খেলাঘর..পর্ব-২৩
লেখা-সুলতানা ইতি
উনি ঠিক ই বলেছে এই সল্প পড়াশুনা দিয়ে উনার এতো বড় ইন্ডাস্ট্রি তে জব পাওয়া যাবে না, কিন্তু অন্য কোথায় ট্রাই করবো আমি? এই সব ভাবনার মধ্যে ই মিথিলা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো,
আজ মিথিলার কেনো জানি সময়ের আগেই ঘুম ভেংগে গেছে পাশে ইভান বেঘোরে ঘুমোচ্ছে, কি যেন একটা স্বপ্ন দেখে মিথিলার ঘুম ভেঙে যায়,
কিছুক্ষন এ ভাবে থম মেরে বসে থাকার পর মিথিলার স্বপ্নের কথা মনে হলো
হুম ইহান ফিরে এসেছে মিথিলাকে নিতে মিথিলা ও ইহানের হাত ধরে চল্লো ইহানের সাথে
পিছনে ফিরে ছেয়ে দেখে অসহায় ইভান কাঁদছে ওদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে কিন্তু কিছু বলছে না,
তার পর ই জেগে উঠা উফফ এই স্বপ্ন দেখার মানে কি কেনো আমি এই স্বপ্ন দেখলাম যদি ইহানের কাছে যাওয়ার ই হতো তা হলে আমি ইভান কে বিয়ে করেছি কেনো,ইভানের ঘুমন্ত মুখের দিকে ছেয়ে আছে মিথিলা, কি নি:স্বপাপ চেহারা,
যেই না মিথিলা ইভানের মুখ টা ছুয়ে দিতে গেলো অমনি ইভান জেগে উঠে মিথিলার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বল্লো
– কি করছো তুমি
মিথিলা বিব্রত বোধ করতে লাগলো,অনেক কষ্টে বল্লো
– ম ম মশা ব বসেছিলো আ- আপনার গালে,সত্যি বলছি মশা ছিলো ওটা
ইভান- হোয়াট মশা আসবে কোথায় থেকে আজ মশারস্প্রে মারনি
মিথিলা- দিয়েছিলাম তো, তবু ও
ইভান- হোয়াটএবার ঘুমাও তো যত্ত সব
ইভান আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো
মিথিলা যেমন ছিলো তেমন ই বসে আছে
আজ আর ঘুম হবে না মিথিলা বুঝে গেছে,সময়ের আগে ঘুম ভাঙলে মিথিলাত আফসোস এর সিমানা থাকে না,কেননা ঘুম যে আর আসবে ই না
মিথিলা উঠে এলো স্টাডি রুমে, ভালো ই হয়েছে ঘুম ভেঙে বাকি রাত পড়াশুনা করে কাটানো যাবে অনেক পিছিয়ে গেছে পড়া শুনা
আজ বিকেলের আড্ডায় ইভান নেই তবু ও আসর জম জমাট হয়ে উঠেছে আতাহার চৌধুরী, মিসেস আয়মন ই পারে একটা আসর মাতাতে
মিথিলা তো এমনি কম হাসে কম কথা বলে তবু ও মাঝে মাঝে উনাদের সাথে যোগ দেয়
মিথিলা- বাবা,মা আপনাদের কাছে আমার কিছু চাওয়ার আছে, কিছু বলার আছে
আতাহার চৌধুরী হাসি মুখেই বল্লো
– তোমার যা ইচ্ছে তা চাইতে পারো বলতে পারো,আমি আর মুন তা হাসি মুখে গ্রহন করবো
মিথিলা অনেক ইতস্তত হয়ে বল্লো
– আমি একটা জব করতে চাই বাবা,
মিসেস আয়মন – কেনো আমাদের আল্লাহ এতো দিয়েছেন যে আমাদের বাড়ির বউয়ের আলাদা করে ইনকামের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না
মিথিলা বিব্রত হয়ে বল্লো
– না মানে আমাদের বাড়িতে মা অসুস্থ ছোট দুই ভাই বোনের লেখা পড়ার খরচ চালাতে তো হবে
আতাহার চৌধুরী- এ জন্য তোমার চাকরি করতে হবে কেনো আমাকে বললেই তো আমি সব ব্যাবস্থা করে দিতাম
এবার মিথিলা স্পষ্ট ভাষায় বল্লো
– বাবা এ ভাবে আমার মা ভাই বোন মরে গেলে ও আপনাদের কাছে থেকে সাহায্য নিবে না
মিসেস আয়মন- কেনো? আমরা কি তোমাদের কেউ নই
মিথিলা- কথা সেটা নয় মা,কথা হচ্ছে মেয়ের জামাইর বাড়ি থেকে এই রকম হেল্প আমার মা নিবে না মরে গেলে ও না,যদি আমি জব করি আর সেখান থেকে মায়ের চিকিৎসা করাই এতে আমার ও তৃপ্তি হবে,
আতাহার চৌধুরী- বুঝতে পেরেছি মা,কিন্তু তুমি আমাকে বলছো কেনো,ইভান কে বললেই তো,ও আমাদের অফিসে তোমার জবের ব্যাবস্থা করে দিতো
মিথিলা – আমি উনাকে বলেছি, উনি বলছে আমার এই পড়া দিয়ে নাকি হবে না
মিসেস আয়মন- চিন্তা করো না, আজ বাসায় আসুক ইভান আমরা কথা বলবো তার সাথে
কিন্তু আজ ও ইভান ডিনারের সময় আসেনি, অনেক রাতে এসেই শুয়ে পড়েছে আজ মিথিলা কিছু বলেনি,, ছুপ ছাপ দুজনেই দু দিকে ফিরে শুয়ে আছে
একজন ভাবছে সারাদিন নায়ার সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলোর কথা,নায়া খুব শিগ্রই বিয়ে করতে চায়
ভাগ্যিস বুদ্ধি খাটিয়ে সময় নিয়েছি,,নইলে কি যে হতো মিথিলা থাকতে নায়াকে বিয়ে করা কি সম্ভব নায়া তো বলেছে সে আলাদা বাসায় থাকবে বাবা যেহেতু তাকে মানবে না সেহেতু উনাদের কাছে এসে জ্বামেলা বাড়াতে চায়না, কিন্তু মিথিলা যদি জেনে যায় তখন তো আব্বু আম্মু ও জানবে তখন কি হবে
মিথিলা ভাবছে কি করে একটা জব জোগাড় করা যায়, নির্ঝরিণীর পড়া একদম পিছিয়েছ গেছে, আয়ান কে আবার ভালো পথে আনতে হবে মায়ের চিকিৎসা, উফফ অনেক টাকার দরকার আমার,
ইসস আমার যদি অনেক টাকা থাকতো তা হলে এই জিমি আপুর জামাইকে দেখাতাম মজা, সব শেষে মায়ের হার নিয়ে গেলো,, মা যক্ষের ধনের মতো হার টা আগলে রেখেছিলো নিজের কাছে
মায়ের কাছে শুনেছি বাবা পুরো এক বছর টাকা জমিয়ে তার পর হার টা দিয়েছিলো মাকে,বাবার কথা মনে পড়তেই মিথিলার চোখ বেয়ে নিশ্চুপ নির্ঝর পানি ঝরতে লাগলো
কাঁদতে কাঁদতে মিথিলা ঘুমালো,
সকাল বেলা উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো রাতে কান্না করার কারনে চোখ ফুলে গেছে এখন সবাই কি ভাববে
মিথিলা চোখের চশমা টা ঠিক করে মাথায় কাপড় ভালো করে টেনে দিয়ে নাস্তা বানাতে গেলো,আজ মিথিলার ইচ্ছে করছে নতুন বউয়ের মতো লম্বা ঘোমটা দিয়ে থাকতে যেন তার চোখ সবার নজরের আড়ালে রাখতে পারে
নাস্তার টেবিলে সবাই ছুপ ছাপ খাচ্ছে নিরাবতা ভেঙে
আতাহার চৌধুরী বল্লো- ইভু তোর তো একজন অ্যাসেসটেন্ট দরকার তাই না? তুই চাইলে তো বউ মাকে সেই পদে নিয়োগ দিতে পারিস,তাতে দুজনের পাশা পাশি থাকা ও হলো
ইভান শান্ত কন্ঠে বল্লো
– আব্বু আতাহার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির এমডি আমি,আমার অ্যাসেসটেন্ট হবে এইচ এস সি অধ্যায়নরত একটা মেয়ে,এটা কি করে সম্ভব আব্বু যে কাজ গুলো আমার সেক্রেটারির করতে হবে তার একটা ও মিথিলা পারবে না
মিসেস আয়মন- তা হলে তুই শিখিয়ে নিস
ইভান- আমি একবার বলেছি তো হবে না,ব্যাস হবে না
আতাহার চৌধুরী শান্ত কন্ঠে বল্লো
-তা হলে রিসেপসেনিষ্ট জারা কে প্রমেশন দিয়ে উপরে নিয়ে যা আর বউ মাকে সেখানে দে,এবার এটা বলিস না যে বউমার সেই যোগ্যতা ও নেই
ইভান এবার রেগে গিয়ে খাবারের প্লেট ছুড়ে ফেলে দিয়ে মিথিলা কে বল্লো
এই মেয়ে এক থাপ্পড়ে দাঁত সব ফেলে দিবো, কি বলেছি তোমায়? তোমায় বলিনি অন্য জায়গাতে জব খুঁজতে, তা হলে চালাকি করে বাবা কে কানভেন্স করতে গিয়েছিলে কেনো,, সারা দিন আমাকে চোখে চোখে রাখতে চাও তাই না,আঁচলে বাধতে চাও আদৌ সেই ক্ষমতা তোমার আছে,রাবিশ
ইভান বেরিয়ে যায়,
আকস্মিক এমন পরিস্থিতির জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলো না
মিথিলা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে,, নিঃশব্দে চোখের পানি ঝরে যাচ্ছে
মিথিলা কিছু না বলে রুমে চলে আসলো বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো, ইভানে এমন ব্যাবহার সে নিতে পারছে না, কাঁদছে অঝর নয়নে,
চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন