My_Mafia_Boss পর্ব-৩৭
Writer:Tabassum Riana
রুহী শাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।রোয়েন রুহীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।মায়াবতী আজ ওর হয়ে যাবে ভাবতেই ভীষন ভালো লাগছে রোয়েনের।মায়াবতীকে যে কতোটা ভালবেসে ফেলেছে বুঝতেই পারেনি।ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠে রোয়েনের।উঠে দাঁড়িয়ে কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল রোয়েন।রুমে ঢুকতেই অবন্তী বলে উঠলো তোকে আর রোয়েন ভাইকে দেখলে মনে হয় বাচ্চা কোন মেয়েকে বিয়ে করছে রোয়েন ভাই।কি পরবি তা ও জিজ্ঞেস করলি।রুহী মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো।ওনি পছন্দ করে শাড়ী লেহেঙ্গা কিনেছিলেন তাই ওনাকেই জিজ্ঞেস করলাম রুহী বলে উঠলো।অবন্তী একগাল হেসে বলল ভাইয়া কই?ওনি রুমেই তো আছেন।ওহ অবন্তী সাজে মনযোগ দিলো।পার্লারের মেয়েরা রুহী কে সাজাতে বসেছে।কেউ চুল ঠিক করছে আর কেউ মেকআপ করছে।আনিলা বেগম সেই কতক্ষণ ধরে গজগজ করছে আফজাল সাহেবের কানের সামনে।কখন বাসায় যাবে তা নিয়ে আফজাল সাহেবের মাথা খেয়ে ফেলছিলো।
আফজাল চুপচাপ উঠে রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলেন।বিরক্ত লাগছে তার।বাহিরে সিগারেট ধরিয়ে ঘন ঘন টান দিতে থাকলেন।নুহাশ মেরুন কালারের শেরোয়ানী পরে গেস্টদের সাথে গল্প করছে।আফজাল সাহেব ও আর দেরি করলেননা।খাওয়ার ওদিকটায় চলে গেলেন।রোয়েন চকোলেট কালারের একটি শেরওয়ানি পরেছে।চুল গুলো কে আচড়ে পাগড়ি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে।মায়াবতী কে নিশ্চয়ই পুতুলের মতো লাগছে।আজ খুব ভালবাসবে ওর মায়াবতীকে।আর কষ্ট দিবেনা।
রুহীকে সাজানো শেষ করে গহনা পরিয়ে দিচ্ছে মেয়ে গুলো।অবন্তী রুহীর সামনে আয়না ধরলো।রুহী নিজের থেকে চোখ ফিরাতে পারছেনা।আসলে কি ও নিজেই নাকি অন্য কেউ।রুহী এখানে বস।ভাইয়ার কাছে চলে যাইসনা বলে অবন্তী পার্লারের মেয়ে গুলো কে নিয়ে নিচে চলে গেল।রুহী নিজের চুড়ি গুলো কে ধরে ধরে দেখছে।আজ সে রোয়েনের বৌ হবে।লাল মরিচ টা ওর বর হয়ে যাবে।ঠোঁট টিপে হাসছে রুহী।হঠাৎ পাশ থেকে কারোর ফোনে কথা বলার আওয়াজ শুনতে পেল রুহী।সে আর কেউ নয় আনিলা বেগম নিজেই।রুহীর চোখ জোড়া ভিজে এলো।আরে রাজি হইতাম নাকি রোয়েন আমারে পাঁচ লাখ টাকা দিছে রুহীরে বিয়া করনের লাইগা বলেই হো হো করে হাসতে শুরু করলেন আনিলা বেগম।রুহী মুখে হাত চেপে ধরে কাঁদছে।ভাবতেই পারেনি রোয়েন এমন করবে।ওকে কিনে এনেছে রোয়েন।এতোদিন যা ছিলো সব অভিনয়?ভাবছিলো ভালবাসে ওকে কিন্তু মিথ্যা সব মিথ্যা হয়ে গেল।এই বিয়ে এই ভালবাসা মিথ্যা হয়ে গেল।জোরে চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে রুহীর।চোখ জোড়া বেয়ে অনবঅনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।রুহী দুইহাতে চোখ মুছে জানালা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো রোয়েনকে।রুমে নেই সে।এ বিয়ে করতে পারবেনা রুহী।নিজের জীবন কে এভাবে শেষ করতে পারবেনা।অবন্তী!!!আফজাল সাহেব ডেকে উঠলেন।জি বাবা!!! রুহী কে ডেকে আন।জি যাচ্ছি। অবন্তী সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল।রোয়েন কে আলাদা এক রুমে বসানো হয়েছে। কাজী ও চলে এসেছে।হঠাৎ রুম থেকে অবন্তীর চিৎকার ভেসে এলো রুহী!!!!
অবন্তী চিৎকার করে করে নিচে নেমে এলো।অনবরত কাঁদছে ও।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে অবন্তী।রোয়েন ও দৌড়ে এলো। কি হয়েছে????রোয়েন অবন্তীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।রোয়েনের দিকে তাকাতে পারছেনা অবন্তী ভীষন ভয় করছে ওর।সবাই জিজ্ঞেস করছে কিন্তু অবন্তীর ভীষন ভয় হচ্ছে।অবন্তী কি হয়েছে? রুহী কই?নুহাশ অবন্তী ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।রুহী!!! রুহী নেই।রোয়েন রাগী চোখে অবন্তীর দিকে তাকালো।কি বলছেন এসব?সবাইকে সরিয়ে রোয়েন সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যেতে লাগলো।পা চলতে চাইছে না রোয়েনের।সিড়ি গুলো কে খুব বেশি বড় মনে হচ্ছে ওর।রুহী নেই!!!! ভাবতে পারছেনা রোয়েন।মায়াবতী ওকে ছেড়ে যেতে পারেনা।বড্ড বেশি ভালবাসে মায়াবতীকে।খুব কষ্টে উঠে এলো রোয়েন।রুহীর রুমে এসে দেখলো শাড়ী গয়না পড়ে আছে কিন্তু রুহী নেই।সব জায়গায় খুঁজলো রোয়েন কিন্তু নেই।মাথা কাজ করা বন্ধ করেছে ওর।ফ্লোরে বসে পড়লো রোয়েন।রুহী!!!!!!বলে জোরে চিৎকার করলো।
যতো জোরে পারছে দৌড়াচ্ছে রুহী। পথ যেন শেষ হচ্ছেনা।রোয়েনের বাসা থেকে বেশ দূরে চলে এসেছে ও।দৌড়ানো বন্ধ করেনি রুহী।এক হাতে চোখ মুচ্ছে। বুকটা যেন ফেঁটে যাচ্ছে।মনে খুব মূল্যবান খুব প্রিয় কিছু ফেলে এসেছে।চোখের সামনে রোয়েনের সাথে কাঁটানো সুন্দর মুহূর্ত ভেসে উঠছে।রোয়েনের ভালবাসা সত্যি হোক মিথ্যা হোক রুহীর জন্য সত্যি আর খুব আনন্দের ছিলো।রোয়েন যা করেছে ওর জন্য অনাথ আশ্রমের বাকি সবার জন্য তার জন্য রোয়েনের প্রতি
কৃতজ্ঞ থাকবে চিরদিন।ভাবছিলো রুহী হঠাৎ কেউ যেন হাত টেনে ধরলো পিছন থেকে।রুহী চোখ বড় করে ফেলেছে।মাথায় রোয়েন ছাড়া আর কারোর চিন্তা আসছেনা রুহীর।কই যাও রুহী পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো।কন্ঠটা পরিচিত না হলে ও অপরিচিত ও না।রুহী পিছনে ফিরে। রায়ান দাঁড়িয়ে আছে।রুহী রায়ানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।কই যাচ্ছো তুমি? রায়ান আবার ও জিজ্ঞেস করে উঠলো।যেখানে ইচ্ছে সেখানে বলে রুহী সামনে ফিরে হাঁটতে যাবে তখনই রায়ান বলে উঠলো মেয়ে মানুষ এভাবে দৌড়াচ্ছো কেন রাস্তা দিয়ে?ভালো দেখাচ্ছেনা।আমার সাথে চলো বলে রায়ান রুহীর হাত ধরার জন্য হাত বাড়ালো।রুহী একটু সরে এলো আপনার সাথে কোথা ও যাবোনা।জানি আগের কাজ গুলোর জন্য বিশ্বাস করতে পারছোনা।কিন্তু বাসায় আমার বাবা মা আছে।তুমি সেফ থাকবে।এক নাগাড়ে বলে ফেলল রায়ান।(ওনার বাবা মা থাকলে থাকা যাবে।আর ওনি ও কোন ঝামেলা করতে পারবেন না।)ভাবলো রুহী।সত্যি আপনার বাবা মা আছে তো?হ্যা আছে।তাহলে চলুন।রুহী রায়ানের গাড়িতে উঠে বসলো।
রোয়েন পুরো রুমটাকে দেখে নিলো।চোখ পুরো লাল হয়ে গেছে ওর।রুহীর রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে এলো রোয়েন।কতো সুন্দর করে সাজিয়ে ছিলো।ফুলে রুহীর নাম লিখেছিলো মনের কথা বলে দিবে বলে।রোশেন ফোন বের করে কল দিলো।রুহী ভেগে গেছে যেখান থেকে পারো নিয়ে আসো বলে ফোন কেঁটে দিলো রোয়েন।কপালের রগ খাড়া হয়ে গেছে ওর।
অবন্তী কাঁদছে নুহাশ স্বান্তনা দিয়ে চলছে।বুঝতে পারছিনা কই চলে গেল রুহী। রাজী না থাকলে বলতে পারতো।এভাবে কই চলে গেল?যদি কিছু হয়ে যায়?উফ কই গেল মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলল অবন্তী।
রুহীকে নিয়ে রায়ান একটা বাসায় এলো।পুরো খালি বাসা কেউ নেই।রায়ানের দিকে তাকিয়ে রুহী বলল আপনার বাবা মা কই?সরি আমার বাবা মা খালার বাসায় গেল।কাল চলে আসবে চিন্তা করোনা।মাথা ঝাঁকালো রুহী।রুহীকে রুমে দিয়ে রায়ান বেরিয়ে গেল।
রুহী ফ্রেশ হয়ে খাটে বসলো।সে কোন ভুল করলো না তো?এমন লাগছে কেন ওর?রোয়েন নিচে নেমে এলো।চোখ লাল হয়ে আছে ওর।আফজাল সাহেব রোয়েনের কাছে এগিয়ে এলেন।বাবা মাফ চাচ্ছি রুহীর পক্ষ থেকে।মাফ চাইতে হবেনা।রুহী ওর ভুলের শাস্তি পাবে এবং চরম ভাবে শাস্তি দিবো ওকে।ভাবতে ও পারবেনা কি ভুল করেছে ও।হাত মুঠ করলো রোয়েন।আপনার চলে যান।একটু একা থাকতে চাই আমি শক্ত মুখে বলল রোয়েন।কিন্তু বাবা!!আফজাল সাহেবকে থামিয়ে দিলো রোয়েন। আমি থাকতে পারবো প্লিজ চলে যান।
অাফজাল সাহেব মাথা ঝাঁকিয়ে অানিলা বেগমকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।সব মেহমানরা একে একে চলে গেল।রোয়েনের চোখের কোনে পানি জমে আছে।পড়ার অপেক্ষা করছে।কিন্তু রোয়েন কাঁদবেনা।যে ভালবাসার মূল্য দিতে পারেনা তার জন্য কেন কাঁদবে?
রুহী শুয়ে আছে।চোখের কোনা বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।ভালবেসে ফেলেছে ও রোয়েনকে।
চলবে