My_Mafia_Boss পর্ব-৫৪
Writer: Tabassum Riana
অনুষ্ঠান শেষে সবাই একে একে চলে যেতে লাগলো।অবন্তী আর আনিলা ইসলাম থেকে গেলেন বিয়ের জন্য।খাবার সেড়ে যে যার রুমে চলে গেল।রুহীর হাত ধরে রোয়েন সিড়ির দিকে পা বাড়ালো। দুটো সিড়ি উঠতেই রুহীর মাথা কিছুটা ঘুরিয়ে আসে।রোয়েনের পাঞ্জাবি খামচে ধরলো রুহী।রুহী থেমে যাওয়ায় রোয়েন পাশে তাকালো ভ্রু কুঁচকে। কি হলো?রোয়েন প্রশ্ন করে উঠলো।নাহ কিছুনা ঠিক আছি মাথা নিচু করে বলল রুহী।থেমে গেলে কেন তাহলে? রাগী গলায় প্রশ্ন করলো রোয়েন।মাথাটা ঘুরাচ্ছে। আস্তে করে বলল রুহী।রুহীকে চুপচাপ কোলে তুলে নিলো রোয়েন।রোয়েনের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলো রুহী।রুমে নিয়ে এসে খাটে শুইয়ে দিলো রুহীকে।রুহীর পাশে বসে ওর মাথায় হাত রাখলো রোয়েন।উঠে দাঁড়িয়ে বাথরুম থেকে পানি নিয়ে এলো।রুমাল পানিতে ভিজিয়ে রুহীর মুখ মুছে দিলো রোয়েন।মুখ মুছিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল রোয়েন।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে রুহীকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে মুচকি হাসলো রোয়েন।মায়াবতী আজ জলদি ঘুমিয়ে গেছে।গেঞ্জি পরে নিলো।রুহীকে বুকে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো রোয়েন।
পরদিন সকাল
ঘুমভেঙ্গে নিজেকে বালিশে আবিষ্কার করলো রুহী।চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে নিলো। রোয়েন কে দেখা যাচ্ছেনা রুমে।খাট ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো রুহী।ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে নিচে নেমে এলো রুহী।মামী আর অবন্তী আপু টেবিলে বসে আছেন নাস্তা সামনে নিয়ে।রুহী ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো।আপু ওনিকে দেখেছো?প্রশ্ন করে উঠলো রুহী। আরে না ওনি বাহিরে গেছেন।তোকে নাস্তা করতে বলেছে।অবন্তী বলে উঠলো।ওনি খেয়েছেন?অবন্তীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো রুহী।আরে নাহ খায়নি।বলল খেয়ে আসবে। অবন্তী বলল।বড় একটি নিশ্বাস ফেললো রুহী।হুম।টেবিলে বসে পড়লো রুহী।রুটি তে ভাজি নিয়ে মুখে দিতেই অদ্ভুত একটা গন্ধ নাকে এসে লাগলো রুহীর।প্লেট ঠেলে দিলো রুহী।
কি হলো খাবিনা?(অবন্তী)
গন্ধ লাগছে আপু।আস্তে করে বলল রুহী।
কই আমরা খাচ্ছি।আনিলা ইসলামের দিকে তাকালো অবন্তী।মা তোমার গন্ধ লাগছে?
আরে নাহ তো।ঠিক আছে।
কি খাবি রুহী?অবন্তী প্রশ্ন করে উঠলো।
কিছুনা আপু ভালো লাগছেনা।
অানিলা ইসলাম অবন্তী কুনুই দিয়ে খোঁচা দিয়ে ফিসফিস করে জানি কি বললেন।
রুহী অবাক চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছু কি হয়েছে?ওদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো রুহী।
আনিলা ইসলাম আর অবন্তী টেবিল ছেড়ে রুহীর দিকে এগিয়ে এলেন।রুহী চল তোকে একটা জিনিস দেখাবো।রুহীর একহাত ধরে বলে উঠলো অবন্তী।কি দেখাবা আপু?অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো রুহী।আরে চল না রুহী খুব ভালো লাগবে তোর।আনিলা ইসলাম বলে উঠলেন।উঠে দাঁড়িয়ে গেল রুহী।চলো আপু। অবন্তীকে উদ্দেশ্য করে বলল রুহী।রুহীকে নিয়ে আনিলা ইসলাম আর অবন্তী রুমে চলে গেলেন।
ঘন্টা খানিক পর
আপু এ নিয়ে পাঁচবার আমি আর যাবোনা।বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল রুহী।আচ্ছা ঠিক আছে। অবন্তী হালকা হেসে বলল।রুহী ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।রুহীকে দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করিয়েছে চারবার।প্রত্যেকবারই পজেটিভ।কমোডের ওপর বসে আছে রুহী।টেস্ট কিটটি বার বার দেখছে।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।আলাদা এক অনুভূতি কাজ করছে।পেটের ওপর আস্তে করে হাত রাখলো রুহী।চোখের কোনা বেয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।মা হবে সে।তার ও ছোট্ট একটা বাবু থাকবে।রোয়েন আর রুহীর ভালবাসার সংসারে ছোট্ট বাবু থাকবে।আমার তিতাকরলা বর বাবা হবে।কি করে জানাবে ওর বরটাকে?ঠিক মতো কথা বলতেই পারলোনা আজ পর্যন্ত।হঠাৎ দরজায় নকের শব্দ পেয়ে উঠে দাঁড়ালো রুহী।এইতো আসছি জোরে চিৎকার করে বলল রুহী।মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলো রুহী।অবন্তী ওর কাছে এসে দাঁড়ালো টেস্ট কিটটা কই?
অবন্তীর হাতে টেস্ট কিটটা ধরিয়ে দিলো রুহী।অবন্তী টেস্ট কিটটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রুহীকে জড়িয়ে ধরলো।আমার ছোট্ট বোন টা মা হবে।ছোট্ট বাবুটার ও বাবু হবে।আনিলা ইসলাম ও রুহীকে জড়িয়ে ধরলেন।তাহলে নানু ডাকার মতো কেউ আসবে।রুহী দুজনকে জড়িয়ে ধরেছে।কিছুক্ষন ওরা সরে এলো।রোয়েন ভাইকে কিভাবে জানাবি?ভেবেছিস কিছু?অবন্তী রুহীর হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো।কাল কেই জানাবো। জানাতে তো হবেই তাইনা।অবন্তীর দিকে তাকিয়ে বলল রুহী।হুম।চল বের হই অবন্তী বলে উঠলো।হুম।
রুম থেকে বের হতেই রোয়েনের দিকে চোখ পড়লো ওদের।রুহী!!!কই ছিলে এতক্ষন? ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো রোয়েন।আ আম আমি ত তো……রোয়েন এসে রুহীর হাত টেনে সিড়ির দিকে যেতে লাগলো।আস্তে আস্তে অবন্তী জোরে বলে উঠলো।রোয়েন পিছনে তাকাতেই মুখ চেপে ধরলো অবন্তী।কিছু না ভাইয়া।ররুহী পা পায়ে ব্যাথা প পেয়েছে ত তো।এ এজন্য ব বলছিলাম আ আরকি।ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো অবন্তী।রোয়েন মুচকি হেসে কোলে তুলে নিলো রুহীকে।থ্যাংকস জানিয়ে দেয়ার জন্য।বলে উপরে চলে গেল রোয়েন।রুহীকে খাটে শুইয়ে ওর পা জোড়া চেক করতে লাগলো রোয়েন।কই ব্যাথা পেলে?কিভাবে পেলে?কখন ব্যাথা পেলে?রাগী গলায় জিজ্ঞেস করলো রোয়েন।আ আরে ওসব কিছুনা।অল্প ব্যাথা পেয়েছি।(অবন্তী আপু কি জন্য বললে?মিথ্যা বলার কি ছিলো)ভাবতে লাগলো রুহী।কই ব্যাথা পেয়েছো?রুহীর বাম পায়ের গিরা জোরে চেপে বলল রোয়েন।এ এখানেই। ভয়ে ভয়ে বলল রুহী।রুহীর পায়ের গিরায় চুমো খাচ্ছে রোয়েন।শরীরের ভিতর শিহরন জাগিয়ে দিচ্ছে রোয়েনের স্পর্শ গুলো।আ আপনার ক কফি খাবেন না?কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো রুহী।
রুহীর কথায় থেমে গেলো রোয়েন।বিরক্তিকর চাহনি তে রুহীর দিকে তাকিয়ে বলল You know that i don’t like disturbance in romance.ন না আম আমি ত তো ক কফির ক কথা বলছিলাম।মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল রুহী।
বাঁকা হাসলো রোয়েন।খেতে ইচ্ছে হচ্ছে বুঝি?ক ক কই না তো মুখ ঘুরিয়ে বলল রুহী।এখন তো ভালোভাবেই কথা বললাম তারপর ও এভাবে কথা বলছো কেন?ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো রোয়েন।ক ক কই কিভাবে কিভাবে কথা বললাম?মাথা নিচু করে বলল রুহী।এরপর থেকে যদি তোঁতলিয়েছো না আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।দাঁতে দাঁত চেপে বলল রোয়েন।রুহী চুপচাপ মাথা নিচু করেই রইলো।কাজের লোকটা কফি নিয়ে এলো রুমে।রোয়েন রুহীর দিকে তাকিয়ে কফি তে চুমুক দিলো এভাবে যেন রুহীকে চুৃমো খাচ্ছে।রুহী মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো।রোয়েন রুহীর দিকে এগিয়ে এলো।রুহী মাথা শক্ত করে রেখেছে।রোয়েন কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে রুহীর মাথা উঠিয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে কফি ঢেলে রুহীর ঠোঁট আঁকড়ে ধরলো রোয়েন।
পরদিন সকাল
বাড়িতে হৈচৈ হচ্ছে ভীষন।আজ মাফিয়া লিডারের বিয়ে বলে কথা।প্রতিবেশী ঘর গুলো থেকে ছোট ছোট বাচ্চা গুলো উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে।রোয়েনকে আসতে দেখেই বাচ্চা গুলো দৌড়ে পালাতে নিলে রোয়েন ওদের ধরে ফেলে।আঙ্কেল প্লিজ আর আসবোনা মাফ করে দিন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল বাচ্চা গুলো।রোয়েন ওদের সবার হাতে চকোলেট ভর্তি প্যাকেট ধরিয়ে দিলো।আজ সবাই আব্বু আম্মুকে নিয়ে আসবে ওকে?বলবে রোয়েন আঙ্কেল যেতে বলেছে।বাচ্চা গুলো খুশি হয়ে চলে গেল।রোয়েন উঠে সিড়ির দিকে পা বাড়ালো।রুহী কে গোসল করানো হয়েছে।মায়াবতী আজ আরো মায়াময় হয়ে উঠেছে।এসময় নাকি মেয়েদের আরো বেশি সুন্দর লাগে।রুহীকে রুমে দিয়ে গেলো অবন্তী আর আনিলা বেগম।রুহী চুল মুচ্ছিলো ঠিক তখন রোয়েন প্রবেশ করলো রুমে।রুহীর দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো রোয়েন।রুহী আলমারি খুলে কাপড় বের করে খাটে বসে রইলো।রোয়েন ফ্রেশ হয়ে রুহীর দিকে তোয়ালে বাড়িয়ে দিলো।রুহী উঠে দাঁড়িয়ে তোয়ালে হাতে নিতেই রোয়েন কোলে বসিয়ে দিলো রুহীকে।রুহীর বুকে রাখলো।রুহী মুচকি হেসে রোয়েনের ভিজা চুল গুলো মুছে দিচ্ছে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেলে পার্লারের দুটি মেয়ে রুহীকে সাজাতে নিয়ে গেলো।রুহীকে সাজাচ্ছে দুজন মিলে।লাল রঙ্গের লেহেঙ্গা পরিয়ে গয়না পরিয়ে দিলো।রুহী আয়নার সামনে নিজেকে চিনতেই পারছেনা।পুরাই অচেনা লাগছে ওকে।সন্ধ্যা নাগাদ সব মেহমানরা একে একে চলে এলো।রুহীকে স্টেজে এনে বসিয়ে দিলো আনিলা বেগম আর অবন্তী।রুহীর ফটোশুট হচ্ছে। রুহী চারপাশে তাকিয়ে রোয়েনকে খুঁজার চেষ্টা করছে ঠিক সেই মুহূর্তে কারেন্ট চলে গেল।কিছুটা কেঁপে উঠলো রুহী।ঠিক তখনই ওর সামনে সাদা একটা লাইট এসে পড়লো।সামনে রোয়েন হাঁটু গেড়ে বসে আছে।মুখে বিশ্বজয় করা হাসি।পাশে তিনটি বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে।কারোর হাতে বড় একটি টেডি বিয়ার,পাশের বাচ্চাটির হাতে চকোলেট তার পাশেরটির হাতে ফুল।রোয়েনের হাতে বড় একটি গোলাপ ফুলের তোড়া।রুহীর চোখের কোনে অশ্রু জ্বলজ্বল করছিলো।উঠে দাঁড়িয়ে গেল রুহী।
মায়াবতী তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন আমার হৃদয়ের মাঝারে জায়গা করে দিয়েছিলাম,তোমাকে নিয়ে হাজার বছর কাঁটিয়ে দেয়ার স্বপ্ন বুনছিলাম।কোন এক জোছনা রাতে তোমার হাতে হাত রেখে কাঁটিয়ে দিবো ভেবেছিলাম।আমার হৃদয়ের প্রত্যেকটা কম্পন তোমার নাম নেয়।প্রথম দেখায় তোমার মায়া জালে ফেঁসে গিয়েছিলাম।আরো ফাঁসতে চাই।তোমার প্রত্যেকটি ছোঁয়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাই।কখনো ভাবিনি আমার জীবনে কেউ আসবে,কাউকে ভালবাসতে পারবো।কিন্তু আমার জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্তকে রঙ্গীন করে এসেছো তুমি।আমার প্রত্যেকটা সকাল কে আলোকিত করে দিয়েছো।বাকি হাজারটা রাত হাজারটা সকাল তোমার সাথে কাঁটাতে চাই।কারন এই তিতা করলা যে তার মায়াবতীকে ভালবেসে ফেলেছে।রুহীর চোখের অশ্রু বাঁধা মানছেনা।আই লাভ ইউ রুহী।আই রিয়েলি লাভ ইউ। তখনই কারেন্ট এসে গেল।উপর থেকে হাজারো লাল গোলাপের পাপড়ি পড়তে লাগলো ওদের ওপর।রুহী রোয়েনের হাত থেকে ফুলের তোড়া নিতেই রোয়েন দাঁড়িয়ে গেল।রুহী রোয়েনের বুকে আঁছড়ে পড়লো।আষ্ঠেপৃষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছে তার বরকে।রোয়েন ও তার মায়াবতীকে বুকের মাঝে ধরে রেখেছে।সবাই হাত তালি দিতে লাগলো।রুহী সরে এসে মাথা নিচু করে চোখ মুচ্ছে রোয়েন রুহীর দিকে তাকিয়ে আছে।নিজে ও কেঁদে দিয়েছিলো।বাবু গুলো ওদের হাতে ফুল চকোলেট ধরিয়ে দিলো। রুহীর হাতে টেডি বিয়ারটি ধরিয়ে বাচ্চা গুলো চলে গেল।
রুহী আর রোয়েন স্টেজে বসে পড়লো।মালা বদল হয়ে গেল ওদের।
খাবার সেড়ে সব মেহমানেরা একে একে চলে গেল।রুহী রোয়েনের হাত ধরে সিড়ির দিকে পা বাঁড়ালো।রোয়েন অবাক চোখে রুহীর দিকে তাকিয়ে আছে।
দরজার সামনে এনে রোয়েনের চোখ দুহাতে চেঁপে ধরলো রুহী।রুহী কি করছো তুমি?রোয়েন বলতে লাগলো।
রোয়েনের কানের সামনে মুখ নিয়ে এলো রুহী সারপ্রাইজ আছে।ওহ। রোয়েন বলে উঠলো।রুহী দরজা খুলে এক হাতে লাইট জ্বালিয়ে রোয়েনের চোখ থেকে ধীরে ধীরে হাত সরালো তারপর……….
চলবে