অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৮
লেখা –সুলতানা ইতি
পাঁজাকোলা করে কাউকে বিতরে নিয়ে আসছে, যাই দেখে আসি ব্যাপার টা কি
চুহেস নিছে এসে নিহার কে দেখলো নিহার সোপায় একটা মেয়েকে শুইয়ে দিচ্ছে
চুহেস-নিহার মেয়েটা কে
চুহেসের কথ শুনে নিহার চমকে উঠে পিছনে তাকায় সা,স্যার
নিহার গাইথির মাথার পাশে থেকে সরে পড়াতে, এখন গাইথির মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে
চুহেসের নজর পড়ে গাইথির মুখের দিকে,
চুহেস মুহুর্তে ই আঁতকে উঠে
-একি গাইথি এখানে,বউ সাজে কেনো
নিহার- সা,স্যার,আপনি খুশি হোন নি
চুহেস অবাক হয়ে বলে
– আমি খুশি হবো কেনো
নিহার- ঠিক আছে স্যার এই নিয়ে পরে কথা বলবো আগে ডক্টর কে ফোন করে আসতে বলি,ক্লোরোফম করা হয়েছে গাইথি ম্যাডাম কে এখন ইনজেকশন দিয়ে জ্ঞান ফিরাতে হবে,
চুহেস আঁতকে উঠে বল্লো
– কে করেছে ওকে ক্লোরোফম,
নিহার সেদিকে কান না দিয়ে ডাক্তার কে ফোন দেয়, ডাক্তার এসে গাইথি কে ইনজেকশন দিয়ে, চলে যায়,একটু পরেই গাইথি নড়েচড়ে উঠলো
এই পুরোটা সময় চুহেস নিরব দর্শক এর মতো ছেয়ে ছিলো, বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না, কি হচ্ছে সব টা যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে
গাইথি চোখ মেলে তাকিয়ে চার পাশ দেখে নিয়ে দফ করে উঠে বসলো, আমি,আমি এখানে কি করছি, আজ তো আমার বিয়ে হওয়ার কতা ছিলো
গাইথির কথা শুনে চুহেস নিহারের দিকে তাকিয়ে বলে
-নিহার ও এসব কি হলছে কি হয়েছে পুরো ব্যাপার টা আমাকে বলো,
গাইথি এতোক্ষনে নিহার আর চুহেস কে লক্ষ করলো
গাইথি চুহেস কে দেখে আগুনের মতো জ্বলে উঠে
– আপনি, আপনি এখানে কি করছেন,আর এই সম্পূর্ণ অচেনা পরিবেশে আমি কি করছি
চুহেস নিহারের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে
নিহার সাসহ সঞ্চয় করে নিচ্ছে, আজকে প্রথম চুহেসের মুখের উপর কথা বলবে তাই কি বলবে প্রথমে সেটা ও গুছিয়ে নিচ্ছিলো মনে মনে, তার পর বলতে শুরু করলো
– স্যার আমি আপনার কাছে আজ অনেক বছর ধরে আছি, দেখেছি আপনাকে খুব কাছ থেকে,আমি কখনো আপনাকে মন খুলে আনন্দ করতে দেখিনি,
সব সময় মনে হয়েছে আপনি, কিছু যেন একটা লুকিয়ে রাখতে চাইছেন
সুন্দর নগর যে কদিন চিলাম,আপনাকে অনেক ফ্রেশ দেখেছি আমি, তার পর খেয়াল করলাম আপনি সব সময় গাইথি ম্যাডামের সাথে দেখা করার জন্য উদ্দিগ্ন হয়ে থাকতেন,
আমার মনে হয়ে ছিলো আপনারা দু জন, দুজন কে ভালোবাসেন,
তাই যখন নিধিপার কাছে ম্যাডামের বিয়ে কথা শুনি
তখন আমি একটা প্লান করি,নিধিপার ইচ্ছে ছিলো না আমার প্লানের মধ্যে থাকা,
তবু ও থাকতে আমি বাধ্য করি, আর ম্যাডাম কে এখানে নিয়ে আসি নিধিপার সাহায্যে
নিহারের কথা শেষ হওয়ার পরে ও চুহেস দাঁড়িয়ে আছে আগের মতো করে, কোন রেসপন্স দেখা গেলো না তার মাঝে, হয়ত ঘোরের মধ্যে আছে
গাইথি চিৎকার বলে এখন আমার কি হবে গ্রামের মানুষ এমনিতে অনেক ক্ষ্যাপে আছে আমাদের উপর, এখন ভাইয়া, আর বাবা কি বলবে ওরা তো এখন আমায় ঘৃনা করবে, এই বলে গাইথি কান্না শুরু করে দেয়
গাইথির কান্নার আওয়াজ কানে যেতে চুহেস স্বাভাবিক হয়,,গাইথিকে লক্ষ করে বলে
-প্লিজ তুমি কেদো না তোমার চোখে এই নোনা পানি একেবারে মানায় না,প্লিজ তুমি কাদবেনা
যা হয়েছে পুরোটা ই ভুল বুঝা…
চুহেস কে কথা শেষ করতে দিলো না গাইথি
– আপনি চুপ করুন, এই সব কিছু আপনার জন্য ই হয়েছে, আমার বিয়েটা দু বছর পরে হওয়ার কথা ছিলো, শুধু আপনার জন্য তাড়াহুড়া করে এখন হচ্ছিলো,
সেটা ও হতে দিলেন না,আমার বাবা, ভাই এখন গ্রামে মুখ দেখাবে কি করে,
এখন আসছে উনি ভালো সাজতে,নিজে লোক পাঠিয়ে নিজে ই সাধু সাজছে এখন
গাইথির কথা গুলো চুহেসের গায়ে কাটার মতো বিঁধছে যার সুখের জন্য ঐ পথ থেকে সরে এলাম, তার মুখে এই সব কথা শুনতে মোটেই ইচ্ছে হচ্ছে না
কঠোর গলায় চুহেস বল্লো
– চুপ করো গাইথি এই সব আমার তোমার মুখ থেকে শুনতে হবে ভাবতে পারিনি,,
নিহার তুমি অনেক বড় ভুল করেছো আমাকে না জানিয়ে কাজ টা করে, কারো সাথে একটু কথা বললে,বা ঘুরতে গেলেই কি তাকে ভালোবাসে,তোমার মেন্টালিটি কবে থেকে এত নিচু হলো,
গাইথি- থাক এখন আর এতো সাফাই গাইতে হবে না,যা ক্ষতি হয়েছে সব আমার হয়েছে, আমি এখানে আর এক মুহুর্ত থাকবো না এই বলে গাইথি উঠে চলে যাচ্ছিলো
চুহেস ধমক দিয়ে বল্লো
– দাড়াও গাইথি তুমি এখানে নিজের ইচ্ছে তে আসনি যে তুমি নিজের ইচ্ছেতে যাবে
তুমি আর এক পা দিবে না বাড়ির বাইরে, ভোর হলে নিহার তোমাকে যে ভাবে এনেছে সে ভাবেই দিয়ে আসবে
নিহার – আমি কেনো স্যার
চুহেস- কারন তুমি ওকে এনেছো আমাকে জিজ্ঞাস করোনি, তাই এখন তুমি ই যাবে,
নিহারের আরর কথা বলার সাহস হলো না
চুহেস কথা শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো, যা ঘটেছে তার জন্য মোটে ই প্রস্তুত ছিলাম না,, নিহার যে এই রকম একটা কাজ করবে ভাবতে ই পারেনি,
তবে নিহারের ভাবনা একদম ই ভুল নয়,তবে কিছু কিছু ঠিক কাজ কে পরিস্থিতি ভুল প্রমাণিত করে দেয়,
আজ বাবুই এতো কাছে থেকে ও আমার এতো দূরে, ওর প্রতি আমার কোন অধিকার নেই,, বাবুই নিশ্চয়ইই সাইমুম কে অনেক ভালোবাসে,হয়তো সাইমুম আমার থেকে ও অনেক ভালো বাসে বাবুই কে, সবাই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়,হয় তো আমি তাদের দলের একজন,
চুহেসের ভাবনা ছেদ পড়ে, নিহারের কথায়
নিহার- স্যারর ভোর হয়ে গেছে
চুহেস – হ্যা তো যাও ওকে যেখান থেকে এনেছো সেখানে রেখে আসো
নিহার- স্যার সত্যি যাবো
চুহেস রেগে গিয়ে বল্লো
– আমি কি মিথ্যা করে যেতে বলেছি
নিহার আর কিছু না বলে বেরিয়ে যায় গাইথি কে নিয়ে
ওরা যাওয়ার পর চুহেস যেন ভাবনার অতল সাগরে ডুবে গেলো
তার পর নিজেই নিজেকে বল্লো
– নাহ আমি ভুল করেছি নিহার কে একা পাঠিয়ে গ্রামের মানুষ নিহার কে ভুল বুঝে মারধর করতে পারে
তার পর চুহেস গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়,
ড্রাইবার কে বল্লো গাড়ির যত দ্রুত চালানো যায়, সে দিকে যেন খেয়াল রাখে, ঠিক সময় গ্রামে পৌছতে হবে
নিহার যখন গাইথি কে নিয়ে গ্রামে পৌছয় তখন দুপুর আড়াইটা বাজে, গাইথি গাড়ি থেকে নেমেই বাড়ির দিকে যায়, নিহার ভয়ে ভয়ে পিছন পিছন আসছে
গাইথি তার ভাই আদনান কে ঝড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে ভাইয়া যা ঘটেছে তাতে আমার কোন দোষ নেই, প্লিজ ভাইয়া তুমি আমায় ভুল বুঝো না
আদনান- তোকে আমি কোন দিন ভুল বুঝিনি তুই আমার ছোট বোন, অনেক ভালোবাসি তোকে কিন্তু তুই তার মর্যাদা রাখলি না
আদনান নিহার কে দেখতে পায়
– একি আপনি এখানে কেনো আসছেন, আপনি এখনি এখান থেকে চলে যান, আমার বোন কে ফিরিয়ে দিয়েছেন এই অনেক আর কোন ঝামেলা চাই না আমি
গ্রামের গন্য মান্য কয়েকজন গাইথিদের উঠুনে ভীড় করে, তাদের একটা ই দাবি নিহার কে ছেড়ে দেয়া যাবে না, ঠিক এই সময় সেখানে চুহেস পৌছয়, নিহারের ভয় টা দূর হয়ে যায় চুহেস কে দেখে
আদনানের চোখ চুহেসের উপর পড়তেই সে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলে
-আরেহ স্যার আপনি এখানে
চুহেস- হুম আপনার বাবা কোথায় ডাকুন তাকে আমি কয়েক টা কথা বলবো
আদনান-বাবা ঘরেই আছে, এই বলে আদনান আহমদ মেহেরা কে ডেকে দেয়
আহমদ মেহেরা তো চুহেসের দিকে তাকিয়ে স্টাচু হয়ে যায়,
চুহেস স্বাভাবিক ভাবে আহমদ মেহেরা কে সালাম দিয়ে বসতে বলে
আহমদ মেহেরা যেমন আছে তেমন ই দাঁড়িয়ে থাকে
চুহেস আর কিছু না বলে বলল
– আমি আসল কথাতে আসি, গত মাসে আমি গ্রামে ঘুরতে আসি, সাথে এই ছেলে আমার, পি. এ. নিহার আসে
একদিন হঠ্যাৎ করে গাইথির সাথে আমার পরিচয় হয়,সে থেকে দু এক বার আমাদের দেখা হয়,কিন্তু নিহার অন্য কিছু ভেবে নেয়। হয়তো সে ভেবেছিলো…থাক সে সব কথা,তাই সে গত কাল গাইথিকে নিয়ে যায়,এর পুরো টা ই ভুল বুঝা বুঝি,আমি আপনাদের সবার কাছে নিহারের হয়ে ক্ষমা চাইছি
to be continue