#Love_with_vampire [১]
কোমরে হাতের স্পর্শে ঘুমের মধ্যেই কেমন নড়েচড়ে উঠলো অহনা।এবার অনুভব করলো পেটের ওপর থেকে সেই শীতল হাতের স্পর্শ বুকের কাছাকাছি আসছে।অহনা ঘুমঘুম ঘোরে হাত ছাড়িয়ে নিতে চাচ্ছে, কিন্তু পারছে না।বুক বেয়ে সেই শীতল স্পর্শ ঠোঁটে খেলা করছে।অহনা ধরফর করে বিছানা থেকে উঠলো।আশেপাশে কেউ নেই,বিছানায় সে একা বসে আছে।
পাশ ফিরতেই দেখলো তার সদ্য বিবাহিত স্বামী অনুভব, বিছানায় নেই।আজ তাদের বাসররাত ছিলো।অহনা এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। তাদের বিয়েটা হয়েছে পারিবারিক ভাবেই।তবে এ বাড়িতে আসতেই অহনার কেমন যেন একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করছিলো।বাড়িটা বিশাল।আগেরকার রাজা,জমিদারের বাড়ির মতো।এক কথায় এবানডম হাউজ গুলির মতো।দেয়ালে শ্যাওলা জমা।তবে অহনার ঘরটা অতি সুসজ্জিত ভাবে সাজানো।বিছানাটার ডিজাইন অনেকটা ময়ুরের মতো।বিছানায় বসলে মনে হয় ময়ুরের পিঠে বসে আছি।
ঘরের আবছা আলোয় শাড়ির আঁচলটা বুকে জরিয়ে নিলাম।পেটে তাকাতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।পেটে হাতের স্পর্শের যায়গা গুলি কালো হয়ে গেছে।বিছানা থেকে নামতেই ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম। পেটে অসম্ভব ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। দুহাত পেটে চেপে ধরে আয়নায় ঠোঁট দেখতেই অবাক হয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেলাম।ঠোঁট লাল টকটকে হয়ে আছে।কখন যেনো রক্ত পড়বে।বুক থেকে শাড়ীর আঁচলটা সরিয়ে দেখলাম বুকে, পেটে সেই শীতল স্পর্শ যেখানে যেখানে স্পর্শ করেছে সেখানেই কালো হয়ে আছে,আর অসম্ভব ব্যাথা হচ্ছে। ভয় ভয় নিয়ে ব্যালকনিতে যেতেই পেছন থেকে কেউ একজন আমার হাত ধরে ফেললো।রিতিমতো ভয়ে আমি জমে গেছি।পেছন ফিরতেই দেখলাম উনি অনুভব।
বাইরে থেকে হলুদ আলোর ছিটেফোঁটা তার মুখে পড়ছে।মনে মনে ভাবলাম,”পুরুষ মানুষ এতোটা সুন্দর হয় কিভাবে?”।বিয়ের আগে ওনাকে আমি দেখিনি।আমার ইচ্ছে ছিল চাকরি করবো তারপর বিয়ে।কিন্তু একটা হাস্যকর ঘটনার জন্য বিয়েটা করতেই হলো।ওনাকে এখন পর্যন্ত দেখিনি।ইচ্ছে ছিলো বাসররাতে দেখবো,তাই আগে কোনো পিক দেখিনি।উনি আমার হাত ধরে কাছে টেনে নির্লিপ্ত গলায় বললো-
“ব্যাথা পেয়েছো? দারাও এক্ষুনি সব ঠিক হয়ে যাবে।চোখ বন্ধ করো”
আমি বাধ্য মেয়ের মতো চোখ বন্ধ করলাম।সত্যি বলতে ওনাকে দেখে আমি পুরো হতভম্ব হয়ে গেছি।চোখ বন্ধ করতেই অনুভব করলাম উনি আমার পেটে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। প্রথমত ব্যাথায় একটি সরে আসলাম।উনি আমার আরো কাছে টেনে নিলেন।ওনার শ্বাস আমার মুখে আছড়ে পড়ছে।আমার ঠোঁটে,বুকে,পেটে ওনার হাতের ছোঁয়া লাগিয়ে দিলেন।
কি আশ্চর্য! এখন আর ব্যাথা করছে না।কিভাবে সম্ভব এটা? উনি কি যাদু জানে?নইলে ওনার স্পর্শ পাওয়ার সাথে সাথে ব্যাথা গায়েব হয়ে গেলো কিভাবে?তার থেকে বড় কথা,উনি কিভাবে জানলেন আমার ব্যাথার কথা? তবে কি উনিই আমায় স্পর্শ করেছিলেন? আর করলেও এতো ব্যাথা কেন পেয়েছিলাম?।এরকম হাজারো প্রশ্ন মাথা গুরপাক খাচ্ছে।আমার ভাবনাকে অতীত করিয়ে উনি বললেন
“এখন চোখ খোলো।আমাদের তো হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেলো।একে অপরকে চেনার সুযোগ হয়ে উঠলো না”
লজ্জায় মাথা নিচু করে বললাম “জি”
“অনেক রাত হয়েছে। তুমি শুয়ে পড়ো।কাল তোমায় আমাদের সারা বাড়িটা ঘুড়ে দেখাবো।”
” আপনি ঘুমোবেন না? ”
” হুম ঘুমাবো।নিচে একটু কাজ বাকি আছে।সেটা সেরেই আসছি”
” আপনি কিছু মনে না করলে কিছু কথা বলতাম”
” হুম বলো না,কি বলবে ”
” আমি যখন ঘুমোচ্ছিলাম তখন হঠাৎ কারোর হাতের স্পর্শে আমার ঘুম ভেঙ্গেছে।পাশ ফিরে দেখি আপনিও নেই।তাহলে আমায় স্পর্শ কে করেছিলো? ”
উনি মুচকি হাসলেন।আমি ওনার হাসি দেখে পুরাই শেষ।এতো সুন্দর করে হাসেন কিভাবে উনি?সৃষ্টিকর্তা মনে হয় ওনাকে নিজের হাতে বানিয়েছেন।উনি হেসে উত্তর দিলেন
” এখন ই এতো কিছু ভেবে বসো না।আস্তে আস্তে সব বুঝবা।এখন ঘুমাও।পেটে ব্যাথা এখনো আছে? ”
” না নেই ”
উনি আমার কপালে চুমু দিয়ে রুম থেকে বেড় হয়ে গেলেন।আমি থম মেরে দারিয়ে রইলাম।সারা শরীরে কেমন যেনো শিহরণ জেগে উঠলো।
বিছানায় যেতেই কাঠের তৈরী একটা আলমারির নকশায় আমার দৃষ্টি আটকে গেলো।এ বাড়িতে সবকিছুই কেমন অদ্ভুত রকমের সুন্দর। কাছে গিয়ে আলমারিটায় হাত বুলিয়ে ভেতরে কি আছে দেখার ইচ্ছে জাগলো।আলমারিটা খুলতেই দেখলাম এখানে শাড়ি,লেহেঙ্গা,থ্রি-পিচ আরো এত্তো এত্তো জামা দিয়ে ভর্তি।মনে মনে অনেক খুশি হলাম।
ওখান থেকে একটা সাদা রঙ্গের সাধারণ থ্রি-পিস হাতে নিলাম।দেখতে সাধারণ মনে হলেও হাতে নিয়ে বুঝতে পারলাম এটা অসাধারণ একটা ড্রেস।এরকম হাতের কাজের এতো সুন্দর ডিজাইন আমি কখনো দেখিনি।ঠোঁটের কোনো মুচকি হেসে ড্রেসটা পড়লাম।আয়নায় নিজেকে পরখ করে দেখছি।চোখে একটু কাজলের ছোঁয়া লাগালাম।উফফফ নিজের সৌন্দর্য দেখে নিজেরই হিংসে হচ্ছে।মিনমিনিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই বললাম,কিন্তু অনুভবের সৌন্দর্যের কাছে আমার সৌন্দর্য নেহাত ঠুমকো।
অনুভবের জন্য এই মাঝরাতে সাজলাম।কিন্তু উনি কোথায় গেলেন? আচ্ছা উনি নিচে কি করছেন?এতো কিউট একটা বউকে রেখে উনার নিচের কাজটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি?।
একরাশ অভিমান নিয়ে আয়নার সামনে বসে রইলো অহনা।অতি রুপবতী হওয়ার দরুণ কলেজে উঠার সাথে সাথে প্রতিটা ছেলে অহনার আশেপাশে ঘুরা ঘুরি করতো।এসব বিষয় অহনা লক্ষ্য করতো,কিন্তু কিছু বলতে পারতো না।সবসময় নিজেকে কেমন আনইজি ফিল হতো তখন।সারাক্ষণ একদল চোখ তাকে পরখ করছে,বিষয়টা অহনার প্রচন্ড বাজে লাগে।এমনকি মাঝে মাঝে দরজা বন্ধ করে অনেক কাঁদে।কান্না করতে করতে চোখ ফুলিয়ে ফেলে।অহনা মা নীলাঞ্জনা যখন তার মেয়েকে দেখে এভাবে কান্না করছে তখন তিনি মেয়েকে জরিয়ে ধরে শান্তনা দেন।অহনা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে আর বলে
” আমি এই সৌন্দর্য চাই না মা,আমিও সাধারণ মেয়ের মতো বাঁচতে চাই। এতশত ছেলের দৃষ্টি আমার আর সহ্য হচ্ছে না।”
অহনার সৌন্দর্যের জন্য অহনার বাবা,মায়ের কাছে সবসময় বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে।অহনার বাবা এই বিষয়ে খুব কঠোর।তিনি চান মেয়ে নিজ পায়ে দারাবে তারপর বিয়ে।
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ওঠার পর থেকে অহনা আজ কলেজ যায় না।কারনটা তার নিজের সৌন্দর্য।প্রতিদিনের মতোই অহনা সেদিনও কলেজে বান্ধবীদের সাথে বসে গল্প করছিলো।তখনি একজন সিনিয়র ভাইয়া অহনার কাছে এতো এত্তগুলা কালো গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে বসে।অহনা কোনো কিছু না বলে কলেজ থেকে বেড় হয়ে রিকশা নিয়ে বাসায় আসার জন্য রিকশায় উঠতেই সেই সিনিয়র ভাই অহনার রিকশার সামনে দারায়।অহনার হাত ধরে টেনে নিচে নামায়।রিকশার হুড লেগে অগনার হাতের কিছুটা অংশ কেটে র’ক্ত’ও বেড় হয়েছিলো।অহনা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো
” ভাইয়া আমায় যেতে দিন,প্লিজ ”
” খুব অহংকার তোর রুপের তাই না? দেখ তোর কি অবস্থা করি আজ ”
বলেই সিনিয়র ভাইয়াটা অহনার ওরনা টেনে নিয়ে হাতে পেচিয়ে রাখলো।অহনা লজ্জায়, ঘৃনায় লাল হয়ে দুহাত আড়াআড়ি করে বুকে রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।উনি বাইকে বসে বললেন
“কাল কলেজে এসে তুই নিজেই আমায় প্রোপোজ করবি বুঝলি? নইলে আজ তো শুধু ওরনা নিয়েছি।কাল কি হবে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারবি”
সেদিন বাড়িতে এসে অহনা তার মাকে জরিয়ে ধরে অনেক কান্না করলো।পরের দিন সকালে খবরের কাগজে সেই সিনিয়র ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলো।সারা শরীর ছিন্নবিন্ন হয়ে পড়ে ছিলো যেখানে অহনার সাথে বাজে ব্যাবহার করেছিলো।কোনো এক হিংস্র পশুর কবলে পড়েছিলো সে।তখন থেকেই অহনা কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
হঠাৎ অহনার মনে হলো নিচে গিয়ে দেখবে অনুভব কি করছে।চুপিচুপি দরজা থেকে বেড় হয়ে বারান্দার কার্নিশ ধরে নিচে তাকাতেই অহনা দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে চিল্লিয়ে উঠলো।নিচে দেখলো অনুভবের সারা শরীর মানুষের মতো,কিন্তু মাথার যায়গায়…..
চলবে?
#Love_with_vampire [২]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
নিচে দেখলো অনুভবের সারা শরীর মানুষের মতো,কিন্তু মাথার যায়গায় একটা হিংস্র পশুর মাথা।পশুরা যেমন দারিয়ে থাকে ঠিক তেমনি ভাবে হাত,পা মাটিতে স্পর্শ করে দারিয়ে আছে অনুভব।হাতের নখ গুলি চকচক করছে।
এই দৃশ্য দেখে অহনা নিজেকে সামলাতে পারলো না।প্রকট একটা চিৎকার করে ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে।এরপর আর কিছু মনে নেই।
জানালা অতিক্রম করে সূর্যের আলো অহনার ঘুমন্ত মুখের ওপর পড়ছে।অনুভব বিছানায় উবু হয়ে বসে অহনার পানে একপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। অহনা টিপটিপ করে চোখ মেলতেই দেখলো অনুভব উবু হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।অহনা কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।হঠাৎ মনে পড়লো কাল রাতের সেই ভয়ংকর দৃশ্যটার কথা।
আঁতকে উঠে বিছানা থেকে উঠে বসলো।কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো
” আ..আ..আপনি মানুষ না, আপনি মানুষ না ”
” কিসব বলছো তুমি অহনা? মানুষ না মানে? ”
” হ্যা,আপনি মানুষ না,আমি নিজ চোক্ষে দেখেছি আপনি একটা পশুতে পরিণত হচ্ছিলেন”
বলেই বিছানা থেকে নেমে দেয়ালের কোনে চলে গেলো অহনা।ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো
” আমার কাছে আসবেন না,আমি বাড়িতে যাবো।কাছে আসবেন না আমার ”
” অহনা শান্ত হও,তুমি ভুল দেখেছো, কোথাও ভুল হচ্ছে, আমার কথাটা শুনো? “বলতে বলতে অহনার কাছে এগুতেই অহনা আশেপাশে থাকাতে লাগলো,পাশের টেবিলেই ফল রাখার একটা ছুড়ি নজরে পড়লে।ছুড়িটা হাতে নিয়ে নিজের গলায় স্পর্শ করে বললো
” আমার কাছে আসবেন না,আসলে কিন্তু আমি নিজেকে শেষ করে দিবো,একদম কাছে আসবেন না ”
” অহনা কি করছো তুমি? পাগল হয়ে গেছো নাকি? ছুড়িটা রাখো,গলায় লেগে যাবে ”
হঠাৎ অহনা লক্ষ্য করলো সে হাত নড়াতে পারছে না।এতো চেষ্টা করেও শুধু হাত নয়!সারা শরীর ও এখন নড়াতে পারছে না।যেনো পাথরের মূর্তিতে রুপান্তর হয়ে গেছে।
অহনা দেখলো অনুভব একদম ওর কাছে এসেছে। অহনা ভয়ে ঠোক গিলছে।অনুভব অহনার একদম কাছে এসে শান্ত স্বরে বললো
” অহনা, আমার চোখের দিকে তাকাও ”
অহনা দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে রইলো।অনুভব গম্ভীর স্বরে কিছুটা ধমক দিয়ে বললো, ” অহনা আমার চোখের দিকে তাকাও, চোখ খোলো অহনা “। এরুপ গম্ভীর ভয়ংকর স্বর অহনা এর আগে কখনো শোনেনি।বুকটা কেমন যেন ছ্যাত করে উঠলো।পিটপিট করে অহনা চোখ মেললো।
চোখ মেলতেই অনুভবের গাঢ হলুদ বর্ণের রেটিনায় চোখ পড়লো অহনার।অহনা চোখ ফেরাতে পারছে না।অনুভবের চোখের গাঢ় হলুদ রং যেনো পাল্টে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর অনুভব অহনার কপালে একটা চুমু একেঁ দিয়ে বিছানায় এসে বসলো।অহনা নিজের হাতে ছুড়িটা দেখে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো
” আমার হাতে ছুড়ি কেন? ”
” আমি ফল খেতে চেয়েছিলাম, সেটাই কাটার জন্য ছুড়ি হাতে নিয়েছো ” অনুভব নিজের হাত চেপে ধরে বললো।
আসলে অনুভব অহনার এতোটাই কাছে গিয়েছিলো যে অহনার হাতে থাকা ছুড়িতে ওর হাত কেটে যাচ্ছে সেদিকে অনুভবের কোনো খেয়ালই ছিলো না।
” আপনার হাতে কি হয়েছে? দেখি? ” বলে ছুড়িটা টেবিলেই রেখে অনুভবের কাছে এসে বসলো অহনা।
অনুভবের হাতটা সরাতেই দেখলো অনেকটা যায়গা কেটে গেছে।অহনা ব্যাস্ত হয়ে সেখানে ব্যান্ডেস করে দিলো।কাল রাতের অনুভবের সেই ভয়ংকর রুপের কথা অহনার আর কিচ্ছু মনে নেই।অনুভবের সেই দৃষ্টিতে অহনার কিছু অতীত মুছে ফেলা হয়েছে।অনুভব মৃদু হেসে মনে মনে বললো
” তুমি আমায় মায়ায় আটকে গেছো অহনা,তোমায় পেতে যা যা করতে হয় আমি করবো”।
অহনা লক্ষ্য করলো এ বাড়িতে আসার পর থেকেই তার খিদে ভাবটা একদম যেন উবে গেছে।মনে হয় পৃথিবীতে খিদে বলতে আদৌও কিছু ছিলো না।এমনটা কেনো হচ্ছে অহনা বুঝতে পারলো না।
মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে। বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে দারালো।আসার পর থেকে এই জানালা খোলা হয়নি।অহনা একটা বিষয় লক্ষ্য করলো।ঘরে ৩টা বড় বড় জানালা,কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো কোনো জানালাই খোলা নেই,কিন্তু ঘরে আলো ঘলমল করছে।কিভাবে সম্ভব এটা?এই আলো তো কৃত্রিম আলো না? তাহলে জানালা বন্ধ অবস্থায় এতো আলো ঘরে প্রবেশ করছে কিভাবে?।
এসব ভাবতে ভাবতে অহনার চোখ পড়লো জানালার পাশেই নিচের ফ্লোরে পড়ে থাকা নীল বর্ণের তরলের ওপর।কৌতুহল বশবর্তী হয়ে কাছে যেতেই দেখলো ফ্লোরে ফোঁটায় ফোঁটায় জমে আছে।দেখতে রক্তের মতোই লাগছে।কিন্তু রক্তের বর্ণ তো লাল।ফ্লোর থেকে উঠে টেবিলে রাখা ফল কাটার ছুড়িটায় তাকাতেই অহনা একটু ভয় পেয়ে গেলো।ছুড়িটা হাতে নিয়ে দেখলো ছুড়ির শেষ প্রান্তেও নীল বর্ণের সেই তরলগুলি ভরে আছে।কি এগুলা? এভাবে ছুড়িতে আবার মেঝেতেও পড়ে আছে?।নিজেকেই প্রশ্ন করলো অহনা।
পেছন থেকে অনুভবের ডাকে ফ্লোর থেকে উঠে পেছন ফিরলো অহনা।
” ফ্লোরে বসে বসে কি দেখছো হুম ?
” তেমন কিছু না,এই দেখুন এই ছুড়িটায় নীল নীল কি যেন ভরে আছে,আর ফ্লোরেও ছিটেফোঁটা লেগে আছে ” অনুভবের দিকে ছুড়িটা এগিয়ে দিয়ে অহনা বললো।অনুভব মৃদু হেসে বললো
” ছুড়িতে তো কিছুই নেই?”
“আরে দেখতে পাচ্ছেন না, এই তো এখানেই ” ছুড়িটার শেষ প্রান্তে হাতের ইঙ্গিতে দেখিয়ে দিতেই অহনা লক্ষ্য করলো সত্যি সত্যিই কিচ্ছু নেই।তৎক্ষনাৎ ফ্লোরে তাকাতেই দেখলো সেখানেও সেই নীল বর্ণের ছিটেফোঁটাগুলি হাওয়া হয়ে গেছে।অহনা হতভম্ব হয়ে বললো
” বিশ্বাস করুন,একটু আগেই ছিলো,আমি নিজ চোখে দেখেছি।রক্তের মতো নীল বর্ণের তরল এই ছুড়িটায় লেগে ছিলো।আর ফ্লোরেও পড়ে ছিলো।এখন দেখতে পাচ্ছি না কেন? এখনি তো দেখলাম ”
” তোমার মনের ভুল হচ্ছে অহনা, ”
” এতোবড় ভুল কিভাবে আমার হতে পারে? কিছুতো একটা সমস্যা আছেই ”
” হাহাহা,,কোনে সমস্যা নেই অহনা,তুমি নেহাতই ভুল দেখেছো।এখানে নীল তরল পদার্থ আসবে কিভাবে? আর আসলে তো সেটা অদৃশ্য হয়ে যাবে না তাই না?
” হু।কিন্তু..”
” আর কোনো কিন্তু নয়।ঘুরতে যাবে? ” অহনার কথা থামিয়ে দিয়ে অনুভব বললো।
” কোথায়? ” উৎসুক কন্ঠে বললো অহনা।
” কাল আসার পর থেকে তো বাইরেই যাওয়া হয় নি।তাই ভাবলাম তোমায় নিয়ে একটু ঘুরতে যাবো,তেমন কোথাও না,পাশেই একটা সমুদ্র আছে।সেখানে প্রবাহমান ঝরনাও বইছে। ”
” হু যাবো।আপনি শুধু দুই মিনিট সময় দিন আমি এক্ষুনি চেঞ্জ করে আসছি।”
আনন্দিত হয়ে অহনা একটা আকাশে রঙ্গের শাড়ি বেড় করলো আলমারি থেকে।কি আশ্চর্য, আলমারিতে শাড়িটা সাধারণ মনে হলেও বেড় করতেই অহনার চোখ চকচক করে উঠলো।শাড়িটা অনেক সুন্দর। একই ঘটনা কাল রাতেও ঘটেছে।অহনার মনে রহস্যর বেড়াজাল যেনো বেঁধেই যাচ্ছে। এখন ওসব বাদ দিয়ে অহনা শাড়িটা পড়ে আয়নায় নিজেকে সুন্দর করে সাজালো।
অনুভব বিছানায় বসে বসে অহনার সাজ দেখছে।অহনা সাজছে,খোলা চুলগুলি বেশির ভাগ ঘাড়ের দিকে সরে গিয়ে অহনার সাদা ধবধবে পিঠ অনুভবের নজরে এলো।অনুভব উঠে গিয়ে অহনাকে পেছন থেকে জরিয় ধরে ঘাড়ে নাক ডুবালো।অহনার সিল্কি চুলের ঘ্রাণ মাতাল করে তুলছে অনুভবকে।
অহনা চমকে উঠলো। মনে হলো বরফে ঢাকা কেউ একজন তাকে স্পর্শ করছে।আয়নার সামন থেকে সরে দারালো।পেছন ঘুরতেই দেখলো অনুভব।সাথে সাথেই অনুভবকে স্পর্শ করে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লো অহনা।অনুভবের শরীর তো স্বাভাবিক ই আছে।তাহলে প্রথমে এতো ঠান্ডা অনুভব হলো কেন?।
অনুভব জিগ্যেস করলো ” কি হলো অহনা? ”
অহনা মুচকি হেসে বললো ” না কিছু না।চলুন আমি রেডি “৷ কিন্তু মনে মনে অহনার অজানা আতঙ্ক ঠিকই বাড়তে লাগলো।
বাড়ি থেকে বেড় হতেই অহনার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।এ আমি কি দেখছি? কিভাবে সম্ভব এটা? এটাতো পৃথিবী নয়, অনুভবের দিকে তাকাতেই সারা শরীর শিউরে উঠলো।
চলবে?