খেলাঘর পর্ব-২২
লেখা-সুলতানা ইতি
আমি তোমার কোন কথার উওর দিবো না..
ইভানের কথা শুনে নায়া ছুপ হয়ে গেলো
– নাহ এ ভাবে করে আমি ইভান কে ফিরে পাবো না ঐ হাভা মেয়ের কাছে আমার ভালোবাসা হেরে যাবে এটা আমি কখনো হতে দিতে পারি না, এবার নায়া কান্না করে দিলো, কাঁদতে কাঁদতে বলছে
– ইভান ভালোবাসি তোমায় আজ ও , তুমি পারো না আবার ফিরে আসতে?
ইভান নায়ার কান্না দেখে বিমূঢ় হয়ে পড়ে কি বলবে বা কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না ইভান
– নায়া প্লিজ তুমি কেদো না, প্লিজ কান্না থামাও
নায়া ননস্টপ কান্না করেই যাচ্ছে থামানোর কোন নাম নেই
ইভান এবার রেগে গিয়ে হাত দিয়ে টেবিলে ঝোরে থাপ্পড় দিয়ে বল্লো
– এই কান্না থামাও কি শুরু করলে,কান্না থামাও আর এখান থেকে যাও
নায়া এবার কান্না বন্ধ করে ইভানের দিকে ছেয়ে আছে
ইভান- ( ও ভাবে তাকিও না নায়া আমি যে তোমার চোখের দৃষ্টিতে খুন হয়ে যাচ্ছি)ইভান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– কি হলো তাকিয়ে আছো কেনো, যাও বলছি
নায়া এবার উঠে দাঁড়ালো
– ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু এটা আমার শেষ যাওয়া নয় আমি আসবো আবার আমার ভালোবাসা আদায় করতে
নায়া বেরিয়ে গেলো
ইভানের অফিসের কাজে মন বসছে না নায়ার কান্নামাখা মুখ টা চোখের পাতায় ভেসে উঠছে,,
আমি কি নায়ার সাথে অন্যায় করেছি মেয়েটির তো কোন দোষ নেই সে আমায় ভালোবেসেছে,,
যেখানে আজ এতো গুলো দিন পরে ও মিথিলা আমায় ভালোবাসতে পারেনি, ইভান ঠিক করলো আর অফিস করবে না বাসায় ফিরে যাবে
মিথিলা – উনার আজ আবার কি হলো লাঞ্চ করতে এলো না ফোন করবে বলে ফোন করলো না,,দূর ইভান কে আমি সত্যি বুঝতে পারি না,, আজ আসলে বাড়ি যাওয়ার কথা বলবো দেখি উনাকে দিয়ে আয়ান কে বুঝাতে পারি কি না,,
উফফ টেনশনে আমি পাগল হয়ে যাবো এদিকে কয়দিন পর ফাইনাল এক্সাম আসছে, যাই উনি আসার আগে পড়তে বসি আসলে তো আবার পড়তে দিবে না,পড়লে নাকি চোখের প্রব্লেম বেড়ে যাবে,সত্যি পাগলামি কতো প্রকার আছে তা উনাকে না দেখলে বুঝতাম না
মিথিলা সব ভাবনা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়ার দিকে মন দিলো,,
মিসেস আয়মনে এসে মিথিলা কে বল্লো কিরে পড়ছিস?
মিথিলা- হুম,সামনে এক্সাম তো তাই,কিছু বলবেন?
মিসেস আয়মন- ইভান অফিস থেকে ফিরেছে দেখলাম,,কিন্তু মুখটা ওর থমথমে হয়ে আছে,কি হয়েছে জানো কিছু
মিথিলা- উনি যে ফিরেছে সেটা তো আমি খেয়াল করিনি,উনি আমায় ডাকে ও নি,আচ্ছা দেখছি আমি
মিসেস আয়মন – হুম যা তা হলে,, শুন স্বামির মন খারাপ থাকলে মন ভালো করার দায়িত্ব কিন্তু স্ত্রীর উপরেই পড়ে
মিথিলা কিছু বল্লো না রুমে এসে দেখলো ইভান ড্রেস চেঞ্জ না করেই শুয়ে আছে কপালে হাত দিয়ে
ইভানের এই অবস্থা দেখে মিথিলা ভ্রু কুচকালো এই প্রথম ইভান কে এমন চিন্তিত দেখলো মিথিলা
– কি এমন হলো যে এতো গভীর চিন্তায় ডুবে আছে উনি
মিথিলা ইভানের পাশে বসে কপাল থেকে হাত টা সরাতেই ইভান উঠে বসলো
– তুমি?
মিথিলা- হুম আমি,মনে হচ্ছে আপনি আমায় এই প্রথম দেখলেন, ওমন করে তাকিয়ে আছেন
ইভান- কিছু বলবে? বললে বলো,নতুবা এখান থেকে যাও, ভালো লাগছে না কিছু
মিথিলা- আপনি এমন করছেন কেনো,অফিসে কি কোন প্রব্লেম হয়েছে? খুব বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে আপনাকে
ইভান – না অফিসে কোন প্রব্লেম হয়নি,আর কোথায় আমি চিন্তা করছি, মনে হচ্ছে তোমার চশমার পাওয়ার চেঞ্জ করতে হবে, যাও তো এখন জালিও না আমাকে
মিথিলা ইভানের ব্যাবহারে অবাক হলো খুব,আবার উনি সেই রুপে ফিরে এলো? কিন্তু কেনো? আমি কি কিছু করেছি
ইভান মিথিলা কে বসে থাকতে দেখে বল্লো
– বসে আছো কেনো যাও,,
মিথিলা উঠে চলে এলো স্টাডি রুমে
ভাবছে বসে বসে কি হলো ইভানের এমন বিহেভ করছে কেনো আমার সাথে
ভেবেছি উনাকে নিয়ে একবার ঐ বাসায় যাবো কিন্তু উনার যে মেজাজ উঠেছে কোন কথাই তো বলতে পারবো না উনাকে
রাতে ঘুমাতে এসে ও ইভান মিথিলার সাথে কোন কথা বলেনি,, অন্য পাশে ফিরে শুয়ে আছে
মিথিলা আবার অবাক হলো, রোজ ঘুমানোর আগে উনার কতো কথা শুনতে হতো সব শেষে আমায় ঝড়িয়ে ধরে ঘুমাতো,আজ একেবারেই কথা বন্ধ,
ধ্যাত আমি এতো ভাবছি কেনো মানুষের কি কোন কারনে মন খারাপ হতে পারে না, পারে তো,,এতো না ভেবে আমি ঘুমাই গিয়ে
মিথিলা ইভানের গায়ে একটি হাত দিয়ে শুয়ে পড়লো কিন্তু এতে ও ইভানের মাঝে কোন পতিক্রিয়া দেখা গেলো না
আজ সকালে নাস্তার পর ইভান নিজেই নিজে রেডি হলো আজ আর মিথিলা কে টাই বেধে দিতে ডাকেনি,
মিথিলা টাই বাধতে এসে দেখে ইভান রেডি মিথিলা আর কোন কথা বলেনি
ইভান বেরিয়ে যাচ্ছিলো
মিথিলা – আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো
ইভান- সময় নেই, আমার
ইভান চলে গেলো
মিথিলা- যাক ভাবা কি এমন হলো যে বক বক করা মানুষ টি ছুপসে গেলো
কিন্তু আমার যে বাড়ি যাওয়া খুব দরকার তা হলে কি করি এখন
আমি মাকে বলে চলে যাই,মাকে দেখে আসি।
যেই ভাবা সেই কাজ মিসেস আয়মন কে বলে মিথিলা বাবার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়
নির্ঝরিণী মিথিলা কে দেখে খুব খুশি হয়
নির্ঝরিণী – আপি দুলা ভাই আসেনি কেনো
মিথিলা- অফিসের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত
নির্ঝরিণী – ওহ আচ্ছা এসো মাকে দেখবে চলো
মিথিলা মায়ের কাছে গিয়ে মাকে দেখে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো কি হাল হয়েছে মায়ের, শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে শরিরের হাড় ছাড়া মাংস নেই
হ্যারে নির্ঝর, মাকে ঠিক ভাবে খাবার খাওয়াস না
নির্ঝরিণী – আপি মা খেতে চায় না,ঝোর করে খাওয়াতে হয়,আজ দুই দিন থেকে তো মায়ের কোন কথা ও নেই দেখনা তুমি এসেছো বলে ও কোন রেসপন্স করেনি বলতে বলতে নির্ঝরিণী কেদে দিলো, আপু আমার খুব ভয় করছে
না জানি মাকে হারাতে হয় আমার
মিথিলা ছোট বোন কে কাছে টেনে নিলো
কাঁদিস না নির্ঝর মায়ের ভালো করে চিকিৎসার দরকার এখন
নির্ঝরিণী – কিন্তু আপু মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার সংসারের উপার্জনের পথ তো বন্ধ কি করবো বল
মিথিলা- আমি ও সেটা ই ভাবছি, আয়ান কখন বাড়ি ফিরে
নির্ঝরিণী – ঠিক নেই আপু অনেক রাতে ফিরে আর অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠে,ওর পাশে দিয়ে হাটার সময় আমি খারাপ একটা গন্ধ পাই
মিথিলা- আয়ানের , জে. এস. সি পরিক্ষা সামনে সেটা বলেছিস ওকে
নির্ঝরিণী – আপু ভাইয়ের সাথে কথা বলতে আমার ভয় লাগে
মিথিলা- আচ্ছা জিমি আপু মাকে দেখতে আসেনি?
নির্ঝরিণী – একদিন এসেছিলো এসে মায়ের গলায় থাকা হার টা নিয়ে গেছে দুলা ভাইয়ের নাকি টাকার দরকার
মিথিলা- ওহ সেই হার টা না যেটা বাবা মাকে বিয়ের প্রথম বিবাহবার্ষিকী তে দিয়ে ছিলো
নির্ঝরিণী – হুম আপু,মা এই হার টা কখনো হাত ছাড়া করেনি,আর মা অসুস্থ হতে না হতে আপু সেটা নিয়ে গেলো,আচ্ছা আপু বড় আপু এমন হলো কেনো
মিথিলা- জানি না,হয়তো বড় আপু যেই পরিস্থিতিতে আছে,সেই পরিস্থিতি তাকে এমন হতে বাধ্য করেছে
আচ্ছা নির্ঝরী আমার এখন যেতে হবে আমি ইভানের কাছে বলে আসিনি, তুই আমার এই আংটি টা রাখ এটা বিক্রি করে যা পাস তা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা চালিয়ে যা,তার পর দেখি কি হয়
নির্ঝরিণী – আপু তুমি আজ থাকো না
মিথিলা- ইভান কে সাথে নিয়ে এসে একদিন থাকবো এখন আসিরে
মিথিলা বেরিয়ে গেলো
মিথিলা সোনারপুর বাজারে এসে রিক্সা নিলো, আসার সময় মিসেস আয়মন খুব করে গাড়ি নিয়ে যেতে বলে ছিলো কিন্তু মিথিলা আনেনি,,মিথিলা যেই রিক্সাতে উঠতে যাবে ওমনি পাশে গাড়ি পার্কিং এ একটা গাড়ি দেখতে পেলো যেটা ইভানের গাড়ি
– উনার গাড়ি এখানে তার মানে আশে পাশে কোথায় ও আছে, ঠিক আছে আমি একটু অপেক্ষা করি
কিছুক্ষন অপেক্ষার পর ইভান কে একটা কফিশপ থেকে বেরুতে দেখলো,কিন্তু একা নয় সাথে একটা মেয়ে যার সাথে ইভান খুব হেসে হেসে কথা বলছিলো
মিথিলা- কে এই মেয়ে? আমি কি যাবো ওদের সামনে না থাক যাবো না, আমাকে এখানে দেখে যদি রেগে যায়,বাসায় গেলে জিজ্ঞাস করবো মেয়েটা কে?
মিথিলা বাসায় ফিরে অপেক্ষা করতে লাগলো
অনেক রাতে ইভান বাসায় ফিরে বিয়ের পর এই প্রথম ইভান এতো লেইটে বাসায় এসেছে,
মিথিলা ইভানের জন্য অপেক্ষা করেই ছিলো
ইভান- কি হলো ঘুমাও নি?
মিথিলা ইভানের কথার উত্তর না দিয়ে বল্লো
– চলুন খাবেন
ইভান- খেয়ে এসেছি
মিথিলা একটু অবাক হলো এই প্রথম ইভান ফ্যামেলির সবাইকে রেখে বাইরে খেয়ে এসেছে,
– মেয়েটি কে ছিলো?
মিথিলার কথা শুনে ইভান চমকে উঠে
– কোন মেয়েটি?
মিথিলা- যার সাথে আজ সোনারপুর বাজার কফিশপ থেকে হাত ধরে বেরিয়ে ছিলেন
ইভান কিছুক্ষন মিথিলার দিকে ছেয়ে থেকে বল্লো
– আমাদের বিজনেস পার্টনার
মিথিলা একটু শকড খেলো এতো অল্প বয়সী সুন্দরি মেয়ে বিজনেস পার্টনার? মিথিলা নিজেই নিজের মাথায় টোকা দিয়ে বল্লো দূর কি সব ভাবছি আমি,এমন টা তো হতেই পারে,সব ফ্যামেলি তো আর এমন না যে মেয়ের ক্যারিয়ারের কথা না ভেবে বিয়ে দিয়ে দিবে
ইভান- বাই দ্যা য়ে তুমি সেখানে কি করছিলে,
মিথিলা- মা খুব অসুস্থ মাকে দেখতে গিয়েছি, শুনুন না আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো
ইভান- টায়ার্ড লাগছে খুব ঘুমাতে দাও
মিথিলা- আমার কথা টা শুনুন না
ইভান বিরক্ত হয়ে বল্লো আচ্ছা বলো কি বলবে
মিথিলা- আমার না একটা জবের দরকার,আপনি যদি আপনার অফিসে কোন ব্যাবস্থা করে দিতেন
ইভান রাগি চোখে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– তোমার কোয়ালিটি আছে?
মিথিলা- জানি তো আমি এখন ও কলেজ শেষ করতে পারিনি, কিন্তু জবের তো ভিবিন্ন কোটা থাকে তাই না,আমাকে না হয় আমার কোয়ালিটি অনুযায়ী একটা পদ দিলেই হবে
ইভান- আমার অফিসে তোমার জন্য কোন জব নেই তুমি অন্য কোথায় ও ট্রাই করো, এই বলে ইভান পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো
মিথিলা চিন্তায় পড়ে গেলো
উনি ঠিক ই বলেছে এই শল্প পড়াশুনা দিয়ে উনার এতো বড় ইন্ডাস্ট্রি তে জব পাওয়া যাবে না,কিন্তু অন্য কোথায় ট্রাই করবো আমি?
to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন