My_Mafia_Boss_Husband Part:36
Mafia_Boss_Season2
Writer:Tabassum Riana
হেঁচড়িয়ে ডাইনিং রুমের মাঝে এনে ফেললো রুহীকে আজমল খান।রুহী পেট ধরে বসে আছে।হঠাৎ চাপ পড়ায় ব্যাথা পেয়েছে রুহী।আপনি বলেছিলেন না বন্দুক নকল ছিলো?নিশ্বাস নিতে নিতে বলল রুহী।কোন কথা শুনতে চাইনা তোর।ধমক দিয়ে উঠলেন আজমল খান।রুহীর কাঁধে হাত রেখে দাঁড় করালো আনাম।ওকে এভাবে ফেলে দেয়ার সাহস কি করে হলো আপনার?আজমল খানের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো আনাম।আজমল খান রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন আনামের দিকে।কিছু বলার আগে মনে রাখ আমি তোর বাপ।চিৎকার করে বললেন আজমল।প্লিজ নিজেকে বাবা বলবেননা প্লিজ।দাঁতে দাঁত চেপে বলল আনাম।রুহীকে সোফায় বসিয়ে দিলো আনাম।রুহীর চোখের পানি মুছে দিলো দুহাতে।তুই এখানে কেন?রোয়েন কই?আনাম জিজ্ঞেস করে উঠলো।রুহী কেঁদেই যাচ্ছে।রুহী কিছু জিজ্ঞেস করছি।রোয়েন ভাই কই?চিৎকার করে উঠে আনাম।রুহী আরো বেশি কাঁদতে শুরু করেছে। কিছু বলতে যাবে তখনই ফোন বেজে উঠে আনামের।হ্যালো।কানে ফোন রেখে বলে উঠে আনাম।
আনাম ভাই আমি রফিক বলছি।অপরপাশ থেকে কান্না ভরা স্বরে বলে উঠে রফিক।
কাঁদছো কেন রফিক।কি হয়েছে?বলে উঠলো আনাম।
স্যার আর নাই।বলে উঠলো রফিক।
হোয়াট কোন স্যার?ভয় পেয়ে গেলো আনাম।
রোয়েন স্যার আর নাই।বলেই কেঁদে দিলো রফিক।
রোয়েন ভাই আর নাই।ভাঙ্গা গলায় বলে উঠলো আনাম।
রুহী মাথা তুলে আনামের কথা শুনে।মাথায় বড্ড চাপ অনুভব হচ্ছে ওর।এ কি করলো ও?কিছু ভাবতে পারলো না রুহী।জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
ডাক্তার ওর এবরশন করান।আজমল খান বলে উঠলেন।রাহিন ও সাথে আছে।না স্যার এখন সম্ভব না।কারন পাঁচ মাস চলছে ওনার। এবরশন করাতে গেলে ওনি মারা যেতে পারেন।ডাক্তার বলে উঠলেন।রিস্ক নিয়ে এবরশন করে ফেলেন।মাঝখান থেকে রাহিন বলল।হঠাৎ রাহিনের গালে আনাম খুব জোরে চড় দিলো।হাউ ডেয়ার ইউ?আমার বোনের বাবু থাকবে কি থাকবেনা সেটা আমার বোন জানে।তুই বাহিরের ছেলে বাহিরে ছেলে হয়েই থাক।আমার বোনের আশেপাশে তোকে দেখলে পা দুটো ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিবো।আজমল কিছু বলতে গিয়ে ও পারলেন না।নার্স ছুটে এলেন ভিতর থেকে।পেশেন্টের অবস্থা খুব খারাপ।নিশ্বাস নিতে পারছেননা।আনাম দৌড়ে রুমে ঢুকে গেলো।রুহী জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।ওর চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।খুব কষ্ট হচ্ছে বোন?কাঁদতে কাঁদতে বলল আনাম।নার্স এসে রুহীর মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দিলো।রুহী কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছে।আনামের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে শুরু করেছে রুহী।মুখ দিয়ে কিছু একটা বলল।কিন্তু আনাম বুঝতে পারলোনা।
রুহীর গলা জড়িয়ে ওর কপালে চুমু খেলো আনাম।রুহী ভাইয়ের স্পর্শ পেয়ে আরো বেশি কাঁদতে লাগলো।
সেদিন রুহীকে রাখা হলো হাসপাতালে।পরদিন সকালে আনাম রুহী কে বাসায় নিয়ে এলো।রুমু কে ও কল দিয়ে আসতে বলল রুহীর পাশে থাকার জন্য।খাটে বসে রুমুর বুকে মাথা দিয়ে চিৎকার করে কাঁদছে রুহী।আমি কি করে করলাম রুমু?এখন কি হবে আমার? রুমু?কি নিয়ে বাঁচবো?কথা গুলো বলে চিৎকার করে কাঁদছে রুহী।রুমুর ও চোখ জোড়া ভিজে এসেছে।
রুহী সান্তনা দেয়ার মতো ভাষা ওর জানা নেই। রুহী জীবনের সবচেয়ে বড় বন্ধু, সবচেয়ে ভালবাসার মানুষটাকে হারিয়েছে।ওর জীবনে চলার পথের সঙ্গী।যে মানুষটা ওকে আগলে রেখেছে বুকের মাঝে।যার হৃদয়ের পুরোটা জুড়ে রুহীর চলা চল ছিলো।যার সাথে অগনিত সুন্দর মুহূর্ত কাঁটিয়েছে।কি করে ভুলে যাবে তাকে?ভাবছিলো রুহী রুমুর বুকে মাথা রেখে।চোখের সামনে রোয়েনকে সুট দৃশ্যটি ভাসছে।রোয়েনের হাত বাড়িয়ে রুহীকে ছুঁয়ে দেয়া,রুহী বলে ডাকা সব যেন এখন শুধুই স্মৃতি।রোয়েন এখন ওর জীবনে শুধুই কল্পনা,মানুষটা ওর জীবনে এসে কতোটা বদলে দিয়েছে ভাবতেই বুক ভার হয়ে এসেছে রুহীর।ভারি হয়ে যাওয়া পেটে হাত বুলালো রুহী।এটাই রোয়েনের স্মৃতি ওদের বাচ্চা।সরি বাবা, মাকে মাফ করে দিস।কাঁদতে লাগলো রুহী।রুমু এসে রুহীকে জড়িয়ে নিলো।রুহী প্লিজ এমন করিস না অসুস্থ হয়ে যাবি।সারাদিনে ও কিছু খাস নাই।রুহী ফুঁপিয়ে কাঁদছে। রুমু রুহীর চোখ মুছে দিয়ে ওর সামনে এসে বসলো।বুয়া এসে ভাত দিয়ে গেলো।রুমু এক লোকমা ভাত রুহীর মুখের সামনে ধরলো। খেয়ে নেয়।বলে উঠলো রুমু।মুখ সরিয়ে অন্যদিকে ফিরলো রুহী।প্লিজ খেতে বলিস না।কাঁদতে কাঁদতে বলল রুহী।
অনেক জোরা জুরি করার পর ও রুহীকে খাওয়ানো গেলো না।রুমু ভাতের প্লেট রেখে রুহীর পাশে বসে রইলো।কিছুক্ষন পর রাহিন রুমে এলো।এই মেয়ে সর।রুমুকে বলে উঠলো রাহিন।বিহেভ ইউর সেলফ রাহিন।আপনি বুঝে শুনে কথা বলুন।কার সাথে কথা বলছেন ভেবে চিন্তে কথা বলুন।আরে মেয়ে চুপ। তোর মতো আট দশটা মেয়ে আমার খাটে পড়ে থাকে টাকা পেলে।সর!!রুমুকে সরিয়ে রুহীর দিকে যেতে লাগলো রাহিন।রুমু রাহিনকে পিছন থেকে টেনে ধরলো।ওর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে তোর জন্য খুব খারাপ হয়ে যাবে।চিৎকার করে বলল রুমু। রাহিন পিছনে ফিরে হাসলো।আহ কি করবি আমার?সাধারন মেয়ে মানুষ তুই। কিছুই করতে পারবিনা।করতে পারবোনা ঠিক আছে।আমার বাবাকে তো ঠিকই চিনিস।সে তোকে মেরে এমন জায়গায় গুম করবে সারাজীবন খুঁজলে ও তোর লাশ মিলবেনা।সো ভালোয় ভালোয় ভালোয় গেট আউট ধমক দিয়ে বলল রুমু।
রাহিন চলে গেলো।রুমু রুহীকে শুইয়ে দিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়লো।রুহী শুয়ে আছে।চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।কিছুক্ষন বাদেই চোখ জুড়ে একরাশ ঘুম ভর করলো।
রাতে খাটে বসে আছে রুহী।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।রুমু পাশে নেই বাথরুমে গেছে।হঠাৎ রোয়েন কে দেখতে পেলো রুহী।রোয়েন রুহীর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।রুহী বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আ আপনি?কাঁপা কাঁপা গলায় বলল রুহী।খাওনি কেন এখনো?ধমক দিয়ে উঠলো রোয়েন।কি করে খাই?যাকে আকড়ে বেঁচে থাকবো ভেবেছিলাম সে আপনিই তো ছেড়ে চলে গেলেন।কথাটা বলে কেঁদে উঠলো রুহী।তোমার ওপর রাগ নেই আমার।রুহীর চোখ মুছতে মুছতে বলল রোয়েন।রুহীর হাত ধরে বলল চলো খেয়ে নিবে।রুহী চুপচাপ রোয়েনের সাথে যেতে লাগলো।হিপনোটাইজ করা হয়েছে যেন রুহীকে।পাকঘরে এলো রুহী।রোয়েন প্লেটে খাবার বেড়ে রুহীর দিকে ধরলো।খেয়ে নাও।গম্ভীর গলায় বলল রোয়েন।রুহী একলোকমা ভাত মুখে তুলতে নিয়ে সামনে তাকিয়ে রোয়েনকে আর দেখতে পেলোনা।হাত থেকে ভাত পড়ে গেলো।কই আপনি?কই আছেন?জানি আছেন।প্লিজ সামনে আসেন।চিৎকার করে বলতে লাগলো রুহী।একপর্যায়ে কেঁদে উঠলো রুহী।প্লিজ সামনে আসেন!!প্লিজ সামনে আসেন।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো রুহী।রুহীকে খাটে না পেয়ে নিচে নেমে এলো রুমু।রুহী!!!তুই এখানে?বলে উঠলো রুমু।রুহীকে ধরলো রুমু।কাঁদছিস কেন?এখানে এলি কি করে?না করেছিলাম একা একা সিড়ি দিয়ে নামবিনা।এতো অন্ধকারে কি করে নামলি?এক নাগাড়ে প্রশ্ন করলো রুমু।ওনি এখানে ছিলেন।আমাকে নিয়ে এসেছেন।কাঁদতে কাঁদতে বলল রুহী।রুমু রুহীকে বুকে টেনে নিলো।জানি অনেক কষ্ট হবে কিন্তু তোকে মেনে নিতে হবে রোয়েন ভাই আর নেই।
চলবে