খেলাঘর পর্ব-৩৫
লেখা-সুলতানা ইতি
মিথিলা ভাবছে এতো গুলো দিন পর সে কেনো এলো আমার বাড়িতে যখন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলাম তখন ও তো সে আমায় ফিরিয়ে নিতে আসেনি তা হলে আজ কেনো?
মিথিলা- উনি কেনো এসেছে কিছু বলেছি কি?
নির্ঝরিণী – অনেক বার জানতে ছেয়েছি উনি বলছে তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো,
মিথিলা- আমি এখন পিছনের দরজা দিয়ে বাসায় ডুকবো, তুইগিয়ে বলবি আপু আসে নি ওকে
নির্ঝরিণী – ঠিক আছে, এই আয়ান ব্যাগ গুলো আপুরর সাথে নিয়ে যা তো
নির্ঝরিণী বসার ঘরে ফিরে এলো
ইভান নির্ঝরিণী কে দেখে উঠে দাঁড়িয়েছে
– তোমার আপু এসেছে?
নির্ঝরিণী একটু ইতস্তত করে বল্লো
– না, আপু আসেনি, আমি বলি কি আপনি আজ চলে যান
ইভান- আর একটু অপেক্ষা করি না হয়তো এসে পড়বে তোমার আপু
নির্ঝরিণী আর কিছু না বলে ভেতরে চলে যায়
গত পাঁচ ঘন্টা ধরে বসে আছি অপেক্ষার সময় সত্যি অনেক কষ্টকর কাটতেই চায় না
মিথিলা আমি জানি তুমি বাসায় ফিরেছো শুধু আমার সামনে আসতে চাইছো না, আসলে না আসতে চাওয়া টা ই স্বাভাবিক তোমার সাথে কতো খারাপ বিহেভ করেছি, যার জন্য করেছি তাকে তো পেয়ে সম্পূর্ণ পাইনি,আজ সে আমার সাথে এক ছাদের নিছে থেকে আলাদা রুমে থাকে দুজনের চলার পথ আলাদা হয়ে গেছে, আসলে নায়া কখনো আমায় ভালোবাসেনি একটা লোভী প্রতারক মেয়ে আমি বুঝতে পারিনি ওর মিষ্টি চেহারার পিছনে ভয়ংকর রুপ টা ছিনতে পারিনি
মিথিলা তোমাকে ফিরে আসো এই কথা বলার মুখ আমার নেই কিন্তু ক্ষমা তো ছাইতে পারি অনেক অন্যায় করেছি তোমার সাথে জানি তার ক্ষমা হয়না তবু ও আসলাম,
ইভান আর ও কিছুক্ষন বসে থেকে আয়ান কে ডাকলো
আয়ান- কিছু বলবেন?
ইভান- তোমার আপুকে একটু আসতে বলো
আয়ান- আপু এখন ও আসেনি
ইভান- মিথ্যা বলছো কেনো মিথিলা অনেক আগে ই এসেছে
আয়ান- তা হলে নিশ্চয়ই এতোক্ষনে আপনার বুঝে যাওয়ার কথা আপু আপনার সাথে দেখা দিতে চায় না
ইভান- বুঝতে ফেরেছি আয়ান,তবুও প্লিজ তোমার আপু কে একটু বুঝিয়ে বলো না
আয়ান- স্যরি আমরা আপুর ছোট হয়ে তাকে কি বুঝাতে যাবো আমাদের ছেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান আপু রাখে সো বুঝতেই পারছেন
ইভান আর কিছু বল্লো না, ভাবছে চার বছর আগের কথা, তখন এই বাড়িতে এলে পিচ্ছি দুই টা দুলাভাই দুলাভাই করে পাগল করে দিতো আজ ওরা মনে হয় দুলাভাই বলে ডাকতে ও ভুলে গেছে, খুব অন্যায় করেছি আমি তাদের সাথে তাদের বোনের সাথে ইভান নিশ্চুপ উঠে বেরিয়ে গেলো মিথিলা আসবে না বুঝে গিয়েছে
আয়ান আর নির্ঝরিণীর এক্সাম শেষ দুজনেই এখন ফ্রি সময় পার করছে,
মিথিলা- আয়ান নির্ঝর তোরা দুজনেই তো এখন ফ্রি আছিস,আমি চাই তোরা এই অবশর সময়ে বসে না থেকে কম্পিউটার শিখ
আয়ান- আপু কম্পিউটার শিখতে গেলে অনেক টাকা লাগবে
মিথিলা- চিন্তা নেই পরশু থেকে জবে জয়েন করবো, কম্পিউটার খরচ দিতে পারবো
নির্ঝরিণী – আপু আমার কম্পিউটার শিখতে মন চায় না
মিথিলা- তা হলে তুই কি করতে চাস
নির্ঝরিণী – আপু আমি গান টা কন্টিনিউ করতে চাই,
মিথিলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো নির্ঝরিণীর দিকে
মিথিকার তাকানো দেখে নির্ঝরিণী ভয় পেলে ও অনেক সাহস সঞ্চয় করে বল্লো
– প্লিজ আপু রাগ করিস না,আমার খুব ইচ্ছে নিজে কিছু করার আর দেখ না আপু আমি তো গান গাইতে পারি সবাই আমার গানের প্রশংসা করে,প্লিজ আপি একটা সুযোগ দে না আমায়
মিথিলা গম্ভীর কন্ঠে বল্লো বাবা মা বেছে থাকলে কি করতো আমি জানি না তবে গান করা টা আমার মনে হয় উনারা পছন্দ করতেন না
তুই এখন বড় হয়েছিস অনেক কিছুই বুঝতে শিখেছিস, খুব কঠিন সময় পার করেছি, কঠিন
সময় টা কিন্তু এখন ও কাটেনি, সো আমার কিছু বলার নেই তোর যা ইচ্ছে কর তার পর আয়ানের দিকে তাকিয়ে বল্লো কিরে তোর ও কি কম্পিউটার শিখতে আপত্তি আছে?
আয়ান- না আপি আমার কোন প্রব্লেম নেই
মিথিলা – ওকে তোরা যা এখন আমার একটু কাজ আছে
নির্ঝরিণী মুখ ভার করে বসে আছে
আয়ান- এমন পেত্নীর মতো মুখ করে বসে আছিস কেনো? আপু তো বলেই দিয়েছে তোর যা ইচ্ছে করতে আপুর কোন আপত্তি নেই
নির্ঝরিণী – আপু তো বলেছে কিন্তু আমি জানি আপু মন থেকে আমার গানের ব্যাপার টা মেনে নেয়নি
আয়ান- তাতে কি তুই যখন গান গেয়ে সাকসেস হবি লোকে তোকে ছিনবে, যখন আপু রাস্তায় বের হলে সবাই বলবে ঐ দেখ শিল্পী নির্ঝরিণীর বোন যাচ্ছে তখন আপু ঠিক ই ফ্রাউড ফিল করবে দেখিস
নির্ঝরিণী শুকনো মুখ করে বল্লো
– বলছিস তুই?
আয়ান- হুম
নির্ঝরিণী – ভাই তুই পাশে আছিস তো
আয়ান- অবশ্যই,
নির্ঝরিণী – ওকে তা হলে কাল ই আমি গানের স্কুলে যোগাযোগ করবো
আয়ান- এতো তাড়া তাড়ি কি করে করবি?
নির্ঝরিণী – কাউকে বলবি না তো?
