খেলাঘর. পর্ব-১৮
লেখা-সুলতানা ইতি
মিথিলা ছেয়ে আছে ইভানের চোখের দিকে আজ প্রথম বার চার চোখের মিলন হলো, আজ মিথিলা সব লজ্জা সংকোচ ভুলেই ইভানের পানে ছেয়ে আছে, হয়তো ঐ চোখে কিছু খুঁজছে
ইভান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– বাহ দারুন লাগছে তোমায় এসো আয়নার সামনে এসো সব গুলো একবার ট্রাই করে দেখবে
মিথিলা- না থাক সব গুলো ট্রাই করতে হবে না একটা হলেই চলবে
ইভান- তা হলে বাকি চশমা গুলো যে তোমার ছোঁয়া না পাওয়ার কষ্টে ধুমড়ে মুষড়ে শেষ হয়ে যাবে, প্লিজ মিথিল বিয়ের পর প্রথম তোমাকে কিছু দিলাম এটা ও তুমি ফিরিয়ে দিবে
মিথিলা আজ ইভানের আচরনে শকড এর উপর শকড পাচ্ছে
মিথিলা – আর কিছু বল্লো না
ইভান – স্যরি মিথিল
মিথিলা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ছেয়ে আছে ইভানের দিকে মুখে তার কোন কথা নেই
ইভান- তখনকার আচরনের জন্য স্যরি,আসলে ভুল টা আমার ই ছিলো, আমি আম্মু কে জিজ্ঞাস করলেই এতো প্রব্লেম হতো না
এবার মিথিলা একটা নিশ্বাস ফেলে বল্লো
– ইটস ওকে
ডক্টর বল্লো মিথিলা টেনশন করছে কিন্তু কি এমন টেনশন মিথিলা করছে,ও কি ওর বাবা মায়ের কথা বেশি ভাবছে,আমি কি জিজ্ঞাস করবো একবার,,আচ্ছা আমি এতো ভাবছি কেনো আমি ওর হাজবেন্ড এইটুকু জানার রাইট তো আমার থাকতেই পারে
ইভান- You can share with me your problem
মিথিলা ইভানের কথা শুনে চমকে উঠে ইভানের দিকে তাকায়,ইভান কি কিছু বুঝতে ফেরেছে, না বুঝার ই তো কথা
মিথিলা তাড়া তাড়ি করে নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– আমার কোন প্রব্লেম নেই,যে সেয়ার করবো আপনার সাথে
ইভান- তা হলে এমন ছুপ ছাপ থাকো কেনো সারা দিন
মিথিলা- আপনি মনে হয় জানেন না আমি ছুপ ছাপ থাকতে পছন্দ করি,আর বই পড়তে পছন্দ করি
ইভান- সেটা আমি আয়ানের কাছে শুনেছি,কিন্তু তোমাকে দেখলেই মনে হয় তুমি কিছু নিয়ে গভীর চিন্তা ডুবে আছো
মিথিলা- না তেমন কিছুই না
ইভান মনের গভীরতা দিয়ে ভালোবাসা মেশানো কন্ঠে বল্লো
মিথিল আমি তোমাকে শুধু একজন ওয়াইফ হিসেবে চাই না
আমি তোমাকে চাই এজ আ ফ্রেন্ড এজ আ গার্ল ফ্রেন্ড এন্ড এজ এ গুড ওয়াইফ হিসেবে চাই,
আর তাই আমি তোমার সাথে আগে আমাদের সম্পর্ক টা স্বাভাবিক করতে চাই, এই যে তুমি আমাকে দেখলে আতংকিত হও ভয় পাও এগুলা আমার ভালো লাগে না আর তুমি না কোথায় কোথায় কাঁদবে না
কান্না আমার পছন্দ না বুঝেছো
মিথিলা- হুম
ইভান- হুম নয়,পালটা প্রশ্ন করতে পারো না আমাকে,তোমার দেখছি তোমার বরের প্রতি কোন আগ্রহ নেই
এখন ই তো আমাদের দুজন দুজন কে বুঝার সময় যেহেতু আমাদের এরেঞ্জ ম্যারেজ,এখন তো আর তেমন এরেঞ্জ ম্যারেজ হয়না বললেই চলে,কিন্তু তুমি ও মা বাবার বাধ্য শন্তান আমি ও,তাই আমাদের এভাবে আদিকালি স্টাইলে বিয়ে হলো, আমি তোমাকে বুঝতে চাই মিথিলা
আচ্ছা তুমি কি কি বই পড়তে পছন্দ করো
মিথিলা- আমার তো সব বই পছন্দ তবে এখন সামনে পরিক্ষা তাই অন্য বই ইচ্ছে হলে ও পড়তে পারবো না, আচ্ছা আপনার কোন বই পড়তে ভালো লাগে
ইভান- আমার কথা বলে লাভ নাই আমি তোমার বীপরিত আমার বই পড়তে ভালো লাগে না
মিথিলা- সে কি আপনি তো আয়ান আর নির্ঝরিণীর মতো,তা দেশের বাইরে গিয়ে পড়লেন কি করে
ইভান- সে পড়েছি কোন ভাবে আব্বু আম্মুর ভয়ে
মিথিলা- কিন্তু আপনাদের মাঝে কথা শুনে তো মনে হয়না আপনি আব্বু আম্মু কে ভয় পান
ইভান- এটা তো ফান করি কিন্তু সিরিয়েসলি পড়াশুনার ব্যাপারে আব্বু আম্মু কখনো ছাড় দেয়নি
মিথিলা- ও, উনাদের কথা শুনে বুঝার উপায় নেই উনারা যে এতো স্টিক্ট
ইভান – চলো বারান্দায় গিয়ে বসি
মিথিলা চশমা ঠিক করতে করতে বল্লো
– চলুন
ইভান- তোমার কিন্তু চশমা পরা চলবে না,আমি তোমাকে চোখের ভালো ডক্টর দেখাবো
মিথিলা- চশমা বুঝি আপনার পছন্দ নয়
ইভান- না, কারন এই চশমা চোখের গভীরতা ঢেকে রাখে,যদি চোখের গভীরতা মাপতে না পারি, চোখের প্রেমে পড়তে না পারি,তা হলে সেটা কোন প্রেম ই নয়
মিথিলা- আপনি তো দার্শনিকদের মতো কথা বলেন দেখছি
ইভান- হুম তবে আমি দার্শনিক নয়,, আমি ইতিমধ্যে খোজ শুরু করেছি,শহরের সেরা চক্ষু ডক্টরের,যদি এখানে না হয় তা হলে দেশের বাইরে নিয়ে যাবো,তার আগে তোমাকে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা করাবো
মিথিলা হেসে বল্লো
– এখন আপনি চোখের ডাক্তার হবেন নাকি
ইভান মুগ্ধ নয়নে মিথিলার হাসি দেখছে
– সুইট স্মাইল
মিথিলা – লজ্জা পেয়ে হাসি থামিয়ে পেল্লো
ইভান, উফফ হাসির প্রশংসা না করলেই হতো,হাসি টা আর ও কিছুক্ষণ চলতো
– হুম বউ যখন চোখে দেখেনা তখন বরকে তো ডক্টর হতেই হবে
মিথিলা- শুনি আপনার চিকিৎসার নমুনা
ইভান- শুনাবো না, দেখাবো, যাস্ট ওয়েট করো শুধু
তার পর দুজনেই নিরব
আবার নিরাবতা ভেঙে ইভান বল্লো
– স্যরি
মিথিলা- এবার কিসের জন্য?
ইভান- বিয়ের আগে তোমার সাথে খারাপ বিহেভ করেছি তাই
মিথিলা- তখন তো আপনি আমায় ছিনতেন না
ইভান- তবু ও একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে এমন বিহেভ করা ঠিক হয়নি
মিথিলা- সেদিন আপনি রিক্সা ওয়ালা মামার সাথে খারাপ বিহেভ করেছেন বেশি,স্যরি বলতে হলে উনাকে বলুন
ইভান- কিন্তু আমি উনাকে পাবো কোথায়
মিথিলা -আমাদের কলেজের সামনেই পাবেন
ইভান- আচ্ছা,সে না হয় ক্ষমা ছেয়ে নিবো তার কাছে,কিন্তু তুমি কি আমার স্যরি একসেপ্ট করেছো
মিথিলা- হুম মঞ্জুর করলাম
ইভান- হোয়াট মন. জু,হোয়াটএবার কি বললে
মিথিলা হেসে বল্লো
– একসেপ্ট করলাম
আপনি তো বাংলা ভাষায় কাছা
ইভান- আজ অব্দি কেউ বলেনি,তুমি খাটি বাংলা ভাষায় কথা বলেছো তাই বুঝতে পারিনি
সেদিন ওদের চমৎকার একটা রাত পার হয়,সারা রাত বেলকনিতে বসে গল্প করে শেষ রাতের দিকে ঘুমাতে এলো,আজ প্রথম বার,ইভান মিথিলা কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে
অনেক রাতে ঘুমানোর কারনে সকালে মিথিলার ঘুম দেরিতে ভাংগে
ঘুম ভেংগে মিথিলা অবাক, পুরো রুমের কালার চেঞ্জ হয়ে গেছে,সব কিছু সবুজ, রুমের দেয়াল থেকে পর্দা পর্যন্ত সবুজ, একেবারে পুরো রুম সবুজে সবুজ
মিথিলা বিছানায় থ মেরে বসে আছে,রুমের এমন চেঞ্জ কেনো বুঝতে পারছে না মিথিলা
ইভান- বলে ছিলাম না, করে দেখাবো
মিথিলা- কি?
ইভান- আজ থেকে তোমার চোখের প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু,ডক্টর বলে চোখে প্রব্লেম হলে সবুজ শ্বাগ খেতে, সবুজ পাতার দিকে তাকাতে,কিন্তু আমি তোমার জন্য এই শহরে অরিজিনাল সবুজ পাচ্ছি না তাই,সবুজ রঙ নিয়ে এলাম,
তবে ছাদে অর্দেকের বেশি সবুজ বাগান করা হবে আজ থেকে তুমি প্রতি দিনের কিছু অংশ ছাদে কাটাবে,তখন যেন তোমার চোখে চশমা না থাকে
মিথিলা- এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম আমি
ইভান- এখন চলো বসে না থেকে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আসো
মিথিলা খেতে গিয়ে আবার শকড খেলো
আজ নাস্তার আইটিমে সব সব্জি, সবুজ শ্বাক
মিথিলা- আমি তো এগুলা খাই না
মিসেস আয়মন- খেয়ে দেখনা, আমার পাগল ছেলে সকাল থেকে এতো সব আয়োজন করেছে তোর জন্য
মিথিলা আর কিছু বল্লো না, এই রকম খাবার স্বর্ন দিয়ে মেখে দিলে ও আমি খাইনা,কিন্তু না খেয়ে উপায় ও নেই উনি অনেক আশা নিয়ে এগুলা করেছে একটু তো খেতে হবে
to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন