My_Mafia_Boss পর্ব-৫২
Writer: Tabassum Riana
এয়ারপোর্টে বসে আছে দুজন।রুহীর কাঁধের চুল গুলো উড়াউড়ির কারনে ফর্সা কাঁধটা বারবার দৃশ্যমান হচ্ছে।কানের কালো দুলটাও নড়ছে।রোয়েন হাত বাড়িয়ে রুহীর ফর্সা কাঁধটা ছুঁয়ে দিচ্ছে।রুহীর শ্বাস প্রশ্বাস উঠানামা করছে।রুহী রোয়েনের আরো কাছে চলে এসেছে।রোয়েন মুখ বাড়িয়ে রুহীর কানের লতিতে কামড় বসিয়ে দিলো।রুহী চোখ বন্ধ করে ফেলে।ওনার প্রত্যেকটা স্পর্শ পাগল করে দেয়।রুহীর হাতের আঙ্গুল গুলো নিজের আঙ্গুলের ভাজে ঢুকিয়ে নিয়ে রুহীর মাথা নিজের কাঁধে রাখে রোয়েন।কারোর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো।কিছুক্ষণ পর প্লেনে উঠে যায় ওরা।রুহীর সিট জানালার পাশে পড়েছে।পাশে রোয়েন বসে আছে।র রর রোয়েন!!!!রোয়েনের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ডাকে রুহী।বলো!!! রুহীর চুলে হাত বুলিয়ে বলে উঠে রোয়েন।
আ আম আমার না ভীষন ভয় করছে।অল্পকতক্ষন লাগবে রুহী।সুরা পড়ো সব ভয় গায়েব হয়ে যাবে।গম্ভীর গলায় বলল রোয়েন।রুহী চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে সুরা পড়ছে।
কিছুক্ষন পর কক্সবাজারে পৌছে গেল ওরা।রোয়েনের এক লোক গাড়ি নিয়ে এসেছে ওদের জন্য।রুহী আর রোয়েনকে দেখতেই লোকটি বেরিয়ে আসে।স্যার ভালো আছেন?জি আ’ম ফাইন।রুহী ও নজিব। নজিব ও রুহী তোমার ভাবি।শান্ত গলায় বলল রোয়েন।হায় ভাবি নজিব রুহীর দিকে হেসে বলল।রুহী মাথা নিচু করে বলল ভালো আছেন?জি রুহীর থেকে চোখ সরিয়ে রোয়েনের দিকে তাকালো নজিব স্যার চলেন।হুম লেটস গো।রুহীর হাত ধরে গাড়ির দিকে এগোলো রোয়েন।রোয়েনের রিসোর্টে পৌছে গেলো ওরা।সমুদ্রের দিকেই মুখ করে আছে রিসোর্টটি।রুহী রুমে ঢুকতেই সমুদ্রের শো শো আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে।রোয়েন এতো বড় সারপ্রাইজ দিবে রুহীকে ভাবতেই পারেনি।দৌড়ে গিয়ে বারান্দায় এলো রুহী।সমুদ্র টা কে এতো কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছে।একটু ঝুঁকে বাতাসের ঘ্রান নিলো রুহী।রোয়েন কাপড় পাল্টে নিলো এতক্ষনে।বারান্দায় এসে রুহীর কাঁধে হাত রাখলো রোয়েন।আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছিনা।এতো বড় সারপ্রাইজ দিলেন।সত্যি খুব ভালো লাগছে আমার।হাসতে হাসতে বলল রুহী।ডিনার করে দেখো সমুদ্র। রোয়েন গম্ভীর গলায় বলে উঠলো।রুহীর হাসি উধাও হয়ে গেলো।ওকে মাথা নিচু করে রুমে এলো।
ফ্রেশ হয়ে নাও রুহী।খাবারের জন্য কল করছি আমি। কানে ফোন রেখেই বলল রোয়েন।রুহী লাগেজ খুলতেই আৎকে উঠলো।যা এনেছিলো তার কিছুই নেই লাগেজে।নাইটি আছে আর ফতুয়া জিন্সপ্যান্ট।রুহী উঠে দাঁড়ালো কি করবে বুঝতে পারছেনা।র রোয়েন শুনেন।কানের থেকে ফোন রেখে রুহীর দিকে তাকালো রোয়েন।হোয়াট?আ আমার জা জ জামা গুলো পাচ্ছিনা।এ গুলো তো আনিনি আমি মাথা নিচু করে দুহাত কঁচলাতে কঁচলাতে বলল রুহী।এগুলো আমি রেখেছি। রুহীর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো রোয়েন।কি ক কি?রোয়েনের দিকে অবাক চোখে তাকায় রুহী।পাল্টা প্রশ্ন পছন্দ করিনা জানো।যা আছে পরে এসো রাগী গলায় বলল রোয়েন।রোয়েন দ্রুত পদের লাগেজের কাছে এসে সাদা নাইটি উঠিয়ে রুহীর দিকে ধরলো।যাও পরে এসো।
ছি ছি এ অনেক ছোট আমি পারবোনা।চিৎকার করে বলে মাথা নিচু করে রুহী।চিৎকার করলো সে রোয়েনের সাথে।জিভে কামড় লাগায় রুহী।রোয়েন জোর করে রুহীর হাতে ধরিয়ে দিলো নাইটিটি এটাই পরতে হবে এন্ড দ্যাটস ফাইনাল দাঁতে দাঁত চেপে বলল রোয়েন।ও ও ওকে।জামাটি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো রুহী।নাইটি টা চোখের সামনে তুলে ধরলো রুহী।ছি ছি এতো ছোট।দরজায় নক হতেই দরজা খুলে দিলো রোয়েন।রুম সার্ভিসের লোক এসেছে খাবার নিয়ে।স্যার ভালো আছেন? রোয়েনকে জিজ্ঞেস করলো লোকটা।হুম ফাইন।শুনো পাশের রুমে যে আছে তাকে কোন ভাবেই আমাদের ইনফরমেশন দিবেনা।আর এটা ও জানতে না পারে এই রিসোর্ট টা কার?দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল রোয়েন।জি স্যার।আমি আসি।লোকটা খাবার দিয়ে চলে গেলো।রোয়েন খাবার টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ালো। মেয়েটা বের হচ্ছেনা কেন?ওর যে শখ হচ্ছে বৌটাকে এভাবে দেখার।দরজায় নক করতে লাগলো রোয়েন।রুহী!!!!!পড়ে গেছো বাথরুমে?চিৎকার করে বলল রোয়েন।রুহী বারবার কাপড় টানছে ন নন না আমি ঠিক আছি।এতো ছোট জামা!!!!কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল রুহী।
কিছু হবেনা রুহী বের হও। রাগী গলায় বলল রোয়েন।র র রোয়েন!!!!অসহায় ভাবে বলল রুহী।বের হচ্ছো কি হচ্ছোনা?দরজা ভেঙ্গে দিবো একদম।রুহী ভয় পেয়ে বুক চেঁপে ধরে।ভাঙ্গলে জরিমানা করতে হবে মুচকি হেসে বলল রুহী।প্রয়োজন হবেনা।এ রুম কি এ রিসোর্ট টা আমার।ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?বের হও বলছি।রাগী গলায় বলতে লাগলো রোয়েন।রুহী আস্তে করে সামনে ফিরে দরজার ছিটকানি খুলতেই ওর হাত টেনে বের করে আনলো রোয়েন।এতো তামাশা করো কেন?রাগী চোখে তাকিয়ে বলল রোয়েন।রুহী আরেক হাতে নাইটিটা নামাতে ব্যাস্ত।রোয়েন সেটা খেয়াল করে অপর হাতটিও ধরে ফেলল।এমন অদ্ভুত কাজ করছো কেন?আমি তোমার হাসবেন্ড।আমার সামনে লজ্জা পাচ্ছো কেন?রাগী গলায় বলে উঠে রোয়েন।রুহী মাথা নিচু করে আছে।রুহী জামা ছেড়ে দিলো।রোয়েন খাটে খাবারের ট্রে নিয়ে বসে রুহীর দিকে তাকালো।নাইটি তে পুরো অন্যরকম লাগছে বৌটাকে।দেখতে একদম সাদাপরী লাগছে বটে।ভাবতেই খানিকটা হাসে রোয়েন।রুহীর দিকে আবার তাকায় রোয়েন।কি হলো আসোনা কেন?রাগী গলায় ডেকে উঠলো রোয়েন।রুহী ধীর পায়ে রোয়েনের সামনে এসে বসলো।
রোয়েন প্লেটে একটু খাবার বেড়ে রুহীর দিকে ধরলো।খাও।রুহী প্লেট হাতে নিয়ে খেতে লাগলো।রোয়েন রুহীকে পলকহীনভাবে দেখছে।ওর ভয় পেয়ে কথা গুলো রোয়েনকে পাগল করে।মেয়েটা যে এতো ভয় পায় ওকে।রোয়েন পা বাড়িয়ে রুহীর পায়ে স্লাইড করছে।রুহীর মুখে খাবার উঠছেনা।শরীর কাঁপছে।প্লেট রেখে কাশতে লাগলো রুহী।রোয়েন তৎখনাৎ পানি ধরলো রুহীর মুখের সামনে। হয়েছেটা কি তোমার?ধমক দিয়ে বলে উঠলো রোয়েন।মাথা ঝাঁকালো রুহী।খাও। মুচকি হেসে বলল রোয়েন।রুহী পা একটু সরিয়ে খাবার শেষ করলো।রোয়েন ও খাবার শেষ করে নিলো।প্লেটবাটি গুলো টেবিলের ওপর রেখে দিলো রুহী।রুহীর হাত ধরে রোয়েন উঠে দাঁড়ালো। চলো বারান্দায় যাই।মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো রুহী।রুহীর হাত ধরে বারান্দার দিকে পা বাড়ালো ওরা।সমুদ্রের শোঁ শোঁ আওয়াজে চারিদিক ভরে গেছে।রুহীকে টান দিয়ে কোলে বসিয়ে দিলো রোয়েন।রুহীর চুলে মুখ গুঁজে ঘ্রান নিতে থাকলো।রুহী পিছনে ফিরতেই ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো রোয়েন।অনেকক্ষন ধরে চুমো খেতে থাকলো রোয়েন।
পরদিন সকালে নাস্তা সেড়ে বিচে এলো ওরা।রুহী কালো ফতুয়া আর নীল প্যান্ট পরেছে। রোয়েন কালো শার্ট আর কালো জিন্স পরে আছে।রুহী সমুদ্রের কাছ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে।ঢেউ এর সাথে আসা পানি গুলো পা ভিজিয়ে দিচ্ছে ওর।রোয়েন ওর মায়াবতীর দিকে এগিয়ে এসে কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো।রুহী কিছুটা কেঁপে উঠলে ও শক্ত রাখলো নিজেকে।এভাবে বেশ কিছুদিন চলে গেল কক্সবাজারে।বেশ মজায় কেঁটে গেছে কয়েকটা দিন।রুহী আর রোয়েন প্যাকিং করছে কাল চলে যাবে তাই।কাপড় গুছিয়ে খাটে বসে আছে রুহী।রোয়েন পাশে এসে বসে রুহীর আগের আংটি টির ওপর আরেকটি আংটি পরিয়ে দিলো।রুহী রোয়েনের দিকে অবাক চোখে তাকালো।রোয়েন রুহীর নাইটির ফিতাটি আস্তে করে টেনে খুলে দিয়ে রুহীর ঠোঁটের মাঝে ঠোঁট ছোয়ালো।রুহীকে খাটে শুইয়ে দিয়ে ওর ঘাড়ে গলায় ঠোঁটের উষ্ণ পরশ বুলালো সারারাত।
পরদিন সকালে বেরিয়ে গেলো ওরা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।বিকেল নাগাদ ঢাকায় পৌছে গেল।বাসার সামনে আসতেই রুহীর চোখ কপালে উঠলো।পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে।আলোয় ঝকমক করছে বাড়িটা।রোয়েনের দিকে তাকালো রুহী। এ এসব কি?আমার মাথা। ভিতরে চলো।রাগী গলায় বলে উঠলো রোয়েন।রুহী মুখ গোমরা করে ভিতরে এলো রোয়েনের সাথে।ভিতরে এতোটাই সুন্দর সাজানো হয়েছে চেনাই যাচ্ছেনা।হঠাৎ কোথা থেকে দুজন মেয়ে রুহীকে টানতে টানতে রোয়েনের চেঞ্জিং রুমে নিয়ে এলো।আরে কি করছেন কি আপনারা?অবাক হয়ে বলল রুহী। ম্যাডাম স্যারের আদেশ একটা মেয়ে বলে উঠলো।আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসছি রুহী বলে উঠলো।ওকে ম্যাম দুজনে মাথা নিচু করে বলল।রুহী রুমে এসে রোয়েনকে পেলোনা।রুহী ফ্রেশ হয়ে মেয়ে গুলোর কাছে চলে এলো।
