#Love_with_vampire [৭]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
” তুই অনুভবকে নিয়ে তাড়াতাড়ি হাটবি,আমাদের পিছনে ফেলে।যাতে আমরা দু’জনই আলাদা থাকতে পারি। এই সুন্দর ওয়েদারে আমি ঠাস করে প্রপোজ করে ফেলবো।তারপর চড় থাপ্পড় কি খাই খাবো।”
” হাহাহাহা,আচ্ছা ঠিক আছে।তবে আমার কি মনে হয় দোস্ত জানিস? সায়রাও তোকে ভালোবাসে ”
এভাবেই নিজেদের মধ্যে খুনসুটি করে পাহাড়ের সৌন্দর্য্য উপভোগ করছে চার বন্ধু।দেখতে দেখতে সন্ধা হয়ে গেলো।পাশাপাশি দুইটা তাবু টাঙানো হলো।একটা তাবুর ভেতর অনুভব আর সিহাব,আরেকটা তাবুর মধ্যে আশা এবং সায়রা।সন্ধ্যায় তারা কাটা পাহাড়ে অনেক মজা করেছে।শুকনো কাঠে আগুন জ্বালিয়ে গান,নাচ,খাওয়া দাওয়া সহ সন্ধাটা তাদের অনেক ভালোই কেটেছে।রাত একটু গভীর হতেই তারা আলাদা তাবুতে গেলো।
রাতে পাহাড়ের এই যায়গাটা কেমন যেন শুনশান হয়ে ছিলো।কোনো বাতাস নেই।বিষয়টা খুবই অদ্ভুত, পাহাড়েই এই উচ্চতায় সবসময় বাতাস থালার কথা।কিন্তু সে রাতে বাতাস তেমন ছিলো না।মাঝে মাঝে গরব দমকা হাওয়া বয়ে যেতে লাগলো।
অনুভবের কিছুতেই ঘুম আসছে না।শুধু এপাশ ওপাশ করছে।বিরক্ত হয়ে সিহাব কে ডাকার জন্য সিহাবের শরীরে হাত রেখে কয়েকবার ডাকলো।কিন্তু সিহাবের কোনো হেলদোল নেই।বোচারা বিভোর ঘুমে পড়ে আছে।অনুভব হাতে টর্চটা নিয়ে তাবু থেকে বেড় হলো।বাহিরের শুকনো কাঠ গুলিতো এখনো ধুকধুক করে আগুন জ্বলছে। অনুভব ব্যাগ থেকে একটা কাপে করে সেই আগুনে কিছিটা জল গরম করলো।সেখানে একটা টি-ব্যাগ দিয়ে চা বানালো।হাতে চায়ের কাপ নিয়ে হাটু মুড়ে আকাশের পানে চেয়ে রইলো।
সে রাতে আকাশে চাঁদ জ্বল জ্বল করছিলো।চাঁদের আলো এতোটা স্নিগ্ধ আর নরম যে সেটা অনুভবের মধ্যে দারুন সাড়া তুলতে লাগলো।অনুভব মুগ্ধ হয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলো।আশ্চর্য, চাঁদের কোনো অংশ অন্ধকার নেই,সম্পুর্ন চাঁদটাই উদিত হয়েছে।মনে মনে ভাবলো আজ কি পূর্নিমার রাত?।
আকষ্মিকভাবে কারো স্পর্শ অনুভবের ঘারে পড়লো।অনুভব একটু চমকপ্রদ হয়ে পেছনে তাকাতেই আশা একটু শব্দ করে হাসলো।এরপর নির্দিধায় অনুভবের গা ঘেঁসে বসলো। অনুভব বলে উঠলো
” একটু ডিস্টেন্স রেখে বসতে পারিস না? ”
” ডিস্টেন্স তো আছেই,কেন তোর কি মনে হচ্ছে তোর কোলে বসে আছি? ”
” সেটা বলিনি, এতোটাই কাছে বসেছিস যে তোর হাত আমার হাতের সাথে লেগে আছে ”
” তাতে কি হয়েছে।তোর হাতেই তো লেগেছে,অন্য কারো তো না,, আচ্ছা তোর হাতে কি? ”
” চা ”
” আমিও চা খাবো, আনবি? ”
” তুইও তো করে আনতে পারিস, ”
” না,আমি তোর হাতেই খাবো,বানিয়ে দে না প্লিজ ”
অনুভব উঠে চলে গেলো চা বানাতে।আশার কথা সে ফেলতে পারে না।আশা সবসময় অনুভবকে এভাবে জ্বালায়।অনুভবও তেমন কিছু বলে না।চুপচাপ শুনে যায়।
হাতে আরেক কাপে চা নিয়ে অনুভব বসলো।আশা অনুভবের একটু কাছে এসে বসলো।অনুভব সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে জোর করে হাত ধরে সেখানেই বসিয়ে রাখলো আশা।অনুভব হাত বাড়িয়ে চা এগিয়ে দিলো।
” থ্যাঙ্কস দোস্ত, এতো রাতে চা করে দেওয়ার জন্য ”
” ঢং ”
” চায়ে এতো চিনি দিছোস কেন?”
” আমি যেমন চিনি খাই তেমনি দিলাম,”
” আচ্ছা সমস্যা না।আচ্ছা দোস্ত তুই কাউকে ভালোবাসিস? ”
” হঠাৎ এসব কথা বলছিস কেন ”
” আচ্ছা বাদ দে।আজকের চাঁদটা খুব সুন্দর তাই না? ”
” হু ”
” এতো রাতে জেগে আছিস যে? ঘুম আসছে না?”
” ঘুম আসলে এখানে বসে থাকতাম?”
” তুই সবসময় আমার সাথে রেগে রেগে কথা বলিস,ভালোলাগে না আমার।তুই থাক গেলাম আমি ”
আশা রেগে উঠে দারাতেই অনুভব হাত ধরে নিজের কাছে বসালো।গম্ভীর স্বরে বললো
” খুব সাহস বেড়ে গেছে না? ”
” তুই সবসময় এমন করিস,সবসময় রেগে কথা বলিস।আমার খুব কষ্ট হয় ”
” আচ্ছা বাবা সরি,এই দেখ কান ধরেছি,আর রাগবো না ”
অনুভব সত্যি সত্যিই কান ধরেছে।আশা অনুভবের কান হাত সরিয়ে দিলো।হাতে হাত রেখে কাঁধে মাথা রাখলো।আশার কেন জানি আজ কোনো ভয় করছে না।আজকেই সে অনুভবের এতোটা কাছাকাছি আছে,এর আগে বাহানা দিয়ে হাতটা ধরলেও অনুভব হাত ছাড়িয়ে নিতো।কিন্তু আজ অনুভব কিছু বলছে না।তারা দু’জন একান্তেই চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করছে।
চারিদিকের আবহাওয়া কেমন যেনো অস্বাভাবিক ভাবে গরম হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা অনুভব লক্ষ্য করলো।আশা অনুভবের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।চারিদিকে গাছগুলোর থেকে কেমন যেনো শব্দ আসছে।বিকট বিকট গর্জনের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। অনুভবের একটু ভয় হতে লাগলো।কোনো হিংস্র জন্তু- জানোয়ার নয় তো?।
আশাকে কয়েকবার ডাকার পর সে চোখ খুললো।আশাকে কিছু জানালো না এইসবের।আশাকে তাবুর ভেতরে দিয়ে অনুভব জ্বলতে থাকা শুকনো ডাল হাতে নিয়ে তাদের তাবুর ভেতর ঢুকলো।সিহাবকে ডেকে তুললো।সিহাব ঘুমঘুম চোখে বসে আছে। অনুভব এই ভয়ংকর গর্জন,অস্থির পরিবেশের কথা সিহাবকে বললো।সিহাব এখন একটু গম্ভীর হয়ে গেলো।
” তোকে বারবা রবলেছিলাম এখানে না আসি,তুই শুনলি না,এবার কি হবে? যদি কোনো হিংস্র পশু আক্রমণ করে তাহলে কে বাঁচাবে আমাদের? ”
” সিহাব,তুই এতো হাইপার হচ্ছিস কেন,আমি আছি তো, একটু সাবধানে থাক তাহলেই হবে ”
ইতোমধ্যে আশা আর ফারহা ও জেগে উঠেছে পাহাড়ের মটমট শব্দ করে গাছগুলি ভেঙে পড়ার কারনে।সবাই আতঙ্কে একদম জড়োসড়ো হয়ে গেলো। কারো মুখে কোনো কথা নেই।
