Love with vampire পর্ব-২২+২৩

0
1665

#Love_with_vampire [২২]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

” অহনা মা এনাদের সন্তান না।আর আমার অহনা মা’র অনেক আলাদা ক্ষমতা ছিলো ”

ডাঃক্লার্ক এইটুকু দেখে চোখের চশমা খুলে টেবিলে রেখে চেয়ারে বসলেন।এতোক্ষণ তিনি দারিয়েই কাগজটা খুলেছিলেন।তিনি গম্ভীর হয়ে ভাবলেন,
” এ আবার নতুন এক রহস্যর উন্মোচন হলো ”

তিনি পুরো চিঠিটা প্রথমেই ফোনে ইংরেজিতে ট্যান্সসিলেট করেছিলেন।কেননা রহিম চাচা বাংলায় লিখে নিয়ে এসেছিলো।ক্লার্ক সেখান থেকেই পড়তে শুরু করলেন

আমার জন্মের পর থেকে আমি এই বাড়িতে বড় হয়েছি।বড় সাহেব আমারে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে।তখন থেকেই আমি এখানে কাজ করি।অহনা মা’র জন্ম হয় হসপিটালে।আহা! কি ফুটফুটে বাচ্চা একটা মেয়ে।অহনা মা’রে আমি নিজে স্কুলে নিয়ে যাই,নিয়ে আসি।সে চুপচাপ ধরনের ছিলো।প্রয়োজনের অধিক কথা বলতো না।অন্ধকারে বসে থাকতো,আর ভয়ঙ্কর কিসব যেন ভাবতো।অহনা মায়ের এই আলাদা থাকা,এই অদ্ভুত চরিত্রের জন্য তাকে ডাক্তার ও দেখানো হয়।শুধু এখন বলি, অহনা মা এনাদের সন্তান না।আর আমার অহনা মা’র অনেক আলাদা ক্ষমতা ছিলো”।

এটুকুই লেখা ছিলো চিঠিতে।ডাঃক্লার্কের মনে হলো এই বুড়ো লোকটির সাথে কথা বলা দরকার।কেননা এখন ক্লার্কেরও মনে হচ্ছে অহনা সাধারণ কোনো মেয়ে না।এই রহস্যর উন্মোচন করতে হলে তাকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে,অনেক তথ্য।

রহিম মিয়া সামনের চেয়ারে বসে আছেন। ডাঃক্লার্ক তাকে তখনি খবর দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছেন। সাথে গাড়িও পাঠিয়েছেন যেন সেই গাড়িতেই চলে আসে।রহিম মিয়া এখন ক্লার্কের সামনে বসে আছে।তার রুক্ষ শরীর,মাথার চুল ধবধবে সাদা,শরীরের চামড়া কিছুটা ঝুলে গেছে।তিনি নির্বিকার ভঙ্গিতে চা’য়ে চুমুক দিতে দিতে বললেন

” আমারে কি বইলবেন বইলেন স্যার, আমি বেশিক্ষন থাইকতে পাইরবো না “।

ক্লার্ক তার কথা কিছিই বুঝতে পারলেন না।তিনি মনসুরকে ডেকে পাঠালেন। মনসুর রহিম মিয়ার কথা ইংরেজিতে ট্রান্সলেশন করে ক্লার্ককে বলছেন।
[তাদের কথোপকথন]

” আপনি কিভাবে জানলেন মিস অহনা তাদের সন্তান না? ”

” সেদিন মেট্রিক পরিক্ষার ফলাফল দিছে।অহনা মা চইললা গেছে স্কুলে। বড় সাহেব তার আগের দিন বাড়িতে ছিলেন না।বাড়িতে ফিরলেন মেট্রিক পরিক্ষার ফলাফলের দিন।এসেই খোঁজ করলেন অহনা মা কোথায়,আমি গিয়ে বললাম স্কুলে গেছে।তিনি চিন্তিত ভঙ্গিতে আমার চা দিতে বলে ওপরে চলে গেলেন।আমি হাতের কাজ শেষ কর একটু দেরি করে চা নিয়ে গেলাম।দরজার কাছে আসতেই শুনতে পেলাম ছোট সাহেব বলছেন,অহনা আমাদের মেয়ে না।”

” শুধু এই কথাতেই বুঝতে পারলেন অহনা তাদের মেয়ে না? ”

” আমি তাদের আরো কথা লুকিয়ে লুকিয়ে শুনি।যদিও এজন্য নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়েছে। তবুও শুনেছি ”

” কি শুনলেন? ”

” তারা একটা কিসের টেস্টের কথা যেন বলছিলো,।ছোট সাহেবা তখন বললো এসব যেন অহনা জানতে না পারে।ছোট সাহেবা নাকি আগে থেকেই জানতো ”

” তারপর? ”

” তারপর এই বিষয়ে কিছু বলতে শুনিনি ”

” অহনা কি এটা জানে? ”

” না,কেউ তাকে বলেনি,আমিও বলিনি।বললে কষ্ট পাবে তাই বলিনি।অহনা মা’কে আমি মেয়ের স্নেহ করি,ওর কষ্ট আমার সহ্য হয় না ”

” আপনি চিঠিতে বলেছিলেন মিস অহনা স্বাভাবিক নয়,সেটার কারন কি? কি দেখে আপনার এটা মনে হলো? ”

” এটা আমার নজরে পড়ে অহনা মা যখন কলেজে উঠে তখন।রাতে যখন আমি দুধ নিয়ে যেতাম অহনা মা’কে দেওয়ার জন্য তখন আমায় কিসব গল্প করতো ”

” কি গল্প করতো? ”

” কোন মানুষ নাকি রক্ত খায়,আবার শেয়ালের মতো হয় এসব।আর যখন সে এসব বলে তখন তার শরীর একটুও নড়ে না।মনে হয় কাঠের পুতুল ”

” ক্ষমতার কথা যে বললেন সেটা কিভাবে বললেন? ”

” ওই বাড়ির পাশে বিরাট বড় জঙ্গল,।সেখানে হিংস্র সব পশুরা বেড় হয় সন্ধায়।তখননকলউ বাইরে বেড় হয় না।একদিন গভীর রাতে হঠাৎ চুপটাপ বৃষ্টি পড়ছিলো,ছাদে কাপড় ছিলো,সেটা আনতে যখন ছাদে যাই তখন দেখলাম অহনা মা দারিয়ে আছে,তার সামনে কয়েকটা শেয়াল গোল হয়ে বসে আছে।আমি ভয়ে ছোট সাহেবকে ডাকতে নিচে যাই,পড়ে যখন ছাদে আসি তখন দেখি কেউ নেই ”

” এমন ও তো হতে পারে যখন আপনি নিচে ডাকতে গেলেন তখন অহনা নেমে নিজের রুমে চলে গিয়েছিলো? ”

” সেটা দেখার জন্য অহনা মা’র ঘরে ছোট সাহেবের সাথে আমিও গেলাম।ছোট সাহেব জিগ্যেস করলে সে বললো,”সে ছাঁদে যায় নি “।তারপর যখন ছোট সাহেব চলে গেলো।তখন অহনা মা আমায় ডাকলো,আমি গেলাম,গিয়ে দেখি অহনা মায়ের চোখ টকটকে লাল।আমায় বললো ” চাচা, আপনি কাজটা ঠিক করেননি,আমার কথা বলার সময় আর কখনো এমন করবেন না “।এখন আশা করি আপনিও বুঝতে পেরেছেন অহনা মা সেদিন রাতে ছাদে গিয়েছিল, এবং শেয়ালের সাথে কথা বলেছিলো।এটা কি স্বাভাবিক কোনো মেয়ে করতে পারে? ”

ডাঃক্লার্ক চশমা টেবিলে রাখলেন।মনসুরকে বললেন তিনি যেন রহিম মিয়াকে গাড়ি করে রেখে আসে।

রহিম মিয়াকে দিয়ে এসে মনসুর ক্লার্কের সামনের চেয়ার টেনে বসলো।ক্লার্ক নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে মনসুরকে বললেন

” ডাঃ মনসুর,রহিম মিয়ার কথাগুলি দারা কি এটাই প্রমান হয় যে মিস অহনা স্বাভাবিক না? ”

” অবশ্যই স্যার, কোনো সন্দেহ নাই ”

” রহিম মিয়ার বয়স হয়েছে, তার চোখের দৃষ্টি এখন তেমন প্রখর না।”

” মানে স্যার আপনি বলতে চাচ্ছেন তিনি মিথ্যা বলছেন?!”

” না।আমি শুধু তার দেখা,এবং বাস্তবটা মেলাতে চেষ্টা করছি।এর পেছনে একটা হাইপোথিসিস দার করিয়েছি।”

” সেটা কি স্যার? ”

” রহিম মিয়া গভীর রাতে ছাঁদে গেলেন,ঝড়-বৃষ্টির রাত।তার মধ্যে তিনি ছাঁদে যাচ্ছেন,মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করা শুরু হলো।এরপর তিনি দেখলেন মিস অহনা ছাঁদে দারিয়ে আছে।এটা দেখে তিনি আরো ভয় পেয়ে গেলেন। কেননা তিনি আশা করেননি এতো রাতে কেউ ছাঁদে থাকবে। যেকেউ হলেই ভয় পেতো,কি পেতো না?! ”

” জি স্যার ”

” ভয় পেলে আমাদের নার্ভ সিস্টেমও ঠিকমতো কাজ করে না,এরপর তিনি দেখলেন কয়েকটা শেয়াল তার চারদিকে গোল হয়ে বসে আছে। আসলে কোনো শেয়ালই ছিলো না সেখানে ”

” কি বলছেন স্যার? শেয়াল ছিলো না? তাহলে কি ছিলো? ”

” আমি যখন তাদের বাড়িতে যাই তখন ওপরের বারান্দার রেলিঙের সাথে ৩টা কুকুর বাঁধা দেখেছিলাম।যত সম্ভব তারা শিকারী। শিকারী কুকুর গুলিই মিস অহনার পাশে বসে ছিলো ”

” কিন্তু স্যার,রহিম মিয়া শেয়াল বসে আছে সেটা দেখতে পেলো, আর সেটা শেয়াল নয়,বরং কুকুর এটা দেখতে পেলো না? এটা কিভাবে সম্ভব স্যার? ”

” ভালো বলেছেন মনসুর।তিনি একটু আগেই উল্লেখ করেছেন যে,রাত হলে কেউ শেয়াল ভীতিতে বেড় হয়না।আর এতো রাতে ছাঁদে যাওয়ায় তার মনে সেই ভীতি কাজ করছিলো।আর যখন সেখানে দেখতে পেলো মিস অহনা দারিয়ে আছে, আর সামনে কুকুর বসে আছে,কাজেই সে ভেবে নিলো এগুলো শেয়াল। বুঝতে পারছেন? ”

” জি স্যার ”

” তার মানে এখান থেকে প্রমাণ হলো মিস অহনার কোনো আলাদা ক্ষমতা,শক্তি নেই ”

” স্যার আরেকটা কথা,রহিম মিয়া তো আওয়াজ করেনি,তাহলে কিভাবে মিস অহনা বুঝতে পারলো যে ছাদে কেউ এসেছে,আর তখনি সে ঘরে চলে গেলো? ”

” ভয়ে সে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমেছিলো,সেই শব্দেই হতে পারে মিস অহনা বুঝতে পারে কেউ ছাঁদে এসেছে।আর তখনি সে ঘরে চলে যায়।সহজ বিষয় ”

” স্যার,আমি এই জীবনে আপনার মতো যুক্তি দিতে পারে এমন কাউকে দেখিনি।স্যার আপনার হাতটা আমার মাথায় রাখবেন প্লিজ,”

বলেই মনসুর হাটু গেঁড়ে ক্লার্কের সামনে বসে তার হাত নিজের মাথায় ধরলো।ক্লার্ক কিঞ্চিৎ হাসলেন।

___________________

অহনা সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো ছায়াটা বড় হচ্ছে, ঘরের আলো ক্রমশ কমে আসছে,তার মানে কি? সূর্যাস্ত হয়ে আসছে নাকি?অন্ধকার হওয়ার আগেই কিছু একটা করতে হবে।অনুভবকে দেয়ালে ভর করে আধশোয়া করে রাখলো।অনুভব চোখ বন্ধ করে আছে।অহনা হাঁটু গেড়ে আকুতি মিনতি করতে করতে বললো

” আমি তোমার কোনো ক্ষতি করতে আসিনি,আর গ্রন্থটাও নিতে আসিনি,চআমি শুধু এই গ্রন্থে থাকা কিভাবে অনুভব ঠিক হবে সেটা দেখার জন্য এসেছি,আমায় সাহায্য করো তুমি, ”

” এর আগেও কিছু লোক এসেছিলো এই গ্রন্থকে নিতে,আমি তাদের উদ্দেশ্য সফল হতে দেইনি।তুইও তাদের মতোই কেউ ”

” না,আমি তাদের মতো কেউ না,বিশ্বাস করো,আমি আমার স্বামীকে বাঁচাতে এসেছি ”

ছায়াটা অহনার আরো একটু কাছে আসলো।অহনা ভয়ে কাঁপছে। তখন ছায়া বললো

” কে তুই ? ”

” আমি অহনা,এই যে দেখছো,ইনি আমার স্বামী, সে একজন ভ্যাম্পেয়ার,তাকে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করতেই আমার এই গ্রন্থটা প্রয়োজন ”

” তোর শরীর এতো ভয়ঙ্কর,! ”

অহনা হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো।সে কি বলছে? আমার শরীর ভয়ঙ্কর?। অহনা নির্বিকার হয়ে উত্তর দিলো

” আমার শরীর ভয়ঙ্কর? ”

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে