MEANINGLESS LIFE PARTNER Part-05

0
2116

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER (অর্থহীন জীবন সঙ্গী)
পর্ব:5
#লেখিকা_Arshi_khan

(RESPONSIBILE HUSBAND:দ্বায়িত্ববান স্বামী)

বন্ধুদের সাথে দেখা করে আসতেই রুত এর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। শাড়ি খুলে আবার ফ্রোক আর পেন্ট পরে নিয়েছে।আমি ওকে দেখে মনে একটু জেদ চেপে বসল।বলব না কথা ওর সাথে।এখন এই এত্ত রাগ ভবিষ্যত এ কি করবে আল্লাহ মালুম।
দাদার মৃত্যু বার্ষিক উপলক্ষে গ্রামের মসজিদে ও গ্রামের দরিদ্র কিছু পরিবারকে খাওয়ার ও সাথে আর্থিক সাহায্য এর ব্যবস্থা করেছেন আব্বু,মেজ এবং ছোট বাবা।সেজ বাবা এখানে খরচ করবেন না বলে জানিয়েছেন। এতে কেউ রেগে নেই।নিজের বাবার মাগফিরাতে যদি কেউ খরচ না করে এটা একান্তই তার ব্যাপার। যাইহোক একটা গরু আনা হয়েছে রাতে কেটে রাখা হবে।সেই জন্য সব বাচ্চারা গরু কাটা দেখবে বলে চেয়ার নিয়ে বসে আছে।কশাই এসে যখন গরুর পা বেধে ফেলে তারপর গরুকে ফেলেছে আর বিসমিল্লাহ বলে কাটতেই যাবে দেখি রুত উঠে দৌড়ে রুমে ঢুকে গেল। সবাই এদিকে দেখতে ব্যস্ত। আয়েশা ওর পেছনে যেতে চাইছিল কিন্তু আমি ওকে থামিয়ে দিলাম।সবাই বাইরেই আছে ঘরে ও একাই আছে।এসব দেখে মনে হয় ভয় পেয়েছে। আরেকটু ভয় দেখিয়ে আসি।আমি আস্তে করে ঘরের উদ্দেশ্য কেটে পরলাম।রুমের ভেতরে আসতেই দেখি ও আমার রুমের পাশের বাথরুমের সামনে জায়গাতে বসে কান্না করছে।ভয় পেয়ে কান্না করার মতো মেয়ে তো রুত না।আমি ও আস্তে করে ওর পাশে পায়ে ভর দিয়ে বসলাম।
কি হয়েছে রুত?কান্না করছ কেন?ভয় পেরেছ?(আয়ান রুতবার মাথায় হাত রেখেই)

না।(ঠোঁট উল্টে কান্না করে রুতবা)

তাহলে!(আয়ান ব্রু কুচকে)

ঐ হাবু টা আমাদের ছিল।আমি গত একবছর ধরে ওকে খাবার দিতাম, গোসল করাতাম। আর আজকে ওকে এইভাবে হত্যা করল ।(কান্না করে রুতবা)

হাবু কে?আর কে কাকে হত্যা করেছে?(অবাক হয়ে আয়ান)

আমার হাবু ওকে আমি কত্ত আদর করতাম। কিন্ত আব্বু ওকে হত্যা করে দিল।আয়ান ভাই আমার হাবুকে এনে দাও।(আয়ান এর হাত ধরে মাটির উপর বসে চিৎকার করে কান্না করে রুতবা)

ভুলেও বলিস না তুই এই বয়সে প্রেম করেছিস আর তাকে তোর আব্বু খুন করেছে?(আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে)

তুমি আমাকে তুই বললে আয়ান ভাই?(হঠাৎই কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে রুতবা)

ফাজিল মেয়ে এই বয়সে এত্ত পেকেছ এতে দোষ নেই।আর আমার টাং স্লিপ হয়ে তুমি থেকে তুই বলেছি বলে এত্ত জোরে চিৎকার করার কি আছে!(আয়ান উঠে দাড়িয়ে রুতকে দাড় করিয়ে)

তুমি খুব পচাঁ আয়ান ভাই খুব খুব খুব পচাঁ। ভ্যা ভ্যা। (চিৎকার করে কান্না করে রুতবা)

আরে বাবা থামো এত্ত জোরে কেউ চিৎকার করে কাঁদে।চল তোমার আব্বুর কাছে যাব তোমাকে নিয়ে।
বলেই ওকে নিয়ে এক প্রকার দৌড়ের উপর আংকেল এর কাছে গেলাম। ওর হাত ধরা দেখে সবাই মিটিমিটি হাসতে ব্যস্ত। উফফ সাইকো গুলা।
আংকেল আপনার মেয়ের কোন বয়ফ্রেন্ড কে আপনি হত্যা করেছেন?(আয়ান আংকেল এর সামনে দাড়িয়ে)

এমন কথা শুনে সেখানে বসা সবাই অবাক হয়ে গেল।আমি চা খাচ্ছিলাম তা গলায় আটকে গেল।আমি কাশতে শুরু করলাম।
কি বলছ কি বাবা এগুলো?(অবাক হয়ে দাড়িয়ে আংকেল)

ও হাবু নামের কারো কথা বলছে।ওকে নাকি আপনি হত্যা করেছেন?(গম্ভীর কন্ঠে আয়ান)

কি?দাড়াও বাবা আগে একটু হেঁসে নেই।হাহাহা (আংকেল পেট ধরে হাসতে হাসতে বসে পরল)

আমার কথা শুনে এখানের সবাই হাসতে হাসতেই প্রায় পরেই যাচ্ছে।কি কারণে এমন হাসছে তা বোধগম্য হল না।
কি হল সবাই হাসছ কেন?(আয়ান বিরক্তির সুরে)

হাবু আমাদের গরুর নাম ছিল। আংকেল এর মৃত্যু বার্ষিক উপলক্ষে আমি ঐটা এখানে দিয়েছি। আর তাই তোমার পিচ্চি রুত এর আমার উপর এই অভিযোগ। ও খুব আদর করত গরুটাকে।তাই বলে একটা গরুকে বয়ফ্রেন্ড বলে আখ্যায়িত করবে তাই ভেবেই আমি হাসছিলাম।(আংকেল মুখ টিপে হেসে)

এমন কথা শুনে লজ্জায় আমি শেষ।আমি রুত কে আগের ন্যায় টেনে নিয়ে রুমে চলে আসলাম। মন চাচ্ছে ধরে এক ঘন্টা পিটাই।ওর জন্য সবার সামনে হাসির পাত্র হয়ে গেলাম। ও চুপচাপ খাটে বসে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে।আমি ওর দিকে রাগি লুক দিতেই আবার কান্না শুরু।
থামাবা তোমার এই নেকামি। (আয়ান ঝারি মেরে রুতবাকে)

দুর থাকবই না তোমার সাথে পচাঁ লোক।(বলেই বেরিয়ে চলে আসলাম রুতবা)

দূর ছাই কথা ভাল মতো না শুনে এমন করা ঠিক হয়নি।ছোট বউয়ের উপর শুধু শুধু রাগ করার কোন মানেই হয়না।
সেইদিন রাত থেকে পুরো সপ্তাহে কয়েক বার ওর রাগ ভাঙ্গাব ভেবেও কথা বলাই হয়ে উঠেনি।এক সপ্তাহ পর ঢাকা ফিরে আসলাম। আবার শুরু হল ব্যস্ত জীবন। পড়ালেখার চাপ বেশি কারণ সেকেন্ড ইয়ার এ আছি।আর কয়েক মাস পরেই ফাইনাল এক্সাম। এখন থেকেই ভালো মতো না পড়লে এক্সাম ভাল হবে না।
তাই পড়ার চাপটা একটু বেশিই।
দেখতে দেখতে ফাইনাল এক্সাম শুরু হয়ে কোনদিক দিয়ে শেষ হল বুঝতেই পারলাম না।এক্সাম শেষে বাড়ি ফিরলাম। অনেক মাস পরে বাড়ি ফিরে মনে করেছিলাম খুব ভাল দিন কাটাব।কিন্ত বাড়িতে গিয়ে যেন আমি অবাক হয়ে গেলাম। কারণ বাড়ির সবাই যেমন মেজ ও সেজ বাবারা আলাদা হয়ে গেছে।ছোট বাবা সিলেট চলে গেছে কাজের জন্য। দাদিকে আব্বুর আন্ডার এ রাখা হয়েছে।তারা কেউ দাদিকে নিতে চায়না।ছোট বাবা চাকরির জন্য সিলেট গেছেন।আলাদা হওয়ার ইচ্ছাতে না।কিন্ত ওনার খাবার এর প্রবলেম এর কারণে চাচি আর বোনদের নিয়ে গেছে।আর এই প্রসঙ্গে তারা আলাদা হয়ে গেছে।যার যার খাবার এবং যাবতীয় সব আলাদা হয়ে গেছে।দাদিকে ওনারা চাইলেও আব্বু দিতে নারাজ ছিল।আর দাদিও তার বড় পুত্রের সাথেই থাকবেন।আমাকে দেখে দাদি কান্নায় ভেঙে পড়ল। তার ভরা সংসার এর এমন ভাগ তার সহ্য হলনা।এদিকে আব্বুর খেতের সব ধান বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।আর তাই আব্বুর খুব লস হয়েছে।দাদিও অসুস্থ হওয়ার দরুন আমাদের ফেমিলি মোটামোটি বেশ কষ্টের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন। অথচ এসব আমাকে জানানো হয়নি।আমি রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম। রাগে আমার সবকিছু তছনছ করে দিতে মন চাচ্ছে। একটা সময় আব্বু বিদেশ গিয়ে যাদের সব দ্বায়িত্ব পালন করেছিল।তারাই এখন আমার আব্বুর বিপদে আলাদা হয়ে গেছে।মানুষ ঠিকই বলে বিপদের সময় বুঝা যায় কে তোমার আসল বন্ধু।
পরিবারের এমন অবস্হা দেখে পড়ালেখার প্রতি আর মন বসলনা।রেজাল্ট দিতে আর দুইমাস বাকি।কিন্ত ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য কোচিং না করে আমি বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
চার লক্ষ টাকার দরকার সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য। বড় মামা দুই লক্ষ দিতে রাজি। এখন বাকি দুই লক্ষ যোগার করতে হবে।ছোট বাবাকে জানানো হলে তিনি পঞ্চাশ হাজার দিতে পারবেন বলে যানালেন।আর বাকি টাকা আমাদের এই যোগার করতে হবে।
এদিকে আমার ভাগ্য খারাপ হওয়ার কারণে পুরো আটমাস লেগে গেল এই ট্রেনিং চলাকালীন। ছয়মাস আগে রেজাল্ট পেয়েছিলাম।মাসাআল্লাহ ইন্টার এ ও ফাস্ট ডিভিশন এই পেয়েছি।কিন্ত ভাগ্য দোষে আর ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সপ্ন পূরণ করা হলনা।
এদিকে রুত এর ও বয়স বেড়ে চলেছে। আমাদের বিয়ের সাড়ে তিন বছর হয়েছে গত পরশু।ও এইবার ক্লাস সেভেনে উঠেছে।যদিও ওর এই বিয়ের কথা মনে নেই।আর আমি বিদেশ যাচ্ছি এখন ও ওদের যানানো হয়নি।
ট্রেনিং,ভিসা,টিকেট এবং টাকা যোগার করতে এক বছর লেগে গেল। তিনদিন পর ফ্লাইট ।
আমি আব্বুর সাথে বিয়ের পর প্রথম বার এর মতো রুত দের বাড়িতে এসেছি।আমি আংকেল আন্টির সাথে কুশল বিনিময় করে বসে ছিলাম রুত এর আসার অপেক্ষায়।ও স্কুল গেছে।আমাদের আসার সুবাধে আন্টি রান্না করায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
আমি আব্বুর আর আংকেল এর কথা শুনছিলাম।আব্বু আমার যাওয়ার কথা বলছেন ওনাকে।আংকেল কে চিন্তিত দেখাল।
কোন সমস্যা আংকেল?(আয়ান আংকেল এর উদ্দেশ্য)

কত্ত বছরের জন্য যাচ্ছ বাবা?(মুখ গুমরা করে আংকেল)

টাকার রিন, সবার হাওলাত এর টাকা,বোনদের বিয়ের ব্যবস্থা সব কিছুর টাকা যোগার করেই বাংলাদেশে ফিরব।এই ধরুন বছর পাঁচেক। (আয়ান)

এতোদিন!(অবাক হয়ে আংকেল)

হ্যা আংকেল আমি বুঝতে পারছি। আর সেই জন্য এই আমি এসেছি।আমার এত্ত বছর যেহেতু দেরি হবে আসতে। আপনি যদি চান রুতবার বিয়ে অন্য কোথাও দিয়ে দিতে পারেন।(আয়ান)

একি বলছ বাবা তুমি?ওর বয়স মাত্র বারোতে পড়ল।তুমি যদি পাচঁ বছর এর জায়গাতে আট বছর পর ও আসো আমাদের সমস্যা হওয়ার কথা না।আর তাছাড়া আমি আমার বন্ধুর ছেলের সাথে আমার মেয়েকে একবার বিয়ে করিয়েছি।তাই ওর অন্য কোথাও বিয়ে করাব ভাবতেও আমার বিবেক এ বাধবে।তাই ওমন কথা বলনা।(আংকেল আয়ান এর হাত ধরেই)

খাওয়ার পর আমি আর আব্বু বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলাম। রুত এর স্কুল ছুটি হবে পাচঁটায়।তাই বাড়িতে ফিরে আসা।দেড় ঘন্টার পথ পাচঁটার দিকে বের হলে রাত হয়ে যাবে সেইজন্য।কালকে আংকেল আর রুতকে আমাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বলে এসেছে আব্বু।
বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে দাদির পাশে বসে পা টিপে দিলাম। আমার বুড়িটা ইদানিং খুব অসুস্থ। বিদেশ গেলে মন বলছে এসে আর বাড়িকে দেখতে পারবনা।আর সবাইকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট টা মনকে খুব বেশিই হতাশ করে দিচ্ছে।
পরের দিন রুত আর আংকেল আসল বিকাল এর দিকে।ওকে এই প্রথম থ্রিপিস পরা দেখলাম। বাহ দিনকে দিন বউ আমার বড় হচ্ছে। কালকে রাতের ফ্লাইট ।তাই ভাবলাম ওকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাব। আয়েশা আর ওকে রেডি হতে বলে আমি রেডি হতে লাগলাম। রেডি হয়ে এই রুমে এসি দেখি আয়েশা রুতকে কি যানি বুঝাতে চাইছে।কিন্ত ও চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়েই কান্না করতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
কি হয়েছে রুত কান্না করছ কেন?(আয়ান রুতবার সামনে এসে)

নিশ্চুপ।(রুতবা বাইরেই তাকিয়ে)

কি হল আয়েশা ও কথা বলেনা কেন?আর কান্না করছে কেন?(আয়ান আয়েশার উদ্দেশ্য)

কালকে তুমি আংকেল কে কি বলে এসেছ?(আয়েশা আয়ান এর উদ্দেশ্য)

কি বলেছি?(আয়ান অবাক হয়ে)

রুতবা ভাবিকে নাকি অন্য কোথাও বিয়ে দিতে বলে এসেছ এটা কি সত্যি?(আয়েশা ব্রু কুচকেই)

ওকে ভাবি বললি কেন তুই?(আয়ান রাগি লুক দিয়ে)

বড় ভাইয়ের বউকে কি খালা বলবে?(দাঁতে দাঁত চেপে রুতবা)

তুমি জানো আমার আর তোমার বিয়ের কথা?(অবাক হয়ে আয়ান)

যত্তসব আজাইরা কথা।সাড়ে তিন বছর যাবত ঘন্টায় ঘন্টায় আমাকে মনে করানো হয় আমি কোন বাড়ির বউ। আমার কি কি করতে হবে, কার সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে,তোমাকে ভবিষ্যত এ স্বামী হিসাবে কিভাবে সন্তুষ্ট করতে হবে।তোমার বউ বলে এখন থেকেই সমাজের অন্য দের থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হবে। আর তুমি আমাকে জিজ্ঞেস কর আমি বিয়ের ব্যাপার এ জানি কিনা!আর একটা কথা সব সময়ই আমার লাইফ নিয়ে তোমাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার কে দিয়েছে তোমাদের?আমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার সত্ত্বেও তুমি কোন সাহসে আমার আব্বুর কাছে বল তারা চাইলে যেন আমার বিয়ে অন্য কোথাও দিতে পারে?(রুতবা কান্না করে আয়ান এর উদ্দেশ্য রাগি সুরে)

রুত আমি ওমন ভাবে বলতে চাইনি।আসলে আমি প্রায়ই কয়েক বছর দেশের বাইরে থাকব তাই বলেছি।বড় হলে আমাদের ছোট কালে হওয়া বিয়ের কোন দাম থাকবেনা।তাই তোমার জদি মনে হয়
ছোট বেলার বিয়ে বিয়েই না।তাই !(আয়ান রুতবার হাত ধরেই)

এমন ভাবনা আমার মনে ভূলেও আসলে নিজেকে শেষ করে দিব।কিন্ত আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তোমার মন এই হয়তো এমন ভাবনা এসেছে বিধায় ওমন কিছু বলে এসেছ।(তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুতবা)

বাহ বড় হয়ে গেছ দেখছি।অনেক কিছুই বুঝতে ও শিখেছ।তাহলে একটা কথা শুনে রাখ যেমন বউ হিসাবে রেখে যাচ্ছি তেমন এই বাড়ির বউ হিসাবে দ্বায়িত্ববান হয়ে থেক। আর আমার জন্য অবশ্যই অপেক্ষা কর।
বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে পুকুর পার চলে আসলাম। ছোট মেয়েটার মনে এত্ত অভিমান কেন কাজ করে আমার বোধগম্য হয়না।বাচ্চা বাচ্চাদের মত খেলবি, ঘুরবি তানা বড়দের মতো বিচক্ষণ হয়ে কত্ত গুলো কথা শুনিয়ে দিল।
রাতের খাবার এর পর ঘুমানোর ব্যবস্থা দেখে আমি শকড। রুত এমনে আমার সাথে কোনদিক ঘুমালে আয়েশা ও ঘুমায়।আজকে ও একলাই এসে ঘুমাচ্ছে। আইমিন শুয়ে আছে।আয়েশা কে দাদি নিয়ে গেছে।আমি এই প্রথম ওর পাশে ঘুমাতে বেশ সংকোচ বোধ করছি। আমি একপাশে চুপচাপ বসতেই ও আমার দিকে তাকিয়ে ঘুরে শুয়ে পড়ল। শরীরে কাথা জড়িয়ে নিল।আমি মনে হয় ওর দিকে তাকিয়ে দেখব যে জামা ঠিক আছে নাকি ঢং।এসব ভাবনার মধ্যেই সেখানে শুয়ে পড়লাম। রুত থাকলে আমি লাইট বন্ধ করিনা কিন্ত লাইট জ্বালানো থাকলে আমার ঘুম হয়না।আর আজকে ভালো মতো না ঘুমালে কালকে জার্নি করলে অসুস্থ হয়ে যাব।সেই ভেবেই উঠে লাইট বন্ধ করে আবার এসে শুয়ে পড়লাম। (আয়ান)

আয়ান ভাই তুমি লাইট বন্ধ করলা কেন?(রুতবা ভয়ে ভয়ে উঠে বসে)

ঘুমাব বলে।(আয়ান)

আমি তোমার সাথে থাকলেতো লাইট বন্ধ করোনা তো তুমি আজকে হঠাৎই বন্ধ করলে কেন?(রুতবা হালকা ফুফিয়ে কান্না করে)

আমি উঠে লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। (মনে)
হল এখন ঘুমাও এত্ত অল্প বয়সে উল্টা পাল্টা কিছু মাথায় আনার দরকার নেই।
বলেই ওর পাশে শুয়ে কাথা টেনে মুখ ঢেকে নিলাম। নাহলে ঘুম আসবেনা।ও পাশে না শুয়ে বসেই আছে।(মনে)
কি হল ঘুমাও না কেন?(আয়ান রুতবার দিকে তাকিয়েই)

তোমার সাথে কাথার নিচে ঘুমালে তো আমার বাচ্চা হয়ে যাবে।(রুতবা অসহায় কন্ঠে)

কিইইই?(চেঁচিয়ে খাটের থেকে নিচে পরে আয়ান)

আমি শাবানার সিনামাতে দেখেছি বিয়ে করে এক কাথার নিচে ঘুমায় পরে বমি করে বলে আমি তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছি।এখন তুমি আর আমি এক কাথার নিচে ঘুমালে আমার ওতো বাচ্চা হয়ে যাবে।(রুতবা আয়ান এর উদ্দেশ্য মুখ ভার করে)

আল্লাহ মাফ করো।কালকে বিদেশ গেলে একেবারেই ওর বোধগম্য হওয়ার আগে যেন দেশে না ফিরতে হয়।(মনে মনে)
তোমার বেবি হবেনা।কারণ তোমার এখন ও সেই বয়স হয়নি।তুমি নিশ্চিত হয়ে ঘুমাও। (উঠে রুতবার মাথায় হাত দিয়ে আয়ান)

কিন্ত দাদি যে বলল আজকে যেন তোমার সাথে থাকি ।তাহলে আমার বাচ্চা হবে।(রুতবা আয়ান এর উদ্দেশ্য )

হবে না কারন তুমি এখন ও বাচ্চা বুঝলে।(আয়ান বলে আবার শুয়ে পড়ল)

কিন্ত দাদি বলল আমার এই অবস্হাতে তোমার সাথে থাকলে আমার বাচ্চা হবে।(রুতবা আয়ান এর উদ্দেশ্য )

কোন অবস্থা?(আয়ান উঠে বসে রুতবার উদ্দেশ্য)

নিশ্চুপ।(মাথা নিচু করে রুতবা)

বুড়ির ভিমরতী হয়েছে।এই বাচ্চা মেয়ের মাথায় এসব ঢুকাইতে কে বলছে?(মনে মনে)
চুপচাপ ঘুমাও রুত।আমাদের বড় হওয়ার আগে বেবি হবেনা।আমি বিদেশ থেকে আসলে আমাদের বেবি হবে।এর আগেনা।এখন চুপচাপ ঘুমাও।(আয়ান রুতবাকে বালিশে ঘুম পারিয়ে)

আচ্ছা। (বলেই চোখ বন্ধ করে নিল রুতবা)

বাচ্চা টা সত্যি বড় হচ্ছে। ভাবতেই ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি খেলে গেল। তারপর আমি আবার শুয়ে পড়লাম। আর ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করে নিলাম।(আয়ান)

************(চলবে)************

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে