নষ্ট গলি পর্ব: ১৭
লেখা: মিম
.
.
মায়া এখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জা পাচ্ছে মায়া। সত্যিটা ধরা পড়ে যাওয়ার লজ্জা। ইশ! কি ধরাটাই না খেলো! আচ্ছা সোহান কি ওর ভালেবাসাটাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহন করবে? নাকি নষ্ট গলির মেয়ে বলে ভালোবাসাটা গ্রহন করবে না? সোহানকে কি সরাসরি এ ব্যাপারে জিগ্গেস করবে? সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মায়া। এভাবে আর সোহানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। লজ্জা এবং দ্বিধা মিলিয়ে বড্ড অস্থির হয়ে যাচ্ছে সে। কিছুক্ষন সোহানের কাছ থেকে দূরে থাকাটা অতি আবশ্যক মনে হচ্ছে মায়ার।
– চুলোয় ভাত বসিয়ে আসছি।
– কাজের লোক আছে ঘরে।
– আমার কিছু হোমওয়ার্ক বাকি রয়ে গেছে। ওগুলো কমপ্লিট করে আসি।
– তুমি কি এখান থেকে পালাতে চাচ্ছো?
মায়া খুব অবাক হয় সোহানের ধারনা করার ক্ষমতা দেখে। মায়ার মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই সব বুঝে নেয় সোহান। এমনটা তো নাকি শুধুমাত্র খিব প্রিয় কারো ক্ষেত্রেই অনুভব করা যায়। পূর্নিমার ছবিতে দেখেছে ও। নায়কের মনের খবর না জেনেই সব বলে দিতো পূর্নিমা। তাহলে কি মায়াও সোহানের প্রিয় কেউ? নাহ, এতটাও আশা করা ঠিক না। এতটাও আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখা মায়ার মতো মেয়েদের মানায় না। স্বপ্ন ভেঙে গেলে একদম আকাশ থেকে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে। মিথ্যে আশা রেখে কষ্ট পাওয়ার শখ নেই মায়ার। মন থেকে বাদ দিতে চায় কথাগুলো। তবু একটা কথা মনের মধ্যে জোরপূর্বক উঁকি দিয়েই চলছে। সোহান তাকে ভালোবাসতেও তো পারে। ঐ তো আজ সকালেই না বললো দরকার পড়লে বিয়ে করে নিবে। ভালো না বাসলে কি কথাগুলো বলতো?
– কি চিন্তা করো?
– আচ্ছা আপনি কি….
– আমি কি?
– নাহ কিছু না।
– কি জিগ্গেস করতে চাচ্ছো বলে ফেলো।
– তেমন কিছু না।
– বুঝলাম তেমন কিছু না। যেমনই হোক আমাকে বলো। আমি শুনতে চাচ্ছি।
– না, আসলে…… রাতে কি খাবেন?
– কথা কেনো ঘুরাচ্ছো?
– আপনি আমাকে এতটা কিভাবে বুঝেন?
– তোমাকে বুঝার চেষ্টা করি তাই বুঝি।
– আমাকে কেউ কখনো বুঝতে চায়নি।
– সবাই আর আমি তো এক না।
– হুম সবার চেয়ে আলাদা আপনি।
– চলো ঘুরে আসি।
– কোথায়?
– জানি না। তুমি রেডি হয়ে এসো।
– আচ্ছা।
– মায়া, শুনো…
– জ্বি?
– শাড়ি পড়ে নাও। ঐযে কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম না? ওটা পড়ে এসো।
মুচকি হেসে মাথা ঝাঁকালো মায়া। এর আগে মায়া নিজের ইচ্ছায় দুদিন শাড়ি পড়েছিলো। আজ সোহানের আবদারে শাড়ি পড়বে সে। সোহানের ফরমায়েশ মতো সাজতে ভীষন পছন্দ করে মায়া। আরো বেশি ভালো লাগে যখন মায়া সোহানের কথামতো সেজে তার সামনে যায়। আর সে একনজরে মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সোহানের নজরে একধরনের তৃপ্তি দেখতে মায়া।
আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের হাতা ভাজ করে কনুইয়ের উপরে তুলছে সোহান। শাড়ি পড়ে পিছনে এসে দাঁড়ালো মায়া। আয়নাতে দেখা যাচ্ছে মায়াকে। আায়নাতেই তাকিয়ে মায়াকে দেখছে সোহান। ফের তার নজরে তৃপ্তি দেখতে পাচ্ছে মায়া। তবুও সোহানের মুখ থেকে একটুখানি প্রশংসা শোনার আশায় আছে মায়া।
– আমাকে কেমন লাগছে?
– কথা বলো না তো। দেখতে দাও।
আর কিছু বললো না মায়া। সোহান ওকে মনভরে দেখতে চাচ্ছে। মায়াকে মনভরে দেখাটা সোহানের একধরনের প্রিয় কাজ। সে কথা মায়ার অজানা নেই। কয়েক সেকেন্ড পর ঘুরে দাঁড়ালো সোহান। হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো,
– নতুন করে তোমার প্রশংসা করতে হবে?
– নাহ৷ থাকুক। আপনার চোখ দেখে বুঝে নিবো।
পাশাপাশি রিকশায় বসে আছে সোহান আর মায়া। আজ সোহানের খুব শখ হয়েছে মায়াকে নিয়ে রিকশায় করে ঘুরে বেড়াবে আর বাদাম খাবে। মায়া বাদামের খোসা ছেড়ে সোহানের হাতে দিচ্ছে আর সোহান বাদাম চিবুচ্ছে।
– বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে
– কিভাবে বুঝলেন?
– ঠান্ডা বাতাস লাগছে গায়ে।
– একটা কথা বলি?
– একশটা বলো।
– হাসবেন না তো?
– কথা না শুনে কিভাবে বলবো আমার হাসি পাবে কি পাবে না?
– আপনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজার খুব ইচ্ছে।
মায়ার দিকে তাকিয়ে রহস্যের হাসি হাসছে সোহান। মায়ার মুখে বাদাম ঢুকিয়ে দিয়ে বললো
– আমার সাথে ভিজবে?
– হুম
– পূর্নিমা কি সিনেমাতে নায়কের সাথে বৃষ্টিতে ভিজে?
– হুম। আবার নেচে নেচে গানও গায়।
ভীষন শব্দ করে হেসে উঠলো সোহান। মূহূর্তেই মুখটা কালো করে ফেললো মায়া। সোহান ফের পূর্নিমাকে নিয়ে হাসছে। বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। মায়া বুঝে পায়না পূর্নিমাকে নিয়ে হাসার কি আছে? মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেললো মায়া।
– মায়া,,,
– কি?
– এদিকে তাকাও।
– না।
– আরে তাকাও তো।
– আপনি পূর্নিমাকে নিয়ে হাসেন কেনো?
– আমি জানি না। ওর কথা শুনলেই কেনো যেনো আমার হাসি পায়। বিশেষ করে নেচে নেচে গান গাওয়ার ব্যাপারটা। আমাকেও কি এখন নাচতে হবে?
কথাটা বলেই ফের হাসতে শুরু করেছে সোহান। এবার মায়ারও হাসি পাচ্ছে। কোনোমতে হাসি চেপে রেখে মায়া বললো
– আমি কি আপনাকে বলেছি আমার সাথে নাচতে হবে?
– তুমি চাইলে একটু না হয় নেচে দেখালাম।
– এতটা করতে হবে না। আমার সাথে একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই হবে।
মায়ার কথা শেষ হতে না হতেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।
– অলরেডি বৃষ্টি পড়া শুরুও হয়ে গেছে।
– ভিজবেন তো আমার সাথে? নাকি হুড তুলে দিবেন?
– অবশ্যই ভিজবো।
ধীরে ধীরে বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে ঠান্ডা বাতাস। ফুটপাতে থাকা লোকজন ছুটছে কোনো ছাউনি বা দোকানের ভিতর একটু আশ্রয় নিতে। কেউবা রিক্সার হুড তুলে দিয়েছে নিজেকে বৃষ্টি থেকে আড়াল করতে। কেউ বৃষ্টিতে ভিজতে রাজি না। একমাত্র মায়া ছাড়া।
এতক্ষন অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো মায়া। আশপাশের লোকজনগুলোকে দেখছিলো। সোহান সেই কখন থেকে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই মায়ার। তার বাঁ হাতটা আলতো করে চেপে ধরলো সোহান। সোহানের স্পর্শ পেয়ে সোহানের দিকে তাকালো মায়া।
– কিছু বলবেন?
– কেউ একজন সেই কখন থেকে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে কিছু একটা বলার আশায়। কথাটা কি জানো? সেই কেউ একজন তোমাকে ভীষন রকমে ভালোবাসতে শুরু করেছে। তুমি হচ্ছো তার সুখে থাকার টনিক। তোমার নেশায় মানুষটা ভিতর থেকে তিলতিল করে শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ মানুষটার শরীরের রগ গুলোতে বোধহয় আজকাল রক্তের বদলে তোমার ভালোবাসার নেশা ছুটোছুটি করে। মানুষটাকে চিনেছো? নাকি নামটা বলতে হবে?
ডানে বামে মাথা নাড়লো মায়া। মুখ থেকে কথা বেরোচ্ছে না ওর। প্রচন্ড রকমে সুখ ভর করেছে ওর উপর। এতদিন মাথায় ঘুরতে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর আজ মিললো। কেউ একজন তাকে ভালেবাসে। সত্যিই ভালোবাসে। মানুষের চোখ মিথ্যা বলে না। সোহানের চোখও মিথ্যা বলছে না। এই মূহূর্তে নিজেকে নষ্ট গলির মেয়ে মনে হচ্ছে না মায়ার। মনে হচ্ছে গায়ে লেগে থাকা এতদিনের পুরোনো দাগটা বুঝি উঠে গেছে। সোহানের চোখের ভাষায় ডুবে আছে মায়া। চোখ উপছে পানি ঝড়ছে ওর। বৃষ্টির পানিতে চোখের পানি আড়াল হচ্ছে।
চলবে,,,,,,,
Nice keep it up.