My_Mafia_Boss পর্ব-.৭
Writer:Tabassum Riana
মিস জেনিফার ধড়ফড়িয়ে রুহীর রুমে ঢুকলেন।এখন ও দাঁড়িয়ে আছিস? স্যার তোর জন্য অপেক্ষা করছে।কোন স্যার অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো রুহী। ওমা এ মেয়ের কি মনে নাই?কাল আসলেন, সেলাই মেশিন পাঠালেন ওনি।ওহ এইতো হয়ে গেছে।উড়না গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে যেতেই মিস জেনিফার রুহীর হাত টেনে ধরলেন শোন।থেমে গেল রুহী জি ম্যাম!!!!ব্যাটা মানুষের সাথে বেশি ঘেঁষাঘেঁষি করিসনা। মাথা নিচে নামিয়ে নিলো রুহী জি। এখন আসি?হুম জলদি চলে আসিস রুহীর হাত ছেড়ে দিয়ে বললেন মিস জেনিফার।রুহী বের হতেই রোয়েনকে দেখতে পেল।সানগ্লাস পরে আছে।শার্টের হাতা দুটোকে ফোল্ড করে রেখেছে।রুহী কাছে এগোতেই জিপের দরজা লাথি মেরে খুলে দিলো রোয়েন। একটু কেঁপে উঠলো রুহী ভাবছিলো এভাবে খোলার মানে কি?ভিতরে বসে পড়লো রুহী।রোয়েন সামনে তাকিয়ে বলল দরজা আটকাও।রুহী দরজা আস্তে টেনে আটকালো।রোয়েন রুহীর উপর দিয়ে দরজাটাকে খুলে জোরে আটকিয়ে দিলো।রুহী মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। খুব ভয় করছে ওর।রোয়েনকে দেখলে খুন করার দৃশ্যটি মনে পড়ে যায় ওর।গাড়ি ড্রাইভ করছে রোয়েন একটা কথা ও বলেনি রুহীর সাথে।রুহী আড় চোখে রোয়েন কে দেখছে।কেমন জানি মানুষটা?ঐদিন লোক দুটোকে মারলো আর এখন ওদের সাহায্য করছে।হিসাব মিলাতে পারছেনা রুহী।একটা কথা বলতে পারি ইতস্তত করে প্রশ্ন করলো রুহী।রোয়েন চুপচাপ বসে গাড়ি ড্রাইভ করছে।
একটু দরকার ছিলো প্রশ্নটা করা আবারো বলল রুহী।না করেছে কে রোয়েন ওর দিকে না তাকিয়ে বলল।না ম মানে ঐদিন লোক গুলো কে মারছিলেন আর আজ আমাদের সাহায্য করছেন কেন?গাড়ি খুব জোরে থামালো রোয়েন। রুহী সামনের দিকে পরে যেতে নিলো খুব ভয় লাগছে ওর।প্রশ্নটা করে ভুল করেনি তো?তারা বিশ্বাস ঘাতক তাই শাস্তিটা তাদের পাওনা ছিলো।তোমাদের সাহায্যের ব্যাপারটা একান্তই ব্যাক্তিগত ব্যাপার।রুহী আর কিছু বলল না।গাড়ি আপন মনেই চলছে।রুহী জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে।কিছুক্ষণ পর গাড়িটি একটি স্কুলের সামনে এসে থামলো।রোয়েন বেরিয়ে রুহীর পাশের দরজা টি খুলে দিলো। রুহী বেরিয়ে এলো।এখানে কি করবো?রোয়েন সামনে হাঁটতে হাঁটতে বলল ফলো মি।রুহি রোয়েনের পিছু পিছু প্রিন্সিপাল এর রুমে চলে এলো।ক্লাশ এইট পর্যন্ত পড়েছিলো রুহী।নাইনে ভর্তি করে দিলো রোয়েন।কাজ শেষে দুজন প্রিন্সিপালের রুম থেকে বেরিয়ে এলো।রুহী ভাবতেই পারেনি পড়ার সুযোগ পাবে ও। পড়ার শখ থাকলে ও মামীর জন্য হয়ে উঠে নি।তাই খুব ভালো লাগছে আজ।পুরো পৃথিবীটা যেন হাতের মুঠোয়
এসে গেছে।রোয়েনের পায়ের কাছে বসে পড়লো রুহী।কি বলবো আপনাকে জানিনা ধন্যবাদ দিলে ও কম হয়ে যাবে।শুধু বলতে চাই আপনি এ্যঞ্জেল আমার জন্য আমাদের সব অনাথ দের জন্য।এই প্রথম কারোর মুখ থেকে নিজের জন্য এমন কথা হজম করতে পারছিলো না রেহান।সরে দাঁড়ালো উঠো।তামাশা করো না এখানে(ধমক দিয়ে বলল)।রুহী উঠে দাঁড়ালো তামাশা করছিনা সত্যি বলছি।
চলো!! রোয়েন হাঁটতে শুরু করলো।রুহী ওর পিছু পিছু গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।রোয়েন দরজা খুলতেই ভিতরে বসে পড়লো রুহী।রোয়েন পাশে এসে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।রুহী কে অনাথ আশ্রমে দিয়ে চলে গেল রোয়েন।কিরে কই গেলি? (স্নিগ্ধা জিজ্ঞেস করে উঠলো)স্কুলে ভর্তি করালো উনি।আমার ও ভর্তি হয়েছি স্কুলে হেসে বলল স্নিগ্ধা।সত্যি কখন গেলি তোরা? রুহীর চোখে মুখে হাসির বন্যা বয়ে গেল।অনলাইনে ভর্তি হলাম।তাহলে আমাকে নিয়ে গেল কেন?অনলাইনেই তো ভর্তি হতে পারতাম কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল রুহী।আনিলা বেগম খাটে শুয়ে টিভি দেখছিলেন।পান মুখে নিয়ে টিভির চ্যানেল পরিবর্তন করায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।আফজাল সাহেব পাশে শুয়ে ছিলেন।হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। উফ কে আইলো আবার?একটু শান্তি ও নাই বিড়বিড় করতে করতে বিছানা ছাড়লেন আনিলা বেগম।ড্রয়িংরুমে এসে দরজা খুলে দিলেন।রোয়েন আর ওর দুজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।আঙ্গুল থেকে একটু চুন মুখে নিলেন আনিলা বেগম কে আপনারা? আফজাল সাহেব আছেন? গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো রোয়েন।হুম আছে তো।কি করবেন ওনারে দিয়ে?ডেকে দিন ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল রোয়েন।বসেন আপনারা ডেকে আনি বলে রুমে চলে গেল আনিলা বেগম।আফজাল সাহেব কে ডাকতে লাগলেন এই উঠো একজনে আসছে খুঁজে তোমারে।উঠে বসলেন আফজাল সাহেব কে আসছে।একটা পোলা পান চিবোতে চিবোতে বললেন আনিলা বেগম। চোখ চশমা দিয়ে উঠে ড্রয়িংরুমের দিকে এগোলেন আফজাল সাহেব। সোফায় বসে থাকা রোয়েন কে দেখে কিছুটা অবাক হলেন।বাবা আপনি কে? ঠিক চিনতে পারলাম না।সোফায় বসে বললেন আফজাল সাহেব।রুহী আপনার ভাগনী রোয়েন সোজা হয়ে বসলো।জি কি করেছে ও আফজাল সাহেব আতংকিত হয়ে প্রশ্ন করলেন।
না কিছু করেনি।ওকে বিয়ে করতে চাই আমি।জি কি বললেন বাবা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন অাফজাল সাহেব।জি সত্যি বলছি রোয়েন বলল।আপনার বাবা মা কাউকে আনলেন না সাথে করে চারপাশে তাকাতে তাকাতে বললেন আফজাল সাহেব।আমার কেউ নেই রোয়েন বলে উঠলো।তা কি করেন আপনি? আফজাল সাহেব জিজ্ঞেস করলেন। কিছুটা চিন্তা করে রোয়েন বলল বিজনেস।ওহ কিসের বিজনেস বাবা???মিথ্যা বলতে পারবোনা আমি টাইগার টিমের বস রোয়েন আহমেদ। টাইগার টিমের কথায় আফজাল সাহেবের গলা শুকিয়ে এলো।ঘামতে শুরু করলেন তিনি।রোয়েন আফজাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে।আফজাল সাহেবের রোয়েনের কথা গুলো ভালো লেগেছে।হয়ত মানুষ হিসেবে ও খারাপ না। রায়ান থেকে ভালো হবে।ঠিক তখনই আনিলা বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন এ বিয়ে কোন মতে হবেনা।রোয়েন দাঁড়িয়ে গেল।খুব রাগ হচ্ছে ওর।ঝামেলা এড়াতে আফজাল সাহেব বললেন আনিলা তুমি যাও তোমার সাথে পরে কথা হবে।আফজাল সাহবে আপনি যান ওনার সাথে কথা আছে আমার রোয়েন গম্ভীর গলায় বলল। আফজাল সাহেব উঠে আনিলা বেগমের কানে কানে বললেন তর্ক না করতে।আনিলা বেগম রোয়েনের সামনে বসলো।রুহীর সাথে আমার বিয়েতে না করছেন কেন রাগী গলায় বলে উঠলো রোয়েন।আমি আমার ভাইয়ের ছেলের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করছি হেসে বললেন আনিলা বেগম।
কি করে সে রোয়েন জিজ্ঞেস করলো?কি করবো বেকার পুলা বাপের কান্ধের ওপর বইসা খায়।তাহলে রাজি হচ্ছেন কেন বিয়েতে রাগী গলায় বলল রোয়েন।আরে আরে স্যার রাগেন কেন রায়ান আমার ভাইয়ের পুলা ৫০০০০ টাকা দিবো আমারে।রোয়েনের বুঝতে সময় লাগলো না এ মহিলা টাকার পোকা।টাকা দিয়ে হ্যান্ডেল করতে হবে। আমি পাঁচ লাখ টাকা দিবো।এ্যা সত্যি কইছেন?হুম রোয়েন আনিলা বেগমের হাঁব ভাব দেখে অবাক হচ্ছে।তাহলে মনে করেন রুহী আপনার।আরে টাকা পয়সার জন্য কি রুহী তো আমারই মাইয়া ওর শান্তিটাই বড়।হুহ রোয়েন টাকার চারটি বান্ডিল আনিলা বেগমের সামনে রাখলো গুনে নিয়েন।আনিলা বেগম টাকা গুলো খপ করে নিয়ে নিলেন। রোয়েন উঠে দাঁড়ালো যেতে হবে আমার।আরে স্যার কই যান? কিছু খাবেন তো আনিলা বেগম বলে উঠলেন।না কিছু খাবোনা। আফজাল সাহেব এসে দাঁড়ালেন রুহীর সাথে কথা বলে জানাবো। আরে ও কি বলবে? এতো ভালো ছেলে রাজি না হওয়ার কি আছে।বাবা আপনি নিশ্চিত থাকেন বিয়া আপনার লগেই হইবো।আফজাল সাহবে আনিলা বেগমকে দেখে অবাক হচ্ছেন এতো দিন রায়ানের সাথে রুহীর বিয়ের জন্য উঠে লেগেছে এখন আবার এ লোকের সাথে কি চলছে আনিলার মনে?
চলবে