#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_2
রাফি খাবার টেবিলে বসে নাস্তা করা শুরু করে দিয়েছে। এমন সময় হেনা বেগম রাফিকে উদ্দেশ্য করে বলেন।
“তুই কি অফিসে যাবি নাকি আজকে।”
রাফি খেতে খেতে বলে, “হুম।”
“মানে আজকে তুই অফিসে! আজকে বাড়িতে একটা অনুষ্টান আছে আর তুই… ”
হেনা বেগমকে কিছু বলতে না দিয়ে রাফি বলে উঠে,
“প্লিজ মা বিয়ে করতে বলেছো বিয়ে করেছি এখন আর প্যারা দিও না।”
“কিসের প্যারা আজকে তোর বউ ভাত আর তুই অফিসে যাবি।”
“আমার Important একটা মিটিং আছে।”
“ঠিক আছে তোর মিটিং ফিটিং তাড়াতাড়ি শেষ করে বাড়ি আসবি।”
নন্দিতা কিছুক্ষন পরে আসে। নন্দিতাকে দেখে হেনা বেগম বলেন।
“কি রে মা তোর মুখটা এমন দেখাছে কেন?”
রাফি নন্দিতার দিকে তাকায় নন্দিতাও রাফির দিকে এক নজর তাকিয়ে শাশুড়ি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে।
‘কিছু হয় নি মা।”
“বুঝতে পারছি মা বাবার জন্য মন খারাপ লাগছে তাই তো, মন খারাপ করার কিছু হয় নি কালকে তো যাবি এবার আয় নাস্তা কর এসে।”
নন্দিরা রাফির সামনা সামনি বসে। কিন্তু রাফি নন্দিতার দিকে না তাকিয়ে নাস্তা করে যাচ্ছে। কিন্তু নন্দিতা রফির দিকে এক নজরে তাকিয় আছে। টেবিলের ওপরে তোমার রাখা হাতের লাল জায়গাটা দেখে হেনা বেগম বলে বলে উঠেন।
“একি তোর এমন লাল হয়ে আছে কেন? একটু আগেই তো দেখলাম ভালো তাহলে এটা কি করে হলো।”
নন্দিতা কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না একবার রাফির দিকে তো আরেকবার শাশুড়ি মার দিকে তাকায়।
“মা আসলে মানে…. ”
রাফি নন্দিতাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বলা শুরু করে।
“মা আসলে হয়েছে কি জানো তোমার ছেলের বউটা একটু কেয়ারলেস বুঝলে,, তাই তো আমাকে চা দেওয়ার সময় ওর হাতে চা পড়ে গেছে অসাবধানতায়।”
হেনা বেগম আতকে উঠে বলেন, “কি বলছিস কি? নন্দিতা একটু সাবধানে কাজ করবে তো মলম লাগিয়েছো তো।”.
“না মা আসলে… ”
পুনরায় রাফি নন্দিতার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে।
“একি তুমি মলম লাগাও নি এখনও কত করে বললাম মলম টা লাগিয়ে নিচে আসো কিন্তু কে শুনে কার কথা। ঠিক আছে চলো আমি মলম লাগিয়ে দিছি।”
রাফি চেয়ার থেকে উঠে নন্দিতার হাত ধরে নন্দিতাকে উপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাটা ধরে। আর নন্দিয়া তো রাফির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাফির এই অন্য রকম রুপ দেখে।
রাফি নন্দিতাকে উপরে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে রাফির হাতের বাধন শক্ত হয়ে পড়ে। নন্দিতা ব্যথা কুঁকড়ে উঠে একে তো হাতে গরম চা পড়ার জন্য লাল হয়ে গেছে আর এক রাফি খুব শক্ত করে ধরেছে যার কারণে হাতের যন্ত্রণাটা দ্বিগুন হয়ে গেছে।
“রাফি আমার খুব লাগছে হাতে প্লিজ ছাড়ো।”
রাফি নন্দিতাকে রুমে এনে বিছানায় ছুড়ে ফেলে যার কারনে নন্দিতা কোমড়ে ব্যথা পায়, নন্দিতা ব্যথার উপর ব্যথা পেয়েই যাচ্ছে। রাফি দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে নন্দিতাকে বিছানা থেকে টেনে তুলে নন্দিতার দু বাহু চেপে ধরে রাগি কন্ঠে বলে ওঠে ।
“তোকে আমি কি বলেছিলাম, কি বলেছিলাম তোকে আমি মা বাবার সামনে মুখটা এমন বাংলার প্যাচের মতো করে রাখবি না কথা কান যায় না তোর।”
“আহ! রাফি লাগছে আমার প্লিজ ছাড়ো।”
“আমারো লেগেছে বুকে সেই পাঁচ বছর ধরে, যার ব্যথা এখনও কমে নি, তোর শরীরের ব্যথা তো কমে যাবে কিন্তু আমার বুকের ব্যথা কমবে কি করে? তোকে আমি আজকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিছি বাবা মার সামনে,,, না শুধু বাবার মার সামনে না সবার সামনে হাসি খুশি থাকবি বুঝতে পেরেছিস, নাকি এখনও বুঝতে পারচ্ছিস না আমার কথা।”
নন্দিতা ব্যথায় জর্জরিত হয়ে বলে, ” হু,,, ম,, বু,,, ঝতে পেরেছি।”
নন্দিতার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে তা দেখেও রাফির একটু মায়াও হচ্ছে না বরং চোখ গরম করে নন্দিতাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে নিজের কোর্টটা হাত নিয়ে দরজা খুলে ঘর থেকে বের হয়ে যায় আর তুমি ফ্লোরে বসে জোরে জোরে কান্না শুরু করে দাও। রাফি বের হওয়ার সাথে সাথে রাফার সাথে দেখা হয়। রাফা রাফির ছোট বোন। রাফা গলার স্বর নিচু রেখে বলে।
“ভাইয়া কি হয়েছে?”
রাফি বোনের সাথে কোনো কথা না বলে চলে গেলো। রাফা মনে মনে বলে।
“কি হলো ব্যাপারটা।”
রাফা ভাইয়ের ঘরের সামনে এসে দরজায় শব্দ করে বলে।
“ভাবি আসবো?”
নন্দিতা রাফার গলা শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি লরে ফ্লোর থেকে উঠে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে।
“হে রাফা এসো।”
রাফা ঘরে ঢুকে বলে, “কি হয়েছে ভাবি ভাইয়া এভাবে চলে গেলো কেন?”
“কিছু হয় নি রাফা।”
“তাহলে তোমার চোখের কোণে পানি কেন?”
নন্দিতা চোখের পানি মুছে বলে, “ও কিছু না আসলে বাবা মার জন্য মন খারাপ করছিলো।”
রাফা আর এই বিষয়ে কিছু বলে না। ভাই আর ভাবির ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু না বলাটাই ভালো। তাই অন্য বিষয়ে বলে।
“ও আচ্ছা কালকে তো যাবেই ও বাড়িতে, আচ্ছা মার কাছে শুনলাম তোমার হাতে নাকি গরম চা পড়েছে আসো মলম টা লাগিয়ে দেই আমি নাকি ভাইয়া লাগিয়ে দিয়ে গেছে।”
“না আসলে ওনার ইম্পর্টেন্ট একটা ফোন আসার সাথে সাথে চলে গেছে তাই আর লাগতে পারে নি মলমটা”
নন্দিতার হাতে রাফা মলম লাগিয়ে দিছে আর বলছে।
“জানো ভাবি আমার ভাইয়াটা এমন উগ্র মেজাজের কোনো দিনও ছিলো না। সবসময় হাসি খুশি, ঠাট্টা মজা করতো সবার সাথে। কিন্তু হঠাৎ করেই আমার ভাইটা চেইন্জ হয়ে গেলো নিজেকে পর্যন্ত ঘর বন্ধি করে ফেলছে। সবসময় আমাদের থেকে দুরে দুরে থাকতো কথা বলতে গেলেই জোর চিৎকার করে বলতো Don’t disturb me আর মাঝে মাঝে চাপা কান্নার শব্দ শুনা যেতে ভাইয়ার রুম থেকে। শুধু এটা বুঝতে পারতাম না ভাইয়া এমন কেন করছে? কিছু বললইে রাগে চিৎকার করত, তখন আমরাও আর ভাইয়ার সামনে ভয়ে যেতাম না। মা ভাইয়াকে খুব কষ্ট করে স্বাভাবিক লাইফে ফিরায় বলতে গেলে মায়ের কসম দিয়েই স্বাভাবিক লাইফে ফিরায় ভাইয়াকে। তারপর মা ভাবে তিন চার বছর পর ভাইয়ার বিয়ে দিবে এরপর তোমার সাথে বিয়ে হলো। কিন্তু মেজাজ আর পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না আজ যা দেখে বুঝলাম। তুমি প্লিজ ভাইয়াকে একটু দেখো হুম ও এমন না ও খুব নরম মনের মানুষ। বাহিরটা শামুকের খোলসের মতো শক্ত হলেও ভেতর নরম। আচ্ছা যাই হোক তোমার নাস্তাটা আমি এখানে পাঠিয়ে দেই নাস্তা করে রেস্ট নাও সন্ধ্যার দিকে রিসেপশন আছে তো অনেক দখল যাবে তোমার উপর দিয়ে।”
নন্দিতা রাফার কথা শুনে মনে মনে ভাবে, “আমি জানি তোমার ভাই কেন এমন করে? সব দোষ যে আমার।”
কথাটা ভাবতেই নন্দিতার চোখ থেকে দু ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। বিকালের পার্লার থেকে আসা লোকেরা নন্দিতাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। কিন্তু নন্দিতার মন যে হাঁসফাঁস করছে রাফির জন্য। সকাল থেকে এখনও রাফির দেখা নেই। হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে নন্দিতা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় আর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে রাফি দাঁড়িয়ে আছে হাতে কোর্টটা নিয়ে আর নন্দিতার দিকে কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে। রাফির হঠাৎ করেই কি যেন হয়ে গেলো নিজের হুসে ঠিক নেই, হাতের কোর্টটা সোফায় ছুড়ে ফেলে নন্দিতার দিকে এগিয়ে আসে নন্দিতা তো ভয়ে এক পা এক পা করে পিছিয়ে যায়। পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে আটকে যায়। রাফি নন্দিতার অনকেটা কাছে এসে দাঁড়ায় । রাফি নিজের ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে নন্দিতার বা গালে মাঝখানের তিলটায় র্স্পশ করে। নন্দিতা তো চোখ মুখ খিচে রেখেছো দম বন্ধ হয়ে আসছে কেন জানি, সারা শরীর মৃদু কাঁপছে। রাফির গরম নিঃশ্বাস নন্দিতার সারা মুখে আছড়ে পড়ছে । রাফি নন্দিতার মুখটা দু হাত দিয়ে আবদ্ধ করে নন্দিতার নিচু মুখটা উপরে দিকে তুলে এক নজরে রাফি নন্দিতার মায়া ভরা চেহারাতে তাকিয়ে থাকে। রাফি নন্দিতার ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট নিতে নিবে ঠিক সেই সময় রাফা ডাক দেয়। রাফি সাথে সাথে নিজের হুসে ফিরে আসে আর নন্দিতাকে ছেড়ে দিয়ে সাথে সাথে ওয়াশরুমে চলে যায় । আর নন্দিতা জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ে।
#চলবে…….