খেলাঘর পর্ব-১২
লেখা-সুলতানা ইতি
মিসেস আয়মন- ছেলে আর যাই করুক আমার কথার অবাধ্য হবে না,একবার বিয়েটা হয়ে যাক দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে
আতাহার চৌধুরী- তাই যেন হয়
ভিবিন্ন কথার মাঝে তারা পৌছে গেলো বাড়িতে
মিসেস আয়মন বাড়িতে এসেই খোজ নিলো ইভান এসেছে কি না
বাড়ির পরিচারিকা জানালো এখনো আসেনি
মিসেস আয়মন ছেলে কে ফোন করলো
– কোথায় তুই ইভু তাড়া তাড়ি আয়, কথা আছে তোর সাথে,….
হুম এক্ষুনি আসবি
মিসেস আয়মন কল অফ করে আতাহার চৌধুরী কে বল্লো
– ইভু আসছে,, তুমি দেখো নিজের বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট নিজেই করবে
আতাহার চৌধুরী- তোমার ছেলে যে এক গুয়ে, আমার মনে হচ্ছে না এতো সহজে হার মানবে
মিসেস আয়মন- তা হলে বাজি ধরো,দেখি কে জিতে
আতাহার চৌধুরী- ভাভাহ আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে তোমার সাথে বাজি ধরবো, কলে কৌশলে বাজিতে তুমি জিতবে
মিসেস আয়মন- তা হলে হার মানলে
আতাহার চৌধুরী- না মেনে উপায় আছে
এর মাঝে ইভান এসে গেলো
ইভান- আম্মু বলো কি বলবে
মিসেস আয়মন- বস তার পর বলছি
ইভান- বসতে পারবো না বলো
মিসেস আয়মন উঠে গিয়ে ছেলেকে এনে নিজের পাশে বসালো,,মায়েদের সেই মমতা মাখানো কন্ঠে বল্লো
– ইভু, মা,বাবা সব সময় সন্তানের ভালো চায়,জীবনের সব ছেয়ে ইমপট্যান্ট জিনিশ টা বেছে নিতে সন্তান যখন ভুল করে তখন মা বাবা ই এগিয়ে আসে, সন্তানের ভুল টা শুধরিয়ে দিতে,যেমন টা ছোট বেলায় দিতো
ইভান- কিন্তু আম্মু যাকে নিয়ে সারা জীবন কাটাতে হবে তাকে আমি পছন্দ করবো না
আতাহার চৌধুরী- অবশ্যই করবি,আমি তো বলেছি মিথিলার সাথে দেখা কর
ইভান বিরক্ত হয়ে বল্লো
ঐ একটা মেয়ের মাঝে তোমরা কি পেয়েছো বুঝি না,,নায়া এর ছেয়ে হাজার গুন ব্যাটার,, ঐ মিডেলক্লাস মেয়েটার মতো না
মিসেস আয়মন- দেখ বাবা নায়া পার্টি তে যায় নাইট ক্লাবে যায়,ভিবিন্ন বন্ধুদের সাথে রাত বিরাতে দেখা করে, এগুলা তোর এখন ভালো লাগলে ও বিয়ের পরে লাগবে না,তখন সংসারে অশান্তি হবে,,তুই মিথিলাকে নিজের মতো করে নিস
আতাহার চৌধুরী গম্ভীর হয়ে বললেন
তুমি মিথিলাকে মিডেল ক্লাস বলছো? তোমার যোগ্য নয় বলছো? ভেবে দেখো কোন না কোন ক্ষেত্রে তুমি মিথিলার অযোগ্য,মায়ের গর্ভ থেকে কেউ যোগ্য হয়ে জন্ম নেয় না, যোগ্য করে নিতে হয়
ইভান- কিন্তু আব্বু….
মিসেস আয়মন- আর কোন কথা নয়,তোর আর মিথিলার বিয়ে আগামি মাসের পনেরো তারিখে, নিজেকে তৈরী করে নে
ইভান- তোমাদের যেমন ইচ্ছে
এই বলে ইভান নিজের রুমে চলে গেলো,মোবাইল বের করে নায়ার একটা একটা করে ফটো গুলো দেখছে,কি অপূর্ব লাগছে নায়াকে
নায়ার ফটোর দিকের তাকিয়ে থেকেই ঘুমিয়ে পড়লো ইভান
মিথিলা আজ অনেক দিন হলো কলেজে যায় না,যেতে ইচ্ছে করছে না কলেজে,রোজ রোজ ইহান কে ফ্যাস করতে পারছে না মিথিলা
মিথিলা ঠিক করেছে বাসায় বসেই পড়বে কলেজে যাবে না
অরনি কয়েকদিন কল করেছিলো মিথিলা কল রিসিভ করেনি, কাউকে রিসিভ করতে ও নিষেধ করেছে,
মিথিলা বই সামনে নিয়ে এগুলা ভাবছিলো
নির্ঝরিণী – আপি তোমার হবু শ্বাশুড়ি মা ফোন করেছে,কথা বলবে
মিথিলা- উনি কি আমার সাথে কথা বলতে চায়
নির্ঝরিণী – উনি তো ফোন করেই তোমার সাথে কথা বলতে ছেয়েছিলো,আমি মাকে ধরিয়ে দিয়ে এসেছি
মিথিলা- ওহ আচ্ছা
নির্ঝরিণী ছুটে গিয়ে আবার মোবাইল নিয়ে হাজির হলো
– আপু কথা বলো
মিথিলা মোবাইল নিয়ে
প্রথমে সালাম দিলো মিসেস আয়মন কে
মিসেস আয়মন- ভালো আছো মা,কি করছো তুমি
মিথিলা- ভালো আছি,আপনি ভালো আছেন
মিসেস আয়মন- আচ্ছা মা শুনো আমি ড্রাইভার কে পাঠিয়েছি তোমাদের বাড়িতে,বিয়ের কার্ড রেডি হয়ে গেছে,স্পেশাল ভাবে তোমার জন্য বিশ টা কার্ড পাঠিয়েছি,তোমার ফ্রেন্ডস দের ইনভাইট করার জন্য,আর বাকি গুলো তোমার বাবার কাছে দিও
শুনো মা, বিয়ের কার্ডের ডিজাইন আমার ইভান পছন্দ করেছে,তাই আর তোমাকে বলিনি,,ডিজাইন হয়তো তোমার পছন্দ হবে না,তবু ও বলছি এখন থেকে মানিয়ে নিতে শিখো
মিথিলা- ঠিক আছে আন্টি, আপনি চিন্তা করবেন না কার্ড দেখে আপনাকে বলবো
মিসেস আয়মন- পাগলি মেয়ে এখন ও আন্টি বলা হচ্ছে না,,মা কখন বলবি
মিথিলা……
মিসেস আয়মন- ওকে একবার শুধু আমার বাড়িতে নিয়ে আসি তার পর দেখবো তুই কেমন করে আমাকে মা না ডাকিস
এখন রাখছি আমি বাই
মিথিলা ফোন রেখে ভাবছে মিসেস আয়মনের কথা,,মানুষ টা খুব ই মিশুক, যে কাউকে আপন করে নিতে পারে,,
মিথিলার ভাবনায় ছেদ পড়লো মাসুম ফারুকির আগমনে
তিনি এসে মেয়ের পাশে বসলো
মিথিলা- বাবা কিছু বলবে
মাসুম ফারুকি- শুনলাম তুই কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিস
মিথিলা- কে বল্লো বাবা,এমনিতেই যেতে ইচ্ছে করেনি,কাল থেকে তো যাচ্চি আবার
মাসুম ফারুকি- তোর মা বল্লো তোর নাকি মন খারাপ, কলেজে যাচ্ছিস না
মিথিলা- তেমন কিছু নয় বাবা,সব ঠিক আছে
মাসুম ফারুকি- আচ্ছা তা হলে আমি যাই আমার আবার অনেক কাজ
মিথিলা- বাবা অনেক তো হলো এবার একটু রেস্ট নাও এভাবে সারা দিন চলতে থাকলে তুমি অসুস্থ হয়ে যাবা
মাসুম ফারুকি- এই তো আর কয় বছর তার পর আয়ান বড় হয়ে গেলে ওর হাতে সব ছেড়ে দিয়ে আমি বিশ্রাম নিবো
আচ্ছা মা এখন উঠি
মাসুম ফারুকি চলে গেলেন
মিথিলা বাবার যাওয়ার পথে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার বইয়ের দিকে নজর দিলো আজ কয়দিন
পড়া ও হচ্ছে না ঠিক মতো
পরদিন মিথিলা কলেজে যেতেই ইহান অরনি ঘিরে ধরলো,এতোদিন কলেজে আসেনি কেনো তাই
অরনি- তুই তো কখনো এমন অনিয়ম করিসনি পড়ালেখার ব্যাপারে, তা হলে এখন এমন করছিস কেনো
মিথিলা- ভালো লাগেনি তাই আসিনি,
ইহান- দেখ মিথি তোর না আসার কারন যদি আমি হয়ে থাকি তা হলে বলবো তোর ভালোর জন্য আমি এই কলেজ ছেড়ে চলে যেতে রাজি আছি,
মিথিলা- তোর আর কষ্ট করতে হবে না ইহান আমি ই চলে যাচ্ছি
ইহান- মানে
মিথিলা-সামনের মাসের পনেরো তারিখে আমার বিয়ে……
মিথিলাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ইহান আর অরনি একি স্বরে বল্লো
মানেহ কি বলছিস তুই
দেখ ফাজলামি করিস না
মিথিলা- ফাজলামি নয়,এই দেখ আমার বিয়ের কার্ড,আচ্ছা অরু সাম্মি আর রাহির মোবাইল নাম্বার টা দে তো আমাকে, ওদের কে ও তো বলতে হবে
অরনির কানে মিথিলার কথা গুলো পৌছয়নি,,
অরনি মিথিলা কে ইহানের কাছে থেকে দূরে নিয়ে গেলো
– মিথি তোর মাথা ঠিক আছে, তুই কেনো ইহান কে কষ্ট দিচ্ছিস বল
মিথিলা- তোর কথার উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই,,বাই দ্যা য়ে তোরা আমার বিয়েতে এলে খুশি হবো,এতোক্ষনে ইহান মিথিলাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে
ইহান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো – অবশ্যই যাবো মিথি তোর বিয়ে আর আমি,আমরা যাবো না
মিথিলা অন্য দিকে ফিরে বল্লো
– আমি আসছি
মিথিলা বেরিয়ে এলো কলেজ থেকে আর একটু সময় থাকলে হয়তো চোখের পানি টা ইহান দেখে ফেলতো
to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন