নষ্ট গলি পর্ব: ২২
লেখাঃ মিম
.
নিজের রুমে দরজা আটকে খাটের এককোনায় দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেসে বসে আছে মায়া। ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। ভয়ে কুঁকড়ে আছে পুরোপুরিভাবে। কাঁপুনি এখন পর্যন্ত থামেনি। ৪০-৪৫ মিনিট আগে সোহানকে ফোন করেছিলো মায়া। সোহান ফোন রিসিভ করেই মায়ার ফোঁপানোর আওয়াজ শুনতে পেলো। মায়াকে সে শুধু এতটুকু বলতে শুনেছে
– তুমি বাসায় আসো এক্ষুণি। লোকটা বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভয় পাচ্ছি।
ব্যস এতটুকু কথা শুনেই সোহান তার মিটিং ফেলেই দৌড়ে বেরিয়ে আসলো। বাসার বাইরে কে দাঁড়িয়ে আছে? কেনো দাঁড়িয়ে আছে? কাহিনী কি এসব কিছুই জানতে চাইলো না সোহান। আপাতত জানার কোনো ইচ্ছাও নেই। কানে শুধু একটা কথাই বাজছে তুমি বাসায় আসো এক্ষুণি। সোহান এতটুকুই বুঝতে পারছে মায়ার তাকে এখন খুব প্রয়োজন।।
সালমান বাহির থেকে কয়েকবার মায়াকে ডেকেছে। কোনো উত্তর দেয়নি মায়া। রাস্তার প্রচন্ড জ্যাম ঠেলে ঠিক ৪৮ মিনিট ১৩ সেকেন্ড পর সোহান বাসায় পা রাখলো। মায়ার রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে সে।
– মায়া আমি এসেছি। গেটটা খুলো।
সোহানের গলার আওয়াজ পেয়ে জানে পানি ফিরে এলো মায়ার। পড়িমরি করে দৌড়ে যেয়ে গেট খুলে দিলো মায়া। সোহানকে দেখে ঠোঁট ভেঙে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলো সে। মায়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সোহান।
– এই মেয়ে, কাঁদছো কেনো এভাবে?
-…………..
– আসো, খাটে এসে বসো। সালমান পানি নিয়ে আয় তো একগ্লাস।
মায়ার অবস্থা দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে সোহান। পরিস্থিতি কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই মাথায় আসছে না সালমানের। মাথাটা চুল্কাচ্ছে প্রচন্ড রকমে। বিশ্রি পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। গ্লাস হাতে নিয়ে মায়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সালমান। সোহান বহুভাবে মায়াকে সামলাতে চাচ্ছে। কিন্তু কোনাভাবেই কূল কিনারা করতে পারছেনা। মায়া কেঁদেই চলছে। একেবারে হেঁচকি তুলে ফেলেছে কাঁদতে কাঁদতে। এবার মেজাজ খারাপ হচ্ছে সোহানের। কিন্তু রাগ দেখানোটা হবে বোকামী। এমনিতেই ভয়ে জান চলে যাচ্ছে মেয়েটার। এবার সোহান রাগ দেখালে তো একেবারে বেহুঁশ হয়ে যাবে।
– মায়া আমার কিন্তু আর ভালো লাগছে না। তুমি বলবে কি হয়েছে?
-………….
– কোথায় গিয়েছিলি ওকে নিয়ে?
– শিমুর সাথে দেখা করাতে।
– কি হয়েছে ওখানে?
– একটা লোক মায়ার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিলো মনে হচ্ছিলো লোকটা মায়াকে চিনে। ওকে দেখে হাসছিলো মিটমিট করে। মায়া লোকটাকে দেখার পর থেকে ওর অবস্থা নাজেহাল হয়ে গেছে।
সোহানের বুঝতে বাকি নেই লোকটা কে ছিলো? মায়ার কাস্টমারদের মধ্যে কেউ একজন হবে হয়তো। সালমানকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে হবে। মায়ার সাথে এক্ষুনি এ ব্যাপারে কথা বলাটা অতি জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
– ইয়ে, সালমান তুই গ্লাসটা এখানে রেখে একটু তোর রুমে যা। আমি ওর সাথে কিছু কথা বলবো।
– সিউর।
গ্লাসটা বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সালমান৷ যাওয়ার সময় গেটটা আটকে দিয়ে গেলো। মায়ার গাল চোখ মুছে দিতে দিতে বললো,
– মায়া প্লিজ কান্নাটা থামাও। কে এসেছিলো আমাকে বলো।
– ইমন।
– তোমার কাস্টমার?
– হ্যাঁ।
– এমন জমের মতো ভয় পাচ্ছো কেনো লোকটাকে?
– সে খুব জঘন্য একজন মানুষ। এই লোকটা একদম শুরু থেকে আমার কাছে আসতো। মাঝে আট নয় মাস বিদেশ ছিলো কি একটা কাজে। প্রতি সপ্তাহে তিনদিন করে আমার এখানে আসতো। কি যে অত্যাচার করতো সারাটা রাত ধরে কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না৷ আর কারো কাছে যেতো না। শুধু আমার কাছেই আসতো। জোনাকি বুবু অনেক টাকা হাতিয়েছে এই লোকের কাছ থেকে। বিদেশ যাওয়ার আগে লোকটা জোর করে আমার….
– তোমার কি?
– আম…. আমার ভিডিও বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো।
কথাটা বলেঔ আবার কাঁদতে লাগলো মায়া। ওর কাঁধে হালকা থাপ্পড় দিয়ে সোহান বললো,
– গাধার মতো কাঁদছো কেনো? চুপ করো তো।
– ভিডিওটা করার পর আমাকে বলেছিলো সাত আটমাস তো তোমাকে পাবো না তাই ভিডিওটা নিয়ে যাচ্ছি।
– মেন্টালি সিক নাকি?
– বলতে পারেন অনেকটা তেমনই। উনার আচরনগুলো কেমন যেনো। অস্বাভাবিক ধাঁচের।
– মাইর খেলেই মাথা থেকে ভূত নিচে নেমে যাবে৷ এসব ফালতু লোকের ভয়ে তুমি এভাবে কাঁদছো? আশ্চর্য! সে কি তোমাকে খেয়ে ফেলবে? ওর সাহস আছে তোমাকে কিছু করার? দূর থেকে তোমাকে দেখতেই পারবে। এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারবে না৷
– আপনি বুঝতে পারছেন না৷ লোকটা খুব খারাপ।
– বি স্ট্রং মায়া। তুমি ঐ নষ্ট জায়গা থেকে এখানে এসেছো। এই সমাজে তোমার সারভাইভ করাটা অতটাও সহজ হবে না৷ তোমার অতীত কোনো না কোনো ভাবে তোমার সামনে আসবেই৷ তুমি না চাইলেও আসবে৷ সিচুয়েশান হ্যান্ডেল করতে শিখো। আমি সবসময় তোমাকে সেইভ করার জন্য থাকবো না। আমি তোমাকে সাপোর্ট দিতে পারবো। কিন্তু তোমার যুদ্ধ তোমাকেই সামাল দিতে হবে। আগামীকাল তোমার দোকানের উদ্বোধন করবো। তোমার উপর ব্যবসায়ের ভার দিবো। সেই তুমি যদি এভাবে ঘাবড়ে যাও তাহলে কিভাবে হবে? এভাবে ভয় পেলে তুমি কখনোই একটা নরমাল লাইফ লিড করতে পারবে না। নিজের লাইফ, ক্যারিয়ার কিছুই সাজাতে পারবে না। নাউ ইটস ইউর ডিসিশন। তুমি কি আমাকে নিয়ে ভালোভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাও নাকি ভয়ে কুঁকড়ে বাকি জীবনটা কাটাতে চাও?
-…………..
– উত্তর দাও মায়া।
– মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই।
– তাহলে এসব ইমন টিমন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো৷ শুধু নিজের ক্যারিয়ার আর আমার দিকে কনসেনট্রেট করো। কে তোমার পিছু নিলো, কে তোমাকে দেখে হাসলো এসব ভেবে মাথা খারাপ করো না।
-………….
– চেহারার কি হাল করেছো! চোখ মুখ ফুলে একদম ভূতের মতো দেখাচ্ছে তোমাকে৷ যাও মুখ ধুয়ে আসো৷
-…………..
– কি হলো? যাও।
চোখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুমে গেলো মায়া। ওকে সান্ত্বনা দিলেও সোহান নিজেই শান্ত হতে পারছেনা৷ মনের মধ্যে উশখুশ চলছে ভিডিওটা নিয়ে৷ ভিডিওটা যেভাবে হোক ডিলিট করাতে হবে। আর এই ইমনের একটা ব্যবস্থা করতে হবে যাতে মায়া নামক ভূত মাথা থেকে নেমে যায়। একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো সোহান। কেউ জানাজানি হওয়ার আগেই পুরো ব্যাপারটা ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
চলবে,,,,,