My_Mafia_Boss পর্ব-৪১

0
5498

My_Mafia_Boss পর্ব-৪১
Writer:Tabassum Riana

রোয়েন রুহী থেকে সরে আসে।বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে আফজাল সাহেবের দিকে তাকায় রোয়েন।আফজাল সাহেব আনিলা বেগমকে খুব জোরে চড় দিলো।এতো টা নিচে নেমে যাবি ভাবতেই পারিনি।আজ থেকে তোর জন্য আমার বাসার দরজা বন্ধ। যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যা।মা তুমি কিভাবে করতে পারলা এতো বাজে কাজটা?তোমাকে মা বলতে ও ঘেন্না লাগছে।তোমার কোন মেয়ে ছিলো ভুলে যেও।চলো নুহাশ।অবন্তী স্বামীর হাত ধরে বেরিয়ে গেল।আফজাল সাহেব ও উঠে চলে গেলেন।আনিলা বেগম রুহীর দিকে মুখ ভেঁংচিয়ে বেরিয়ে গেলেন।ওনারা উঠে চলে গেলেন।রুহী চুপিচুপি উঠে সিড়ির দিকে এগোতেই ওর হাত চেপে ধরলো রোয়েন। রুহী চোখ বড় করে ফেলেছে।রোয়েন একটানে রুহী কে নিজের কাছে টেনে নিলো।

রাগে ফুঁসছে রোয়েন।রুহীর হাত পিছনে চেপে ধরে রেখেছে রোয়েন। এমন কিছু করবি বিশ্বাস হয়নি আমার?কি করে এতো অবিশ্বাস করলি?এতো ভালোবাসা এতো কিছু তোর কাছে কোন দাম নাই না?মামীর একটা কথা শুনে কি করে বিশ্বাস করলি?একটা বার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলি না?রায়ান যে সবসময় তোকে খারাপ নজরে দেখছে তোকে বাজে ভাবে টাচ করার চেষ্টা করেছে তাকে ঠিকই বিশ্বাস করেছিস।কিন্তু যে তোকে মামীর হাত থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে।তোর মামী ৫০,০০০টাকার বিনিময়ে তোকে রায়ানের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছে।সেদিন যদি ওনাকে টাকা না দিতাম আজ ঐ লোক গুলো কি করতো তোর সাথে ভাবতেই পারবিনা।তোর জন্য এতো কিছু করার পর ও একটা মুহূর্তের জন্য বিশ্বাস করতে পারলিনা।নিজের করে নিতে যেয়ে ও তোকে জিজ্ঞেস করেছি।পড়া শুনা থেকে শুরু করে সেলাই পর্যন্ত শিখিয়েছি।যেভাবে বলেছিস সেভাবে করেছি।আসলে তুই ভালবাসার যোগ্য না। চিৎকার করে কথা গুলো বলছিলো রোয়েন। রুহীর দুচোখ ভরে এসেছে।রুহীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল রোয়েন।রুহী স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ঠিকই তো বলেছে রোয়েন।একবার জিজ্ঞেস করলে কি হয়ে যেতো?রুহী ধুপ করে নিচে বসে পড়েছে।পালিয়ে গিয়ে কি ভুল করেছে রুহী বুঝতে পারছে।কিছুক্ষন বসে থাকার পর চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো রুহী।সিড়ির দিকে এগোলো।

