পেয়েছে মেয়েটা না জানি? এটা ভেবেই খারাপ লাগছে রাফির কিন্তু নন্দিতা যে তার জন্য এত চিন্তা করে এটা ভেবে ভালো লাগা কাজ করেছে রাফির মনে। রাফি মুচকি হেসে নন্দিতার দু বাহু ধরে নিজের বুক থেকে সরিয়ে নেয়। নন্দিতার চোখের জলে নাকের জলে এক্কেবারে নাজেহাল অবস্থা হয়ে গেছে চেহারার। এখন আর চোখ দিয়ে নোনা জল বের হচ্ছে না শুধু নাক টানছে। রাফি মুখটা পাশে ফিরিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে ঢোক গিলে নন্দিতার দিকে তাকায়। নন্দিতার চোখে মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে রাফির জন্য ব্যাকুলতা যেটা রাফি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। সামনে দাঁড়ানো মেয়েটা যে তার প্রেমে মারাত্মকভাবে পড়েছে সেটা খুব ভালো করেই টের পাচ্ছে। না হলে কোনো কিছু না ভেবে এভাবে ছুটে আসে। রাফি নন্দিতার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে নন্দিতার নিচু মুখটা দু হাত দ্বারা আগলে নিয়ে উপরে তুলে মিহি গলায় বলে।
“আমি ঠিক আছি নন্দিতা এবার ফুপানো বন্ধ করো। ইস! কান্না করে চোখের কাজলটা একে বারে ছড়িয়ে ফেলেছো।”
কথাটা বলে রাফি নন্দিতার চোখের জল মুছে দেয় বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা। নন্দিতা রাফির হাতের স্পর্শ পেয়ে ঢোক গিলে রাফির দিক থেকে নজর সরিয়ে নিয়ে রাফির দু হাতের বাঁধন থেকে মুখ সরিয়ে নিতে চাইলে রাফি তা হতে দেয় না। রাফি এবার আবেগি স্বরে বলে।
“ভালোবাসো আমায়?”
নন্দিতার সমস্ত কায়া কেঁপে উঠে। কি বলবে এবার সে? উত্তেজনার বশে সব সত্যি কথা বলে দিয়েছে রাফিকে এবার তো রাফি আরো পাগল হয়ে উঠবে আগে ছিলো আধপাগল এখন পুরো পাগল হয়ে যাবে। নন্দিতাকে মৌন থাকতে দেখে রাফি পুনরায় বলে।
“আই এম ওয়েটিং নন্দিতা! উত্তরটা জানতে চাই আমি, ভালোবাসো কি আমায়?”
নন্দিতা ক্ষীণ গলায় বলে, “জানি না।”
রাফি নিঃশব্দে হেসে নন্দিতার ডান হাতটা ধরে বলে, “তোমাকে জানতে হবে না। তবে এত টুকু বুঝতে পেরেছি তুমি যে আমায় ভালোবাসো আর আমাকে চোখে হারাও আর এটা কিন্তু তুমি তোমার মুখে স্বীকার করেছো।”
নন্দিতার এবার নিজের উপরেই খুব রাগ লাগছে। এত কথা কেন বলতে গেলো শুধু শুধু? এত কথা বলার কি কোনো দরকার ছিলো? গেলি তো এখন ফেঁসে। আর একটু আগে রাফিকে এভাবে জড়িয়ে ধরাটা কি খুব প্রয়োজন ছিলো। আজ যে কার মুখ থেকে উঠেছে নন্দিতার দিনটা মাটি করে দিলো। রাফি দু ভ্রু নাচিয়ে বলে।
“কি হলো, কি ভাবছো?”
“কিছু না আমি বাসায় যাবে।”
“যাবে তো তার আগে এক জায়গাতে চলো।”
নন্দিতা অবাক হয়ে বলে, “কোথায় যাবো?”
“গেলেই দেখতে পাবে।”
রাফি নন্দিতাকে নিয়ে আমবাগানের পাশের একটা রেস্টুরেন্টে আসে। নন্দিতাকে চেয়ারে বসিয়ে রাফি বলে।
“তুমি বসো আমি আসছি?”
নন্দিতা বসা থেকে উঠে উত্তেজিত হয়ে বলে, “কোথায় যাবেন আপনি?”
“তুমি বসো আমি আসছি তো।”
নন্দিতা সরল গলায় বলে উঠে, “আমিও যাবো আপনারা সাথে আপনি যদি আবারো সু ই সা ই ড করতে যান।”
নন্দিতার বোকাবোকা কথা শুনে রাফির উচ্চস্বরে হাসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আপতত এখন হাসা যাবে না নিজেকে সংযত করে রাখতে হবে। তবে তার জন্য নন্দিতার এমন চিন্তা দেখে মানসিক ভাবে প্রশান্তি পাচ্ছে খুব রাফি। নন্দিতা মুখে যতই বলুক ভালোবাসি না কিন্তু মনে মনে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটা রাফিকে। না হলে এমন একটা ফালতু প্ল্যানের ফাঁদে কেউ পড়ে। রাফি ম্লান হেসে বলে।
“বোকা নন্দিতা কিচ্ছু বুঝে না।”
রাফির মুখে বোকা কথাটা শুনে নন্দিতা রেগে বলে, “কি আমি বোকা?”
“তা নয় তো কি?”
নন্দিতা দু হাত কোমড়ে রেখে বলে, “আমাকে কোন অ্যাঙ্গেল থেকে বোকা মনে হয় আপনার?”
রাফি নন্দিতাকে পুনরায় চেয়ারে বসিয়ে বলে, “তুমি এখানে বসে গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখো তুমি কোন অ্যাঙ্গেল থেকে বোকা কেমন?”
কথাটা বলে রাফি ওয়াসরুমের দিকে চলে যায়। নন্দিতা হা হয়ে রাফির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আসলেই কি সে বোকা নাকি রাফি তার সাথে মজা করলো কোনটা?
______
রাফি ওয়াশরুমে ঢুকে সিয়ামকে কল করে। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পরেই সিয়াম কল পিক করে বলে উঠে।
“কি মামা খুব আনন্দে আছো না?”
রাফি ধমকের স্বরে বলে, “এই চুপ! তোকে কে বলেছে এমন একটা ফালতু কাজ করতে?”
সিয়াম অসহায় গলায় বলে, “যাহ বাবা! যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চুর। এই ছিলো আমার পাঁচ আঙ্গুলের কপালে। এই জন্য আমজনতা’রা বলে মানুষের ভালো করতে নেই।”
রাফি তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “দেখ এই কাজটা একদম ঠিক করিস নি সিয়াম। মেয়েটা ভীষণ ভ’য় পেয়েছে জানিস সেটা।”
“হুম জানি সেটা। যাকে ভালোবাসে তার ব্যাপারে যদি এমন একটা সংবাদ শুনে তাহলে ভ’য় পাওয়াটা স্বাভাবিক নয় নি।”
“তুই এমন একটা ফালতু মার্কা প্ল্যান করেছিস সেটা কি আমার জানানোর প্রয়োজন ছিলো না।”
“এটা আমার প্ল্যান ছিলো না সুহার প্ল্যান ছিলো।”
রাফি এই কথাটা শুনে সিয়ামকে খোচা মেরে বলে, “তাই তো বলি তোর গোবর ভরা মাথায় এমন মাস্টারমাইন্ড প্ল্যান আসলো কি করে? কিন্তু এখন শুনি অন্য কাহিণী।”
সিয়াম উত্তেজিত হয়ে বলে, “ওই কি বললি তুই আমার মাথায় গোবর ভরা? আর একটু আগে তুই নিজেই বললি ফালতু একটা প্ল্যান আর এখন বলছিস মাস্টারমাইন্ড প্ল্যান শালা পল্টিবাজ একটা রাখ ফোন। তোর সাথে আমার পনেরো বছরের সম্পর্ক এখানেই শেষ দ্যা এন্ড।”
কথাটা বলেই সিয়াম ফোন কেটে দেয়। রাফি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কয়েক কদম পেরিয়ে এসে দেখে নন্দিতা নেই। রাফি তাড়াতাড়ি করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে দেখে নন্দিতার কোনো অস্তিত্বও নেই। মেয়েটা তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে তার দোষেই। রাফি নিজের উপরে রেগে ইটের একটা টুকরো লাথি মেরে বলে।
“ধ্যাত্! চলে গেলো পালিয়ে। মেয়েটা এত পালাই পালাই করে কেন?”
রাফি কিছুক্ষণ নিবর থেকে প্যান্টের দু পকেটে নিজের দু হাত গুজে বাকা হেসে বলে, “সমস্যা নেই এক বার যখন নিজ ইচ্ছায় এসে আমার নীড়ে বন্দি হয়েছো তখন ঠিকই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো মিস নন্দিতা। কতক্ষণ পালিয়ে থাকবে একবার না একবার তোমাকে বন্দি হতেই হবে আমার নীড়ে।”
#চলবে______