#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_7
রাত সাড়ে নয়টা বাজে, নন্দিতা রাফির দেওয়া লাল সবুজ রঙের কাগজটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রাফির দেওয়া ধাঁধার মানে কিছুতেই বের করতে পারছে না নন্দিতা। চোখে মুখে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে হাতে রাখা কলমটা টেবিলের উপরে জোরে রেখে মুখ দিয়ে “চ” জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে। কিছুতেই কিছু মিলাতে পারচ্ছে না। হঠাৎ করেই ফোনে মেসেজ আসার শব্দ শুনে নন্দিতা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে প্রতিদিন যে নাম্বার থেকে রাতে কল আসে সেই নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। নন্দিতা মেসেজ অপশনে ঢুকে মেসেজ পড়া শুরু করে।
“কি এখনো আমার দেওয়া ধাঁধাটার সমাধান করতে পারো নি?”
নন্দিতা মেসেজটা পড়ে চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা। নন্দিতা মেসেজ পড়ে বুঝতে পারলো এতো দিন রাত্রের বেলায় যে নাম্বার থেকে কল আসতো সে আর কই না রাফি। নন্দিতা বিড়বিড়িয়ে উঠে।
“কি ধরিবাজ লোক রে বাবা! আমার নাম্বার ফেলো কোথায়?”
নন্দিতাকে এভাবে তব্দা হয়ে বসে থাকতে দেখে জমেলা বেগম বলেন, “কিরে! কি হয়েছে?”
নন্দিতা মায়ের আওয়াজ শুনে থতমত খেয়ে কাগজটা বইয়ের ভেতরে ঢুকিয়ে বলে, “কিছু হয় নি মা।”
“ঠিক আছে। মনযোগ দিয়ে পড় তাহলে।”
নন্দিতা ঠোঁট ফুলিয়ে মনে মনে বলে, “আর মনযোগ, সব মনযোগ তো এই রাফি নামক লোকটার দেওয়া কাগজটার উপরেই। পড়ালেখায় কি করে মনযোগ দিবো? নাহ বাবা এই ধাঁধা আমার পক্ষে খুজে বের করা সম্ভব না। এমনও তো হতে পারে আমার সাথে মজা করেছে। কিন্তু…. ”
_________
পরের দিন ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে আছে নন্দিতা আর সুহা। নন্দিতা চুপ থাকলেও সুহা এক নাগাড়ে কথা বলেই যাচ্ছে থামার কোনো নামেই নি। সুহা কথা বন্ধ করে নন্দিতাকে অন্যমনস্ক হয়ে থাকতে দেখে বলে।
“আরে ওই! আমি কিছু বলছি শুনছিস তো?”
নন্দিতা অন্যমনস্ক হয়ে বলে, “আজকে কি ওনি আসেন নি?”
সুহা ভ্রু কুচকে বলে, “কে আসি নি?”
“রাফি।”
সুহা বাকা হেসে বলে, “হুম! আপনি তাহলে রাফি ভাইকে চোখে হারাচ্ছেন।”
নন্দিতা যখনেই বুঝতে পারলো কথাটার মানে তখনেই নাকচ করে বলল, “একদমেই না আমি ওনাকে কেন খুজতে যাবো? আজব!”
সুহা মাথা নাড়িয়ে বলে, “হুম হুম! বুঝতে পেরেছি আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না। এখন বল ওই লাল সবুজ কাগজের ধাঁধাটার মানে বের করতে পেরেছিস?”
নন্দিতা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে, “নাহ পারি না। আর আমি চেষ্টাও করি নি।”
সুহা জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “দেখ মানুষ বলে লাল রঙ নাকি ভালোবাসার প্রতীক। তবে সাদা আর নীল রঙও ভালোবাসার অনুভতি প্রকাশ করে। আর সবুজ রঙটি জীবনের শুরুতে নতুন কোনো সম্পর্ক বা প্রেমের প্রথম ধাপকে বুঝানো হয়। তার মানে…”
নন্দিতা ভ্রু কুচকে আগ্রহী হয়ে বলে, “কি?”
সুহা উত্তেজিত হয়ে জোরে বলে উঠে, “তার মানে রাফি ভাইয়া তোকে ভালোবাসে আর সেই ভালোবাসার ইঙ্গিত দিলো তোকে এই কাগজের মাধ্যমে নন্দিতা।”
সুহা কথাটা এতোটা জোরে বলেছে যে ক্যান্টিনের সকলে তাদের দিকে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সুহার কথাটা শুনে একজনের ঠিক ভালো লাগে নি। রাগে নাকের পাটা ফুলে উঠেছে দিয়ার। একটু আগেই দিয়া ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনের দরজা খুলে ক্যান্টিনের ভেতের পা রাখতেই সুহার কথাটা শুনে থমকে যায়। সুহার কথাটা যেন দিয়ার মস্তিষ্কে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে দিয়া সুহার কাছে গিয়ে সুহার হাত ধরে সুহাকে বসা থেকে টেনে তুলে নন্দিতার দিকে আঙ্গুল তাক করে রাগী গলায় বলে।
“কি বললি তুই? এই মেয়েটাকে রাফি ভালোবাসে?”
আকস্মিক এমন হওয়াতে হকচকালো সুহা আর নন্দিতাও। নন্দিতাও বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সুহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই দিয়া নন্দিতার দিকে ফিরে ঝাঁঝালো গলায় বলে।
“এই মেয়ে তোকে গতকালকে কি বলেছি আমি হুমম? বলেছি না আমার রাফির থেকে দূরে থাকতে তারপরও তুই রাফির আশেপাশে থাকার জন্য বাহানা খুজছিস। বেহায়া মেয়ে কোথাকার?”
দিয়ার পাশে দাঁড়ানো তার বন্ধবী নাঈশা বলে উঠে, “আরে এসব ছোট লোক মেয়েদের একটাই লক্ষ্য কি করে বড় লোক ছেলেদের নিজের রুপের জালে ফাঁসানো যায়। যেই দেখেছে রাফি ভাই বড়লোকের ছেলে ওমনি রাফি ভাইয়ের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আসলে কি বলতো এদের বাবা মায়েরাই বড়লোক ছেলেদের পেছনে লেলিয়ে দেয় মেয়েদের।”
নন্দিতার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আজ পর্যন্ত এসব কথা কারো কাছে থেকে শুনতে হয় নি। আর আজকে কি না রাফির জন্য এতো গুলা কথা শুনতে হচ্ছে এমন কি বাবা মায়ের নামেও।নন্দিতা কিছুতেই তার বাবা মায়ের অপমান সহ্য করবে না তাই নিজেকে সামলে নিয়ে গলার স্বর কঠিন করে বলে।
“মুখ সামলে কথা বলুন আমার বাবা মায়ের নামে একটাও বাজে কথা বলবেন না। আর কাকে বেহায়া বলছেন হুম? কি বেহায়ার মতো কাজ করেছি আমি যে আামকে বেহায়া বলছেন? আর এই ভার্সিটির সবাই জানে ঠিক কে বেহায়া?”
দিয়া কন্ঠে তেজ এনে ভ্রু কুচকে বলে, “কি বললি তুই? তুই কি কোনো মতে আমাকে বেহায়া বলছিস?”
সুহা শব্দ করে হেসে বলে, “যাক বুঝতে পেরেছে তাহলে।”
নন্দিতাও শব্দ করে হেসে বলে, “চুরের মন পুলিশ পুলিশ।”
“তোর এতো বড় সাহস।”
কথাটা বলে দিয়া নিজের হাত তুলে নন্দিতাকে থাপ্পর মারতে নিলে দিয়ার হাত কেউ ধরে ফেলে। নন্দিতা দিয়ার এমন আক্রমন দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। কিন্তু যখন নিজের উপরে দিয়ার কোনো আক্রমণ আসছে না বুঝতে পেরে পিটপিট চোখে নন্দিতা সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে রাফি দিয়ার হাত ধরে রাগী চোখে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রাফি রেগে দিয়ার হাতটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলে।
“কি হচ্ছে এখানে হুম? কি হচ্ছে?”
সারা ক্যান্টিন কেঁপে উঠে রাফির চিৎকারে। দিয়া ভয়ে দু কদম পিছিয়ে যায়। রাফি ভার্সিটিতে ছিলো না বাইকে তেল ভরার জন্য দোকানে গিয়েছিলো। কিন্তু যখনেই বিশাল ফোন করে এই পরিস্থিতির কথা বলছে তখনেই রাফি দ্রুত ভার্সিটিতে আসে। আর ক্যান্টিনে এসে দেখে দিয়া মারতে যাচ্ছিলো নন্দিতাকে।
রাফি নন্দিতার দিকে তাকায়। নন্দিতা মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফি সবাইকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে।
“কি হলো সবাই চুপ করে আছে কেন? কি হচ্ছিলো এখানে?”
সুহা বলে উঠ, “ভাইয়া আমি বলছি..”
সুহার কথার মাঝইে দিয়া বলে, “রাফি তুমি এই ফালতু মেয়ে গুলার কথা শুনো না।”
রাফি দিয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “মুখটা বন্ধ রাখো দিয়া। আর একটু আগে তুমি কি করতে চাইছিলে সেটা আমি খুব ভালো করেই দেখেছি।”
তারপর সুহার দিকে ফিরে বলে, “কি হয়েছি সুহা বলো?”
“ভাইয়া আসলে গতকালকে আপনার দেওয়া ধাঁধাটার মানে বের করার চেষ্টা করেছিলাম। আমি জানি না এটা সত্যি কি না কিন্তু আমি জাস্ট ধাঁধাটার প্রেক্ষিতে বলেছিলাম আপনি হয়তো নন্দিতাকে ভালোবাসেন আর এটা শোনার পরেই দিয়া আপু নন্দিতার বাবা মা তুলে অপমান করে।”
রাফি সুহার কথাটা শুনে বাকা হেসে নন্দিতার দিকে চেয়ে নরম গলায় বলে, “হুম ভালোবাসি নন্দিতাকে নিজের থেকেও বেশি। সে কি ভালোবাসে আমায়?”
নন্দিতা এমন কথা শুনে চমকে রাফির দিকে তাকায়। সামনে দাঁড়ানো লোকটার জন্য আজকে তার বাবা মাকে অপমানিত হতে হয়েছে। আর রাফি ভাবলো কি করে নন্দিতা তাকে ভালোবাসবে। নন্দিতার চোখ বেয়ে আপনাআপনি দু ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। নন্দিতা দু চোখের পানি মুছে কাঠকাঠ গালায় বলে।
“নাহ! ভালোবাসি না আপনাকে আর আপনাকে ভালোবাসার মতোও এমন কিছু হয় নি যে আপনাকে ভালোবাসতে হবে।”
কথাটা বলেই নন্দিতা ব্যাগটা নিয়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে যায় ক্যান্টিন থকে। পেছন থেকে সুহাও নন্দিতা বলে ডাকতে ডাকতে নন্দিতার পেছনে ছুটা শুরু করে। রাফির ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে আছে। লাইফের ফাস্ট টাইম কাউকে প্রপোজ করেছে আর ফাস্ট টাইমেই রিজেক্ট হয়েছে। এক অদ্ভুত ফিল কাজ করছে মনের মাঝে রাফির। রাফির পাশে দাঁড়ানো দিয়া রাগী গলায় বলে।
“তুমি ওই নন্দিতাকে ভালোবাসো রাফি।”
রাফি দিয়ার কথা শুনে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে শান্ত গলায় বলে, “হে ভালোবাসি! তাতে কি তোমার সমস্যা?”
দিয়া নরম গলায় বলে, “আমি তোমাকে ভালোবাসি রাফি। প্লিজ আমার সাথে এমন করো না।”
“এটা তোমার প্রবলেম আমার না। আর আমি কাকে ভালোবাসবো আর ভালোবাসবো না এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।”
কথাটা বলে রাফির চলে যেতে নিলে আবারো থেমে বলে, “আরেক একটা কথা, আজকে যেই কাজটা করতে যাচ্ছিলে নেক্সট টাইম যেন এই কাজটার পুনরাবৃত্তি না হয়। যদি এমন কিছু হয় তাহলে কিন্তু তোমার জন্য সেটা মঙ্গলজনক হবে না কথাটা যেন মনে থাক।”
কথাটা বলেই রাফি বের হয়ে যায় ক্যান্টিন থেকে। রাফি চলে যেতেই দিয়া রেগে একটা চেয়ারে লাথি মেরে টেবিলের উপরে হাত রেখে মনে মনে বলে।
“এতো সহজে আমি তোমাকে অন্য কারোর হতে দিবো না রাফি। ওই নন্দিতাকে কি করে তোমার জীবন থেকে দূরে সরাতে হয় সেটা আমি খুজে বের করবোই। যা যা করা লাগে সব করবো আমি সব।”
এদিকে সুহা নন্দিতার হাত ধরে বলে, “নন্দিতা আমার কথাটা শোন একটু।”
নন্দিতা ক্ষীণ গলায় বলে, “প্লিজ সুহা আমাকে একটু একা থাকতে দে। আর আমাকে এক্ষুণি বাসায় যেতে হবে।”
কথাটা বলেই ভার্সিটির গেইট পেরিয়ে রিকশায় উঠে বসে নন্দিতা। সুহা নন্দিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। এমন সময় রাফি দৌঁড়ে সুহার কাছে এসে বলে।
“নন্দিতা কোথায়?”
সুহা নিষ্প্রভ গলায় বলে, “চলে গেছে।”
“ওর সাথে কথা বলা দরকার আমার।”
রাফি বাইকের কাছে যেতে নিলে সুহা বলে উঠে, “ভাইয়া ওকে এখন ছেড়ে দেন। কালকে ও ভার্সিটিতে আসলে তখন না হয় কথা বলে নিবেন।”
রাফি মুহূর্তের মাঝে থেমে যায়। মেয়েটি কি আজকে একটু বেশিই কষ্ট পেয়ে গেছে! রাফি নন্দিতাকে এভাবে ভালোবাসার কথা জানাতে চায় নি। কিন্তু পরিস্থিতি আজকে এমন হয়ে গেছে যে রাফি কথাটা বলতে বাধ্য হয়েছে। সব দোষ এই দিয়ার আজকে যা কিছু হয়েছে সব কিছু এই মেয়েটার জন্য।
______
নন্দিতাকে এমন সময় ভার্সিটি থেকে বাসাত আসতে দেখে ভীষণ অবাক হোন জমেলা বেগম।
“এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি যে?”
নন্দিতা কিছু না বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। জমেলা বেগম হতভম্ব হয়ে যাচ্ছেন মেয়েকে হঠাৎ করে এভাবে কান্না করতে দেখে। জমেলা বেগম মেয়েরে মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলেন।
“কি হয়েছে মা?”
নন্দিতা ভাঙ্গা গলায় বলে, “বাবাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে মা।”
জমেলা বেগম বোঝানোর স্বরে বলেন, “ঠিক আছে তোর ভার্সিটি বন্ধ হোক তারপর আমরা যাবো।”
নন্দিতা মায়ের কাছ থেকে সরে এসে জেদি গলায় বলে, “না আমি এক্ষুনি যাবো বাবাকে দেখতে।”
”কিন্তু তোর ভার্সিটি।”
“কিচ্ছু হবে না।”
নন্দিতা কথাটা বলেই ব্যাগ গুজাতে শুরু করে। মায়ের আর নিজের কাপড় ব্যাগে ঢুকিয়ে মাকে বলে।
“ব্যাগ গুজানো শেষ এবার তুমি রেডি হয়ে নাও।”
জমেলা বেগমের আর কি করার মেয়ের জেদের কাছে হার মেনে বেরিয়ে পড়লো গ্রামের উদ্দেশ্যে। কিন্তু এটা বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে মেয়ের হলোটা কি? সকালে তো হাসি মুখে গেলো ভার্সিটিতে তাহলে এখন হঠাৎ করে কি হলো? মেয়েকে কিছু জিঙ্গেস করলেই বলছে “বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।” কিন্তু মেয়ের চোখে মুখে ফুটে উঠছে অন্য কিছুর আভাস যেটা মা হয়ে জমেলা বেগম ধরতে পারছে না।
#চলবে______