রোয়েন রুমে এসে ফোন নিয়ে বের হতেই রুহীর সামনে এসে পড়লো।কিছু না বলেই রুহীকে পাস করে বেরিয়ে গেলো রোয়েন।গাড়ির সামনে এসে জানালায় খুব জোরে হাত দিয়ে বাড়ি দিলো রোয়েন। কাঁচ ভেঙ্গে হাতে ঢুকে গেছে।ফিনকি দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে রোয়েনের।গাড়ি খুলে ভিতরে ঢুকে বসলো রোয়েন।গাড়ি স্টার্ট দিতেই চলতে শুরু করলো।অজানার পথে পাড়ি দিলো রোয়েন।রুহী রোয়েনের রুমে এসে পা রাখতেই বুকের ভিতর কেন উথালপাতাল শুরু হয়প গেছে।কতোদিন পর এ রুমে এসেছে ও। রোয়েনের ব্যাবহৃত প্রত্যেকটা জিনিস কে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে রুহী।চোখের কোনা বেয়ে গাল থেকে গড়িয়ে পড়া অশ্রু গুলো রুহীর জামার বেশির ভাগ অংশ ভিজে গেছে।দ্রুত পাশের রুমে চলে এলো রুহী।বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করলো চোখ জোড়ায়।

রোয়েন ফুল স্পিডে গাড়ি চালিয়েছে আজ।ঘরের সামনে এসে গাড়ি থামালো রোয়েন।খুব ক্লান্ত লাগছে আজ।গাড়ি থেকে বেরিয়ে বাসায় ঢুকলো রোয়েন।কাজের লোকগুলোকে ডেকে বলল ম্যাম নাস্তা খেয়েছে?(রাগী গলায়)না স্যার।রোয়েন রাগী চোখে রুহীর রুমের দরজার দিকে তাকালো।দ্রুত সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই কল এলো রোয়েনের ফোনে।ফোন বের করে দেখলো আফজাল সাহেব কল করছেন।হ্যালো মামা বলুন।
বাবা একটু কথা ছিলো।যদি ব্যাস্ত না থাকো তাহলে বলতে পারি।

বলুন।রোয়েন বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।

বাবা জানি রুহীর কাজে খুব কষ্ট পেয়েছো তুমি।পাওয়ারই কথা।কিন্তু রুহীর দিকটা খেয়াল করো। ও ছোট বেলা থেকে অনাদরে বড় হয়েছে।ওর মামীর কারনে ওকে অনাথ আশ্রমে রেখে আসতে হয়েছে।সব সময় অবহেলা অনাদরে থেকেছে বাচ্চাটা।কতোটুকু বয়স হয়েছে বলো?এই বয়সে কতো কিছু সহ্য করেছে।তার মধ্যে তুমি ওর জীবনে আসছো।ওকে সংসার করতে বলেছো।কিতু একটা বার ও জানতে চাওনি ওর পছন্দ অপছন্দের কথা।আমাদের যা বুঝের বয়স হয়েছে ওর কিন্তু হয়নি।ওর জন্য তুমিই সব।তুমি ওকে আমার থেকে ভালো বুঝো।প্লিজ বাবা ওর ভুল গুলো কে বড় করে দেখে কষ্ট দিওনা মেয়েটাকে।

হুম।আমি চেষ্টা করবো।ফোন কেঁটে দিলো রোয়েন।পাশের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো রোয়েন।ঘুমোচ্ছে রুহী।বালিশের কোনার বেশ কিছু অংশ ভিজে আছে চোখের পানিতে।রোয়েন মায়াবতীকে কোলে তুলে নিলো।রুহীর মাথা নিচে ঢলে পড়ে আছে।রোয়েন রুমে চলে এলো রুহীকে নিয়ে।খাটে শুইয়ে কম্বল টেনে দিলো।সেদিন আর বুকে টেনে নেয়নি মায়াবতীকে।তবে সারারাত মায়াবতীকে দেখেই কাঁটিয়ে দিয়েছে রোয়েন।পরদিন সকালে রুহীর ঘুম ভাঙ্গতেই রোয়েনের রুমে আবিষ্কার করলো।ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো রুহী।আশেপাশে তাকিয়ে রোয়েনকে খুঁজতে লাগলো রুহী।সে তো রুমে নেই।রুহী খাট ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। পাশে ছোট্ট একটা চিরকুট পড়ে আছে।রুহী কাগজ টি হাতে তুলল।”স্কুলের জন্য তৈরি হয়ে নাও”রুহী পাশের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।স্কুলের জন্য তৈরি হয়ে নিচে নেমে এলো রুহী।রোয়েন ডাইনিং টেবিলে বসে নিউজপেপার পড়ছে।রুহী টেবিলের কাছে যেতেই এক গ্লাস দুধ আর একটা সিদ্ধ ডিম এগিয়ে দিলো রোয়েন।নিউজপেপার দেখতে দেখতে বলল জলদি শেষ করো।বের হতে হবে।আ আপ আপনি খা খাবেননা?মাথা নিচু করে প্রশ্ন করলো রুহী।

আমারটা ভাবতে হবেনা।বলেই উঠে পড়লো রোয়েন।রুহী অসহায় চোখে রোয়েনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।চোখ মুছে উঠে পড়লো রুহী।রোয়েন গাড়িতে ঢুকে বসে আছে।রুহী যেতেই দরজা খুলে দিলো।সেদিন আর রুহীর হাত গিয়ারের ওপর রেখে ড্রাইভ করে নি রোয়েন।রুহীকে স্কুলে পৌছে দিয়ে বেরিয়ে গেলো রোয়েন।রুহী ক্লাশে চলে গেল।স্কুল ছুটি হওয়ার পর রোয়েনের জন্য অপেক্ষা করছিলো রুহী।গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে রুহী।এক কালো কোট পরিহিত মাঝবয়স্ক লোক গাড়ি থেকে বেরিয়ে রুহীর দিকে এগোলো।

তুমি রুহী না?লোকটি জিজ্ঞেস করলো।
রুহী একটু সরে যেতেই লোকটি ওর কাছে এগোলো।ভয় পেওনা আমাকে।আপনাকে চিনি না আমি।প্লিজ সরে যান।আফজাল ইসলাম তোমার মামা না?

লেকটির কথায় বেশ অবাক হয় রুহী।জি আপনি কি করে জানলেন?

তোমার মায়ের নাম রেহানা ইসলাম।

জি।

রুহী আমি তোমার বাবা।রুহান আসলাম।

আমার বাবা নাই।প্লিজ চলে যান।

প্লিজ মা আমার কথা শোন।জানি অনেক রেগে আছিস।কিন্তু আমি বাধ্য হয়ে চলে এসেছি।

মা মরে যাওয়ার সাথে সাথে বিয়ে করেছেন।আর বলছেন বাধ্য ছিলেন আপনি?চিৎকার করে বলল রুহী।

আমার হাতে টাকা পয়সা ছিলো তোকে রাখার মতো।তোর মামা ধনী ছিলেন তাই রেখে এসেছিলাম।কিন্তু আনিলা ভাবি এমনটা করবেন ভাবতেই পারিনি।তুই বাবার সাথে চলে আয়।

কখনোনা।আমার নিজের সংসার আছে।কি করে আপনার আসবো?কেন আসবো?

আমি তোকে অনেক সুন্দর জীবন দিবো।আমার অনেক টাকা আছে মা।

লিসেন রুহান আসলাম।আমি আমার বর আমার সংসার ছেড়ে কোথা ও যাবোনা।

তোমার বরের নাম কি?কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন রুহীর বাবা।

রোয়েন আহমেদ।

ওহ টাইগার গ্রুপের লিডার সে।পাওয়ারফুল মাফিয়া গ্রুপ।Bloody Bastard Royen.

রোয়েন আপনার জন্য যাই হোক সে আমার হাসবেন্ড।তার নামে কিছু শুনতে চাইনা।রুহী সামনে এগোতেই রোয়েনের গাড়ি দেখতে পেলো।কিন্তু আজ রোয়েন ড্রাইভার পাঠিয়ে দিয়েছে।
রুহীকে আসতে দেখেই ড্রাইভার বেরিয়ে এলো।ম্যাম স্যার একটা মিটিংয়ে আছেন।আসতে এতো লেট হলো আপনার?
দেরিতে ছুটি হয়েছে তাই বলে উঠলো রুহী।ওহ চলুন ম্যাম।ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই ভিতরো ঢুকে বসলো রুহী।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে