MEANINGLESS LIFE PARTNER Part-2+3

0
2416

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER
2&3
পর্ব :2
#লেখিকা_Arshi_khan

(Protective husband)

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি আমার লুঙ্গির অর্ধেক কে রুত কাথা বানিয়ে ঘুমাচ্ছে। বাকি অর্ধেক কোন রকম আমার শরীরে পেঁচিয়ে আছে।এখন ও যদি উঠে কোন ভাবে এই অবস্থা দেখে পুরো গ্রাম এই খবর পৌঁছে যাবে দাবানলের মত।তাই নিজের ইজ্জত যাওয়ার পূর্বেই আমাকে কিছু করতে হবে।আমি আস্তে করে ওর থেকে লুঙ্গির অংশ ছাড়িয়ে তাড়াতাড়ি দাড়িয়ে পড়ে নিলাম। এ জীবনে ওর পাশে ঘুমালে লুঙ্গি না পরে ঘুমানোর শপথ করলাম। বাবা রে একটুর জন্য মান সম্মান বেঁচে গেল ভাবতেই মন থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল।আমি খাটের আরেক কোনার থেকে সেন্টো গেঞ্জি নিয়ে পড়তে পড়তে একহাতে ছাই নিয়ে দাঁত মাঝতে লাগলাম আর হেঁটে পুকুরের দিকে চলে আসলাম।এখন বাজে সকাল সাতটা মেজ চাচি তাদের এটো থালা বাটি ধুতে এসেছে।আমাকে দেখে কেন জানি তার মন খারাপ হয়ে গেল। সেদিকে আমি নজর না দিয়ে বাধা গাটে বসে মুখ ধুয়ে নিলাম। একটু পর আসতে হবে আজকে আমরা বন্ধুরা মাছ মেরে পিকনিক করব।আমি মুখ ধুয়ে মুখ ভর্তি পানি কুলকুলি করতে করতে বাড়ির দিকেই ফিরছিলাম।হঠাৎই সামনে খেয়াল না করে মুখের পানি মেরে দিলাম। কিছুক্ষণ এর মধ্যেই হঠাৎই ছোট বাবা গলা খাকারী দিয়ে চিৎকার করে আমার দিকে তেড়ে আসল।আমি ভয়ে কাচুমাচু করতে লাগলাম। কারণ বাড়ির মধ্যেই একমাত্র ছোট বাবাকেই আমি ভিষন ভয় পাই।
আসলে আমি তোমাকে খেয়াল করি নাই।(আমতা আমতা করে আয়ান)

কেন চোখ কি হাতে নিয়ে হাটিস নাকি ব্যাটা ফাজিল?বিয়ে করে বাড়িতে বউ এনে নিজেকে বড় মনে করছিস নাকি!(চিৎকার করে ছোট বাবা)

কিসের মধ্যেই কি পান্তা ভাতে ঘি?সাইকো কোথাকার!এমন আরো শখানেক গালাগালি সারা শেষ মনে মনে তার ভাষণ শেষ হয়না।আমি চুপচাপ দাড়িয়ে সবটা হজম করছি।প্রায় মিনিট পনের হবে তার কথা শোনানোর কিন্ত মনে হচ্ছে আজকে সারাদিন তার রেশ কাটবেনা।এইদিকে খুদের বউয়ার ঘ্রাণ নাকে এসে খুদা বাড়িয়ে তুলেছে।হঠাৎই দাদি এসে আমাকে টেনে নিয়ে গেল।
থ্যাঙ্কস বুড়ি তোমার সাইকোর থেকে বাঁচানোর জন্য। কি খেয়ে এই সাইকো কে পয়দা করছিলা আল্লাহ মালুম?(বেসামাল ভাবে বলেই যাচ্ছি আয়ান)

কি বললি দাদু ভাই?(চোখ রাঙিয়ে দাদি)

কোই কি বললাম?(মাথা চুলকে দাদির উদ্দেশ্য আয়ান বোকা হেসে)

আমি তো আর তোর দাদার মতো কানে কালা না যে কিছু বলবি আর আমি শুনতে পাব না।দেখ দাদুভাই আমার ছোট ছেলের একটু রাগ বেশি তাই বলে তুই ওকে পাগল বলবি এটাতো আমি মানবনা।আর তাছাড়া ও যদি একবার একথা শুনে তোরে পুকুরের পানিতে চুবাইবো।আর দোষ কিন্তু আজকে তোর ছিল দাদুভাই। পোলাটা আমার বাজারে যাইব সেই সময়ই তুই তোর মুখের পানি ওর উপর ফেললি এটা কি ঠিক?(দাদি আয়ান এর হাত ধরেই )

আহ বুড়ি যাও তোমার বুড়ার কাছে আমাকে এত্ত ঝারতে হবেনা।ছেলের থেকে বাঁচিয়ে এনে আবার নিজে শুরু করছে।
বলেই নিজের ঘরের দিকে চলে আসলাম। যাতা একদম যাতা অবস্হা। এই বাড়ির সবার এই আমার জন্য যেমন দরদ উতলে পড়ে আবার বকা দেওয়ার সময় ও সবাই আমাকেই খুজে পায়।রুমে এসে দেখি রুত উঠে গেছে।ও চোখ ঢলতে ঢলতে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে। আমি ওর এই তাকানোর মানে বুঝলাম না তবে ঘরে ঢুকতেই নাকে একটা গন্ধ আসল।আমি ভাবলাম আমার রুমের বাইরের বাথরুম থেকে গন্ধ আসছে।তাই গিয়ে গেট বন্ধ করে রুমে আসলাম। না তাও গন্ধ আসছে।আমি রুত এর দিকে আবার তাকাতেই ও কান্না করে দিল।
কি হল রুত কান্না করছ কেন?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য চোখ ছোট করে)

ভ্যা ভ্যা আমার আম(কান্নার জন্য কথা বলতে পারছেনা রুতবা)

আম কি হয়েছে?(আয়ান ব্রু কুচকেই)

আমার আম হিসুর মধ্যেই চলে গেছে এ্যা।(কান্নার আওয়াজ বাড়িয়ে রুতবা)

হিসুর মধ্যেই পড়ছে আবার এনে দিব কান্না করার কি এই ওয়েট তুমি কি কোন ভাবে আমার বিছানার মধ্যেই হিসু করছ নাকি!(চোখ বড় করে আয়ান হালকা চিৎকার করে)

আমি তো দেখলাম আমাদের বাথরুমে হিসু করছি কিন্ত উঠে দেখি তোমার বিছানার মধ্যেই হিসু করে দিছি।কিন্ত আমার আমটা আমার পিঠের নিচে পরে ছিল। আমি আম টা খাব কিভাবে?(কান্না করে রুতবা আমের দিকে তাকিয়েই)

রুতবাআহহহহহহহহহহ আম্মু আম্মু কোথায় তুমি?(চিৎকার করে আয়ান গেটের সামনে এসে )

কি হয়েছে এভাবে চিৎকার করছিস কেন বাবা?(আম্মু পাকের ঘর থেকে দৌড়ে এসে আয়ান এরহাত ধরেই)

তোমার গুনোধর বউ আমার বিছানার মধ্যেই হিসু করে দিছে।(চিৎকার করে আয়ান)

তো কি হয়েছে উঠোনে তশোক রোদ দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।আর চাদর ধুয়ে দিলেই হবে।এত্ত চিৎকার করার কি আছে এতে।আজকে মেয়েটা চলে যাবে।আবার কবে আসে ঠিক নেই এমন চিৎকার করে ওকে ভয় পাইয়ে দিলে আর আসতে চাইবে কোনদিন বল বাবা?(আম্মু আয়ান এর হাত ধরেই বুঝিয়ে)

উফফ ভাল লাগেনা। আমি গেলাম মাছ মারতে তুমি থাক তোমাদের আদরের বউ কে নিয়ে।
বলেই উঠোন থেকে জাল হাতে নিয়ে চললাম পুকুরের দিকে।(মনে মনে আয়ান)

বাবা নাস্তা খেয়ে যা।ছেলেটা দিনকে দিনকে এমন জেদি হয়ে যাচ্ছে কি আর বলব। আছমা এদিকে আয়তো মা।রুতবা উঠো মা তোমাকে গোসল করায় দেই। (রুতবাকে উঠিয়ে বিছানার থেকে আম্মু)

হ্যা মা কিছু বলবে?(আছমা পাকের ঘরের থেকে রুমে এসে)

হ্যা মা তুমি চাদর টা তুলে ভিজিয়ে দাও।আর রুতবার গোসল হলে তুমি আর আমি তশোকটা উঠোনে দিয়ে দিব কেমন!(আছমার মাথায় হাত রেখে আম্মু)

আচ্ছা মা।
বলেই চাদর তুলে বল সাবান দিয়ে ঢলে ঢলে কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলাম।মা পরে ধুয়ে মেলে দিবে।(আছমা)

আমি রুতবাকে নিয়ে কলপারে গেলাম। কল চেপে বালতি ভরে ওকে গোসল করিয়ে দিলাম। তারপর গামছা পেঁচিয়ে কোলে করে রুমে এনে আয়েশার একটা ফ্রোক আর হাফ প্যান্ট পরিয়ে দিলাম।তারপর চুল গুলো আচড়ে আমার রুমের খাটে বসিয়ে সকালের খাবার বাড়তে চলে গেলাম। এই বাড়ির বড় বউ হওয়ার সুবাধে আম্মার পর আমার এই সব দ্বায়িত্ব পালন করতে হয়।আর তিনজন রান্না বাদে সব কাজ করে আমি সব রান্না করে আবার ঘরে ঘরে ভাগ করে দেই।পনের বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল আমার। আয়ান এর বাবার তখন ত্রিশ পেড়িয়ে একত্রিশ এ পড়েছে।সংসার এর বড় ছেলে হিসাবে হাল ধরতে বিদেশ যাওয়া হয়েছিল তার।মাত্র আঠারো বছর বয়সেই।তারপর সব ভাইয়ের জন্য ঘর,নিজের জন্য ঘর,আব্বা আম্মার পুরান ঘর মেরামত আরো সংসার এর সবার ইচ্ছা পূরণ করতেই বারো বছর পার করে দেশে ফিরেছিল।আব্বা আমাকে পাশের গ্রামে দেখে ওনার জন্য পছন্দ করেন।তখন সবে ক্লাস সেভেন এ পরি।আগের কার যুগ তেমন মেয়েদের পড়ানো হতো না।বিয়ের পর একেবারেই পড়া ছেড়ে সংসার এ মন দিলাম। আমার মেজ ও সেজ জা আমার থেকে বয়সে চার পাঁচ বছরের বড়।কারণ আমার দুই দেবর ওনার আগেই বিয়ে করেছিল।তবে এর জন্য তাদের মধ্যেই কোন হিংসা ছিল না যতোদিন আয়ান না জন্মায় ।আয়ান এর জন্মের পর থেকেই তারা আমাকে দেখতে পছন্দ করেনা।তার উপর তাদের ছোট হয়েও বড় বউ হিসাবে আমাকে প্রাধান্য বেশি দেয় এটাও ওরা মানতে পারেনা।আর ছোট জা তার নিজ দুনিয়া স্বামী আর তিন মেয়েকে নিয়ে পরে থাকে।যাইহোক এসব কথা ভাবতে ভাবতেই সকালের খাবার ভাগ করা হয়েগেছে।যে যার ঘরের খাবার নিয়ে চলে যেতেই আমি আমেনাকে দিয়ে আব্বার আর আম্মার খাবার পাঠিয়ে নিজেদের খাবার নিয়ে ঘরে ফিরে আসলাম।বড়দের জন্য বউয়া আর চার পদের ভর্তা, ছোটদের জন্য ডিম ভাজা আর পেয়াজের আচার।ছেলেটার জন্য খাবার রেখে আমরা খেতে বসলাম।আয়েশা আর রুতবাকে খাইয়ে আমিও খেয়ে নিলাম।উনি বাজার থেকে এসে খাবেন।খাওয়ার পর আছমা থালাবাসন নিয়ে পুকুরে চলে গেল। আমি গেলাম পাকের ঘরে।দুপুরে রুতবাকে নিতে আসবে ভাইজান।মানুষ টা খুব সহজ সরল নাহলে বন্ধুর জন্য কেউ এত্ত ছোট মেয়ের বিয়ের জন্য রাজি হয়।ভাইজান এর সাথে ওনার পরিচয় বিদেশ এর হয়েছিল । সেই থেকেই এই পর্যন্ত তাদের অটুট বন্ধুত্ব আছে।(আম্মু মনে মনে)

অন্যদিকে

মাছ ধরতে এসেছি সেই সকালে।কখন যে দুপুর হয়েছে সেই দিকে খেয়াল এই নেই।বন্ধুদের সাথে মিলে অনেক মাছ ধরেছি।এগুলো দিয়ে রাতে পিকনিক খেলব।তাই মাছ গুলো হাশেম এর কাছে দিলাম ওর মা কেটে ধুয়ে রাখবে ভেবে।তারপর রাতে এনে ভেজে খাব সবাই মিলে।সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলাম। পুরো শরীর কাদাতে মাখামাখি অবস্হা। কলপারে গিয়ে একেবারে গোসল সেরে তারপর ঘরে ঢুকব।হঠাৎই এমন দৃশ্য দেখে মাথা গরম হয়ে গেল!
রুতততততত(আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে চিৎকার করে)

***********(চলবে)********

পর্ব :3

রুতততততত(চিৎকার করে আয়ান)

কি হয়েছে আয়ান ভাইয়া?(গাছের থেকে উকি মেরে রুতবা)

তুমি গাছে কি করছ?(দাঁতে দাঁত চেপে আয়ান)

আম পাড়তে উঠছি।তুমি খাবে এই নাও কেস ধরো।(বলেই একটা আম আয়ান এর দিকে ছুড়ে মারল)

তুমি এই মুহূর্তেই গাছ থেকে নামবে।নাহলে গাছে উঠে তোমাকে ধাক্কা মেরে এই পুকুরে ফেলে দিব।(আয়ান আমটা কেস ধরে রুতবার উদ্দেশ্য চিৎকার করে)

কেন আম পারব না?(ঠোঁট উল্টে রুতবা)

আমি নামতে বলছি।আর তুমি এখনি নামবে।(আয়ান চোখ রাঙিয়ে রুতবার উদ্দেশ্য)

আচ্ছা। (রুতবা ভয় পেয়ে)

রুতবা গাছের থেকে নেমে আসতেই ওর কানটা মলে দিলাম।
আর জীবনেও গাছে উঠবা?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য চোখ বড় করে)

না।ভ্যা ভ্যা ছাড় আমার লাগছে।(রুতবা কান্না করে আয়ান এর উদ্দেশ্য)

কান্না থামাও আমি পরে আম পেরে দিব এখন রুমে যাও আর আছমার কাছে গিয়ে আমার জন্য একটা গামছা আর লুঙ্গি চেয়ে আন।(রুতবার মাথায় হাত রেখে আয়ান)

হুম (মুখ ভার করেই রুতবা)

আমি কল চেপে বালতি ভরতি করে গোসল করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ আগে ওকে বকা দেওয়ার কারণ ও হাফ প্যান্ট আর ফ্রোক পরেই গাছে উঠেছিল। বাচ্চা মেয়ে বুঝতেও পারছিল না নিচে কেউ দাড়ালে ওর দিকে খারাপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে পারত।আমি চাইনা আমার ছোট বাচ্চা বউ টার উপর কারো কু দৃষ্টি পরুক।রুত আর আসল না সামনে।আছমা এসে গামছা আর লুঙ্গি দিয়ে গেল।আমি ভেজা লুঙ্গি পাল্টে শুকনো লুঙ্গি পরে নিলাম। তারপর রুমে গেলাম সেখানে ও রুত নেই।পাকের ঘরে গিয়ে আম্মুর থেকে খাবার নিয়ে কোনরকম খেয়ে ঘরে এসে শার্ট প্যান্ট পরে প্রাইভেট এর উদ্দেশ্য রওনা হলাম। আমি 2001এর এস এসসি পরীক্ষার্থী।সাইন্স নিয়ে পড়ার শখ ছিল ছোট বেলার থেকেই। ইঞ্জিনিয়ারিং করব বলে।কিন্ত সাইন্স এর সাবজেক্ট গুলো যে এত্ত মাথা ব্যাথার কারণ হবে তা ভাবতেও পারিনি।প্রাইভেট থেকে এসে ব্যাগ রেখে আবার বেরিয়ে আসলাম বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত আটটার দিকে মাছ ভেজে খেয়ে নয়টার দিকে ঘরে ফিরলাম। এসে মুখ ধুয়ে ঘরে ঢুকতেই আব্বুর সামনাসমনি হলাম। আমি পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলেও আব্বু আমাকে ঢেকে তার পাশে বসতে বলল।আমি চুপটি করে তার পাশে বসে পড়লাম। (আয়ান মনে মনে)

পড়ালেখার খবর কি?(আব্বু আয়ান এর উদ্দেশ্য)

জ্বি ভাল।(আয়ান)

হঠাৎই বিয়ে করানোর জন্য রাগ করেছ নাকি!(আব্বু আয়নের হাত ধরেই)

না মনেতো আমার লাডডু ফুটছে।বিয়ে করিয়ে উদ্ধার করেছ।মুতুনি বউ গলাতে ঝুলিয়ে আবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছে রাগ করেছি কিনা!মনে মনে এমন বললেও সামনে চুপ থাকলাম। কিছু বলার মতো পাচ্ছি না তাই চুপচাপ থাকা এই ভাল।(আয়ান)

চিন্তা করিস না রুতবাকে নিয়ে গেছে ওর আব্বু।আব্বা বিয়ে দেখতে চাইছিল বলেই বিয়ে টা করিয়েছি।তুইতো আবার তোর মামার মতো স্কলারশিপ পেয়ে চীনে পড়তে যেতে চাস।তার জন্য তো এখন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।তারপর তোরা বড় হো পড়ালেখাতে মন দে ঠিক সময় ওর সাথে তোর আবার বিয়ে করিয়ে আনব কেমন!এখন যা ঘুমিয়ে পর কালকের থেকে তো স্কুল খোলা।(আব্বু আয়ান এর হাত ধরেই)

রুত চলে গেছে শুনে বেশ ভাল লাগছে।আহা কি শান্তি মুতুনি লাইফ থেকে বিদায় হয়েছে।এখন শান্তিতে থাকতে পারব।
এসব ভাবতে ভাবতেই খুশি মনে ঘুমিয়ে পড়লাম। গ্রীষ্মের ছুটি চলছে স্কুলে। কালকের থেকেই আবার বিজি সিডিউল চালু হবে।এস এসসি পরীক্ষাতে ভাল রেজাল্ট করতে পারলেই ঢাকার যে কোন কলেজ এ ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা আছে।তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারলেই মামুর মতো চীনে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পরার সুযোগ ক্লিয়ার হবে।তাই এখন থেকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
পরের দিন থেকে বিজি সিডিউল এর জীবন চলতে লাগল। সকালে স্কুল, স্কুল থেকে বাড়ি, বাড়ির থেকে প্রাইভেট, প্রাইভেট থেকে বাড়ি, বিকালে ক্রিকেট খেলা তারপর সন্ধার সময় বাড়ি ফিরে আবার পড়তে বসা,আর মাঝের কিছুটা সময় খাওয়া
,নাওয়া(গোসল)ও ঘুম।দেখতে দেখতে রোজার মাস শুরু হয়ে গেল।
ঈদের পাচঁদিন আগে স্কুল বন্ধ হল।আব্বুর সাথে ঢাকার থেকে ঈদের শপিং করে বাড়ি তে আসার পর জানতে পারলাম রুতবার জন্য ও আব্বু শপিং করেছে।বাচ্চাটার সাথে তিনমাস আগে দেখা হয়েছিল। ঐদিন কলপারে।এরপর আর দেখামিলেনি।কালকে আব্বু যাবে জামা দিতে।এখন লজ্জার কারণে মুখ ফুটে বলতেও পারছিনা আমিও যেতে চাই।যতোই ঠোঁট কাটা হোই নিজের বাপের কাছে বউ ঘটিত কিছু বলা লজ্জার এই।এখন মহাদয় যদি আমার উপর সদয় হয় তাহলে রুতকে দেখার একটু সুযোগ হতো আরকি।
পরের দিন সকাল থেকে অপেক্ষা করছি আব্বুর মুখে আমার যাওয়ার কথা সুনতে পাবো বলে।কিন্ত ফুটা কপাল আমার আব্বু একলাই চলে গেল সেখানে।আমার মনটাই ভেঙ্গে গেল।
ঈদের পর আবার স্কুল লাইফ শুরু হল।দেখতে দেখতে টেষ্ট পরীক্ষার সময় এসে পড়ল।রুতবার আব্বু পরীক্ষার আগে আমার জন্য একগাদা ফল,দুধ,ডিম কিনে দিয়ে গেছে।এইবার ও তিনি একা আসছে রুতকে আনেনি।খরুচ বাপের খরুচ বন্ধু। কি আর করা বউ এর চিন্তা মাথার থেকে ঝেড়ে পড়ার দিকে মনোযোগ দিলাম। টেষ্ট এর রেজাল্ট অনেক ভাল আসল।এই খুশিতে আরো বেশি পড়তে মনোযোগ দিলাম। এসএসসি পরীক্ষার আগে আব্বু বড় করে মিলাদ পড়ালেন। সেই সুবাদে আমার শশুর বাড়ির সবাই কে আমন্ত্রণ করা হল। আর ফাইনালি তারা আসলেন আমার বউ কে নিয়ে।ও আসছে থেকে ওর আম্মুর সামনে থেকে সরেনি।আর আমাকে দেখলে চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। আমি আয়েশাকে দিয়ে ওকে পুকুর পারে আনলাম। ও আমাকে দেখে সরে যেতে চাইলে আমি ওর হাত ধরলাম।
আয়েশা ঘরে যাও আমরা পরে আসছি।(আয়ান আয়েশার উদ্দেশ্য)

আচ্ছা ভাইয়া। (বলে দৌড়ে বাড়ির দিকে চলে গেল আয়েশা)

কি হয়েছে রাগ করেছ কেন রুত?(রুতবার হাত ধরেই আয়ান)

নিশ্চুপ। (মাথা নীচু করে রুতবা)

রুত কথা বল।পুরো এক বছর পর তোমার দেখা পেলাম অথচ তুমি এত্ত নিশ্চুপ কেন রুত?(রুতবার গালে হাত দিয়ে আয়ান)

ভ্যা ভ্যা তুমি বকা দাও পচা আয়ান ভাইয়া তুমি।(কান্না করে রুতবা)

এক বছর আগের বকার কারণে এখন কথা না বলার কি আছে রুত?আর তুমি বাচ্চা মেয়ে এত্ত রাগ তোমার জন্য ক্ষতিকর। (আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

তুমি পচা কারণ তুমি বলেছিলে আমাকে আম খাওয়াবে কিন্তু তুমি খাওয়াও নি এখন ও আম।(রুতবা হেচকি তুলে)

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER সাধে তো বলিনাই। এক বছর আগে বলেছিলাম আম পেরে খাওয়াব কিন্ত না খাওয়ানোর জন্য এখন ও রাগ করে আছে ভাবা যায়।(মনে মনে)
আচ্ছা কথা যখন দিয়েছি আম আমি খাওয়াব তাও রাগ করোনা।এখন বল তো তুমি কোন ক্লাসে পর?(আয়ান রুতবার হাত ছেড়ে সোজা হয়ে)

ফোর এ।(রুতবা খুশি মনে)

পড়ালেখা কেমন চলছে?(আয়ান মুচকি হেসে)

ভাল। আচ্ছা কখন খাওয়াবে আম?(রুতবা উৎকন্ঠা হয়ে)

এখন ও গাছে আমের নাম নেই।মাত্র মুকুল(আমের ফুল)এসেছে।এখন আম পাই কোথায়?কিন্তু যে করেই হোক আমার এই আম পাগলনিকে আম খাওয়াতেই হবে।নাহলে আবার রাগ করবে।(মনে মনে)
কালকে স্কুল থেকে আসার সময় নিয়ে আসব কেমন!(আয়ান রুতবার মাথায় হাত রেখে)

আচ্ছা। তাহলে আমি ঘরে যাই নাহলে আম্মু রাগ করবে।(বলেই দিলাম দৌড়ে রুতবা)

আস্তে যাও নাহলে পরে যাবে।আমপাগলি কোথাকার!(আয়ান মুচকি হেসে)

পরের দিন সকালে মজুমদার বাড়ির থেকে অনেক রিক্স নিয়ে আম চুরি করে বাড়ি ফিরলাম।কিন্ত আমার শশুর মশাই নিজের সাথে আমার আম পাগলিকেও নিয়ে চলে গেছে বাড়ি। এইবার ও পারব না আম পাগলির মান ভাঙ্গতে!(হতাশ কন্ঠে আয়ান)

****************(চলবে)*************

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে