মায়াবতী বউ ৩য় পার্ট
লেখকঃপিচ্চি পোলা
আমার বুকের মধ্যে ধুকধুকানি শুরু হয়ে গেছে
অলরেডি।
মেয়েটা দরজা আটকে খাটের দিকে আসছে।
আমি শোয়া থেকে উঠে বসে পড়লাম।
একটা চাদর থাকলে দেন আমি নিচে
বিছানা করে শুই। (মায়া)
আচ্ছা আপনি এরকম করলেন কেনো? এসব
অভিনয় করে কয়দিন থাকবো? আর এতে
আপনার লাভ বা উদ্দেশ্য কি? (আমি)
সময় হলে জানাবো কেনো আপনার বউ হয়ে
অভিনয় করছি। জানি এতে আপনার খুব সমস্যা
হচ্ছে বা হবে।
তবু এইটুকু ম্যানেজ করেন প্লিজ। সময় হলে সব
বলবো আর চলে যাবো অনেক দূরে।
এসব বলে মেয়েটি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
খাটে বসে পড়লো।
আমি কিছু বুঝতে না পেরে বললাম
ঠিক আছে।কিন্তু আপনি নিচে শুবেন এটা
কেমন দেখায়? তারচেয়ে আপনি উপড়ে শোন
আমি নিচে শুই।
মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলে আপনার
উপর আমার বিশ্বাস আছে বলেই আপনার ঘরে
ঠাই নিয়েছি।
খাটটা তো ছোটো নয়। আপনি ঐ প্রান্তে
শোন আমি এই প্রান্তে শুই।
খারাপ কিছু মনে করেন না। আমি আপনার
সম্পর্কে খুব ভালো ভাবে জানি তাই বিশ্বাস
আছে আর আমার উপরও বিশ্বাস রাখতে
পারেন।
ঠিক আছে। এই বলে আমি খাটের ঐ প্রান্তে
শুয়ে কোলবালিশটা মাঝখানে রেখে
দিলাম।
মেয়েটিও এইপাশে শুয়ে পড়লো তবে
একটা চাদর গায়ের উপর দিয়ে।
শীত তেমন পড়েনি হালকা। তবে বৃষ্টি হচ্ছে
এজন্য একটু শীত লাগছে।
এভাবে চুপ করে শুয়ে আছি। ঘুম আসছে না।
মেয়েটি কি ঘুমিয়েছে? পাশ ফিরে কি
দেখবো?
নাহ খারাপ ভাববে যদি জেগে থাকে।
এসব টেনশন বাদ দিয়ে সুমির কথা ভাবতে
লাগলাম। মানুষ কতো বেঈমান হতে পারে
তার জ্বলন্ত উদাহরণ আমার প্রেমিকা সুমি।
যদি আমার নাই হতে পারবি তো
ভালোবাসলি কেনো? কেনো জীবনে আসলি,
এই জীবনটা নিয়ে খেললি?
মনের অজান্তে দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে
পড়ছে আমার।
আপনার কষ্ট হচ্ছে তাইনা? (মায়ার কথায়
চমকে গেলাম)
আরে না। (চোখের পানি মুছতে মুছতে)
মিথ্যা বলেন কেন? সুমির কথা মনে হচ্ছে
তাইনা?
ফিরে তাকালাম মেয়েটির দিকে। বারবার
অবাক হচ্ছি।আমি সুমির কথা ভেবে কষ্ট
পাচ্ছি ও জানে কি করে?
তার চেয়ে অবাক হলাম পাশ ফিরে ওর দিকে
মুখ করে শুয়ে।
একটু মাথা উচু করে দেখি মেয়েটার চোখেও
পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমার দিকে চেয়ে
কথা বলছে আর কাঁদছে।
আমি বললাম হা সুমির কথা মনে হয়েই আমি
কষ্ট পাচ্ছি। কিন্তু আপনি জানলেন কি করে
আর আপনিও কাঁদছেন কোন কারনে?
কিছুক্ষন নিরব থেকে মায়া বললো সব বলবো
একসময়। এখন সব কষ্ট ঝেড়ে ফেলে ঘুমান
প্লিজ। (বোঝা গেলো চেখের পানি মুছছে
আর কথাগুলো বলছে)
ওকে ঘুমাই। আপনিও ঘুমান গুড নাইট।
এরপর কখন ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানিনা।
ফজরের আজানের আগে হঠাৎ ঘুম ভেংগে যায়
কারো হাতের ধাক্কায়।
তাকিয়ে দেখি মায়া ডাকছে আমায়।
কি হয়েছে কোন সমস্যা? (আমি)
না মানে যদি কিছু মনে না করেন তো
একটা রিকুয়েস্ট করবো?
হুম করেন।
অভিনয় যখন করছিই একটু গোসলের
অভিনয়টাও করতে হবে। খারাপ কিছু ভাববেন
না। যেহেতু আপনার মা আর বোন এখানে।
তারপরো আপনার ইচ্ছা।
ওকে আপনি আগে গোসল করে আসেন। পরে
আমি করবো হুম।
একটু বাইরে দাড়ান আমার ভয় করে। গোসল
করা পর্যন্ত বাইরে থাকবেন।
ওকে এই বলে উঠে দরজা খুলে বাথরুমের
কাছে গেলাম। ও ঢুকে পড়লো ওর জামাকাপড়
নিয়ে আর আমি পাহাড়ায়।
মনে মনে হাসছি।কষ্টের পৃথিবীতে আবার
একটি মেয়ে সাথী হলো তাও আবার অভিনয়
করতে হা হা হা।
গোসল করে এসে শুয়ে পড়ছি আবার।
২ ঘন্টা পর বেলা উঠে গেছে।
ছোটবোন এসে বলছে।ভাইয়া ওঠো না বেলা
হয়েছে।
একটু বাজারে যেতে হবে তোমায়। (বোন)
আমি উঠে দেখি ঘরটা একেবারে গোছানো।
টেবিল থেকে থালাবাসন বাইরে নিয়ে
যাচ্ছে মায়া। আমায় উঠতে দেখে বলছে
ওঠেন সাহেব। কিছু ময় মশলা আর হাবিজাবি
আনতে হবে তারপর রান্না করবো।
ফ্রিজে মাংস থাকলেও রান্না করার প্রায়
মশলা নেই। এই বলে একটা চার্ট হাতে দিলো
মায়া।
কি কি আনতে হবে এই চার্ট। কি সুন্দর
হাতের লেখা মেয়েটার চার্টে চোখ বুলিয়ে
দেখলাম।
উঠে মুখটা ধুয়ে বেরুবো তখন মা আমার কাছে
এলো। একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো একটা
লক্ষি মেয়েকে ঘরে এনেছিস খোকা।
সকাল থেকে সব কাজ একাই করে যাচ্ছে।
আমাদের কিছু করতেই দেয় না। মেয়েটাকে
কখনো কষ্ট দিসনা বাবা। ওর ভিতর অনেক
মায়া, ভালোবাসা আছে আমি বুঝে গেছি।
মার মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে চলে
গেলাম বাজারে।
সব কেনার পর একটা শাড়ি
কিনলাম মায়ার জন্য।
রান্না করে খাওয়া দাওয়া হলে মা বললো
রেডি হ তোরা দুপুরের আগেই রওনা দেবো।
মায়াকে বললো রেডি হয়ে নাও বৌমা।
মায়া রুমে গেলো। পিছে আমিও গেলাম।
ওর জন্যআনা শাড়িটা দিলাম ওর হাতে।
এটা পড়ে নিন
এটা আবার আনতে গেলেন কেনো?
বউয়ের অভিনয়ে এটা লাগবে।
আমার কথায় যেনো ও লজ্জা পেলো।
শাড়ীটা নিয়ে পাশের রুমে গেলো ও।
দুপুরের আগেই সবাই গিয়ে কড্ডার
(সিরাজগঞ্জ) বাসে উঠলাম।
মা আর বোন একসিটে বসলো আমি
আর ও একসিটে।
এই প্রথম ওর হাত আমার হাতের উপর পড়লো।
চলবে………….