Love with vampire পর্ব-৯+১০

0
1760

#Love_with_vampire [৯]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

অহনার এখন কেমন যেন কথাগুলি সত্যি বলে মনে হচ্ছে।নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করলো।প্রথম দেখায় সে যেগুলি দেখিয়েছিলো সেসবই তো সত্যি ছিলো।আর সে মিথ্যাই বা কেনো বলবে? তবে কি এই কথাগুলিও সত্যি? আমি কি বাস্তবে পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই? আমার কি সত্যিই মৃত্যু হয়েছে? যদি পৃথিবীতে আমার মৃত্যু হয়েই থাকে তাহলে আমি পৃথিবীতে ফিরে যাবো কিভাবে? কি হতে চলেছে এসব আমার সাথে?

অহনা দেখলো বৃদ্ধ লোকটির সাধনা থেকে উঠলেন।অহনা তার সামনে গিয়েই প্রশ্ন করতে লাগলো

” আমি কি মৃত অবস্থায় পৃথিবীতে আছি? মৃত ব্যাক্তি তো কখনো জীবিত হতে পারে না।তাহলে আমি কিভাবে পৃথিবীতে ফিরে যাবো? ”

” এসব প্রশ্ন হঠাৎ তোমার মনে হলো কেন মা ”

” আমায় ভেতরে অবস্থান করা এই আত্মা এসব বলেছে আমায়।আপনি বলুন না, আমি কি সত্যিই মারা গেছি? তাহলে আপনি কি মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছিলেন? যে আমি পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারবো? বলুন প্লিজ,চুপ করো থাকবেন না ”

” মা তুমি শান্ত হও,এতো উত্তেজিত হওয়ার মতো কিছুই ঘটে নি ”

” উত্তেজিত হবো না মানে? এমন সব অদ্ভুত অদ্ভুত কান্ড আমার সাথে আর আমি উত্তেজিত হবো না? ”

” আমি সবটা তোমায় বলবো ”

” হ্যা বলুন, আমি জানতে চাই আমার সাথে পৃথিবীতে এখন কি ঘটছে ”

” মা, তুমি যা শুনেছো,অর্থাৎ ওই আত্নাটা তোমায় যা যা বলেছে সেসব সত্যি। পৃথিবীতে তুমি পৃথিবীতে এখন মৃত অবস্থায় শুয়ে আছো ”

” কি বলছেন আপনি এসব? আ…আ…আমি মৃত অবস্থায় শুয়ে আছি? ”

” হ্যা। তবে সেটা স্বাভাবিক মৃত্যু না।তোমার শ্বাস প্রশ্বাস চলছে।শুধু তোমার নিথর দেহ পড়ে আছে বিছানায়।তোমার এখান থেকে পৃথিবীতে পৌঁছালেই তুমি তোমার শরীরে প্রবেশ করবে।”

” আমার যে শুধু শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে,সেটা আমার বাবা,মা কেউ লক্ষ্য করছে না কেন? আমি যে বিছানায় শুয়েই আছি দুইদিন থেকে এটা তারা দেখেনি? ”

” মা রে,,পৃথিবীতে যে সময় চলছে,সেই সময় অনুযায়ী এই দুনিয়ার সময় চলে না।এই দুনিয়ার সময় অতি দ্রুত এগিয়ে যায় ”

” মানে? ঠিক বুঝলাম না।”

” আমি সবটা বুঝিয়ে বলছি।এখানে তোমার দুদিন কেটে গেলেও বর্তমান পৃথিবীতে এখনো তোমার বাসর রাত কাটেনি।পৃথিবীতে এক প্রহর সমান এই দুনিয়ায় দুইদিনের সমান।এখন বুঝতে পারছো? ”

” তার মানে ঘটনাটা হলো,আমার বাসর রাতের কেবল এক প্রথর ই কেটেছে? এখনো বাসর রাতের সেই রাতটাই কাটেনি? ”

” না।সেখানে এখনো সেই রাত বিদ্যমান। এবং তোমার শরীর সেখানেই পড়ে আছে।যার শুধু নিশ্বাস চলছে।এর ব্যাতিত আর কিছু করতে পারবে না।তুমি এখন তোমার আসল শরীরে নেই।এটা একটা মায়ার শরীর।এই শরীরে তোমার আত্মা প্রবেশ করিয়েছে ওই ভ্যাম্পেয়ারটা।”

” কিহ? আমি ঠিক বুঝলাম না? ”

” পৃথিবী থেকে তোমার আত্মাটা নিয়ে আসা হয়েছিল। এবং এই দুনিয়ায় আসার পর তোমার শরীরের মতো আরেকটা শরীর মায়ার দারা তৈরী করা হয়েছে।এবং সেখানে তোমার আত্মা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ”

” এই শরীর তাহলে আমার না? ”

” না ”

” আমার সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ধিরে ধিরে।আচ্ছা অনুভবকে কবে আমরা এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে পারবো? ”

” পূর্নিমা শেষ না হওয়ার পর্যন্ত তার দেখা আমরা পাবো না।আর পেলেও সেটা সেই ভয়ঙ্কর রুপে।সে স্বাভাবিক মানুষ রুপী না হওয়ার পর্যন্ত আমরা কিচ্ছু করতে পারবো না।”

” পূর্নিমার শেষ কবে? ”

” আর তেরো দিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।এর মধ্যে আমিও খুজে বেড় করবো অনুভবের এই অভিশাপ থেকে মুক্তি কিভাবে হতে পারে সেটা।”

” তেরো দিন তো অনেক সময়।এর মধ্যে তো পৃথিবীতে সকাল হয়ে যাবে তাই না? ”

” হ্যা ”

” তাহলে সবাই যখন দেখবে আমি উঠছি না,আর একসময় ডাকাডাকি করার পরেও যখন দরজা খুলবে না, তাহলে তো সেখানে হুলস্থুল কান্ড বেজে যাবে? তারা দেখবে আমার শ্বাস চলছে, কিন্তু আমি নিথর মৃত দেহের ন্যায় শুয়ে আছি তখন? ”

” সেটা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।তবে এটা ছাড়া আমাদের করার মতো আর কিছু নেই।”

” আমার আরেকটা কথা বলার ছিলো ”

” হ্যা বলো ”

” আমায় বলা হয়েছিলো যে আমি যদি পৃথিবীতে ফিরে যাই তাহলে এই দুনিয়ার সবকিছু ভুলে যাবো,এটা কি সত্যি ? ”

” হ্যা। তুমি যখন পৃথিবীতে ফিরে যাবে তখন এই দুনিয়ার কোনো কিছুই তোমার মনে থাকবে না।”

” মনে থাকলে সমস্যা কি? ”

” এই দুনিয়ায় সবাই আসতে পারে না।আর যারা আসে তারা যদি এই দুনিয়ার কথা মনে রাখে তাহলে পৃথিবীতে অনেককিছুই তার আর ভালো লাগবে না।তাই এই সবকিছু ভুলে যাবে পৃথিবীতে যাওয়ার সাথে সাথে ”

এভাবেই দিন পার হতে লাগলো।বৃদ্ধ লোকটি দিন রাত সাধনা বলে জানতে লাগলেন কিভাবে অনুভবের মুক্তি হবে।সে আবার মানুষরুপে ফিরতে পারবে।অহনা বসে বসে শুধু চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।যদিও বেশিরভাগ সময় সে নিজের ভেতরে থাকা আত্মার কাছ থেকে অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথা শুনতে পায়।আর যেটুকু সময় নিতান্তই নিজেকে খুজে পাওয়া হয়,সেই সময়টুকুতে চোখের জল ফেলে।

দেখতে দেখতে পূর্নিমার চাঁদ আস্তে আস্তে ঘনকালোয় নিমজ্জিত হতে লাগলো।তার আলোর স্নিগ্ধতা কমতে লাগলো।এবং চলে এলো সেই সময়, যখন অনুভব তার অভিশপ্ত শরীর থেকে মানুষের শরীরে ফিরে আসবে।

বৃদ্ধ লোকটির দিন রাত সাধনা সফল হয়েছে।তিনি খুজে পেয়েছেন অনুভবকে এই অভিশপ্ত রুপ থেকে মুক্তি দেওয়ার।অমাবস্যার প্রথম রাত আজ।

” মা রে,আজকেই তো অমাবস্যার রাত।অনুভব ফিরবে তার মানুষ রুপে”

” হু। আপনি খুজে বেড় করেছেন? কিভাবে সে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে? ”

” হ্যা ”

” কিভাবে? ”

” অনুভবের শরীরের সব শক্তি রয়েছে ওর গলায়।কেননা ওর গলায় সেই ভ্যাম্পেয়ারের কামড়ের ফলেই তার এই অবস্থা। তাই যদি কোনো ভাবে অনুভবের গলার সেই অংশের রক্ত কোনোভাবে তুমি নিয়ে আসতে পারো তাহলেই অনুভবের এই অভিশাপ থেকে বের পাওয়া সম্ভব ”

” ব্যাস শুধু এই টুকুই? আমিতো চুটকি দিয়ে এটা করতে পারবো ”

” বিষয়টা এতো সহজ না,যতটা ভাবছো।”

” তবে? ”

” নাও এগুলো রাখো ”

বৃদ্ধ একটি লাল রঙ্গের কাপড়ে বাঁধা ছোট্টো একটা পুটলি এগিয়ে দিলো।অহনা হাত বাড়িয়ে সেটা নিলো।

” এটা কি জিনিস? ”

” এটা হলো একটা শেখর। এই শেখর কোনোভাবে অনুভবের শরীরে প্রবেশ করাতে হবে।তাহলে সে পুরোটাই আমার বশ হয়ে যাবে।তখন আমি এখান থেকেই ওকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো ”

” ঠিক আছে।আমি যেভােই হোক এটা ওকে খাওয়াবোই ”

” এখন তুমি চলে যাও ”

” কোথায় যাবো? ”

” তোমার বাড়িতে,যেখান থেকে এখানে এসেছো। তোমায় অভিনয় করতে হবে,এমন অভিনয় করতে হবে যে তুমি ওর এই ভয়ংকর রুপ দেখোনি,তার বিষয়ে কিচ্ছু জানোনা।আগে যেমন ছিলো ঠিক সেরকম আচরন করতে হবে।যেন অনুভব কোনো কিছু টের না পায় ”

” আচ্ছা ঠিক আছে ”

কথা মতো হাতে সেই পুটলিটা নিয়ে গুহা থেকে বেড় হলো অহনা।সন্ধা প্রায় হয় হয় ভাব।চারিদিকে অন্ধকারের রেশ নেমে এসেছে।অহনা জোরে জোরে হাঁটছে।যেভাবেই হোক রাতের আগেই বাড়িতে ঢুকতে হবে।

বাড়িতে গিয়ে অহনা নিজের রুমে প্রবেশ করলো।আয়নাতে নিজেকে একটু পরখ করে ওয়াসরুমে চলে গেলো।সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে নিলো।আয়নায় বসে নিজেই নিজেকে সুন্দর করে সাজালো।কপালে কালো টিপ পড়লো,চুলে ফুল দিলো,হালকা লিপস্টিক দিলো।

অনুভবের জন্য সাজতে অহনার ভালোই লাগছে।মনের মধ্যে ভয় ও কাজ করছে,তবুও ভালোবাসার মানুষের জন্য সাজতে তার ভালোই লাগছে।হঠাৎ হঠাৎ কি যেন ভেবে মনের অজান্তেই হাসছে।

দরজায় মিহি টোকা পড়লো।অহনা দরজা খুলে দিলো।অনুভব ঘরে ঢুকলো।অনুভবকে দেখে অহনা এক পলকে চেয়ে আছে।অনুভবকে দেখলে সে দুনিয়ার সবকিছু ভুলে যায়।তার মনে হয় অনুভবের দিকে চেয়েই সে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।অনুভবও অহনার চোখে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। এরপর অহনার কাছাকাছি আসতে লাগলো।অহনা লজ্জায় পেছন ফিরতেই অনুভব অহনার হাত ধরে নিজের দিকে করে নিলো।দুই হাত অহনার গালে রাখলো।

তখন থেকেই অহনার কেমন যেন অনুভূতি হতে লাগলো।মনে হচ্ছে তাকে জালের মতো জরিয়ে ধরেছে কেউ।অহনার কেমন যেন দমবন্ধ হতে লাগলো।

চলবে?

#Love_with_vampire [১০]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

অহনার কেমন যেন অনুভূতি হতে লাগলো।মনে হচ্ছে তাকে জালের মতো জরিয়ে ধরেছে কেউ।অহনার কেমন যেন দমবন্ধ হতে লাগলো।

অহনা অনুভবের থেকে একটু দূরে সরে গেলো।অনুভব কিছুটা অবাক হয়ে গেলো অহনার এভাবে সরে যাওয়াতে।অহনা কোনোকিছু না বলেই ওয়াসরুমে চলে গেলো। দরজা বন্ধ করেই ফিসফিস গলায় বললো

” তুমি কি শুনতে পাচ্ছো আমার কথা? ”

অহনা তার শরীরে থাকা আত্মাটির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো।কিন্তু কোনো লাভ হলো না।কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।অহনা এই রমনীর নামটাও জানে না।কখনো নাম শুনে নেওয়া হয়নি।অহনা আবারো কাপা কাপা স্বরে বললো

” তুমি জেগে আছো? শুনতে পাচ্ছো আমার কথা? ”

এবার তার উত্তর পাওয়া গেলো।সে বলে উঠলো

” হ্যা পাচ্ছি।বলো কি বলবে ”

” আমার কেমন দম বন্ধ লাগছে,মন কেমন ছটফট করছে, এমন হচ্ছে কেনো? ”

” পৃথিবীতে বিছানায় পড়ে থাকা তোমার নিথর দেহের সত্যিটা তোমার পরিবার জানতে পেরেছে ”

” মানে? আমি ঠিক বুঝলাম না ”

” মানে হলো এখন পৃথিবীতে সূর্য উঠেছে,অর্থাৎ সকাল হয়েছে।এবং তোমার পরিবার তোমার অনুপস্থিতি তে উদ্বেগ হয়ে তোমার ঘরের দরজা ভেঙে তোমার ঘরে ঢুকেছে।”

” তারপর? ”

” তারপর তারা তোমার অস্বাভাবিক ভাবে শুধু শ্বাস চলার বিষয়টা নিয়ে অতি চিন্তায় পড়েছে।কিছুক্ষণের মধ্যে তোমাকে হসপিটালে নেওয়া হবে ”

” এজন্যই আমার অস্থির লাগছে? ”

” না,অস্থির লাগার কারন হলো তোমার জন্য তোমার পরিবার এখন মনে প্রাণে দোয়া করছে সৃষ্টিকর্তার কাছে।যেনো তোমার কিছু না হয় ”

” এই দোয়ার কারনেই এখন আমার অস্বস্তি হচ্ছে? ”

” হ্যা ”

” আমি কি এই সব ঘটনা দেখতে পারবো এখন? তুমি কি দেখাতে পারবে? ”

” আমি বাইরে থাকলে দেখাতে পারতাম, কিন্তু এখন পারছি না।আমার শক্তি এখন সীমাবদ্ধ ”

” আচ্ছা ”

” তোমার বিষয়টা জেনে অবাক লাগছে না? ”

” না লাগছে না ”

” কেন? ”

” এমন ঘটনা তো আমার সাথে ঘটেই চলেছে।অবাক হওয়ার শক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছে আমার ”

” তোমাকে নেওয়ার জন্য এম্বুলেন্স এসে গেছে ”

” আচ্ছা তুমি কি ওখানে কি ঘটছে সব দেখতে পাচ্ছো? ”

” হ্যা ”

” কি হচ্ছে এখন? ”

” তোমায় এম্বুলেন্সে উঠানো হচ্ছে ”

” তারপর? ”

” তোমার বাবা মা দুজনই এম্বুলেন্সের ভেতর বসে আছেন।তাদের সামনের সিটে তুমি শুয়ে আছো। তোমার মুখে অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে রাখা হয়েছে.।তোমার মা তোমার বাবার বুকে মাথা দিয়ে কান্না করছেন।তোমার বাবার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে,তার চোখ হতাশ হয়ে চেয়ে রয়েছে তোমার দিকে ”

অহনার খুব কান্না পেলো।বেসিনের ওপর ভর করে অনেক্ক্ষণ কান্না করে চোখ,মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে সে।বাইরে থেকে এর মধ্যেই অনেকবার অনুভব ডেকেছে,তার স্বরে কৌতুহলি চিহ্ন স্পষ্ট ফুটে উঠেঢ়ে। কিন্তু অহনা কোনো কথার উত্তর দেয় নি।শুধু কেঁদেই চলেছে। এবারেও তার নামটা জানার কথা ভুলে গেলো অহনা।

বেশ কিছুক্ষণ পর অহনা নিজেকে সামলে ওয়াসরুম থেকে বেড় হলো।এখন তার অস্থিরতা আরো বেড়েছে।অনুভব বিছানায় বসে আছে।অহনাকে বেড় হতে দেখেই অহনার কাছে গেলো অনুভব।দুই হাত ধরে অভিমানী স্বরে বললো

” কি হয়েছে তোমার? কোনো সমস্যা? ”

অহনা চুপ করে রইলো।তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।অনেক কাঁদতে ইচ্ছে করছে।অহনার মৌনতা ভেঙ্গে দিয়ে অনুভব আবারো প্রশ্ন করলো

” কি হলো অহনা বলো? কি হয়েছে তোমার? এতোক্ষণ ধরে ওয়াসরুমে কি করছিলে? ”

” কিছুনা ”

” কান্না করছিলে তুমি তাই না? তোমার চোখ দেখে তো তাই মনে হচ্ছে ”

” আমি কান্না করিনি ”

” তুমি মিথ্যা বলছো।তোমার চোখ দেখেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে তুমি কান্না করেছো।কি হয়েছে বলো আমায়? ”

” আমার কিচ্ছু হয়নি।প্লিজ আমার একটু একা থাকতে দিন প্লিজ।হাত জোর করছি আপনার কাছে ”

অনুভব হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে অহনার দিকে।অহনা আবারো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।অনুভবের খুব কষ্ট হচ্ছে অহনার চোখে জল দেখে।অনুভব তার বলিষ্ঠ হাত অহনার গালে রাখলো।অহনা মাথা নিচু করে কাঁদছে। অনুভব মুখটা তুলে বললো

” কি হয়েছে বলবে তো আমায় না কি? না বলে এভাবে কান্না করছো,এটা কি আমার ভালো লাগে বলো? ”

” আমার কিছু হয় নি ”

” তাহলে কান্না করছো কেন? তোমার কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না কেন বুঝোনা তুমি? ”

অহনা এবার চোখ তুলে অনুভবের চোখে তাকালো।অনুভবের চোখেও জল টুইটুই করছে।কচু পাতার ওপর শিশির বিন্দু যেমন টলমল করে তেমনি ভাবে অনুভবের চোখে জল টলমল করছে কখন যেনো টুপ করে গাল বেয়ে পড়বে।অহনা তার প্রতি অনুভবের এই কেয়ার দেখে নিজেকে আর আটকাতে পারলো না।অনুভবকে শক্ত করে জরিয়ে কান্না করলো।

আকাশে চাঁদ নেই।কিন্তু অদ্ভুত এক স্নিগ্ধ আলোয় চারপাশটা ভরে আছে।হিম শীতল বাতাশ বইছে চারপাশ।সেই বাতাসে ছাদের মাঝে দোলনায় অনুভবের বুকে মাথা রেখে খুব কাছাকাছি বসে আছে অহনা।বাতাসে অহনার চুল গুলি উড়ে উড়ে অনুভবের মুখের ওপর পড়ছে অনুভব খুব যত্ন সহকারে চুলগুলি আবার অহনার কানের পাশে গুজে দিচ্ছে।আহা ! কত সুন্দর অনুভূতি।

অহনার চুলে হাত রেখে বিলি কেটে দিচ্ছে অনুভব।অহনা বাচ্চা মেয়ের মতো চুপটি করে বুকে মাথা দিয়ে আছে।কোনো নড়াচড়া করছে না।অনুভব একটু মুচকি হাসলো।অহনার মুখের কাছে হেলে এসে বললো

” আমার অশ্রুরানীর কি কান্না হয়ে গেছে? ”

” হু ”

” চা খাবে? ”

” না ”

আবারো চুপ করে বুকে মাথা রাখলো অহনা।এখানে আসার পর তার খিদে অনুভূতি হয়নি।কিন্তু হঠাৎ লক্ষ্য করলো তার চা খেতে ইচ্ছে করছে।শুধু ইচ্ছেই নয়,প্রবল ইচ্ছে করছে।যেন এখন চা খেতে না পারলে তার দমবন্ধ হয়ে যাবে।কিন্তু এখনি তো অনুভবকে বললো যে চা খাবে না,এখন কিভাবে বলবো যে চা খেতে ইচ্ছে করছে?। অহনা বিরক্তি নিয়ে বসে আছে।অনুভব উঠে গেলো।কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো হাতে বড় বড় দুটি কাপে চা নিয়ে।অহনার দিকে একটা কাপ এগিয়ে দিয়ে বললো

” নাও চা খাও ”

” তুমি বানিয়ে আনলে? ”

” হুম।খেয়ে বলো কেমন হ’য়েছে ”

অহনা কাপে চুমুক দিলো।চা অসাধারণ হয়েছে।অনুভব যে এতো দারুন চা বানাতে পারে অহনার বিশ্বাসী হচ্ছে না।মুগ্ধ স্বরে বললো

” চা অনেক সুন্দর হয়েছে ”

” সত্যি বলছো তো? নাকি দায় সারানো কথা? ”

” না সত্যি বলছি।আমি নিজেও এতো সুন্দর চা কখনো বানাতে পারবো না ”

অনুভব হাসলো।অহনা মুগ্ধ হয়ে অনুভবের হাসি দেখলো।মুচকি হেসে চায়ে চুমুক দিলো।হিম শীতল বাতাসে কেমন যেন শীত শীত লাগছে অহনার।তারা দুজনই এখন নিরব।নিরবতা ভেঙ্গে অনুভব বলে উঠলো

” আমার চা’য়ে না মিষ্টি কম হইছে,আমি কম মিষ্টি খেতে পারি না।”

” তো? ”

” যদি তুমি কিছু মনে না করো তাহলে তোমার কাপ থেকে চা খেতে পারি? ”

অহনা কিছুটা লজ্জা পেলো।মুচকি হেসে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো।
এখন তারা দু’জন একটি কাপে চা খাচ্ছে।একবার অহনা চুমুক দিচ্ছে, এবার অনুভব।কখনো কখনো দু’জনই একসাথে চুমুক দিতে গিয়ে দুজনার মাথা একসাথে লেগে যাচ্ছে।অহনা যে অংশে চুমুক দেয় অনুভবেও সেখানটায় চুমুক দেয়।অহনার লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠছে।

ছাদ থেকে নামলো দু’জনই। রুমে বসে অনুভব এলটা বই পড়ছে।অহনা আয়নার সামনে তার লম্বা রেশমি চুলে চিরুনি বুলাচ্ছে।একটা চেনা স্বর বললো

” প্রেম তো ভালোই করলা ”

অহনা লজ্জা পেলো।মুচকি হেসে বললো

” তুমি দেখেছো? ”

” তুমি বারবার ভুলে যাও,আমি তোমার মধ্যেই থাকি।তোমার মধ্যে কি হচ্ছে সব আমার জানা ”

” হুম ভালো ”

” আচ্ছা তোমরা মানুষরা ভালোবাসো কেন? ”

” এটা কেমন প্রশ্ন? ভালোবাসি কেন মানে? ”

” মানে ভালোবাসাটা কি তোমাদের কাছে ? ”

” আমার কাছে ভালোবাসা মানে ভালো থাকা,ভালো রাখা,বিশ্বাস এবং সম্মান ”

” ও আচ্ছা ”

” তোমরা প্রেমে পড়ো না? ”

” আমাদের এসব অনুভূতি নেই।আচ্ছা আগে বলো এক কাপে চা খেতে কেমন লাগে? ”

” ধুর কি যে বলো তুমি ”

” আরে বলো না,আমার জানতে ইচ্ছে করছে।ভালোবাসলে মনের অনুভূতি এতো সুখের হয় কিভাবে? ”

” ভালোবাসার মানুষটা সাথে থাকলেই মনের সুখ ”

” তোমাদের প্রেম দেখে না আমারো প্রেম করতে ইচ্ছে করছে খুব জানো?”

” সে না হয় করো,আচ্ছা তোমার নাম কি? তোমার নামটা এখনো জানা হলো না ”

” আমার কোনো নাম নেই। তোমার যদি কোনো নাম দেওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে দিতে পারো”

” উমমম,,আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার নাম এখন থেকে রুপা। ঠিক আছে? ”

” হু ”

অহনার আয়নায় সামনে বসে মুচকি হাসতে দেখে অনুভব ভ্রু কুঁচকে বললো

” কি হয়েছে তোমার? তখন থেকে দেখছি তুমি আয়নার সামনে বসে হাসছো,আবার বিড়বিড় করছো? ”

অহনা জিভে কামড় দিয়ে বললো ” না কিছু না,এমনিই “।

রুমে আবছা আলো।চারিদিকে আবছা আলোয় সবকিছু বেশ বোঝা যাচ্ছে। অনুভব ঘুমোচ্ছে। অহনা ঘুমিয়ে ছিলো এতোক্ষণ। রুপা তাকে ডেকে তুললো।অহনা ঘুম ঘুম ঘোরে ওয়াসরুমে গেলো।ঘুমের ঘেরেই বললো

” কি হয়েছে বলো ”

” তুমি কি ভুলে গিয়েছো তোমায় কি করতে হবে? ”

” কি? ”

” চোখে জল দাও,ঘুমটা কাটিয়ে নাও ”

” দুর তুমি সবসময় বিরক্ত করো ”

অহনা চোখে জলের ছিটে দিলো।এখন চোখে ঘুম তেমন নেই। রুপা বললো

” তোমার কি করতে হবে মনে আছে? ”

” হ্যা,কিন্তু আমার না অনেক ভয় করছে।যদি ও জেগে যায়? ”

” সেটাই তো,যদি জেগে যায় তাহলেই তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে ”

অহনা রান্নাঘরে গেলো।দুকাপ চা বানালো।নিজের জন্য চা টা প্রথমে বানালো।তারপর অনুভবের চায়ের সাথে শেকড়টা মিশিয়ে দিলো।ব্যাস! কাজ হয়ে গেছে।

অহনা দুটি কাপ হাতে করে রুমে আসলো।অনুভবের দিকে তাকাতেই সে বিস্মিত,হতভম্ব হয়ে দারিয়ে রইলো।যেনো এখনি দম বন্ধ হয়ে যাবে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে