নষ্ট গলি পর্ব ১৩
লেখা: মিম
।
ব্রিজের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে সোহান আর মায়া। দমকা বাতাসে মায়ার চুল প্রচন্ড রকমে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। চুলগুলো খোপা করছে মায়া। বাঁধ সাধলো সোহান।
– বাঁধার দরকার কি?
– চুলে জট লেগে যাচ্ছে।
– লাগুক।
– জট ছাড়াতে পরে হিমশিম খেয়ে যাবো। একগাদা চুল ছিঁড়বে।
– তোমার কাছে ছোট একটা আবদার ধরেছি আর সেটা তুমি রাখতো চাচ্ছো না?
– ব্যাপারটা তেমন না।
– ব্যাপার যেমনই হোক, চুল খোলা রাখবে ব্যস। এবার জট লাগুক না সব চুল ছিড়ে যাক সেটা আমার দেখার বিষয় না।
মুচকি হেসে সোহানের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো মায়া। তার এক হাত জড়িয়ে ধরে বললো
– ঠিকাছে আবার রাখবো। তবে শর্ত একটাই বাসায় যেয়ে জটগুলো আপনি ছাড়িয়ে দিবেন।
– আর কিছু?
– নাহ, আপাতত জট ছাড়ালেই চলবে।
– ঠিকাছে দিবো।
ব্রিজের উপর দিয়ে বাস ট্রাক কিছুক্ষন পরপরই আসা যাওয়া করছে। তবু মন্দ লাগছে না মায়ার। ভালো লাগা কাজ করছে ভিতরে। নদীর পানি কালো দেখাচ্ছে। একদম বুড়িগঙ্গার পানির মতো। মায়ার জানামতে মেঘনার পানি এমন কালো না। হতে পারে অন্ধকারের জন্য এমন দেখাচ্ছে। দিনের আলোতে দেখতে পারলে আরো ভালো লাগতো।
-মায়া।
– হুম।
– চল বাসায় যাই।
– এখনি?
– আরো কিছুক্ষন থাকতে চাচ্ছো?
– নাহ। অনেকক্ষন তো হলো।
– তুমি চাইলে আরো কিছুক্ষন থাকতে পারো।
– না। চলুন যাই।
খুব দ্রুত গতিতে ছুটছে সোহানের গাড়ি। মায়া গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে ঘুমুচ্ছে। কিছুক্ষন পরপরই ঘাড় বেকায়দায় হেলে যাচ্ছে মায়ার। আর সোহান কিছুক্ষন পরপর মায়ার ঘাড় এক হাত দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছে। মেয়েটা এত বেশি ঘুমকাতুরে যে একবার ঘুমিয়ে পড়লে আর কোনো হুঁশ থাকে না। এই যে এতবার সোহান ওর ঘাড় ঠিক করে দিচ্ছে একবারের জন্যও মায়ার ঘুম ভাঙেনি। সোহান ভেবে কূল-কিনারা করতে পারে না একটা মানুষ এমন গভীর ঘুম কিভাবে ঘুমায়?
বাসা অব্দি পৌঁছে গেছে সোহানের গাড়ি। মায়া এখনও ঘুমে। ওর এমন শান্তির ঘুম দেখে সোহানের ইচ্ছে হচ্ছে না ওকে ডেকে তুলতে। বাসায় রতনের মোবাইলে ফোন করে সোহান বললো গেইট খোলা রাখতে। মায়াকে কোলে নিয়ে কলিংবেল বাজানো সম্ভব না।
বেডরুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিংরুমে যাচ্ছে সালমান। রতনকে এতরাতে গেইট খুলতে দেখে জিজ্ঞেস করলো
– গেইট খুলছো যে?
– সোহান স্যার আসতেছে তো তাই গেইট খুলে রাখছি।
– তুমি জানো কিভাবে ভাইয়া আসছে?
– ফোন দিয়া কইলো গেইট খুইলা রাখতে।
– ওহ।
সালমান রতনের পিছনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সোহানের সাথে দেখা করবে বলে। একটা মেয়েকে কোলে করে তার ভাই দরজার দিকে এগিয়ে আসছে। ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না সালমানের। কে এই মেয়ে? সালমানকে এভাবে হুট করে দেখে বেশ অবাক সোহানও। দুজন দুজনের দিকে ব্যাপক বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। দুজনের চোখে বহু প্রশ্নরা ছুটোছুটি করছে। সালমান কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে এমন সময় সোহান ইশারায় তাকে থামিয়ে দিলো। মায়াকে বেডরুমে শুইয়ে দিয়ে দরজা লক করে বাহিরে বেরিয়ে এলো সোহান।
– তুই কখন এসেছিস?
– মেয়েটা কে?
– আসার আগে ফোন দিলি না কেনো?
– তুমি মেয়েটাকে এতরাতে কোলে করে এনেছো। কি হয় ও তোমার?
– কি আশ্চর্য! উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন কেনো করছিস?
– তুমিও তো উত্তরদিচ্ছো না।
– ওর নাম মায়া।
– কি হয় ও তোমার?
– ওয়াইফ।
– তুমি আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললে?
– হুম করেছি। তো?
– তো মানে? তুমি কি আমাদের একেবারে বাদ দিয়ে দিতে চাচ্ছো?
– নাহ। সেটা চাইবো কেনো? বাদ দেয়ার ইচ্ছে হলে তো সেই কবেই দিতাম। আসলে কথা হচ্ছে কি জানিস? আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি সেই খবরই তো বাবা মা নেয়ার সময় পায় না। তো এত ব্যস্ত লোকদের আমার বিয়ের খবর জানিয়ে করবোটা কি? অহেতুক এসব খবর বলে উনাদের টাইম ওয়েস্ট করতে চাই না।
– আমি? আমি কি করেছি?
– কিছুই করিসনি।
– তাহলে আমাকে বললে না কেনো?
– কথা এতো পেঁচাচ্ছিস কেনো সালমান? বিয়ে করে ফেলেছি তো করে ফেলেছি।কাকে জানালাম,কাকে জানালাম না সেসব এখন ঘেটে তো লাভ নেই।
– ভাইয়া তুমি কেমন যেনো হয়ে গেছো। খুব বেশিই গা ছাড়া ভাব দেখাচ্ছো তুমি। মনে হচ্ছে আমি তোমার ভাই না।রাস্তার অপরিচিত কেউ।
– একটা কথা কোথা থেকে কোথায় টানছিস সালমান? আমি বিয়ে করেছি। খুবই সামান্য একটা ব্যাপার। এমন তো না যে আমি এখানে বিয়ের পার্টি দিয়েছি অথচ তোদের জানাইনি। এতটা রিয়েক্ট কেনো করছিস?
– বিয়েটা সামান্য ব্যাপার না কি সেটা অামি জানি না।কথা হচ্ছে তুমি আমার ভাই। তোমার প্রতি আমার কিছু অধিকার আছে, এক্সপেক্টেশন্স আছে। সেগুলো আমি তোমার কাছে ডিমান্ড করতেই পারি। অনুষ্ঠান করো আর না করো তুমি কবুল বলার টাইমে এটলিস্ট তোমার সামনে দাঁড়ানোর অধিকারটুকু তো আমার আছে।
– বিয়েটা তো হয়ে গেছে। এখন তো আর আমি ঘটনা বদলাতে পারবো না।
– ধুর…।
একরাশ বিরক্তি আর রাগ নিয়ে সালমান রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। সোহান খুব স্বাভাবিক গতিতে ফ্রেশ হয়ে মায়ার পাশে এসে শুয়ে পড়লো। ঘরে ছোটখাটো তুফান হয়ে গেলো আর মায়ার কোনো খবর নেই। ওর ঘুমে তিল পরিমান ব্যাঘাত ঘটেনি। মায়ার ঘুম দেখে নিজের অজান্তেই হেসে ফেললো সোহান। ফোন হাতে নিতেই চোখে পড়লো দুটো মেসেজ এসেছে আলিশার নম্বর থেকে। প্রথম মেসেজে আলিশা তাদের প্রেমের স্মৃতিচারন করেছে। আর দ্বিতীয় মেসেজে লিখেছে
– কোথায় তুমি? কি করছো? একটা রিপ্লাই দেয়ার সময়ও কি পাচ্ছো না?
সোহান একধরনের পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে মেসেজগুলো পেয়ে। রিপ্লাই দিতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রিপ্লাই দিয়েই দিলো সোহান
– ব্যস্ত ছিলাম।
মেসেজটা সেন্ড হওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে রিপ্লাই চলে আসলো। মনে হচ্ছিলো আলিশা এতক্ষন ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিলো রিপ্লাই পাবার আশায়।
– এত রাতে কিসের ব্যস্ততা তোমার?
– বউ আছে। ব্যস্ত থাকাটাই স্বাভাবিক।
– খুব ভালোবাসাবাসি হয় তাই না?
– তুমি যখন রুপমকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলে তখন তো আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি তোমাদের ভালোবাসাটা কোন পর্যায়ে হয়।
– ভালোবাসা কেমন হবে আন্দাজ করে নাও। ভালোবাসা যদি এত বেশিই হতো তাহলে তো আর তোমাকে এতরাতে মেসেজ করতাম না।
– এভাবে নিজের হাজবেন্ডকে বদনাম করে কি মজা পাও আলিশা? রুপম যথেষ্ট ভালো একজন মানুষ। তোমার সাথে ওর বিয়ে হওয়ার আগে থেকে ওর সাথে আমি বিজনেস করি। ওকে খুব ভালোই চিনি আমি। বরং আমি বলবো রুপমের ভালোবাসা বুঝার মতো জ্ঞান বুদ্ধি তোমার হয়নি।
– তোমার মতো করে ভালো তো ও বাসে না।
আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে হচ্ছে না সোহানের। আলিশাকে প্রচন্ড রকমের ছ্যাচড়া মনে হয় তার। সে খুঁজে পায় না এমন একটা ছ্যাচড়া মেয়ের সাথে প্রেম করলো কিভাবে? ফোনটা সাইলেন্ট করে মায়াকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো সোহান। প্রচন্ড ঘুম ভর করছে চোখে। অন্যদিকে সোহানের ফোনে একের পর এক মেসেজ এসেই চলছে। মাঝেমাঝে আলিশা ফোনও দিচ্ছে। সোহানের ইগনোরেন্স প্রচন্ড কষ্ট দিচ্ছে আলিশাকে। দুচোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে ওর।
(চলবে)