নষ্ট গলি পর্ব- ১৪
লিখা: মিম
.
.
আজ সকালে ঘুম থেকে মায়ার আগে সোহান উঠে পড়েছে। অপেক্ষা করছে মায়ার ঘুম থেকে উঠার। ওকে সালমানের ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতে হবে। আর নয়তো তালগোল পাকিয়ে ফেলবে। অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পর মায়াকে ডেকে তুললো সোহান। মায়ার চোখ যেনো আজ খুলতেই চাচ্ছে না। মনে হচ্ছে কেউ আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছে। সোহান বারবার মায়াকে আলতো ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করছে। চোখ কচলাতে কচলাতে মায়া বললো,
– চোখ মেলতে পারছি না। ঘুমটা কাটছেই না।
– উঠো। চোখে মুখে পানির ঝাপটা দাও। জরুরি কথা আছে।
মায়াকে বিছানা থেকে টেনে তুললো সোহান। কোনোমতে ওয়াশরুমে যেয়ে ইচ্ছেমতো চোখে মুখে পানির ছিটা দিতে লাগলো মায়া। বেলকনি থেকে তয়লা নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে সোহানের মুখোমুখি এসে বসলো সে।
– কি জরুরি কথা?
– সালমান এসেছে।
– কখন আসলো?
-গতরাতে।
– আমাকে দেখেছে?
– হুম।
– এখন কি হবে?
– সেটাই বলছি। ও জানে তুমি আমার ওয়াইফ। একটু রাগ করেছে ওদের ফেলে বিয়ে করেছি ভেবে। যদি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে বলবে তোমার মা গ্রামে থাকে। তোমার গ্রামে আমি গিয়েছিলাম। ওখানে আমি তোমাকে প্রথম দেখেছি। দেখা মাত্রই তোমাকে ভালো লেগেছে। তাই বিয়ে করে নিয়ে এসেছি। এখানে নতুন করে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। তিনমাস হয়েছে আমাদের বিয়ের।
– যদি সত্যি কথা মুখ ফসকে বের হয়ে যায়?
– সেজন্যই তো বলছি বেশ কেয়ারফুললি সালমানকে হ্যান্ডেল করতে হবে।
– আচ্ছা উনি কি খুব বেশি ক্ষেপে আছেন?
– হুম একটু ক্ষেপে গিয়েছে। ক্ষ্যাপাটা স্বাভাবিক। ওকে ফেলে বিয়ে করেছি বিষয়টা ওর গায়ে লেগেছে। ব্যাপার নাহ। ওর রাগ বেশিক্ষন থাকে না।
– আপনার বাবা মা কে বলে দিলে?
– বলুক। সমস্যা কোথায়?
– আসলে তো আপনার আমার বিয়ে হয়নি। সবাইকে এভাবে মিথ্যা বলাটা কি ঠিক হচ্ছে? তাছাড়া উনারা বেশ কষ্ট পাবেন শুনলে যে উনাদের না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছেন।
– বিয়ে হয় নি তো কি হয়েছে। বিয়ে করে ফেলবো তোমাকে। এত মাথা ঘামিও না তো মায়া।
“বিয়ে করে ফেলবো তোমাকে” কথাটা ঘন্টার মতো মায়ার কানে খুব জোরে শব্দ করে বেজে চলছে। বুকটা হঠাৎ করে ধুক করে উঠলো মায়ার। বিয়ে? সত্যিই? নষ্ট গলির মেয়ে নামক সিলমোহরটা কি এবার ওর উপর থেকে উঠে যাবে? সোহান কিছু একটা বলছে। সোহানের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে মায়া। কিন্তু একটা কথাও কানে ঢুকছে না ওর। ঘোরের মাঝে ডুবে আছে ও। কি বললো সোহান? বিয়ে? আচ্ছা সত্যিই কি বিয়ে হবে ওর? চোখে পানি ছলছল করছে। কিন্তু পানিটা চোখ থেকে বেরিয়ে আসতে দেয়া যাবে না। সোহানের কাছে সুখের অনুভুতিটা ধরা পড়ে যাবে। লজ্জাজনক ব্যাপার। সোহানের আলতো ধাক্কায় ঘোর কাটলো মায়ার।
– এই মায়া, কি জিজ্ঞেস করছি? শুনো না?
– হুম?
– কি ভাবছিলে?
– কিছু না।
– দুপুরে কি রান্না করবে?
– আপনি যেটা বলবেন।
– সালমান চিংড়ি ভুনা খুব পছন্দ করে। ওটা মাস্ট রাঁধতেই হবে। আর গরু বা মুরগি যেটা ভালো লাগে সেটা করো। ভিনেগার দিয়ে মাখানো সালাদটা বানিয়ে রেখো। ও আবার সালাদ ছাড়া ভাত খেতে পারে না।
– আচ্ছা।
– এখন তোমাকে কিছু রান্না করতে হবে না। তুমি ভালো মতো ফ্রেশ হয়ে কাপড়টা পাল্টে নাও। চুল-টুল ভালোভাবে আঁচড়ে নাও। আমি চাই না সালমানের সামনে তুমি পাগল ছাগলের মতো যাও।
– আমাকে কখনো দেখেছেন পাগল ছাগলের মতো থাকতে?
– হুম। কত দেখেছি। এখনও তো দেখছি। এই যে চুলগুলো জট বেঁধে কেমন হয়ে আছে।
– চুলের জটগুলো তো আপনার খুলে দেয়ার কথা ছিলো।
– হুম ছিলো। তুমি তো ঘুমিয়ে পড়ছিলে।
বিছানা ছেড়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে চিরুনি নিয়ে এলো মায়া। সোহানের হাতে চিরুনি ধরিয়ে উল্টোমুখ হয়ে বসলো সে।
– নিন, জট খুলে দিন। আমি এখন সজাগ আছি।
সোহান মুচকি হাসছে। পরম যত্নে মায়ার জটগুলো ছাড়াচ্ছে। এমন আহ্লাদ সোহানের খুব পছন্দ। জীবনটাকে সুন্দর করার জন্য এই আহ্লাদগুলো টনিক হিসেবে কাজ করে। এই টনিকটার খুব প্রয়োজন ছিলো সোহানের।বহু খোঁজ করেছে টনিকের। খোঁজ করতে করতে মায়ার দাঁড়ে এসে উপস্থিত হয়েছে সোহান। অবশেষে সে তার টনিক খুঁজে পেয়েছে। ঘড়িতে কয়টা বাজে দেখার জন্য সোহানের ফোন হাতে নিয়েছে মায়া । অনেকগুলো মিসডকল আর মেসেজ জমা পড়েছে। সবগুলো আলিশার। মেসেজগুলো এক এক করে পড়ছে মায়া।
রাত ৩.৫০ মিনিট
জানো ও তোমার মতো করে একদম ভালবাসতে জানে না। তোমার ভালোবাসায় মাদকতা ভরপুর ছিলো। কিন্তু রুপম, ওর ভালোবাসায় আমি তেমন কিছু খুঁজে পাই না।
রাত ৩.৫৫ মিনিট
তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?
রাত ৪.০৫ মিনিট
– ফোনটা রিসিভ করো একটু। তোমার কন্ঠটা খুব শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে।
রাত ৪.১২ মিনিট
– আমি জানি তুমি জেগে আছো। কেনো এমন করছো আমার সাথে?
ভোর ৪.৩০ মিনিট
– তোমাকে খুব বেশিই মিস করছি। একটু কথা বলো প্লিজ।
ভোর ৪.৩৩ মিনিট
– অকে কথা বলতে হবে না। মেসেজের রিপ্লাইটা এট লিস্ট দাও।
ভোর ৪. ৩৭ মিনিট
– আমি তোমাকে এখনও ভালোবাসি সোহান। তুমি বললে এখনই ছুটে আসবো তোমার কাছে।
ভোর ৪. ৪০ মিনিট
-আচ্ছা তোমার কি কখনো জানতে ইচ্ছে হয়না আমি কেমন আছি?
ভোর ৪.৫৫ মিনিট
– তোমার ইগনোরেন্স একদম সহ্য হচ্ছে না সোহান।
ভোর ৪.৫৮ মিনিট
– তুমি কি খুব ব্যস্ত মায়াকে নিয়ে?
ভোর ৫.০৫ মিনিট
– মায়া খুব সুন্দরী তাই না সোহান? এজন্যই ওর মাঝে এতটা ডুবে থাকো। আচ্ছা ও কি আমার চেয়ে আরো বেশি সুন্দর?
ভোর ৫.১৫ মিনিট
– এই নিয়ে ১১ টা মেসেজ দিলাম। একটার রিপ্লাই দিলে না। ১৪ টা কল করলাম রিসিভও করলে না। আমি এতটা অবহেলা পাওয়ার যোগ্য?
সোহানের আগের পাঠানো মেসেজের রিপ্লাইগুলোও দেখলো মায়া। অসহ্য লাগছে ওর। আলিশার মেসেজ, সোহানের রিপ্লাই দেয়া এসব ওকে প্রচন্ড যন্ত্রনা দিচ্ছে। রাগে চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। ওর আর এক সেকেন্ড এখানে বসতে ইচ্ছে হচ্ছে না। উঠে দাঁড়ালো মায়া। মুখ আড়াল করে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে।
– কি ব্যাপার? উঠে পড়লে যে? জট তো এখনও খোলা হয়নি
ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে মায়া উত্তর দিলো
– লাগবে না। বাকিটা আমি করে নিবো।
মায়ার আচরনটা বেশ অদ্ভুদ লাগলো সোহানের। একটু আগেই না আহ্লাদ করে বললো জট খুলে দিতে কিছুক্ষনের মধ্যে কি হয়ে গেলো?
চলবে,,,,,
.