একটা মেয়ে নাকি আম্মুর কাছে আমার নামে বিচার দিয়েছে। আমি নাকি নিয়মিত মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করি। আম্মুর কাছে কথাটা শুনেই পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। ক্লাসে যেসব মেয়ে আছে তারা সবাই আমার পরিচিত। দুএকজন বাদে সবার সাথে সম্পর্ক খুব ভালো। সবার সাথেই দুষ্টামি ফাজলামি হয়। কিন্তু আম্মুর কাছে বিচার দেওয়ার মতন কাউকে খুঁজে পেলাম না। অনেকবার আম্মুকে বললাম কোন মেয়ে ছিল?কিন্তু আম্মু নাম বলে না।
মনে মনে বন্ধুদের উপর ক্ষেপে গেলাম। ঐ হারামজাদা গুলাই আমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে গার্লস স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে প্রেমিকাকে এক নজর দেখার জন্য। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম। এইসব কাজ গুলো এড়িয়ে চলবো। বলা যায় না, মেয়েটা আবার কবে বিচার দেয়।
কিছুদিন পর…….!
আবার মেয়েটা আম্মুর কাছে বিচার দিয়েছে। আমি নাকি দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছি। দেখতে জলহস্তীর মতন লাগে।এবারের বিচার শুনে আর রাগলাম না।কারণ সত্যি আমি অনেক মোটা হয়ে গেছি। মেয়েটা এবার সত্যি বলেছে। কিন্তু এবার রেগে গেলো আম্মু।
কি! মেয়ের এতো বড় সাহস। আমার একমাত্র ছেলেকে মোটা বলে। এক মাসের মধ্যে আমার ছেলের যদি ভুঁড়ি না কমিয়েছি। দেখিয়ে দিবো মেয়েটাকে।
তারপর থেকে আম্মুর কথামত নিয়মিত ব্যায়াম করছি। আম্মু আমাকে সকাল বিকাল দৌড়ে নিচ্ছে। বাইরের খাবার খেতে দিচ্ছে না। একমাস পর যখন শরীর সেই আগের অবস্থায় ফিরে এলো। তখন আম্মু বলল ” বাঁচলাম “।
কিছুদিন পরে……!
এবার আর মেয়েটা বিচার দেয়নি, চিঠি পাঠিয়েছে। আম্মুর হাত থেকে চিঠি নেওয়ার সময় বুঝলাম চিঠিটা পড়ে আম্মুর চোখের উপর দিয়ে ঝড় চলে গেছে। কেন জানি চিঠিটা পড়াবার আগেই মেয়েটার উপর প্রচণ্ড রাগ উঠলো। মনে মনে মেয়েটার চোদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছিলাম। চিঠিটা পড়া শুরু করলাম ।
প্রিয় আন্টি,
রাতুল আর নিয়মিত ক্লাসে পড়া দিচ্ছে না। কাল ওর রেজাল্ট শুনে প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল ক্লাসে সবার সামনে উঠে গিয়ে থাপ্পড় মেরে আসি। কিন্তু ওকে ওভাবে অপমান করতে ইচ্ছে হচ্ছিল না।
আমি জানি আপনি ওকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করছেন। তাই ভাবলাম আপনাকেই ব্যাপারটা জানাই।
আপনি যদি রাতুল কে শাসন না করেন। তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ও নষ্ট হয়ে যাবে। আশাকরি আমি আপনাকে বুঝাতে পেরেছি।
ভালো থাকবেন।
ইতি
রাতুলের সবথেকে প্রিয় বন্ধু
চিঠি পড়ে বুঝলাম মেয়েটা মিথ্যা বলেনি। ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষায় খুব খারাপ রেজাল্ট হয়েছে। চিঠিটা পড়বার পর মা ছেলে দুজনার মন খারাপ। আম্মুকে কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
মেয়েটার উপর রাগ নিয়ে সেই রাতেই প্রতিজ্ঞা করলাম। যেভাবেই হোক আমি ভালো রেজাল্ট করবোই। আম্মুর স্বপ্নকে সত্যি করে ছাড়বো। মেয়েটাকে দেখিয়ে দিবো। আমি কি করতে পারি।
দিনরাত পড়াশুনা শুরু করলাম।
বর্তমান……!
এখন আমি মেডিকেলে পড়ছি। মেয়েটার চিঠির উপযুক্ত জবাব আমি দিয়েছি। কিন্তু সেই চিঠির পর মেয়েটার আর কোনো বিচার বা চিঠি আসেনি। আমি প্রায় সময় আম্মুকে চিঠিতে লিখে পাঠিয়েছি মেয়েটা আর কোনো বিচার বা চিঠি দিয়েছে কিনা। কিন্তু মেয়েটার কোনো বিচার বা চিঠি আম্মু পায়নি। কিন্তু আজ যে চিঠি আম্মু লিখে পাঠিয়েছে সেটা পড়ে চোখ ভিজে এলো।
“বাবা রাতুল”,
আজ তোকে তোর সব প্রশ্নের উত্তর দিবো। তুই এখনো ভাবিস মেয়েটার কথা? যে মাঝেমধ্যে আমাকে তোর বিচার দিতো। আজ তোকে সব খুলে বলছি।
সত্যি বলতে সেই মেয়েটা আর কেউ নয়। তোর আম্মু। তোর সবথেকে প্রিয় বন্ধু। জানি তুই আমাকে ভুল বুঝবি । তোর মায়ের আর কোনো উপায় ছিল না….। তোর বাবা মারা যাবার পর তোকে শাসন করার মতন মানুষ কেউ ছিল না। আমিও কখনো তোকে শাসন করতে পারিনি। তাই চুপিচাপি নিজেকে আড়ালে রেখে তোকে শাসন করা শুরু করলাম। এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না বাবা। আমাকে ভুল বুঝিস না । একজন মা তার সন্তানের ভালোর জন্য চোখ বন্ধ করে যেকোনো কিছু করতে পারে। আমিও যা করেছি তোর ভালোর জন্য করেছি। পারলে আমাকে ক্ষমা করিস।
ইতি
তোর পঁচা আম্মু
মা
লিখাঃ ১০ এপ্রিল ২০১৮