এমন সময় ঘটলো এক ভয়াবহ ঘটনা।তারা দেখলো দূর পাহাড় থেকে কি যেনো একটা লাফ দিলো।এক লাফে তাদের সামনে এসে দাড়িয়ে গেলো এক হিংস্র হায়েনা। তার আকার সাধারণ হায়েনার মতো না,বেশ বড়।তবে তার শরীরটা মানুষের মতোই, কিন্তু মাথায় যায়গায় হায়েনার মাথা।
অনুভব আকষ্মিকভাবে সবকিছু হতে দেখে থম মেরে দারিয়ে আছে। সিহাব প্রচন্ড ভীতু ছিলো। সেখান থেকে পালানোর জন্য বিপরীতমুখে পাগলের মতো ছুটতে লাগলো।একটু পর বিকট একটা চিৎকার দিয়ে ওঠে সিহাব।পাগলের মতো ছুটতে থাকায় পাথরের সাথে চোট পেয়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে পাহাড় থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায়।আশা,এবং সায়রা ভয়ে সেখানেই লুটিয়ে পড়ে। হিংস্র পশুটি দারিয়েই আগে।চাঁদের আলোয় দু’দিকের লম্বা দাঁত দুটি চকচক করে উঠলো।কিছু করার,আগেই ঝাপিয়ে পড়লো অনুভবের শরীরের ওপর।মাটিতে হাত চেপে রেখে অনুভবের গলায় সেই চকচকে দাঁত বসিয়ে দেয় হিংস্র পশুটি।
_______________
অনুভবের ভ্যাম্পেয়ার হওয়ার কারন ছিলো এটাই। বৃদ্ধর কথা শুনে অহনার শরীর হিমশীতল হয়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো
” তারপর কি হলো? আশা,সায়রা মেয়ে দু’টি কি বেঁচে আছে? ”
” না।তারা কেউ বেঁচে নেই। শুঊু বেঁচে রইলো অনুপম।ওর ঘারে দাঁত বসিয়ে দিতেই নজরে পড়লো আশা এবং সায়রার দেহ।হিংস্র পশুটা অনুভবকে ছেড়ে ওদের শরীরের সব রক্ত চুষে নেয়। অনুভব অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলো সেখানেই ”
” এরপর?”
” ওর জ্ঞান ফিরলো তিন দিন পর। চোখ খুলে দেখলো সে হসপিটালে।পাহাড় দেখাশোনা বন বিভাগের কতৃপক্ষের কেউ দেখে তাকে হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করায়।এরপরেও সব ঠিক ছিলো।১০ দিনের দিন সে হসপিটাল থেকে রিলিজ পায়।বাড়ির ব্যালকনিতে বসে তখন অনুভব পূর্নিমার আলো গায়ে মেখে বন্ধুদের কথা ভাবছে।কিছুক্ষণ পর চাঁদের আলো তার শরীরে পড়ায় সেও হিংস্র পশুর রুপ ধারন করলো।”
“কিন্তু কেন,? ”
” কারন পাহাড়ে ভ্যাম্পেয়ারটা যখন ওর দাঁত অনুভবের গলায় বসিয়ে দেয় তখন সেই দাঁতের সাথে ভ্যাম্পেয়ারের লালাও অনুভবের শরীরে প্রবেশ করে। তুমি হয়তো জানো না।ভ্যাম্পেয়ারের লালা যদি আারো শরীরে যায় তাহলে সেও ভ্যাম্পেয়ারে পরিণত হয়।অনুভবও এর শিকার হয়েছে। সেও ভ্যাম্পেয়ার রুপে রক্ষ চুষে খায়, এবং নিজের শক্তি বাড়াতে থাকে।”
” এখন অনুভবকে এই অভিশাপ থেকে বাঁচাতে আমায় কি করতে হবে? আমি সব করতে রাজি ”
চলবে?
#Love_with_vampire [৮]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
” এখন অনুভবকে এই অভিশাপ থেকে বাঁচাতে আমায় কি করতে হবে? আমি সব করতে রাজি ”
” আমার সেটা জানা নেই মা,আমায় সাধনায় বসে সে উপায় খুজতে হবে।কিভাবে সে আবার মানুষ রুপে ফিরে যেতে পারবে।”
” আমি কি একটু বাহিরে যেতে পারি? এখানে আমার কেমন দম বন্ধ লাগে।”
” হ্যা যেতে পারো।তোমার সাথে যে শুভ আত্মাটা আছে সে সবসময় তোমায় রক্ষা করবে।তোমার বিপদ হলে সেটা আগেই ও জানিয়ে দিবে।ওর লথা মতো তুমি চলবে।বিঝতে পেরেছো? ”
“হ্যা পেরেছি।আমি তেমন কোথাও যাবো না।গুহার বাহিরে একটা সরোবর আছে,সেখানে পদ্মফুল ফুটে আছে।সেখানেই যাবো”
“যেখানেই যাও।শুধু মনে রাখবে তোমার সাথের আত্মার কথা শুনবে।ওর কথার বিরুদ্ধে যাবে না”
” আচ্ছা ”
” আমায় সাধনায় বসতে হবে।দেখতে হবে কোন উপায়ে এর থেকে অনুভবের মুক্তি পেতে পারে। ”
বৃদ্ধ লোকটি সাধনায় বসলো।অহনার মন চাইছে একটু বাইরে বের হতে।কিন্তু একটু ভয় ভয় করছে বেড় হতে।মনের বিরুদ্ধতা সে সিদ্ধান্ত নিলো বাহিরে বেড় হবে।চুপচাপ বৃদ্ধর সামনে দিয়ে গুহার মুখের কাছে যেতে লাগলো। সামনে যেতেই একটা চাপা স্বরে কেউ বলে উঠলো
” বাহিরে বেরুলে তোমার বিপদ হতে পারে।ভ্যাম্পেয়ারটার চোখে পড়লে কিন্তু রক্ষা থাকবে না আর ”
অহনা একটু ভয় পেলো।কে কথা বলছে? আশেপাশে তাকালো,কাউকে দেখতে পেলো না।পরোক্ষনেই মনে হলো তার মধ্যেই তো একটা আত্মার প্রবেশ ঘটেছে।চাপা স্বরে সে আবারো বললো
” তোমাদের মানুষের মধ্যে এতো কিছু চিন্তাভাবনা আসে কিভাবে? ”
অহনা ফিসফিস করে বললো
” চিন্তাভাবনা আসে মানে? ”
” হু,এই যে তুমি কতো কিছু চিন্তা করার পর মনে করতে পারলে আমার অবস্থান তোমার ভেতর ”
” কেন এই জগতের কেউ কি চিন্তা ভাবনা করতে পারে না? ”
” না। আমাদের চিন্তা করার তেমন ক্ষমতা নেই।আমরা যখন যা ঘটবে তার পূর্ব মুহুর্তেই সেটা জানতে পারি ”
” পূর্ব মুহুর্তেই জানতে পারো? ”
” হ্যা ”
” কিভাবে জানতে পারো? কে বলে তোমাদের? ”
” কেউ বলে না।আপনা আপনিই জানতে পারি।ধরে নাও এটা এই অদ্ভুত জগতের মতোই আমাদের একটা অদ্ভুত শক্তি ”
” আচ্ছা আমি কি তোমাদের বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করতে পারি? ”
” হ্যা অবশ্যই,বলো কি জানতে চাও ”
” তোমাদের জন্ম হলো কিভাবে? ”
” আমাদের জন্ম নেই ”
” তাহলে তুমি কি এমনে এমনেই চলে আসছো? ”
” আমরা শুধু আলোর তৈরী। এই দুনিয়ার সবকিছুই আলোর তৈরী ”
” যদি অনুভবের এই অভিশাপ থেকে মুক্তি ঘটে তাহলে তোমাদেরও তো মুক্তি হবে তাই না? ”
” হ্যা ”
” তখন তোমরা কোথায় যাবে? তোমাদেরও কি মুক্তির পর যাওয়ার কোনো স্থান আছে? না মানে আমাদের মানুষের যেমন মৃত্যু হলে তার কর্ম অনুযায়ী নরকে, স্বর্গে গমন করে।তেমন কি তোমাদেরও কোনো কিছু আছে? ”
” না,আমাদের তেমন কিছু নেই,আমাদের মুক্তি হলে আমরা আলোর মাঝে তলিয়ে যাই।আলোতেই মিলে যায় আমাদের শরীর ”
” আচ্ছা আরেকটা কথা,আমাদের মানুষের তো অনেক ধর্ম আছে।হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান আরো অনেক অনেক ধর্ম আছে।আমরা তাদের প্রসন্ন করার চেষ্টা করিচতাদের দেওয়া আদেশ মেনে চলি।তাদের হৃদয়ে ধারন করি।তোমাদেরও কি সৃষ্টিকর্তা বা ধর্ম আলাদা আলাদা? ”
” আসলে আমাদের সৃষ্টিকর্তা নেই।আর আমাদের ধর্ম নিরপেক্ষতাও নেই।”
” ও আচ্ছা ”
” আর তোমাদের মতো মানুষেরও জানার বাহিরেও অনেক অলৌকিক বিষয় আছে,প্রতিনিয়ত ঘটে।যেগুলো হয়তো তোমার মতো কিছু মানুষ জানতে পারে।কিন্তু পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে তারাও ভুলে যায় ”
” ভুলে যায়? ”
” হ্যা ভুলে যায়।তুমিও ভুলে যাবে ”
” ভুলে যাবো? এখানে ঘটে যাওয়া সবকিছুই ভুলে যাবো? ”
” হ্যা।ভুলে যাবে ”
” কিন্তু কিভাবে? ”
” পৃথিবীতে যেতেই তোমার মস্তিষ্ক থেকে সকল বিষয় মুছে ফেলা হবে।তোমার এই দুনিয়ার কোনো কথাই মনে পড়বে না ”
” এটা করা কি খুব প্রয়োজন? জানলেই বা কি? ”
” এই দুনিয়ার কথা শুধু মানুষ স্বপ্নেই ভাবতে পারে।বাস্তবে ফেরার সাথে সাথেই ভুলে যাবে এটাই নিয়ম ”
” কিন্তু আমি তো এখন স্বপ্ন দেখছি না ”
” দেখছো।তুমি এখনো ঘুমিয়ে আছো।এবং স্বপ্ন দেখছো ”
” কি বলছো তুমি? হাহাহাহা তুমি অসুস্থ হয়ে গেছো,তোমার বিশ্রাম প্রয়োজন ”
” আমাদের কোনো বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না।আমরা ক্লান্ত হইনা।আর আমি যা বললাম সেটা সত্যি। তুমি সত্যিই এখন ঘুমিয়ে আছো ”
অহনা মনে মনে ভাবলো তার শরীরে যে আত্মাটি রয়েছে সে নিতান্তই বোকা,মানষিক ভাবে সে সুস্থ না।তার বলা কথা বিশ্বাস করা না করা একই।তবুও মনের একটা কৌতুহল থেকে প্রশ্ন করলো
” কিভাবে আমি ঘুমিয়ে আছি? ঘুমিয়ে থাকলে এই সব কিছুই কি স্বপ্ন? তার মানে আমি যদি এখন ঘুমিয়ে পড়ি,এবং একটা স্বপ্ন দেখি তাহলে আমি স্বপ্নের মধ্যেই ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখবো? হাহাহাহা ”
” তুমি আমার কথা আগে শোনো তারপর নাহয়….”
” তুমি চুপ থাকো।আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না।তুমি কোনো কাজের না।স্বপ্নে মানুষ নিজের শরীর নিজেই দেখতে পারে।আমি তো নিজের শরীর দেখতে পারছি না।অতএব আমি স্বপ্ন না বাস্তবে আছি।আমি চাই তুমি আমার শরীর থেকে বেড় হও।তোমার মতো বোকা মেয়ে আমার কোনো উপকার করতে পারবে না ”
” তোমার উচিৎ আমার কথা শোনা। সবটা তোমার জানা দরকার ”
” হাহাহাহাহা,,আচ্ছা বলো,আমার তো এখন কোনো তারা নেই।তোমার আজাইরা কথাই নাহয় শুনি।বলো আমার কি জানা দরকার? ”
” এই মুহুর্তে বাস্তবে পৃথিবীতে তুমি কি অবস্থায় আছো জানো? ”
অহনা তাচ্ছিল্যের স্বরে হাসতে হাসতো বললো –
” কি অবস্থায় আছি? ”
” তুমি বর্তমানে পৃথিবীতে মৃত অবস্থায় শুয়ে আছো ”
কথাএা শোনা মাত্র অহনা হাসতে হাসতে উঠে দারালো।অহনার এখন মনে হচ্ছে এই আত্মার শুধু অকর্মাই নয়,এর কাজ আজাইরা প্যাচাল পেরে আনন্দ দেওয়া।অহনার হাসি দেখে ভেতরে থাকা আত্মাটাও হাসছে।অহনা হাসি থামালো।গম্ভীর স্বরে বললো-
” তুমি হাসছো কেন? ”
” তোমার শরীরে আমার অবস্থান এখন।তুমি যা করবে আমাকেও সেটা কিছুটা প্রভাবিত করে।তুমি হাসলে আমারো হাসতে ইচ্ছে করে,তুমি কাঁদলে আমারো কাঁদতে ইচ্ছে করে।তোমার আনন্দ, কষ্ট সব আমারো অনুভূতি জাগায় ”
” একটা কথা শুনবে? ”
” হ্যা ”
” তুমি আমার শরীর থেকে বেড়িয়ে যাও,তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া,তুমি আমার শরীর থেকে আলাদা হয়ে যাও ”
” আমার সাহায্য তোমার প্রয়োজন। ”
এবার অহনা কিছুটা রেগে গেলো।রেগে রেগে কর্কষ গলায় বললো-
” তোমার কোনো সাহায্য আমার প্রয়োজন নেই।তোমার মতো আজাইরা কথা বলা কোনো আত্মা অন্তত কোনো কাজে আাসার কথা না।তুমি বিদেয় হও ”
” আমি জানিনা আমি কিভাবে বললে তুমি বিশ্বাস করবে,তবে আমি যা বলছি সব সত্যি বলতেছি।তোমার যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় তাহলে তুমি ওই বৃদ্ধ লোকটিকে বলতে পারো।তার কথা নিশ্চয়ই তোমার বিশ্বাস হবে? আর আমার অবস্থান তোমার শরীরে না হলে আমি বলয় তৈরী করে তোমায় দেখাতাম সব সত্যিটা।”
অহনার এখন কেমন যেন কথাগুলি সত্যি বলে মনে হচ্ছে।নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করলো।প্রথম দেখায় সে যেগুলি দেখিয়েছিলো সেসবই তো সত্যি ছিলো।আর সে মিথ্যাই বা কেনো বলবে? তবে কি এই কথাগুলিও সত্যি? আমি কি বাস্তবে পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই? আমার কি সত্যিই মৃত্যু হয়েছে? যদি পৃথিবীতে আমার মৃত্যু হয়েই থাকে তাহলে আমি পৃথিবীতে ফিরে যাবো কিভাবে? কি হতে চলেছে এসব আমার সাথে?
চলবে?