Love with vampire পর্ব-৩+৪

0
2449

#Love_with_vampire [৩]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

এ আমি কি দেখছি? কিভাবে সম্ভব এটা? এটাতো পৃথিবী নয়।

অহনা অনুভবের দিকে একবার তাকালো।সূর্যের উষ্ণ আলোয় এই প্রথম অনুভবকে দেখছে সে।কি অপরুপ সৌন্দর্য তার।অনুভবের চোখে চোখ পড়তেই মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো অহনা।

সামনের দৃশ্যটা দেখে অহনা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।সে দারিয়ে আছে বিশাল এক পাহাড়ে।নিচে রঙ্গিন রঙ্গিন সব গাছ,নদী।দূরে তাকাতেই নজরে পড়ে আকাশ স্পর্শ করা পাহাড়ের চূড়াগুলি।যার উপরিভাগে বরফে ঢাকা আস্তরণ সূর্যের আলোয় চকচক করছে।হয়তো এখানেই ঈশ্বরের অবস্থান।আকাশে প্রজাপতির মেলা,পায়ের নিচে নরম চুলের ন্যায় ঘাসের আস্তরণ। আশেপাশে নজর পরতেই দেখলো বিচিত্র সব জীব।সেখানকার গাছগুলিও ভিন্ন। এমন গাছ আদৌও সে দেখেনি।পাশের নীল রঙ্গের পাতাযুক্ত গাছটার কাছে দৌড়ে গেলো অহনা।সেখানে বসে আছে কিছু প্রজাপতির দল,প্রজাপতিগুলি আকাশে অনেকটাই বড়।তার মনের চঞ্চলতার যেনো আর বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছে।দৌড়ে কাছে গিয়ে পাতায় হাত দিতেই ভয়ে আতঙ্কে দু’কদম পিছিয়ে গেলো।ভয়ার্ত কন্ঠে অনুভবের দিকে চেয়ে বললো

” এ..এ..এটা কি হলো? আমি পাতাগুলিকে স্পর্শ করতে পারছি না কেন? ”

” এসব পাতা নয় অহনা ”

” কিহ? এগুলা পাতা নয়? তাহলে কি এগুলা? ”

” যেসব এতো সুন্দর গাছগুলি দেখছো, এইসব সূর্যের রশ্মি থেকে জন্ম হয়েছে। এসব শুধুুই আলোর প্রতিফলন ”

” কি বলছেন আপনি? এটা কখনো সম্ভব নাকি? ”

“এখানে সব কিছু সম্ভব অহনা।তুমি তো আর পৃথিবীতে না,অন্য কোথাও চলে এসেছো ” মনে মনে বিড়বিড় করে বললো অনুভব।

” আপনি কি কিছু বললেন? ”

” না কিছু না।এখানে এমন আরো অদ্ভুত কিছু দেখবে।এটা মায়ার এক জগৎ অহনা ”

” আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। মায়ার জগৎ মানে? ”

” এতো কিছু বুঝতে হবে না।চলো তোমায় এই যায়গাগুলি ঘুরিয়ে দেখাবো।”

অহনার কথা এড়িয়ে গিয়ে অনুভব ওর হাতে নিজের হাত রাখলো।অহনার সারা শরীর কেমন যেন করে উঠলো। হাতে হাত রেখে দু’জন হাটছে।অহনা চারিদিকে দেখছে আর বিস্মিত হয়ে অনুভবকে জিগ্যেস করছে এসব কি?। অনুভব মুচকি হেসে সেগুলি কি সেটা বলছে।অহনা কিছুদূর সামনে একটা ছোট্ট সরোবর দেখতে পেলো।দূর থেকে সরোবরের জল একদম কাচের মতো স্বচ্ছ লাগছে।পুরো সরোবর জুড়ে পদ্মফুলে ভরে গেছে।অনুভবের হাত ধরে টানতে টানতে সেখানে নিয়ে গেলো অহনা।

” আরে এভাবে দৌড়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? বলবে তো? ”

” দেখুন,কত সুন্দর একটা সরোবর ”

” হু,তবে তোমার থেকে সুন্দর না ”

” ধুর কি যে বলেন ”

অহনা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।অনুভবের মুখে এই প্রথম নিজের বিষয়ে কিছু শুনলো।অহনার লজ্জামাখা গালে অনুভব নিজের হাত ছোঁয়ায়।অহনা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে।অনুভব সরোবরের পদ্মগুলির দিকে তাকাতেই সরোবরের মাঝখানের সবচেয়ে বড় পদ্মফুলটি আপনাআপনিই অনুভবের হাতে এসে পড়লো।অহনা চোখ বন্ধ করে আছে বিধায় এই অস্বাভাবিক দৃশ্য তার কাছে দৃশ্যমান হলো না।অনুভব ফুলটা অহনার চুলে গুজে দিয়ে কপালে আলতোভাবে চুমু খেলো।অহনা চোখ মেলতেই এতোবড় পদ্মফুল দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো।সরোবরের পাড়ে একটা ছোট্ট নৌকা দেখতে পেলো অহনা।উৎসুক হয়ে অনুভবের হাতে হাত রেখে আহ্লাদী হয়ে বললো

” আমি নৌকায় উঠবো,চলুন না নৌকায় উঠি ”

” নৌকায় উঠবে,আচ্ছা চলো ”

অনুভব প্রথমে নৌকায় উঠে অহনার দিকে হাত বাড়ালো।অহনা এক হাতে শাড়ির কুচি সামলে আরেক হাত অনুভবের হাতে রেখে নৌকায় উঠলো।

নৌকায় উঠে অহনা কাঁচের মতো স্বচ্ছ জলে হাত বুলাচ্ছে।ছোট ছোট লাল,হলুদ রঙ্গের মাছগুলি হাতে এসে স্পর্শ করছে।এতো স্বচ্ছ জল অহনা কোনোদিন দেখেছে বলে তার মনে হয় না।নিজে নিজে ভাবতে থাকে “এটা কি সত্যিই পৃথিবী? নাকি কোনো রুপকথার নগরীতে এসেছি?এতো সুন্দর কেন এই যায়গার সবকিছু?। নিজের শরীরে চিমটি কেটে ব্যাথায় উহু করে উঠলো।অনুভব তার এই ছেলেমানুষীর দিকে চেয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।

অহনার ইচ্ছে হলো একটা ফুল হাতে নিবে।ছেঁড়ার জন্য পদ্মফুলে স্পর্শ করেই তড়িৎবেগে হাত সরিয়ে নিলো।অবাক হয়ে অনুভবের দিকে তাকিয়ে বললো

” এইযে শুনছেন,,কি হলো এটা? ফুলে স্পর্শ করতেই ফুলগুলি নীল থেকে টকটকে লাল হয়ে গেলো কেন? ”

” এই ফুলগুলি এরকমই,,স্পর্শ করলেই নিজেদের রং বদলে ফেলতে পারে।আবার স্পর্শ করো দেখবে আবার অন্য রং ধারন করবে।”

অনুভবের কথায় অহনা ভয়ে ভয়ে হাত বাড়ালো ফুলের দিকে।ছুঁই ছুঁই করতে গিয়েও ভয়ে ছুঁতে পারলো না।অহনার ভীতু কর্মকান্ডে অনুভব শব্দ করে হাসলো।অহনা মুগ্ধ হয়ে অনুভবের হাসি দেখছে।একটা মানুষ এতো সুন্দর করে হাসে কিভাবে?।অনুভব কাছে এসে অহনার হাতে হাত রেখে বললো

” এখন স্পর্শ করো ”

” না আমার ভয় করছে,আমি ছোঁবো না ”

” আমি আছি তো,ভয় কিসের ”

অহনার হাত ধরে ফুলে স্পর্শ করায়।অহনা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।হাতে ফুলের স্পর্শে আসতে আসতে চোখ মেললো।ফুলের দিকে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো।সত্যিই তো! ফুলের রং টকটকে লাল থেকে এবার টকটকে হলুদ হয়ে গেছে। অবিশ্বাস্য ঘটনা।

সূর্যের আলো এখন কিছুটা নরম হয়েছে।অহনা জড়োসড়ো হয়ে অনুভবের বুকে মাথা রেখে আছে।নৌকায় প্রজাতির দল উড়ে বেড়াচ্ছে। কখনো কখনো প্রজাপতি অহনার গালে এসে পড়ছে,অহনা হাতের ছোঁয়ায় স্পর্শ করলে সেই প্রজাপতি উড়ে যাচ্ছে।স্নিগ্ধ আলোয় চারপাশটা ছেয়ে এলো।সন্ধা হতে চলেছে।এই স্নিগ্ধ আলোয় অহনাকে আরো কোমল লাগছে।অনুভব অহনার লাজুক মুখখানা নিজের দুই বলিষ্ঠ হাতে নিলো।অহনা মুচকি হেসে অনুভবের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে।

অনুভব নিজের ঠোঁট অহনার ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেলো।অহনা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো।ওর কাঁপা কাঁপা পদ্মর পাপড়ির মতো ঠোঁটের সাথে অনুভব নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।অহনাও নিজেকে সামলাতে পারলো না।সেও নিজেকে জরিয়ে ফেললো ভালোবাসার মায়ায়।চারিদিকে প্রজাপতিরা ফুরফুর করে উড়ছে,তাঁদের শরীর থেকে যেনো আলোর বৃষ্টি ঝড়ছে।দেখলে মনে হবে আলো গুলো বালির মতো ঝরে পারে যাচ্ছে।চারিদিকে ঠান্ডা বাতাস,পদ্ম সরোবরে কিসের আলো যেন পড়ছে,সেই আলোয় জল গুলো চকচক করছে।ফুলগুলি নিজেদের সাজে সেজে উঠেছে।এসব কিছুর মধ্যে ছোট্ট একটা নৌকায় অনুভবের বুকে মাথা রেখে অহনা ডুবে আছে পরম ভালোবাসার চাদরে।

চারিদিকে আলো বাড়তে লাগলো।হঠাৎ আবহাওয়া কেমন যেনো পাল্টে যাচ্ছে।প্রজাপতির শরীর থেকে এখন আর কোনো চলোর বৃষ্টি ঝরছে না।গরম এক বাতাস বইতে লাগলো।অহনা অনুভবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।

চারিদিকে পরিবেশের অনেকটা বদলে গেছে।দূর বনে পশুদের ছোটাছুটির শব্দ কানে এলো অহনার।আকাশের পানে তাকাতেই দেখলো আকাশ পরিষ্কার।কিছুক্ষণের মধ্যেই চাঁদ দৃশ্যমান হবে।চারিদিকে থমথমে পরিবেশ হতে লাগলো।বিচিত্র পাখিগুলি পাগলের মতো ছোটাছুটি করছে,উড়তে গিয়ে একে অপরের সাথে ধাক্কা লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে।

অহনার মনের ভেতরটা কেমন যেনো কেঁপে উঠলো। অনুভবের দিকে তাকাতেই অহনা আরো ভয় পেয়ে গেলো।অনুভব কেমন যেনো অস্বস্তিতে আছে বলে মনে হলো।শার্টের বোতাম খুলছে,সারাশরীর ঘেমে একাকার। অহনা ভয় ভয় কন্ঠে বললো

” অনুভব কি হয়েছে আপনার? আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে? ”

অনুভব কোনো কথা বলছে না।পাগলের মতো নিজের চুল টানতে লাগলো।মনে হলো অনুভবের চোখদুটি কেমন যেনো হলুদ বর্ণ ধারন করছে।অস্ফুট স্বরে বললো

” বিরাট বড় ভুল করে ফেলেছি অহনা।কিভাবে এতোবড় ভুলটা হলো আমার।আনার আগে খেয়াল করা উচিৎ ছিলো।কেউ বাঁচবে না,কেউ না ”

” কি বলছেন আপনি? কি ভুল করেছেন আপনি? এরকম করছেন কেন? ”

আকাশে চাঁদ দৃশ্যমান হলো।চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়লো তাদের নৌকায়।অহনা সেই আলোয় অনুভবের দিকে তাকাতেই তার ভেতরটা মুচড়ে উঠলো।সিরদাড়া বেয়ে ঠান্ডা কি যেনো নেমে গেলো।

চলবে?

#Love_with_vampire [৪]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

আকাশে চাঁদ দৃশ্যমান হলো।চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়লো তাদের ছোট্ট নৌকায়।অহনা সেই আলোয় অনুভবের দিকে তাকাতেই তার ভেতরটা মুচড়ে উঠলো।সিরদাড়া বেয়ে ঠান্ডা কি যেনো নেমে গেলো।

অনুভব পাশ ফিরে চাঁদের দিক তাকিয়ে আছে।তার আকার আসতে আসতে ক্রমশ বড় হয়ে যাচ্ছে।শরীর বেয়ে ঘন কালো লোম আবৃত হচ্ছে সারা শরীরে।হাত,পায়ের নখগুলি অস্বাভাবিক বড় হয়ে গেলো,চাঁদের আলোয় ধারালো নখ জ্বলজ্বল করে উঠলো।

অহনা রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে দারিয়ে আছে।তার নড়াচড়া করার কোনো শক্তি নেই।অনেক চেষ্টার পর মুখ থেকে অস্ফুটে স্বরে একটা কথা বেড় হলো

“অ..অ..অনুভব,? ”

অনুভব পাশ ফিরলো।অহনার সামনে মুখোমুখি দাড়ালো। এখন সে আর মানুষ নেই।তার সারা শরীর ঘন কালো লোমে আবৃত হয়ে আছে,নখ গুলি ধারালো।সারা শরীর ঠিক আছে,কিন্তু মাথায় যায়গায় মাথা নেই।সেখানে একটা হায়েনা জাতীয় কোনো পশুর মাথা।চোখগুলি হিংস্র পশুর মতো,সেই চোখ হলুদ। হলুদ আভা বেড় হচ্ছে চোখ দিয়ে।এ দৃষ্টি মুহূর্তেই সব ধ্বংস করে দিতে পারবে।

অহনা কিছু বলতে পারলো না।ধপ করে লুটিয়ে পড়ে রইলো নৌকায়।ছোট্ট সরোবরের সকল পদ্ম শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।আকাশে তীব্র ভয়ে এলোমেলো হয়ে উড়তে থাকা বিচিত্র বড় বড় পাখিগুলি নিমিষেই ধপ করে মাটিতে পড়তে লাগলো।তার মধ্যে একটি পাখি নৌকার ওপর পড়তেই হায়েনা রুপী অনুভব সেই পাখিটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে দুহাতে ছিঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে নৌকা থেকে এক লাফ দিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরের সেই পাহাড়ের চূড়ায় চলে গেলো,তার গর্জনে সমস্থ যায়গাটা কেঁপে উঠলো।অহনার নিথর দেহ পড়ে রইলো সেই সরোবরের ছোট্ট নৌকাটায়।

পরেরদিন সূর্যের মৃদু আলো এসে অহনার চোখে পড়লো।পিটপিট করে চোখ খুললো।কোথায় আছে সেটা বুঝতে অহনার বেশ সময় লাগলো।প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গেলো।দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে নৌকাটায় দারাতেই টাল সামলাতে না পেরে আবারো বসে পড়লো।মনে করতে লাগলো কি হয়েছিলো তার কাছে।মনে হতেই বুকটা ছ্যাত করে উঠলো।কাল রাতের সেই ঘটনার কথা,অনুভবের একটা পশুতে পরিণত হওয়ার দৃশ্যটা চোখে ভাসতেই দম বন্ধ দম বন্ধ লাগছে অহনার।

কাল এই যায়গাটা যতটা সুন্দর লাগছিলো,আজ ততটা সুন্দর নয়।এই যায়গাটাও তার মতোই ভীতিকর অবস্থায় আছে।জলের পদ্মগুলি একটাও নেই,সব শুকিয়ে নেতিয়ে পড়ে আছে।জলের ওপর বিচিত্র সব পাখিগুলি ভেসে ভেসে আছে।দূরের সবকিছু এলোমেলো, ভেঙ্গে চূড়ে আছে।সূর্যের আলোয় অহনার এখন আর তেমন ভয় লাগছে না।প্রকৃতির আলো সকল ভয়কে দূরে সরে রাখে।ভয় অন্ধকারে,আলোয় ভয় নেই।

নৌকাটা সেই শেকড় দিয়ে ঠেলে অতি কষ্টে পাড়ে পৌঁছালো অহনা।মাথাটা এখনো ঝিমঝিম করছে।মনে একটা ভয় ধুকপুক করছে।সেখান থেকে সামনে এগুতে লাগলো অহনা।

বেশ কিছুদূর যেতেই আকাশে ধোঁয়া দেখতে পায় অহনা।তার মনে হলো নিশ্চই ওখানে কোনো মানুষ আছে,নইলে আগুনের ধোঁয়া উড়ছে কিভাবে?। কি আছে ওখানে দেখার জন্য দ্রুত হাটা শুরু করলো।অসাবধানতার কারনে একটা লতার সাথে পা পেঁচিয়ে নরম ঘাসে পড়ে গেলো অহনা।হাতে কিছুটা ব্যাথা পেয়েছে।তবুও সেসব উপেক্ষা করে উঠে দ্বারালো অহনা।সামনে একটা গুহা।যার ওপরে কয়েকশো ফুট উচু উচু লতা।সেই লতায় কিছুটা ঢেকে আছে গুহার মুখ।অহনার ভয় করতে লাগলো।আরেকটু কাছে যেতেই কিছু শব্দ কানে ভেসে এলো।শব্দটা কিসের সেটা বুঝতে পারলো না।পাশে দেখলো একটা মৃত পশুর হাড়গোড় পড়ে আছে।অহনা নিজেকে কিছুটা সুরক্ষা করার জন্য একটা হাড় হাতে নিলো।গন্ধে তার পেট উল্টে আসছে,কিন্তু এই হাড় তার সাথেই রাখতে হবে।এতে পারে ভেতরে কোনো জানোয়ার থাকবে।মূহুর্তেই মতো হলো,ভেতরে অনুভব নেই তো? কেনো জানি অহনার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে যে ভেতরে যেন মানুষ রুপী অনুভব থাকে।আর সে অহনাকে দেখার সাথে নিজের বুকে জরিয়ে ধরবে।কানে ফিসফিস করে বলবে কাল রাতে তুমি যা দেখেছো সব ভুল।যদি অনুভব এটা বলে তবে অহনা বিশ্বাস করে নিবে।কারন অনুভবকে সে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে।তাকে হারানোর কষ্ট তার সহ্য হবে না।

হাতে হাড়টা শক্ত করে ধরে এক পা একপা করে এগুচ্ছে। যতোই এগুচ্ছে ততই ভেতরে থাকা গুনগুন শব্দটা যেনো বেড়েই চলেছে।সাথে ধোঁয়ার পরিমানটাও বেশি হচ্ছে। অহনার মিনমিনিয়ে কয়েকবার বললো ” কে? কে ভেতরে?বাইরে এসো “। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো শব্দ পাওয়া গেলো না।বরং সে লক্ষ্য করলো যখন সে ডাকছে তখন কিছু সময়ের জন্য গুনগুন শব্দটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবার শুরু হচ্ছে।অহনা গুহার একদম নিকটে চলে আসলো।বুকে একটা গাঢ় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে।হঠাৎ তার সামনে একটা অতি সুন্দর রমনী।আসলো।রমনীকে দেখে অহনা ভয়ে চেচিয়ে উঠলো।

রমনীটি অতি রূপবতী। হবে সে মাটিতে স্পর্শ করে নেই,ভাসমান অবস্থায় দারিয়ে আছে।তার শরীর দিয়ে আলোর ছাঁটা বেড় হচ্ছে। অহনা ভয়ে ভয়ে বললো

” ক…ক…কে তুমি? ”

” আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী ”

” মানে? ”

” মানে আমি তোমার ভালো চাই।তোমায় বাঁচাতে এসেছি ”

” বাঁচাতে কেন? আমার কি এমন হবে যে আমায় বাঁচাতে তুমি এসেছো? ”

” তোমার অনেক বড় বিপদ ”

” কি বিপদ? ”

” সেটা এখন বলার শক্তি নেই আমার,তবে তোমার বিপদ হবে,অনেক বড় বিপদ ”

” তুমি কে? ”

” আমি এই দুনিয়ার সৌন্দর্যের দেখাশোনা করি।এই মায়ার দুনিয়ার রাজকন্যা আমি ”

