My_Mafia_Boss_Husband Part:39

0
3304

My_Mafia_Boss_Husband Part:39
Mafia_Boss_Season2

Writer:Tabassum Riana
ঘরে খুব দ্রুত ফিরে এলো আনাম।কাজের লোকরা ঘর মুছে নিচ্ছে।জায়গায় জায়গায় রক্তের ছাপ।আনাম জানে কিসের রক্ত।বাট তার আজ কোন দুঃখ নেই কোন ক্ষোভ নেই।আজ সে ভীষন খুশি, মাকে ফিরে পাওয়ার খুশি কাজ করছে আনামের মাঝে।হঠাৎ রুমু আনামের সামনে এসে দাঁড়ালো। মার সাথে দেখা করবেনা?আনামের হাত ধরে বলে উঠলো রুমু।মাথা ঝাঁকালো আনাম।কই মা?প্রশ্ন করলো আনাম।রুমু মুচকি হাসলো।আসো আমার সাথে।আনামের হাত ধরে যেতে যেতে বলল রুমু।আনিলা বেগমের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো ওরা।দরজাটা হালকা চাপানো। রুমু দরজায় ধাক্কা দিতেই পুরো খুলে গেলো দরজাটা।খাটে আনিলা বেগম শুয়ে আছেন।দরজা খোলার শব্দে ওপাশ ফিরে তাকালেন।আনামের বিশ্বাস হচ্ছেনা যে ও নিজের মাকে দেখছে।আনামকে দেখে উঠে বসলেন আনিলা বেগম। আনাম দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো।

রুহীর মাথায় হাত বুলাচ্ছে রোয়েন।এতো অবিশ্বাস রুহী?কি করে পারলে?রুহীর মাথা থেকে হাত সরিয়ে নিলো রোয়েন।মেয়েটা এতোদিনে কতোটা শুকিয়ে গেছে।বুঝাই যাচ্ছে কতোটা কষ্টে দিন কেঁটেছে ওর।কথাগুলো ভাবতে থাকে রোয়েন।ওয়াশ রুম থেকে পানি এনে রুহীর মুখে ছিটালো রোয়েন।পিটপিট করে চোখ খুলল রুহী।চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে আছে।রোয়েন কে আবছা দেখা যাচ্ছে।খুব কষ্টে হাত উঠিয়ে রোয়েনের গালে রাখলো।রোয়েন গাল দুটো রুহী ধরছে যেন কতবছর দেখা পায়নি প্রিয় মুখটার। আ আপনি সত্যিই এসেছেন?অসুস্থ গলায় বলল রুহী।হুম বলে উঠলো রোয়েন।জানেন এতদিন না থেকে আমার পাশাপাশি ছিলেন আপনি।প্রতিনিয়ত আপনাকে দেখতাম,আপনার ক কথা শুনতাম।বি বিশ্বাস করুন ও ওইদিন আ আমি আপনাকে ইচ্ছে করে শুট,,,,,,,,, রুহীকে থামিয়ে দিলো রোয়েন।প্লিজ ওসব কথা শুনতে চাইনা।তোমার কিছু খেতে হবে।গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো রোয়েন। বাহু ধরে আর পিঠে হাত রেখে রুহীকে উঠিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো রোয়েন।বসো,খাবার নিয়ে আসছি আমি বলে আর অপেক্ষা করলো না রোয়েন।রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
বেশকিছুক্ষন কান্নাকাটির পর্ব শেষ করে সরে এলো আনাম।মা তুমি বসো আমি রোয়েন ভাইয়ের সাথে দেখা করে আসি।বলে উঠলো আনাম।মুচকি হেসে মাথা ঝাঁকালেন আনিলা বেগম।আনাম রুম থেকে বের হতেই রোয়েনকে দেখতে পেলো।সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে রোয়েন।আনাম রোয়েনকে জড়িয়ে ধরলো।আরেহ আনাম!!আকস্মিক ভাবে জড়িয়ে ধরায় হকচকিয়ে উঠলো রোয়েন।আপনি কই ছিলেন?বোনটা কতো কষ্টে ছিলো।আপনার খবর শুনে তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।মনে হচ্ছিলো সত্যি সত্যি আপনাকে হারিয়ে ফেলেছি।
আরে এখনতো এসেছি আমি।আর কখনো তোমাদের ছেড়ে যাবোনা।বলে উঠলো রোয়েন।সরে এলো আনাম।তা নিচে নামলেন?কোন কাজ ছিলো?জিজ্ঞেস করে উঠলো আনাম।হুম। রুহীকে খাওয়াতে হবে।বলে উঠলো রোয়েন।রুমু গিয়ে রুহীর খাবার বেড়ে রোয়েনের হাতে দিলো।রোয়েন চুপচাপ রুমে চলে এসেছে।রুহী আজ জোরাজুরি ছাড়াই সবগুলো ভাত খেয়ে নিলো পেট পুরে।আপনি খান নি?খাবার শেষে বলে উঠলো রুহী।হুম খাবো।গম্ভীর গলায় বলল রোয়েন।খেয়ে জলদি উপরে আসুন।অপেক্ষা করছি আপনার জন্য।বলে উঠলো রুহী।রোয়েন মাথা ঝাঁকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।আনাম রোয়েন রুমু আনিলা সবাই একসাথে খাবার খেয়ে নিলো।মা আজ চলে যেতে হবে আমাদের।খাবার শেষে বলে উঠলো রোয়েন।কয়দিন থেকে যাও না?মাত্রই তো এলে।বলে উঠলেন আনিলা বেগম।আপনার রেস্ট দরকার মা, আর তাছাড়া রুমু রুহীর অনেক খেয়াল রেখেছে ওর নিজের ও রেস্টের দরকার আছে।বলে উঠলো রোয়েন।আমাকে ও যেতে হবে।মুচকি হেসে বলল রুমু।কোথা ও যাবিনা।শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে যাবি কেন?তোরা বিয়ে করেছিস আমি জানি।রোয়েন বলেছে আমাকে।বলে উঠলেন আনিলা বেগম।খাবার শেষে রুহীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো রোয়েন।
রাতে রুহী রোয়েনের বুকে শুয়ে আছে।রোয়েন আগের মতো রুহীর চুলে হাত বুলাচ্ছেনা জড়িয়ে ও ধরছেনা।কেমন যেন একটা দুরত্ব এসে গেছে।রোয়েনের শরীরে মাতাল করা ঘ্রান আর হৃৎস্পন্দন শুনছিলো রুহী।অনেকদিন যেন শোনা হয়নি।বাহিরে প্রচুর বাতাস হচ্ছে।জানালার পর্দা গুলো উড়াউড়ি করছে।বাহিরের চাঁদের আলোয় রুহীকে দেখতে পেলো রোয়েন।এতোদিন ওর অনুপস্থিতিতে রুহীর চেহারার উজ্জ্বলতা হারিয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু তা আবার ফিরে এসেছে।রুহীর গালে আলতো করে হাত বুলালো রোয়েন।রুহী মাথা উঁচিয়ে রোয়েন কে দেখলো।রুহীর চোখ জোড়া ভিজে আছে।রুহীকে বালিশে শুইয়ে ওর ওপর হালকা ভাবে শুয়ে পড়লো রোয়েন।রুহীর কপালে চুমো দিয়ে ওর ঠোঁটের কাছে এগুতেই রুহীর শুট করা দৃশ্য রোয়েনের চোখের সামনে এসে পড়লো।রোয়েন আর পারলোনা এগোতে।ওর কপালের রগ খাড়া হয়ে গেলো।উঠে বসে পড়লো রোয়েন। এতক্ষন রুহী কোন এক অজানা সুখ পাচ্ছিলো কিন্তু রোয়েনের নিশ্বাস ওর মুখের ওপর না পেয়ে চোখ খুলল রুহী।রোয়েন অন্যদিকে ফিরে আছে।রুহী উঠে বসে রোয়েনের বাহু জড়িয়ে সেখানে মাথা রেখে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। প্লিজ বিশ্বাস করুন ইচ্ছে করে আপনাকে শুট করতে,,,রোয়েন রুহীকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।ওসব কথা আমার সামনে বলবেনা।ঘুমাও।ধমক দিয়ে বলল রোয়েন।রুহী সারারাত রোয়েনের মুখ গুঁজে কেঁদেছে।
দুদিন পর
রুহীর মাঝে খুব অস্থিরতা লক্ষ করছে রোয়েন।বারবার এরুম ওরুম করছে হাঁটতে হাঁটতে।কিছুক্ষনের মাঝে খাটে লুটিয়ে পড়লো রুহী। তীব্র যন্ত্রনায় চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।রোয়েন দৌড়ে রুহীর কাছে এলো।কি হলো রুহী?কি হয়েছে?রোয়েনের কালো শার্টের কলার চেপে ধরলো রুহী।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার,,,,প্লিজ বাঁচান আমাকে।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো রুহী।নিশ্বাস ফেলতে পারছেনা ঠিক মতো।বুঝে গেলো রোয়েন।রুহীকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে আনামকে কল দিয়ে জানালো।রুহীকে ওটি তে নেয়া হয়েছে।এতক্ষন রোয়েনের হাত জড়িয়ে খুব কাঁদছিলো রুহী।রোয়েনের চোখ জোড়া ও ভরে উঠেছিলো। ডাক্তার খাটের কাছে আসতেই রুহী বলে উঠলো।আমার প্রেগন্যান্সিতে অনেক কমপ্লিকেশন আছে।যেভাবেই হোক আমার বাবুকে বাঁচাবেন আপনি।আমার বর বাচ্চাটাকে খুব চায়।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো রুহী।ডাক্তার রুহীর কথা গুলো মন দিয়ে শুনলো।
রোয়েন আনাম রুমু আর আনিলা বেগম বাহিরে অপেক্ষা করছে কারো মুখে কোন কথা নেই।ভিতর থেকে রুহীর চিৎকার ভেসে আসছে।রোয়েনের বুক ধুকপুক করছে।ওর মাথায় অন্য কিছু চলছে।রুহীকে ও এমন শাস্তি দিবে যেন ভবিষ্যতে অবিশ্বাস করার সাহস না পায়।কিছুক্ষন পর নার্স ফুটফুটে একটা বাবু নিয়ে ওদের সামনে এলো। মিঃ রোয়েন আহমেদ!!নার্স ডেকে উঠলো।নার্সের ডাকে রোয়েন উঠে দাঁড়ালো। আনাম আনিলা বেগম রুমু নার্সের কাছে এলো।রোয়েনের কোলে ওর বেবি প্রিন্সেস। রোয়েনের কার্বন কপি ওর মেয়ে। হাত গুলো রুহীর হাতের মতো।বাবুর কপালে চুমু খেলো রোয়েন।আনিলা বেগম কোলে নিলো নাতনীকে আনাম রুমু ও কোলে নিলো।আমার ওয়াইফ কেমন আছে?নার্সকে প্রশ্ন করলো রোয়েন।ডাক্তার ভাবতেই পারেননি ওনি বাঁচবেন।প্রেগন্যান্সিতে অনেক কমপ্লিকেশন ছিলো আপনার ওয়াইফের।কিন্তু সে ভালো আছে।একনাগাড়ে বলল নার্সরোয়েন বাবুকে কোলে নিয়ে রুহীর কাছে এলো।রুহী বিশ্বজয় করা হাসি দিলো।বাবুর দিকে তাকিয়ে রোয়েনের দিকে তাকালো।রোয়েন রুহীর কাছে এলো।ওকে ধরো for last time।বাবুকে রুহীর কাছে এগিয়ে রাগী গলায় বলে উঠলো রোয়েন।কথা বলার সময় রোয়েনের মুখ শক্ত হয়ে এসেছিলো।রুহী ছলছল চোখে রোয়েনের দিকে তাকালো।রোয়েনের হাত ধরলো রুহী।ক কি বলছেন?l last t time মা মনি?কাঁপা গলায় বলল রুহী।Last time means last time.এরপর থেকে আমার মেয়ের কাছে ও আসবানা তুমি।রাগী গলায় বলল রোয়েন।ফুঁপাতে লাগলো রুহী।শুনো তুমি আমাকে অবিশ্বাস করেছো আমার ভালবাসাকে অবিশ্বাস করেছো।কি করে মনে করলে তোমাকে এতো ইজিলি মাফ করবো?কখনো মাফ পাবেনা।রোয়েন জোর করে রুহীর কাছে বাবু কে দিলো।যতো পারো আদর করো।আর কখনো পাবেনা আমার মেয়েকে।চিৎকার করে বলতে লাগলো রোয়েন।দেখুন ও অনেক ছোট।কি করে মা ছাড়া থাকবে বাচ্চাটা। প্লিজ ওর থেকে আলাদা করবেন না।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো রুহী।আমার মেয়ের জন্য আমার চিন্তা আছে।তুমি ওকে যতো পারো আদর করো ওকে নিয়ে যাবো।শক্ত মুখে বলল রোয়েন।রুহী কাঁদতে কাঁদতে মেয়েকে কোলে ওর গালে আদর করতে লাগলো।প্লিজ রোয়েন মেয়ের থেকে আমাকে আলাদা করবেন না।আমি মারা যাবো ওকে ছাড়া।বাবুকে বুকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো রুহী।রোয়েন আর কোন কথা না শুনে সাবধানে মেয়ে কে নিয়ে নিলো।রুহী রোয়েনের হাত টেনে ধরলো প্লিজ এমন করবেননা।কাঁদছিলো রুহী।রুহীর হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো রোয়েন।
আনাম আনিলা বেগম রোয়েনকে বুঝাতে পারলোনা।বাবুকে নিয়ে চলে গেলো রোয়েন।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে