অপ্রত্যাশিত_বিয়ে প্রথম_পর্ব
•
•
অনেকটা সময় ধরে জুঁইরের পাশে বসে আছি।আজকে মেয়েটার থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।মেয়েটার মুখে একটা অদ্ভুত রকমের মায়া আছে তা আগে কখনো লক্ষ্যে করে দেখিনি।আমার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে জুঁই বলে উঠল,,,,
•
–আমার হাত টা তুমি ধরতে চাচ্ছ তাই না ?
•
আমি জুঁই এর কথা শুনে অবাক হলাম।আমি এতটাই মগ্ন ছিলাম ওর প্রতি যে লক্ষ্যই করিনি ও কখন চোখ খুলেছে।কিভাবে জানল আমার মনের কথা,,,,
প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে জুঁইয়ের বিছানার পাশে বসে আছি,যখন থেকে এসেছি তখন থেকেই ইচ্ছা হচ্ছিল ওর হাতটা একটু ধরি। খুব সংকোচ কাজ করছিল নিজের বউ এর হাত ধরতেও এত সংকোচ কেন মাথায় আসছিল না হয়তো এখনো ওকে ভালবাসতে পারিনি।আর তাই হয়তো মনের ইচ্ছেটা ওর কাছে বলতে পারিনি,,,
কিন্তু মেয়েটা খুব বুদ্ধিমতী।আমি কিছু না বললেও আমার মনের কথা ঠিকই বুঝে গেছে।
জুঁই আর আমার বিয়েটা হয়েছিল একটু অন্যরকম ভাবে,হুট করে।বাবা মেয়ে ঠিক করেছিল।আমি যেদিন দেখতে গেলাম সেদিনই বিয়ে দিয়ে দিল।আমার মত ছিল না বিয়েতে কিন্তু বাবার মতের বিরুদ্ধে যেতেও পারিনি,তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই বিয়ে করতে হয়।বিয়ের আগে জুঁইয়ের সাথে আমার কখনো কথাও হয়নি।
হঠাৎ এমন একজনের সাথে বিয়ে হয়ে গেল যাকে আমি চিনিনা জানিনা।তার সাথে কিভাবে থাকব ভেবে পেলাম না।যদিও কারো সাথে আমার প্রেম ছিলনা।বাট জুঁইকে আমার খারাপ লাগত না ভাল লাগত, তবুও তখনো ওর প্রতি ভালবাসা টা জন্মায় নি।আর কোরো প্রতি ভালোবাসা না জন্মালে তার সাথে থাকাটা খুব কষ্ট সাধ্য ব্যাপার।
আমি যে শহরে থাকতাম, জুঁইদের বাসাও একই শহরে। মাত্রই জবে ঢুকেছি,তাই এখনো ভাল একটা বাসা নেওয়া হয়নি।অফিসের পাশেই একটা ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে থাকি।জুঁই লেখাপড়া করে তাই ও ওর বাবার বাসাতেই থাকে।
আমাদের সম্পর্ক যে ঠিক ঠাক নয় এটা আমাদের দুজনের পরিবারের কেউ জানে না। সবাই জানে আমি ঠিকঠাক বাসা পাচ্ছিনা তাই জুঁইকে নিয়ে একসাথে থাকছিনা।বাসা পেলেই নিয়ে যাব।তবে আমার তেমন কোন ইচ্ছা হচ্ছিল না,একটা ভাল বাসা ভাড়া করা আমার জন্য কোন ব্যাপার না।জুঁইকে মোটেও আপন করে নিতে পারছিলাম না।
জুঁই অনেক বার চেষ্টা করেছিল আমার কাছে আসার কিন্তু আমার তরফ থেকে কোন সায় ছিলনা।একটা মেয়ে হিসেবে যথেষ্ট করেছিল ও।
গত কালকের কথাই বলি।সকাল আটটা, ঘুম তখনো ভাঙেনি, শুক্রবার ছিল তাই অফিসও নেই।হঠাৎ কানের কাছে রাখা ফোন টা বেজে উঠল, একটু বিরক্ত হলাম।নাম্বার না দেখেই ফোন ধরলাম,
হ্যালো,,,,,,
ওপাশে কোন আওয়াজ নেই।এ কাজ টা একমাত্র জুঁই করে।ও অনেকক্ষন পর কথা শুরু করে।
আমি আবার বললাম,,,,
–কিছু বলবে,
•
–হুম,
•
বলো
•
–তোমার কি সময় হবে আজ দুপুরে,
•
–কেন ?
•
–আজ আমার জন্মদিন,
•
–ওহ,,,,শুভ জন্মদিন।
•
–সময় হবে কি ?
•
–না আজকে আমার সময় হবেনা’স্যরি’।
প্লিজ কিছু মনে কর না।
•
–আচ্ছা,ব্যাপার না।
•
সময় ছিল আমার কাছে তবুও জুঁইকে বলেছিলাম সময় নেই,,,,
কোন এক অদ্ভুত কারণে জুঁইকে আমার বিরক্ত লাগত, তাই ওর কাছ থেকে দূরে থাকতাম।তাই সারাদিন ঘরে শুয়ে বসে কাঁটিয়ে দিলাম।
রাত্রে আবার জুঁইয়ের ফোন এলো।কল ধরতেই ও বলা শুরু করল,,,,,
•
–খুব ব্যাস্ত ছিলে আজকে তাই না ?
•
আমার মনে হচ্ছিল ও কাঁদছে , আমি কি বলব ভেবে পেলাম না।ও কি জেনে গেছে আমি সারাদিন বাসায় ছিলাম।জুঁই আবার বলতে লাগল,,,,,
–খুব বেশি কিছু কি চেয়েছিলাম তোমার কাছে, শুধু একটু সময়ই তো চেয়েছিলাম,,,
•
এটুকুই বলেই ফোন রেখে দিল।আমি রিং ব্যাক দিলাম দেখি ওর নাম্বার বন্ধ।অদ্ভুত কোন কারণে জুঁইয়ের জন্য আমার মন টাও খারাপ হয়ে গেল।সারারাত ওর কথাই শুধু মাথায় এল।
বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েরা যত তাড়াতাড়ি তাদের স্বামীকে কে ভালবেসে ফেলে,এত তাড়াতাড়ি ছেলেরা পারেনা নিজেদের বউকে ভালবাসতে।
আমিও পারিনি জুঁইকে ভালবাসতে। বিয়ের রাতেও ওর সাথে আমার কথা হয়নি। সারারাত বিছানায় নির্ঘুম রাত কাঁটিয়ে দিয়েছিলাম।ওই রাতের পর আমি জুঁইয়ের সাথে আর কখনো থাকি নি।
জুই মাঝে মাঝে আসত আমার এখানে।
কিছুক্ষন থেকে চলে যেত।খুব একটা কথাও হত না।ঘর পরিষ্কার করে দিত, মাঝে মাঝে রান্নাও করত,তবুও কখনো ওকে ধন্যবাদ দেওয়া হয় নি।
আজ সকালে অফিসেই ছিলাম, তখনি জুঁইয়ের বাবা ফোন করল।ওনাকে আমার ভালই লাগে, একমাত্র মেয়ের জামাই তাই আলাদা রকমের স্নেহ করেন।আমি ফোন ধরে বললাম,,,,
–আসসালামু আলাইকুম আব্বা।
•
–ওয়ালাইকুম আসসালাম, তুমি কোথায় ?
•
–অফিসে, কিছু হয়েছে ?
•
–জুঁইয়ের সাথে কিছু কি হয়েছে তোমার ?
•
–না তো,কেন?
•
–মেয়েটা কাল থেকে কিছুই খায়নি,সকালে মাথা ঘুরে পরে গেছে,
•
–ওহ,এখন কেমন আছে?
•
-ভাল,,,,,তুমি কি আসবে একটু ?
•
-হুম,আমি আসছি,,,,,
আমি ভাবতেই পারিনি ও অসুস্থ হয়ে যাবে।আর কিছু ভাবলাম না, সোজা অফিস থেকে বের হয়ে ওকে দেখতে আসলাম।ওকে দেখেই মনে শান্তি এলো।মনে হল,ওর খারাপ কিছু হয়ে গেলে আমি ভাল থাকতাম না।ও আমার জন্যই অসুস্থ হয়েছে।
জুঁই আবার বলল,,,,,
–কি হল ? ধরতে চাইলে ধরো,,,,,
•
–তুমি কিভাবে বুঝলে আমি তোমার হাত টা ধরতে চাই ?
•
জুঁই একটু হেসে বলল,,,,,
–তোমার নজর সেই তখন থেকে আমার হাত টার উপর ছিল,,,,
•
তোমার চোখ তো বন্ধ ছিলে তাহলে কিভাবে দেখলে,,,,,, ??
চলবে