” কি বলছো তুমি? এই পৃথিবীর দেখাশোনা করছো মানে? পৃথিবীর রাজকন্যা হয় নাকি কোনোদিন? ”

ভাসমান রমনী নিজের চোখ বন্ধ করলো।কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে বললো

” তুমি পৃথিবী থেকে এসেছো? ”

” পৃথিবী থেকে এসেছি মানে?আমি তো পৃথিবীতেই আছি।”

” তুমি পৃথিবীতে নেই।এটা অন্য জগৎ। এটাকে মায়ার জগৎ বলে।”

অহনার বুকটা কেঁপে উঠলো।মায়ার জগৎ মানে? এরকম কি কখনো হয় নাকি? পৃথিবী থেকে আমি অন্য কোথাও কিভাবে আসতে পারি?। তখন রমনীটি বলে উঠলো

” তুমি জালে পড়ে গেছো,এখান থেকে বেরুতে না পাড়লে তোমার অনেক বড় বিপদ হবে ”

” আমি তোমায় বিশ্বাস করছি না।তুমি যা তা বলবে সেটাই আমায় মেনে নিতে হবে? ”

” আমি তেমার অতীতকে তোমার সামনে উপস্থিত করছি,তুমি নিজেই দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নিও।আমি তোমার ভালো চাই”

রমনীটি নিজের হাতে একটি বলয় তৈরি করলো।সেখানে অহনা নিজের বাবা,মা কে দেখতে পাচ্ছে।এরপর একটা অদ্ভুত জিনিস দেখলো সে।

বিয়ের দিনের ঘটনা।সে যখন অধির আগ্রহ নিয়ে বিছানায় বসে আছে তখনি দরজা খুলে অনুভব ভেতরে ঢুকলো।ভেতরে ঢোকার পর অহনার কাছে গিয়ে ওকে স্পর্শ করতেই সাথে সাথে বিছানায় টলে পড়ে অহনা।

এটুকু দেখে অহনা শুকনো মুখে একবার সেই রমনীর দিকে তাকালো।তারপর আবারো বলয়ের দিকে চেয়ে রইলো

অহনা বিছানায় টলে পড়তেই অনুভব একটা জানোয়ারে পরিনত হচ্ছে। ঠিক যেমনটা সে কাল রাতে হতে দেখেছে।মুহূর্তেই অহনার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে উঠলো।

হায়েনারুপী হয়ে সে অহনাকে নিজের কাধে নিলো।এরপর সেখান থেকে জানাল ভেঙ্গে এক লাফ দিয়ে বড় বট গাছটার ডালে গেলো।এরপর একটা ভয়ঙ্কর গর্জন করে ওখান থেকে এক লাফ দিয়ে অনেকটা ওপরে উঠতে লাগলো।এরপর দেখলো চারিদিকে আলো।কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না।কিছুক্ষণ পর একটা পাহাড়ের চূড়ায় এসে নামলো হায়েনারুপী অনুভব। এরপর সে অহনাকে ঘাসের ওপর রাখলো।স্বাভাবিক মানুষ হয়ে অহনাকে কোলে নিয়ে সেই পুরনো বাড়ির ভেতরে গেলো ।

এরপর বলয়টি অদৃশ্য হয়ে গেলো।অহনা মনে মনে ভাবলে,এজন্যই সে বাসররাতে ঘুমিয়ে ছিলো।হঠাৎ কোমরে স্পর্শে সে জেগে উঠেছিল। তখন অনেক চেষ্টা করেছিলো বিষয়টা বুঝার।কিন্তু এখন সে সবটা বুঝে গেছে।

রমনীর দিকে তাকাতেই দেখলো সেখানে কেউ নেই।আশেপাশে তাকিয়েও তাকে দেখতে পেলো না।সামনে তাকাতেই গুহার ভেতর থেকে কেউ একজন বেড় হতে দেখছে অহনা।গুহা থেকে লোকটা বেড় হলো।আলোয় লোকটির মুখ দেখে অহনা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো।অস্পষ্ট স্বরে বললো,

” না,এটা কিভাবে সম্ভব?এটা হতে পারে না।কে..কে তুমি? ”

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে