Revenge of love Part-03

0
1015

#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_3

রাফি শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। সারা শরীর বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে আর চোখ বন্ধ করে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়ছে। কিছুক্ষণ শাওয়ারের নিচে থাকার পর রাফি নিষ্প্রভ গলায় বলে।

“কেন কেন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না ওর মায়াবী মুখটা দেখলে। সবসময় চুম্বকের মতো টানে নিজেকে ওর দিকে। পারি না নিজেকে শক্ত করে রাখতে। ওকে দেখলে শরীরের অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায়। ওর ভর্য়াত মুখ, চোখ বন্ধ করে রাখা, কাঁপা কাঁপা গোলাপি ঠোঁট, ভয়ে পিছিয়ে যাওয়া যেটা ওর দিকে আরও আকৃষ্ট করে আমাকে। নিজেকে অনেক কষ্ট কন্ট্রোল করে রাখি কিন্তু আর পারছি না। জানি না কবে নিজের সেলফ কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি আমি। কত কিছু ভেবে রেখেছি কিভাবে ওকে শাস্তি দিবো কিন্তু ও সামনে আসলেই সব ভেনিস হয়ে যায় আমার। না আমাকে নিজেকে আরো শক্ত করতে হবে ওর দেওয়া প্রত্যেকটা কষ্ট আমি ওকে ফিরিয়ে দিবো।”

রাফি রাগের বশে আয়নাতে জোরে ঘুসি মারে আর সাথে সাথে আয়নাটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে নিচে পড়ে যায়। আয়নাতে আঘাত করার কারণে রাফির হাত অনেকটা কে’টে যায় কিন্তু তাতেও রাফির কোনো খেয়াল নেই।

রাফি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে রুমে নন্দিতা নেই। রাফি জোরে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে আগে রুমাল পেঁচিয়ে নেয় কাটা জায়গাটাতে। বিছানার উপরে চোখ পড়তেই দেখে নতুন কাপড় রাখা আর একটা চিরকুট “ভাইয়া তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আয়।”

রাফিও রেডি হয়ে নিচে যায় আর কাজের লোককে বলে যায় ওয়াশরুমটা পরিস্কার করার জন্য। রাফি নিচে নামতে চোখ গুলা বড় বড় হয়ে যায় নন্দিতার পাশে এতো ছেলে দেখে। আসলে সবাই নন্দিতাকে Congratulation জানাতে এসেছে। রাফি আনমনেই বলে উঠে।

“what the hell?”

রাফা ভাইকে দেখে ভাইয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে নন্দিতার পাশে দাঁড় করায়। নন্দিতা তো নিচের দিকে তাকিয়ে আছো কিছুটা ভয়ে কিছুটা লজ্জায়। কিন্তু রাফি নন্দিতার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

রাফা বলে, “ভাইয়া এত দেরি করলি কেন? কতক্ষন ধরে ওয়েট করছিলাম তোর জন্য। তোর আর ভাবীর ছবি তুলবো বলে।”

নন্দিতার নজর যায় রাফির রুমাল পেঁচানো হাতের দিকে আর মনে মনে বলে।

“ওর হাতে কি হয়েছে একটু আগেই তো ভালো ছিলো, এর মাঝে কি এমন হয়ে গেলো?”

রাফি নন্দিতার পাশে দাঁড়িয়ে সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে আর নন্দিতা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এর মাঝে রাফা বলে।

“ভাইয়া এবার তোর আর ভাবির ছবি তুলা হবে।”

ছবি তুলা তো হচ্ছে কিন্তু নন্দিতা অনেকটা দূরত্ব রেখেই দাঁড়িয়ে আছে। রাফা ভাই আর ভাবির দূরত্ব দেখে বলে।

“আরে ভাবি তুমি এতো দূরে কেন দাঁড়িয়ে ভাইয়ার কাছে আসো।”

নন্দিতা রাফার কথাটা শুনে ঢোক গিলে। রাফির কাছে যাবে কি‌ যাবে না ভেবে পাচ্ছে না। দুটানায় পড়ে গেছে। এর মাঝে রাফি নিজেই নন্দিতাকে অবাক করে দিয়ে নন্দিতার কোমড় ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। নন্দিতার উনমুক্ত কোমড়ে রাফির শীতল হাত পড়তেই নন্দিতা কেঁপে উঠে।

রিসিপশন পার্টি শেষ হলো। রাফি রুমে বসে আছে। একটু পর নন্দিতা রুমে আসলে রাফির দিকে একবার তাকিয়ে নন্দিতা ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াশরুমে ঢুকে নন্দিতা বুঝতে পারে রাফির হাতে রুমাল বাধার কারণ? নন্দিতা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে রাফি রুমে নেই।

“কোথায় গেলো ও? ওর হাতটা ড্রেসিং করা দরকার না হলে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।”

নন্দিতা বারান্দায় গিয়ে দেখে রাফি সিগারেট টানছে। নন্দিতা মনের মাঝে সাহস সঞ্জয় করে রাফির পাশে এসে দাঁড়ায়। রাফি নন্দিতার দিকে না তাকিয়েই বলে।

“কি সমস্যা? কি চাই?”

নন্দিতা জড়তা কাটিয়ে বলে, “না মানে আসলে তোমার হাতে কি হয়েছে?”

“আমার হাতে যাই হোক তাতে তোর কি?”

“আমার কিছু হবে না যা হবার তোমারেই হবে, যদি হাতের কিছু হয় তাহলে তোমার হবে আমার কিছু হবে না।”

“তাহলে তো বুঝতেই পারছিস তোর কিছু হবে না,তাই আমাকে একদম দরদ দেখাতে আসবি না।”

নন্দিতা এবার রাগী স্বরে বলে, “একদম চুপ হুম, চলো আমার সাথে বেশি বকবক না করে।”

নন্দিতা রাফির হাত ধরে রুমে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে বলে।

“এখানে চুপচাপ বসো একদম নড়বে না।”

“অর্ডার করছিস আমাকে।”

নন্দিতা জোরালো গলায় বলে, “হে অর্ডার করছি! আমি ফাস্ট এড বক্সটা নিয়ে আসছি হাতটা ভালো করে পরিস্কার করতে হবে।”

“আমারটা আমিই করতে পারবো।”

“চুপ থাকতে বলছিনা তোমাকে।”

নন্দিতা ফাস্ট এড বক্সটা এনে রাফির পাশে বসে রাফির হাতটা পরিস্কার করা শুরু করে। রাফি আর কিছু বলে না চুপচাপ নন্দিতার দিকে তাকিয়ে আছে আর নন্দিতা রাফির কাটা স্থানটা সেবলন দিয়ে খুব যত্ন সহকারে পরিস্কার করতে থাকে। রাফি একটু আর্তনাত করে উঠলে নন্দিতা কাটা স্থানে ফু দেয়। অজান্তেই রাফি বা হাত দিয়ে নন্দিতার মুখের উপরে পড়ে থাকা ছোট চুল গুলো সরিয়ে দেয়। নন্দিতা রাফির দিকে এক বার তাকিয়ে রাফির হাত ব্যান্ডেজ করাতে মনযোগ দেয়।

“হয়ে গেছে।”

নন্দিতা কথাটা বলে রাফির দিকে তাকিয়ে দেখে রাফি ওর দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে। রাফি নরম গলায় বলে উঠে।

“কেন করলে এমন তুমি আমার সাথে নন্দিতা? কি দোষ ছিলো আমার?”

নন্দিতা আমতা আমতা করে বলে, “রাফি আমি আসলে।”

“কোনো উত্তর নেই তাই না তোমার কাছে। আগেও ছিলো না আর এখনও নেই। ঠিক আছে কোনো উত্তর দিতে হবে না।”

রাফি আর কিছু না বলে আবারো বারান্দায় চলে যায় আর নন্দিতা রাফির যাওয়ার পানে তাকিয়ে একট দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে।

_______

সকালে নন্দিতা ঘুম থেকে উঠে দেখে রাফি রুমে নেই। নন্দিতা তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। নিচে গিয়েও দেখে রাফি ছাড়া সবাই ডায়নিং টেবিলে বসে আছে। হেনা বেগম নন্দিতা দেখে বলে।

“নন্দিতা উঠেছো আসো ব্রেকফাস্ট করে নাও।”

নন্দিতা ইতস্তত হয়ে বলে, “মা রাফি।”

“কি জানি কি হয়েছে ওর সকাল সকাল উঠে চলে গেলো, নাস্তা পর্যন্ত করলো না শুধু বললো জরুরি কাজ পড়ে গেছে। কেন ও তোমাকে বলে যাই নি?”

“না মা আসলে তখন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম।”

“আচ্ছা শুনো ওর আসতে আসতে হয়তো বিকাল হয়ে যাবে, তুমি রেডি হয়ে থেকো বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য। কড়া ভাবে বলে গেছে যদি লেইট হয় তোমার তাহলে নাকি ও যাবে না। ওকে নিয়ে আর পারি না জেদটা গেলো না এখনো, তুমি আসো নাস্তা করে নাও।”

বিকাল হবার আগেই রাফি বাড়িতে চলে আসে। আর এসেই ফ্রেশ হয়ে তৈরি হতে থাকে। কালো প্যান্ট, কালো শার্ট, ছোট ছোট চুল গুলা কপালে এসে পড়ে আছে দেখতে একদম চকলেট বয় লাগছে নন্দিতার কাছে। নন্দিতা রাফির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রাফির‌ এতো তাড়াতাড়ি চলে আসার কারণে। নন্দিতার এমন তাকানো দেখে রাফি বলে।

“কি হলো এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কি, বাপের বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি নেই।”

“না না যাওয়ার ইচ্ছে আছে।”

“দশ মিনিট সময় দিলাম এর মাঝে নিচে দেখতে চাই, এগারো মিনিট হলেই আমি যাবো না।”

রাফি কথাটা বলেই হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বেরিয়ে যায়। রাফি চোখের আড়াল হতেই‌ নন্দিতা রাগী গলায় বলে।

“কি লোক রে বাবা একে বারে দ জ্জা ল।”

নন্দিতাও রাফির কথামতো দশ মিনিটে রেডি হয়ে নিচে নামে। রাফি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে। কিছু একটা ভেবে সামনের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায়। নন্দিতা জানদানির মাঝে একটা কালো শাড়ি পড়েছো, দু হাতে চার পাঁচটা কালো চুরি, চুল গুলা এক সাইডে এনে রেখেছো, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। অল্প সাজেই নন্দিতাকে দেখে মাশআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। রাফির ওয়ার্নিং শুনে নন্দিতা কোনোমতে রেডি হয়েছ, মেকাপ করা তো দুরের কথা। তাই নারমাল ভাবেই সেজেছে নন্দিতা। কিন্তু তারপর রাফির চোখে নন্দিতাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। রাফিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নন্দিতা বলে।

“কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি?”

রাফির ধ্যান ভাঙ্গে আর চারাপাশটা নজর বুলিয়ে ক্ষীণ গলায় বলে, “হুম”

_______

রাফি ড্রাইভ করছে আর নন্দিতা রাফির পাশে বসে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। হঠাৎ করেই রাফি গাড়ি ব্রেক করে রাশভারি গলায় বলে।

“গাড়ি থেকে নাম এক্ষুনি।”

নন্দিতা হতভম্ব হয়ে বলে, “মানে।”

“বলছি গাড়ি থেকে নামার জন্য কথা কানে যায় না।”

নন্দিতা রাফির দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটু আগে রাফির বলা কথাটা এখনও কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে। নন্দিতা বুঝতে পারছে না তার সামনে বসা লোকের মাথায় হঠাৎ করে কি চেপে বসে এই ভালো তো এই খারাপ। রাফি আবারো ঝাঁঝালো গলায় বলে।

“কি এভাবে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন? গাড়ি থেকে নামতে বলছি তো আমি তোকে।”

“কি বলছো কি রাফি, আমি গাড়ি থেকে কেন নামবো?”

“Because আমি বলছি তাই নামবি।”

“রাফি আমি এখানকার কিছু চিনি না আর আমার কাছে টাকাও নেই যে গাড়ি করে যেতে পারবো।”

“টাকা নেই তো কি হইছে দুটো পা আছে তো তোর,, হেঁটে হেঁটে যাবি তুই।”

“এমন কেন করছো তুমি রাফি আমার সাথে? একটু আগে তো সব কিছু ঠিক ছিলো।

রাফি বিদ্রুপ করে বলে, “ঠিক ছিলো, কি ঠিক ছিলো? কিচ্ছু ঠিক ছিলো না আর কোন দিন ঠিক হবেও না, তাই জলদি গাড়ি থেকে নাম।”

“রাফি আমার কথাটা একটু শুনো, আমরা যদি আলাদা আলাদা যাই তাহলে বাবা মা খুব কষ্ট পাবেন।”

“তুই গাড়ি থেকে নামবি না তাই তো, ঠিক আছে আমিই তোকে নামতে সাহায্য করছি।”

“রাফি প্লিজ আমার কথাটা একটু শুনো প্লিজ রাফি।”

অন্য দিকে রাফি গাড়ি থেকে নেমে নন্দিতার সাইডের দরজাটা খুলে নন্দিতাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ির দরজা লক করে দেয়।

“প্লিজ রাফি আমাকে এভাবে ফেলে রেখে যেও না প্লিজ, আমি এখানকার কিচ্ছু চিনি না।”

রাফি নন্দিতার কোনো কথা না শুনে গাড়িতে উঠে গাড়ি ড্রাইভ করে চলে যায়। নন্দিতা গাড়ির পেছনে দৌঁড় দেয় আর দৌঁড় দেওয়ার সময় নন্দিতা হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় আর রাফির গাড়িটাও মুহূর্তের মাঝে হারিয়ে যায়। নন্দিতা রাস্তার মাঝে বসেই কান্না শুরু করে দেয় আর বলতে থাকে।

“প্লিজ রাফি আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ। ফিরে আসো রাফি প্লিজ ফিরে আসো।”

রাফি অনেকটা রাস্তা চলে আসতেই গাড়ি জোরে ব্রেক করে, মাথাটা সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে। কিছুক্ষন পরে রাফি রাগে স্টিয়ারিং এ জোরে আঘাত করে বলে।

“কেন এত কষ্ট হয় আমার ওকে কষ্ট দিলে কেন? আমি চাই ও কষ্ট পাক কিন্তু ওকে কষ্ট দিতে গিয়ে যে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। নাহ এভাবে ওকে ফেলা রেখে আসা উচিত হয় নি আমার। ওর যদি কিছু হয়ে যায় আবার, না না আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে ওর কাছে। কষ্ট দিলেও ওকে ঘরের ভেতরে দিবো বাইরে না।”

রাফি গাড়ি ঘুরিয়ে নেয় নন্দিতার কাছে আসার জন্য। কিন্তু নন্দিতার কাছে এসে যা দেখে তাতে রাফির মাথা‌টা গরম হয়ে যায়, রাগে স্টিয়ারিং দু হাত দিয়ে জোরে চেপে ধরে। চোয়াল শক্ত করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।

#চলবে______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে