নষ্ট গলি পর্ব- ১৮
লেখা: মিম
.
বাসায় ফিরে এসে ভেজা শাড়ী গায়ে দিয়েই ফ্লোরে বসে আছে মায়া। ঘোরটা তার এখনও কাটেনি। কানের মধ্যে লাগাতার বেজেই যাচ্ছে, ” কেউ একজন তোমাকে ভালোবাসে।” কথাটার মধ্যে কিছু একটা তো আছে। নেশা জাতীয় কিছু। ভয়ানক নেশা। পুরো শরীরটাকে অবশ করে দেয়ার ক্ষমতা আছে নেশাটার মধ্যে। মায়ারও এই মূহূর্তে শরীরটাকে অবশ মনে হচ্ছে। এজন্যই বোধহয় উঠে গিয়ে কাপড় পাল্টানোর জোরটা পাচ্ছে না।
কাপড় পাল্টে মাথা মুছতে মুছতে মায়ার রুমে এসেছে সোহান। মায়া এক দৃষ্টিতে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। এতটাই ঘোরের মাঝে ডুবে আছে যে সোহানের উপস্থিতি টের পেলো না সে। মায়ার মুখোমুখি হাঁটু ভেঙে বসলো সোহান। ওর গালে হাত দিয়ে জিগ্গেস করলো
– কি গো?
– হুম?
– কি ভাবছো এত মন দিয়ে? আর কাপড় পাল্টাচ্ছো না কেনো?
– হুম
– হুম হুম করছে কেনো? কেনো সমস্যা?
– নাহ।
– তাহলে?
– কিছু না।
– উঠো যাও। কাপড় পাল্টে আসো।
উঠে দাঁড়ালো মায়া। ড্রয়ার থেকে সালোয়ার কামিজের সেট হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগুলো মায়া।
কিছুক্ষন আগেই একদম কাক ভেজা হয়ে বাসায় এসেছে সালমান। কাপড় পাল্টে সোহানকে খুঁজতে খুঁজতে মায়ার রুমে চলে এলো সালমান। খাটে বসে ফোন টিপছে সোহান।
– ভাইয়া?
– কি?
– ফ্লোরে পানি কিসের?
– ঐ তো মায়া ভিজা শাড়ি পড়ে এতক্ষন ফ্লোরে বসে ছিলো। শাড়ির পানি ওগুলো।
– ফ্লোরে বসে ছিলো কেনো? রাগ করে?
– আরে নাহ। এমনি।
– ও বোধহয় বেশ চুপচাপ স্বভাবের তাই না?
– কথা বলে। তবে বেশিও না কমও না। আমার সাথে তো বেশ ভালোই কথা বলে। তুই নতুন তাই হয়তোবা কথাটা একটু কম বলছে।
– হয়তোবা।
– তুই তো অনেক কথা বলিস। ওর সাথে কথা বলতে থাক। দেখবি ও তোর সাথে কথা বলবে।
– হুম সেটা তো করবোই। শিমুকে বলেছি মায়ার কথা।
– ওহ আসল কথাই তো জিগ্গেস করলাম না। শিমুর সাথে সব ঠিক হয়েছে?
– হুম হয়েছে। কানে ধরে উঠ বস করিয়েছে এই মেয়ে আমাকে?
– পাব্লিক প্লেসে?
– হ্যাঁ।
– ওসব কোনো ব্যাপার না। ভালোবাসায় এমন শাস্তি পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
– মায়াও কি দেয় নাকি?
সোহান উত্তর দেয়ার আগেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হতে হতে বললো
– মোটেই না। আমি কখনোই তোমার ভাইকে পানিশড করি না।
– মায়া, ঘটনা কি বলো তো?
– কি ঘটনা?
– আমি বাসা থেকে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত একটু মরা মরা লাগছিলো। এখন খুব ফুরফুরে মনে হচ্ছে।
– হুম৷ একটা উত্তর খুঁজছিলাম। পেয়ে গেছি।
– কি উত্তর?
– উহুম। তোমাকে একদম বলা যাবে না।
– একান্ত গোপন কিছু?
– হুম। খুউউব গোপন।
চুল মুছছিলো মায়া। ওর হাত টেনে সামনে
এনে বসালো সোহান। মায়ার হাত থেকে তয়লাটা নিয়ে মাথা মুছে দিচ্ছে সে। বেশ রিল্যাক্স মুডে সালমানের সাথে গল্প করছে মায়া। সোহান চুপচাপ ওদের গল্প শুনছে আর মায়ার চুল মুছছে। রাত সাড়ে দশটা বাজে। বাসার কাজের লোক এসে বললো
– ভাই, রাত হইছে অনেক। খাবেন না?
– কয়টা বাজে?
– সাড়ে দশটা।
– কখন বাজলো? টেরই তো পেলাম না। যাও খাবার সাজাও টেবিলে। আমরা আসছি।
আলিশার বাসার ড্রইং রুমে বসে আছে তার বাবা আকরাম এবং বড় ভাই আদনান। পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে আলিশার ছেলে। মাথা নিচু করে বসে আছে বাপ- ভাই দুজন। প্রচন্ড তর্ক চলছে আলিশা রুপমের মাঝে। নির্বাক শ্রোতা হয়ে ওদের তর্ক শুনছে আাকরাম সাহেব এবং আদনান। এখানে জোর গলায় রুপমকে বলার কিছুই নেই তাদের। তারা দিব্যি বুঝতে পারছে দোষ তাদের মেয়ের। এই মূহূর্তে আকরাম সাহেবের মনে হচ্ছে মেয়ে জন্ম দিয়ে জন্ম-জন্মান্তরের ভুল করেছেন তিনি। কি বেইজ্জতটাই না হতে হচ্ছে তাকে।
– আপনি শুনতে পাচ্ছেন আপনার মেয়ের গলার জোর কত! অন্যায় করেও একটা মানুষ এভাবে কিভাবে ঝগড়া করতে পারে খুঁজে পাই না আমি।
– বাবা কি শুনবে? হ্যাঁ? কথা হচ্ছে আমার তোমার মাঝে। ওদের কেনো ডেকে এনেছো?
– তোমার অসভ্যতামি দেখানোর জন্য। মেয়েকে কি শিক্ষা দিয়ে বড় করেছে সেসব দেখানোর জন্য। এখন মুখ খুলেন না কেনো বাবা? বিয়ের সময় তো মুখ বড় করে বলেছিলেন এত লক্ষী মেয়ে নাকি পুরো বাংলাদেশ খুঁজে পাবো না। এই আপনার লক্ষীর নমুনা?
– বাবা আমি আসলে কি বলবো বুঝে পাচ্ছি না। আমার মেয়ে এসব করবে আমার ধারনার বাইরে ছিলো।
-এই মেয়ের মাথায় কয়দিন পরপরই সোহানের ভূত চাপে। কেনো? আমি কি ওকে কম ভালেবাসি? ও যেসব কাহিনী করে ওকে কবেই ঘর থেকে বের করে দিতো অন্য কেউ হলে। ওকে এখন পর্যন্ত ঘরে রেখেছি আমি। আদনান, তোমার তো ঘরে বউ আছে। তোমার বউ এসব করলে কি তাকে ঘরে রাখতে।
চুপ করে বসে আছে আদনান। উত্তর দেয়ার মতো ভাষা এবং ইচ্ছা কোনোটাই আপাতত খুঁজে পাচ্ছে না। ঘরের সবাই এখন চুপ৷ ফ্যানের আওয়াজ ছাড়া আর কোনো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। কয়েক সেকেন্ড নীরবতা পালন করে মুখ খুললো রুপম।
– আপনাদের মেয়ে আপনারা নিয়ে যান। আমার দ্বারা এসব সহ্য করা আর সম্ভব না।
– রুপম, বাবা এভাবে বলো না।
– প্লিজ আর কোনো রিকুয়েস্ট করবেন না।
– বাচ্চাটার কথা ভাবো।
– এমন ভাবে বলছেন মনে হচ্ছে আমার ছেলেকে আপনার মেয়ে দেখাশোনা করে?আমার ছেলেকে আমিই পালবো। আপনার মেয়েকে কোনো দরকার নেই।
– কিহ্! আমি ছেলেকে দেখাশোনা করি না? তো করে টা কে শুনি? তোমার মা কবর থেকে উঠে এসে আমার ছেলের দেখাশোনা করে?
– দেখো আদনান তোমার বোনকে নিয়ে বের হও। ও কিন্তু আমার হাতে এখন থাপ্পড় খাবে।
সোফা ছেড়ে উঠে বসতো বসতে আদনান বললো,
– শুধু থাপ্পড় না। ও এরচেয়ে আরও বেশি কিছু ডিজার্ভ করে। থাপ্পড়, কিল- ঘুষি যা পারো সব দাও। পারলে মেরে ফেলো। মরার পর আমাদের খবর দিও। আমরা এসে দাফন দিবো। সেই সাথে মিলাদের ব্যবস্থাও করবো। শুনো বাবা, আমি গেলাম। তোমার বাড়িতে তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে আসবে কিনা সেটা একান্ত তোমার ব্যাপার। ওকে নিয়ে বাসায় ঢুকার আগে আমাকে ফোন দিয়ে জানিও। আমি আমার ওয়াইফ নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো। এসব আজেবাজে মানুষের সাথে এক ছাদের নিচে থাকা সম্ভব না। ইজ্জত থাকবে না আমার।
হনহন করে বেরিয়ে যাচ্ছে আদনান। পিছন থেকে ইচ্ছেমতো মুখপ যা আসছে তাই বলছে আলিশা। সেসব কথার ধার ধারছে না আদনান। ওর মতে বাজে লোকের কথা কানে তুলতে নেই। কয়েক মিনিট পর আকরাম সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে খুব ঠান্ডা এবং দৃড় কন্ঠে বললেন
– রুপম তোমাকে ঘরে রাখবে না। আমিও তোমাকে ঘরে নিবো না। অতএব তুমি যেদিক খুশি সেদিক যেতে পারো।
বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন আকরাম সাহেব। পর্দার চিপা থেকে ছেলেকে বের করে কোলে তুলে নিলো রুপম। সেও বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। বাপ বেটা আজ বাহিরে ডিনার করবে। রাগে পুরো শরীর কাঁপছে আলিশার। ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কাঁদছে সে।
চলবে,,,,,