আয়ান- না
নির্ঝরিণী – আপুকে ও বলতে পারবি না
আয়ান- তুই সত্যি করে বলতো তুই কার কথা বলতে চাইছিস
নির্ঝরিণী – আয়াপ খানের কথা উনার পার্সোনাল নাম্বার দিয়েছে আমাকে,বলেছে উনার সাথে বললে উনি সব ঠিক করে দিবে
আয়ান- ওকে তোর যা ইচ্ছে
আজ মিথিলার অফিসের প্রথম দিন মিথিলা অফিসে যেতেই ম্যানেজার বল্লো
আফরিনা ম্যাডাম বসস আপনাকে এসেই দেখা করতে বলেছে
মিথিলা- বসস এসে গেছে? এতো তাড়াতাড়ি
ম্যানেজার- জ্বী ম্যাডাম বসস টাইমের ব্যাপারে খুব ফাংচুয়াল,
মিথিলা- ওহ,ঠিক আছে আমি যাই তা হলে
মিথিলা বসের ক্যাবেনি ডুকার জন্য অনুমতি ছেয়ে নক করলো
ভেতর থেকে একটা শব্দ এলো ইয়েস কাম
মিথিলা ভেতরে যেয়ে দেখলো একজন লোক পিছনে ফিরে বসে আছে চেয়ারের জন্য লোক টার পিছনের অংশ ঠিক করে বুঝা যাচ্ছে না
– বসো মিথিলা
মিথিলা বসলো কিন্তু ভয়েজ টা তার কেমন চেনা চেনা, ইন্টার্ভিউ দিতে এসে যার সাথে কথা বলে ছিলো ইনি সে না, কিন্তু ভয়েজ টা আগে কোথাও শুনেছে মনে হচ্ছে,মিথিলা মনে করার চেষ্টা করছে অপর পাশের মানুষ টা কে হতে পারে
-মিসেস আফরিনা মিথিলা আপনি কি এখন ও বই পড়তে ভালোবাসেন?
মিথিলা চমকে উঠলো কথা টা শুনে তার আর বুঝতে বাকি রইলো না ঐ পাশের মানুষ টা কে?
– ইহান তুই?
চেয়ার গুরিয়ে মিথিলার দিকে ফিরে মুচকি হেসে বল্লো
– ইয়েস আমি, ইহান চৌধুরী ছিনতে ফেরেছেন তা হলে
মিথিলা সংগে সংগে উঠে দাড়ালো
– এই অফিস টা তোর?
ইহান- হুম এতে অবাক হওয়ার কি আছে, তুই তো আমার আব্বুকে ও ছিনিস না তাই তুই কালকে সুন্দর ভাবে তার সাথে কথা বলছিলি
মিথিলা- তুই সব শুনেছিস
ইহান- আরেহ কাল তো আমার ই ইন্টার্ভিউ নেয়ার কথা ছিলো,কিন্তু রিসেপশন রুমে তোকে বসে থাকতে দেখে আমি বুঝে নিয়েছি সব বাবার সাথে তোর সব কথা ই আমি শুনেছি
মিথিলা – তা হলে তোর কথাতে চাকরী হয়েছে
ইহান- আমার কথায় নয়, আমি বাবা কে কিছু বলিনি যখন বাবা ই তোকে চাকরী টা দিয়েছে কিন্তু অগ্রিম স্যালারী দিতে রাজি হয়নি তখন আমি একটু হেল্প করেছি এইটুকু ই
মিথিলা- ওহ
ইহান- প্লিজ মিথিলা আমাকে ভুল বুঝে জব টা চাড়িস না
এতো কষ্টে একটা জব পেলাম তা ও ইহানের চোখের সামনে থাকতে হবে সারাক্ষন, কিন্তু জব টা ছাড়লে হবে না নির্ঝরী গান শিখতে চায়, অনেক টাকা লাগবে, নিজের জন্য না হোক ভাই বোনের জন্য হলেও আমায় এই টুকু মানতে হবে
ইহান- কিরে কি ভাবছিস
মিথিলা- না কিছু না,আপাদত আমার কাজ টা আমায় বুঝিয়ে দে
ই্হান- ওকে এই ফাইল গুলো দেখ
ফাইল দেখেই মিথিলা মাথা গুরে গেলো কি করবো এখন, কি করতে হবে এগুলা নিয়ে
ইহান- এগুলার মাঝে কিছু হিসেব আছে,হিসেব গুলো ঠিক আছে কি না দেখ
মিথিলা অবাক হয়ে তাকালো ইহানের দিকে আজ ও ইহান আমার মনের কথা বুঝতে পারে
ইহান- কিরে কি হলো যা,না থাক এখানে বসেই দেখ, যেটা না বুঝবি আমাকে বলবি আমি বুঝিয়ে দেবো
ইহানের কথায় মিথিলার স্মৃতির পাতায় তার শ্বাশুড়ির বলা একটা কথা ভেসে উঠে
– ইভু বউমা কিছু না বুঝলে তুই তাকে বুঝিয়ে দিস, আফটার অল তুই তার স্বামি,কিন্তু মানুষ টা সেদিন কোন মূল্য দেয়নি আমাকে,
মিথিলা মনের সাথে আরেক বার যুদ্ধ করে ফাইলে মনোযোগ দিলো
হ্যালো আয়াপ খান বলছেন? ওহ হা আমি নির্ঝরিণী
আয়াপ খান- হেই কোকিলা, ফোন করলে তা হলে আমায়
নির্ঝরিণী – হুম,আসলে আপনি যে বললেন গানের ব্যাপার হলে যে কোন হেল্প করবেন আমাকে তাই ফোন করা
আয়াপ,খান- হুম,বলো,আমি কি করতে পারি তোমার জন্য
নির্ঝরিণী – আমি গানের স্কুলে ভর্তি হতে চাই
আয়াপ খান- আরেহ তুমি তো গান পারো ই তা হলে গান শিখার কি দরকার,তোমার ভয়েজ দারুন
নির্ঝরিণী – না তবু ও আরেকটু শিওর হয়ে নেয়া ভালো
আয়াপ খান- ঠিক বলেছো,আমি কাল এসে তোমায় নিয়ে যাবো
নির্ঝরিণী – না না আপনার আসার দরকার নাই আপি দেখলে বকবে,আপনি ঠিকানা বলুন আমি আসছি আপনার কাছে
আয়াপ – ওকে ডিয়ার, আমি তোমায় একটা মেসেজ করবো, বাই
অফিসছুটির পর মিথিলা দাঁড়িয়ে আছে রিক্সার জন্য
এমন সময় ইহান গাড়ি নিয়ে এসে বল্লো
কিরে- দাঁড়িয়ে আছিস যে আয় আয় তোকে নামিয়ে দিবো যাওয়ার পথে
মিথিলা- থাক দরকার নাই, আমি রিক্সায় যেতে পারবো
ইহান- আরেহ আয়না,এখন ও আগের মতো ই ঘাড় তেড়া ই আছিস
মিথিলা আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসলো
দুজনেই চুপ নিরাবতা ভেংগে মিথিলা বল্লো
– অরণির সাথে যোগাযোগ আছে?
ইহান মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– ভুলতে পারিসনি অরণি কে তাই না
মিথিলা- আজ ও বুঝি ক্ষমা করতে পারিস নি
ইহান তাচ্ছিল্য হাসি হেসে বল্লো
– তোর সাথে আগের মতো কথা বলে ভেবে ভাবিস না তোকে ও ক্ষমা করে দিয়েছি
মিথিলা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ইহানের দিকে
ইহান আবার বল্লো- মৃত্যুর আগে ও তোরা দুজন ক্ষমা পাবি না
মিথিলা – তা হলে আমাকে হেল্প করছিস কেনো?
ইহান- কারো বিপদে পাশে দাড়ানোর মানে এই নয় তার সব অন্যায় মাপ হয়ে গেছে
মিথিলা আর কিছু বল্লো না,আসলে বলার সাহস তার হয়নি
বেশকিছু সময় পর মিথিলা বল্লো
– শুনেছি অরণি খুব অসুস্থ আমেরিকা সিটি হোসপিটালে ভর্তি আছে
ইহান- খোজ রাখার প্রয়োজন নেই
মিথিলা -এবার তো অরণি কে ক্ষমা কর মেয়েটা তোকে সত্যি অনেক ভালোবাসে,
ইহান হঠ্যাৎ করে হার্ড ব্রেক করে গাড়ি থামিয়ে বল্লো গেট লস্ট
মিথিলা- মানে এখন ও তো অনেক দূর আমার বাসা
ইহান- হোক দূরে তুই নাম,নাম বলছি
মিথিলা আর কিছু না বলে চুপ চাপ গাড়ি থেকে নেমে গেলো
ইহান গাড়ির স্প্রিড বাড়িয়ে চলে গেলো
মিথিলা যাক ভাভা এমন করলো কেনো,নিজেই সেধে গাড়িতে উঠতে বল্লো নিজেই নামিয়ে দিলো এখন তো কোন রিক্সা পাবো না হেটেই যেতে হবে
মিথিলা হাটছে আন মনে
চলবে
ভুক ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন
plz porer porbo gola den
kichu khon er modhe deoya hobe