এদিকে
রোয়েন নিজপর দলের এক লোককে খুব মারছে।লোকটার নাক মুখ বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।লোকটার গলা টিপে ধরলো আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার পরিনাম মৃত্যু হয়।লোকটিকে নিচে ফেলে তার কপালে বন্দুক ঠেকালো রোয়েন।স্যার প্লিজ মাফ করে দিন লোকটা হাত জোড় করে বলতে লাগলো।রোয়েন কিছু না বলে দু তিনবার শুট করলো।লোকটার নিথর দেহ পড়ে আছে।কক্সবাজার থেকে আসার পথে রোয়েন খবর পেয়েছিলো রুহান আসলামের ছেলে ও তার দলবল বিয়ে বাড়িতে কর্মী হিসেবে ঢুকে সবাই কে মারার চিন্তা করছে।রোয়েন ফোন বের করে কাউকে কল দিলো।হ্যালো!!!!
জি স্যার।
ওদের লোকদের খবর দাও বিয়ে আমার গুলশানের বাসায় হচ্ছে।
জি স্যার।
আর রিমোট কন্ট্রোল বোমা ফিট করে রাখবে।ওরা ভিতরে ঢুকলে বেরিয়ে আসার ট্রাই করবে।তখনই তোমার কাজ হবে সবাইকে উড়িয়ে দেয়া।
জি স্যার।
রোয়েন ফোন কেঁটে পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো।
রুহীকে হলুদ লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে।পুরো লেহেঙ্গায় ভারি কাজ।ওর চুল গুলো স্প্রিং করে একপাশে রাখা হয়েছে।রুহী ফোন বের করে রোয়েনকে কল দিতেই খেয়াল করলো ফোন বন্ধ।রুহীর এবার ভয় হচ্ছে কখনো তো ফোন অফ থাকেনা।তাহলে আজ কেন।
মেয়ে গুলো রুহীকে হলুদ ফুলের অর্নামেন্টস দিয়ে সাজিয়ে দিলো।রুহী বারবার কল দিচ্ছে রোয়েনের নম্বরে কিন্তু বারবার বন্ধ আসছে।কিছুক্ষন পর আনিলা বেগম অবন্তী রুমে এসে ঢুকলো।রুহী অবন্তীকে দেখে উঠে জড়িয়ে ধরলো।অবন্তী রুহীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল জানিস আজ কি?
কি?রুহী সরে এসে প্রশ্ন করলো।
তোর হলুদ।
হ্যা!!!!অবাক হয়ে।
হুম।হাসলো অবন্তী।চল স্টেজে।রুহীকে স্টেজে নিয়ে এলো আনিলা বেগম ও অবন্তী।রুহীর চোখ জোড়া সব মানুষের মাঝে রোয়েনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।এখনো হলুদ লাগানো শুরু হয়নি।রুহীর চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে আসছে।ঠিক সেই মুহূর্তে ব্যান্ড বাজার শব্দ হলো।ঢাক ঢোল ব্যান্ড বাজছে।রুহী ছাড়া সবাই জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো। রোয়েন সাদা পাঞ্জাবী পরে বাসার দিকেই আসছে।পিছনে সব ব্যান্ড বাদকরা।রোয়েন ভিতরে ঢুকে।মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুঁটে উঠেছে ওর।হাসি দিয়েই রুহীর দিকে আসছে।
রোয়েনের এ মন মাতানো হাসি রুহীর ভীষন ভালো লাগছে।রোয়েন রুহীর কাছে এসে দাঁড়ালো।হাতে একটু হলুদ নিয়ে রুহীর দিকে ঝু্ঁকলো।রুহীর গালে আর নাকের ডগায় হলুদ লাগিয়ে বলল My Gorgeous Bride Mrs Ruhi Royen Ahmed.
চলবে