নষ্ট গলি পর্ব- ১৬
লেখা: মিম
.
গাড়িতে উঠে বসেছে সোহান৷ ফোনটা এখন আবার বাজছে। আলিশা আবার ফোন করছে। এবার প্রচন্ড রকমে ক্ষেপে গেলো সোহান। কোনো মানে আছে এসব ছ্যাচড়ামির? ফোনটা কেটেই সাথে সাথে রুপমকে কল করলো সোহান। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। রিং হতে হতে কেটেই গেলো কলটা। কলটা কাটতে না কাটতেই আলিশার কল এসে পড়েছে। এবারের কলটা রিসিভ করলো সোহান।
– সমস্যা কি তোমার?
– মায়া।
– মায়া কি তোমাকে কামড়েছে?
– এরচেয়ে বড় কিছু করেছে। তুমি আমাকে এত ভালোবাসতে। আজ ওকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলে?
– তোমাকে ভুলেছি আরও অনেক আগেই।
– জানি। তবু কেনো জানিনা তুমি মায়ার সাথে আছো মনে হলেই প্রচন্ড রকমে কষ্ট পেতে থাকি। অসহনীয় কষ্ট।
– তোমার কষ্ট হয়? ভুল বললে আলিশা। তোমার হিংসে হয়। এত হিংসে কোথায় পাও তুমি? নিজে তো বিয়ে শাদী করে দিব্যি সংসার জুড়িয়ে বসেছো। আমি করলে দোষ কোথায়?
– বাবার জোড়াজুড়িতে সংসার জুড়িয়েছি।
– বাচ্চাটা কি তাহলে বাবার জোড়াজোড়িতেই হয়েছে? বাবার জোড়াজোড়িতেই কি রুপমের সাথে ফিজিক্যালি এটাচড হয়েছো? রুপমের সাথে এক বিছানায় শুয়ে কি করবে না করবে সেগুলো নিশ্চয়ই তোমার বাপ তোমাকে শিখিয়ে দেয়নি। যা করেছো সম্পূর্ন নিজের ইচ্ছায় করেছো।
– আমি কিন্তু তোমাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম।
– ভালোই বলেছো। তোমার বাপ আমার নামে মামলা দিবে আর আমি তোমাকে বিয়ে করে ঘরে তুলবো তাই না? আমার রাগ হ্যান্ডেল করার এ্যাবিলিটি তোমার নেই। তোমাকে বিয়ে করলে আমাদের সংসার কখনোই টিকতো না।
– কাকে কি বলছো? তোমার কম গালি আমি হজম করি নি সোহান।
– গালি দেয়ার টাইমে চুপ থাকলেও পরে গিয়ে আমার উপর ঠিকই বিষ ঝেড়েছো।
– কেনো তোমার মায়া বুঝি বিষ ঝাড়ে না?
– কখনোই না। আমি যত যাই বলি না কেনো আমার বউ সব চুপচাপ হজম করে। আর আমি সব দেখেশুনেই বিয়ে করেছি। ও তোমার মতো ছ্যাচড়া না। যথেষ্ট ভদ্র। এজন্যই ওকে বিয়ে করেছি আমি।
– হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ছ্যাচড়া?
– ছ্যাচড়া মিনস ছ্যাচড়া। তুমি চূড়ান্ত পর্যায়ের ছ্যাচড়ায় পরিনত হচ্ছো দিন দিন। আমি এখন বিবাহিত। তোমার লজ্জা করে না এভাবে আমাকে ডিস্টার্ব করতে?
– মোটেই না। কেনো লজ্জা করবে? তোমার উপর প্রথম অধিকার আমার। এরপর এসব মায়া টায়ার অধিকার।
আলিশাকে কষে দুগালে চড় মারতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর৷ সেইসাথে রুপমের জন্য প্রচন্ড মায়াও হচ্ছে। ছেলেটা কত ভালো। আর আলিশা? উফফফ! আর ভাবতে পারছে না সোহান। রাগে দাঁত কিড়মিড়াচ্ছে আর আলিশাকে ইচ্ছেমতো গালি দিচ্ছে। গালি শুনেও আলিশার মাথাব্যাথা নেই। প্রতিটা গালির প্রত্যুত্তরে সোহানকে আই লাভ ইউ বলেই চলছে। ফোনটা কেটে দিয়েছে সোহান। রুপমকে ফের ফোন করেছে ও। এবার ফোনটা রিসিভ করেছে রুপম। রিসিভ হতে না হতেই সোহান একগাদা গালি শুনিয়ে দিলো রুপমকে। হুট করেই এতগুলো গালি স্তম্ভিত ফিরে পেতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো রুপমের।
– কি আশ্চর্য! এভাবে গালাগাল করছো কেনো সোহান?
– তোরে আরো গালি দেয়া উচিত ছিলো।
– আবার তুই তুকারিও করছো? হয়েছেটা কি?
– তোর বউ আমার কলিজা জ্বালায়া ফালাইতাসে।
– কি করেছে?
– গতকাল রাত থেকে লাগাতার ফোন মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। বউয়ের সাথে থাকোস তুই। তবু তোর বউ আরেক বেটারে জ্বালায় কেমনে? তুই ব্যাটা নাকে তেল দিয়া ঘুমাস আর তোর বউ আমারে জ্বালায়। আমার বউ এসব দেখলে আমার সংসারে আগুন জ্বলবে। তোর বউরে আমি বকা দেই সে আমাকে লাভ ইউ বলে। কি করোছ তুই সারাদিন? বউরে সময় দিতে পারোস না? তুই সময় দিলেই তো তোর বউ আমার পিছে লাগে না।
– আলিশা আবার শুরু করেছে এসব?
– হ্যা করছে। স্ক্রিনশট দিবো তোরে?
– আই এ্যাম এক্সট্রিমলি সরি সোহান।
– রাখ তোর সরি। আমার সংসারে যদি এসব নিয়া কোনো দ্বন্দ হয় তাহলে কিন্তু তোর সংসারেও আগুন জ্ালাবো।
– সোহান তোমার ওয়াইফ কি এটা নিয়ে রাগ করেছে? আমি কি ভাবিকে বুঝিয়ে বলবো ব্যাপারটা?
– মায়া এখনও এসব দেখেনি। তোর বউ যা শুরু করছে এসব বন্ধ না হলে আজকেই সব দেখে ফেলবে। ও এসব দেখলে নিশ্চয়ই আমাকে লাভ ইউ জানু লাভ ইউ বেবি বলে ঘুরে বেড়াবে না।
– সোহান তুমি ঠান্ডা হও। আমি আলিশাকে দেখছি।
– মানসিক রোগের ডাক্তার দেখা তোর বউকে। শালী পাগল হয়ে গেছে হিংসায়।
– হ্যা দেখাবো। তবু তুমি প্লিজ ঠান্ডা হও।
ফোনটা কেটে দিলো সোহান। এতক্ষনে নিজেকে কিছুটা হালকা লাগছে ওর।
কিচেনে আনমনে কাজ করছে মায়া। সোহানের কথামতো রান্না করেছে দুপুরে। খাবার সেড়েই সালমান বেরিয়ে গেছে শিমুর সাথে দেখা করতে। সবজি পাকোড়া ভিষন পছন্দ সোহানের। অফিস থেকে ফিরে আসলে নাস্তা খেতে দিবে সোহানকে। আলিশার কথা ভাবতে ভাবতে তেলের মধ্যে পাকোড়া দিতে গিয়ে হাতের আঙুলগুলো ডুবিয়ে দিলো তেলে। হালকা চিৎকার করলো মায়া। ডাইনিং টেবিল মুছছিলো রতন। মায়ার গলার আওয়াজ পেয়ে কিচেনে এসেছে সে। এসে দেখে মায়া হাত ঝাড়ছে। সিংকের ট্যাপ ছেড়ে বললো
– ভাবী ফোস্কা পড়ছে। শিগগির হাত কলের নিচে দেন।
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে রতন দৌড়ে গেট খুললো। অন্যান্য সময় মায়া গেট খুলে দেয়। আজ রতনকে দেখে একটু অবাক হলো সোহান। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে জিগ্গেস করলো
– মায়া কোথায়?
– ভাবী হাত পুইড়া ফালাইসে। রান্নাঘরে কলের নিচে হাত দিয়া দাড়ায়া আছে।
রতনের কথা শুনে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো সোহান। রান্নাঘরের দরজায় দাড়িয়ে মায়াকে বললো
– কি ম্যাম? হাত পুড়ে ফেললেন?
– হ্যা। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি নাস্তা দিচ্ছি।
– নাস্তা পরে হবে। তুমি এসো আমার সাথে। মেডিসিন লাগাতে হবে।
– লাগাবো। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আসছি।
সোহান আর কথা না বাড়িয়ে মায়ার হাত টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসলো। সোহান মায়ার আঙ্গুলে অয়েনমেন্ট লাগাচ্ছে সেই সাথে আঁড় চোখে ওকে দেখছে। মুখটা বেশ মলিন হয়ে আছে ওর। বুঝাই যাচ্ছে মনটা বিশাল রকমে খারাপ। মেডিসিন লাগিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো
– এখানেই চুপ করে বসে থাকো। এক পাও নড়বে না। কথা আছে তোমার সাথে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। এই রতন, আমার রুমে নাস্তা দিয়ে যাও তো।
কথাগুলো বলেই ট্রাউজার আর টাওয়েল হাতে ওয়াশরুমে গেলো সোহান। জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো মায়া। গলির সামনে রিকশা আর গাড়িতে মিলিয়ে বেশ ভালোই জটলা পেকেছে। বেশ হাউকাউ হচ্ছে। রিকশা ড্রাইভার বকছে কার ড্রাইভারকে আর কার ড্রাইভার বকছে রিকশাওয়ালাকে। কেউ কারো দোষ স্বীকার করতে রাজি না। অনেকটা সময় ঝগড়া চলার পর এলাকার লোকজন এসে তাদের থামিয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। রিকশাগুলো টুংটাং শব্দ করতে করতে যার যার গন্তব্যস্থলে যাচ্ছে। হুট করেই ঘরের লাইট অফ হয়ে গেলো। সোহান লাইট অফ করেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই মায়া দেখলো সোহান ওর একদম কাছাকাছি চলে এসেছে।
– লাইট অফ করলেন যে? আাসেন নাস্তাটা সেড়ে নিন।
সেখান সড়ে আসতে চাইলো মায়া। বাঁধ সাধলো সোহান। দুহাতে জানালার গ্রিল ধরে রেখেছে সে। এর মাঝখানে মায়া বন্দী হয়ে আছে। জানালার গ্রিলে পিঠ সেটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মায়া। মায়ার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ওর ঠোঁটে চুমু খেলো সোহান। এক হাতে মায়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে মায়ার চুলের খোপা খুলে দিতে দিতে বললো
– কি হয়েছে?
– কিছু না তো?
– সত্যিই কিছু হয়নি?
ফোন বেজে উঠলো সোহানের। মায়া বললো
– আপনার ফোন এসেছে।
– আসুক।
– আলিশা ফোন করেছে বোধহয়। যান গিয়ে রিসিভ করুন।
মায়ার কোমড় আরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
– ঘটনা তাহলে এখানে?
– কিসের ঘটনা?
– কলিজা পোঁড়ার ঘটনা।
– কিসের কথা বলছেন?
– কলিজা পোঁড়ার স্মেল এত্ত সুন্দর হয় আগে জানা ছিলো না। এর আগেও কলিজা পোড়াঁর স্মেল পেয়েছি। কিন্তু তেমন ভালো লাগেনি। আজ ভীষন রকমে ভালো লাগছে। কেনো জানো? সেই পোঁড়া গন্ধের মাঝে ভালোবাসার ঘ্রান খুঁজে পাচ্ছি। কেউ একজন খুব করে ভালেবাসতে শুরু করেছে আমাকে। তার ভালোবাসার ঘ্রানটা নাক দিয়ে ঢুকে ঠিক বুকের বা পাশটাতে যেয়ে প্রচন্ড রকমে আঘাত করছে। ব্যাথা করছে খুব। ব্যাথাটা খুব তৃপ্তির। মনে হচ্ছে বহুদিনের চাওয়াটা বুঝি পূরন হয়েছে। আচ্ছা সেই কেও একজনটা কি তুমি?
চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে মায়া। মায়ার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে সোহান বললো
– মুখ ফুটে বলতে চাচ্ছো না? নো প্রবলেম। বলতে হবে না। আমি অনুভব করে নিবো।
চলবে,,,,