মোরগ-মুরগির প্রেমলীলা
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
মানুষ বাড়ি থেকে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যায়। আর আমার মতো যারা দীর্ঘ দিন ধরে হোস্টেলে থাকে তারা বাড়িতে বেড়াতে যায়।
ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি আমাদের বাড়িতে দেশি মুরগি বা মোরগ জবাই করা হয়। সেবার বাড়িতে গিয়ে মোরগ আর মুরগির একটি জুটির দিকে আমার চোখ আটকে গেল।
মুরগিটি আমাদের হলেও মোরগটি ছিল পাশের বাড়ির। লক্ষ্য করলাম, মোরগটি সব সময় বডিগার্ডের মতো মুরগিটির পিছনে লেগে থাকে। মুরগিটি যেখানে যেত মোরগটিও সেখানে যেত। মোরগটি কক কো শব্দ করে খাবারে ঠোক দিত। আর মুরগিটি সেই খাবার খেত। এ যেন প্রেমিকাকে পটানোর এক দারুণ পন্থা। মাঝেমধ্যে তারা মিলিত হয়।
কখনো কখনো মোরগটি অন্য মুরগির সঙ্গে মিলিত হলেও আবার ফিরে আসত। প্রেমিকের এমন কীর্তিতে প্রেমিকা মুরগির তেমন কোনো প্রতিবাদ দেখা যেত না। তা যেন স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু মুরগিটির কাছে যদি অন্য কোনো মোরগ আসার চেষ্টা করত তাহলে তার নিস্তার ছিল না। প্রেমিক মোরগ সেই মোরগকে অনেক দূরে তাড়িয়ে দিয়ে আসত।
মানুষের ক্ষেত্রে মেয়েদের বৈশিষ্ট্য মুরগিটির মত না হলেও ছেলেদের ক্ষেত্রে মোরগটির বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়।
মোরগ-মুরগির এমন বৈশিষ্ট্য অনেকেই স্বাভাবিক ভাবলেও আরেকটি বৈশিষ্ট্যে অবাক হয়েছিলাম, যা আগে কখনো দেখিনি। তা হলো, মোরগটি সাধারণত আমাদের বাড়িতে আসত না। কিন্তু যখন মুরগিটি ডিম দিতে বাড়িতে আসত তখন প্রেমিক মোরগও আসত। মুরগিটি যেখানে ডিম দিতে বসত তার পাশে সে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে থেকে থেকে হাপিয়ে গেলে বসে পড়ত। মোরগটিকে তাড়ানোর চেষ্টা করলে সে যেতে চাইত না।
বেশি তাড়ানোর ফলে মোরগটি চলে গেলে মুরগিটিও তার সঙ্গে যেত। এ যেন প্রেমিককে আসতে না দেয়ার জন্য মুরগির নীরব প্রতিবাদ। আমার প্রেমিককে থাকতে না দিলে আমিও তোমাদের ডিম দেব না –
মুরগিটি যেন এ কথাই বলতে চাইত। তাই কেউ আর মোরগটিকে তাড়াত না।
মোরগ-মুরগির এমন প্রেমলীলা দেখে আমি মুগ্ধ হলাম। আমি ভাবতাম, এদের মধ্যে কত ভালোবাসা!
এ জুটির প্রেমলীলা আর কত দিন চলবে? মুরগিটি যখন বাচ্চা ফোটাবে তখন কি মুরগিটির সঙ্গে বা বাচ্চাগুলোর সঙ্গে এই বাবা মোরগ থাকবে?
সার্থক হোক মোরগ-মুরগির প্রেমলীলা সেই কামনা করি।
#মোরগ-মুরগির প্রেমলীলা