কালো মেয়ের প্রতি অবহেলা পার্ট-০৭

0
2910

কালো মেয়ের প্রতি অবহেলা পার্ট-০৭
#jannatul_ferdous

 

ভিতরে অাসতেই চারদিকে ফুলের সমারোহ অার এত ফুলের মাঝখানে বসে অাছে শিমু.

(জিহাদ আসতেই শিমু এগিয়ে অাসলো জিহাদের দিকে.কাছে আসতেই জিহাদ একটা থাপ্পড় মারলো শিমুকে)

জিহাদ-আমার থেকে দূরে থাকবি।তোকে অামি অামার স্ত্রী হিসেবে মানি না।

(চোখে পানি টলমল করছিলো শিমুর)

জিহাদ-আমি সেয়ানীকে ভালোবাসি.অার তুই নিজেকে দেখেছিস।আমাকে পাওয়ার কোনো যোগ্যতা অাছে তোর.নিজের দিকে তাকা একবার,তারপর অামাকে পাওয়ার অাশা করবি,যত্তসব.

(জিহাদ চলে গেলো বারান্দায়)

শিমু-জানি না জীবনের কোন পথে এসে দাঁড়ালাম আমি।আধার কাটিয়ে কী কোনো দিনও আলো আসবে না আমার জীবনে.কেনো আমি এতটা কালো হলাম.কেনো আমি আমার স্বামীর কাছ থেকে ভালোবাসা পাবো না।শুধুই কী দেহের সৌন্দর্যই সব?—-শুয়ে শুয়ে চোখের পানি পেলছে অার ডায়েরীতে লিখছিলো.

(ছোট খাটো সব কষ্টের কথাই ডায়েরীতে লিখতে পছন্দ করে শিমু.তাই নিজের কষ্টের কথা গুলো ডায়েরীতে লিখে রাখলো অার জিহাদ কষ্ট পাচ্ছিলো সোহানীর জন্য)

পরেরদিন সকালে——

শিমু জিহাদকে ঘুম থেকে জাগাতে অাসলেই জিহাদ চোখ মেলে শিমুকে দেখলো।তারপর আরেকটা থাপ্পড় মারলো শিমুকে।

জিহাদ-তোকে বলছি আমার সামনে আসবি না.কেনো এসেছিস,তোকে আমার সামনে পেলে আমার মাথা ঠিক থাকে না.খুন করে পেলতে ইচ্ছে করে তোকে.যা এখান থেকে.

শিমু-আপনার চা.

(জিহাদ কাপ টাকে পেলে দিলো)

জিহাদ-আমার জন্য এত দরদ দেখাতে বলিনি তোকে.

(বলেই চলে গেলো.কাপের টুকরো গুলো তুলে নিয়ে চোখ মুছে নিছে চলে গেলো শিমু)

তারপরের রাত থেকেই জিহাদ অারো বেশি ড্রিংকস করা শুরু করলো.বাসায় এসেই শিমুর উপর চলতো অত্যাচার.
এভাবেই রাতগুলো কেটে যাচ্ছিলো.সব মিলিয়ে শিমুর জীবনে নেমে অাসলো এক অন্ধকারময় অধ্যায়.

এভাবেই কিছুদিন পর…….

রিত্ত-শিমু কী হয়েছে তোমার?

শিমু-কিছু না.

রিত্ত-দেখি চুল সরাও.

শিমু-বললাম তো কিছু না রিত্ত.

রিত্ত-অামি দেখবোই.

(চুল সরাতেই দেখতে পেলো গালে অনেকগুলো থাপ্পড়ের দাগ)

রিত্ত-দেখো পাপা ভাইয়া শিমুকে মেরেছে।কীভাবে থাপ্পড়ের দাগ গুলো বসে গেছে শিমুর গালে।

শুভ্রের অাব্বু-মা জিহাদ ড্রিংকস করে এসে তোকে মেরেছে তাই না?

শিমু-বড় অাব্বু তখন উনি নিজের মাঝে ছিলেন না তো তাই ভুল করে করে পেলছে।তুমি কিছু বলো না প্লিজ.

রিত্ত-তাই বলে এভাবো মারবে তোমাকে?

শিমু-এটা কিছু না.

জিহাদের অাব্বু-অনেক কিছু.আজকেই অামি ওর সাথে কথা বলবো.

(বলেই জিহাদের অাব্বু চলে গেলো.কথা বললেও জিহাদ নিজেকে বদলাতে পারছিলো না. প্রায় প্রতিদিনেই জিহাদের অত্যাচার সহ্য করে নিঃশব্দে চোখের পানি পেলতো শিমু.দিন দিন বেঁচে থাকটাই অসহ্য হয়ে অাসছিলো শিমুর কাছে।এভাবেই কেটে গেলো ৩টা মাস।

৩ মাস পর…..

জিহাদ-সোহানি প্লিজ আমি ইচ্ছা করে এটা করিনি।

সোহানি-অাজ ৩মাস হয়ে গেলো তুমি বিয়ে করেছো আমাকে জানাও নাই কেন?

জিহাদ-আমি ভেবেছি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে তাই ভয় পেয়ে বলিনি.

সোহানী-এখন আমি কী করবো?

জিহাদ-আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি সোহানী.

সোহানী-তাহলে বিয়ে করতে পারবে আমায়?

জিহাদ-পারবো।

সোহানী-তাহলে ওকে তোমার বাসা থেকে তাড়াও.

জিহাদ-পাপা তো ওকে যেতে দিবে না।

সোহানী-তাহলে আমাকে পাওয়ার অাশাও ছেড়ে দাও।

জিহাদ-প্লিজ বুজার চেষ্টা করো.

সোহানী-তাহলে ওকে যে করেই হোক আমাদের পথ থেকে সরাও.

জিহাদ-ঠিক অাছে.

বিকেলে শিমু বাসা থেকে একা একা বের হয়ে গেলো।ফিরে অাসার সময় হঠাৎ করেই একটা গাড়ি অাসলো পিছন থেকে।শিমু সেটা খেয়ালও করেনি।গাড়িটা ধাক্কা দেওয়ার অাগেই কেউ একজন এসে টান দিয়ে সরিয়ে নিলো শিমুকে.
গাড়ির দিকে তাকিয়েই শিমু বুজতে পারলো গাড়িতে জিহাদ ছিলো।

শিমু-অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

রিফাত-দেখে মনে হচ্ছে লোকটা অাপনাকেই মারতে এসেছিলো।চিনেন নাকি ওকে?

শিমু-আমার স্বামী.

রিফাত-হোয়াট?

শিমু-প্রায় ৩মাস আগে বিয়ে হয় অামাদের.বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো না আমাকে।বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে আমাকে,তাই হয়তো আমাকে তার পথ থেকে সরাতেই এটা করলো।

রিফাত-তোমার মত একটা পিচ্চি মেয়ের বিয়ে কেনো দিলো তোমার বাবা মা।

শিমু-কী করবো বলুন.ভাগ্যের নির্মম পরিহাস.

রিফাত-আজ থেকে তুমি আর ওখানে থাকবে না.

শিমু-তাহলে আমি কী করবো ভাইয়া?

রিফাত-আমাকে ভাইয়া ডাকলে তাহলে আজ থেকে এই বোনটার দায়িত্ব আমার।বোন তোমার ওইখানে ফিরে যাওয়ার দরকার নেই.আজ থেকে তুমি অামার সাথে আমার বাড়িতে থাকবে।আর আমি বুজতে পারছি তোমার এই কালো রং-এর জন্যই ও তোমাকে অবহেলা করছে.জানো তোমার থেকে ছোট আমার একটা বোন অাছে. আজ থেকে তুমিও অামার বোন.

(শিমু কেঁদে উঠলো)

রিফাত-কোনো ভাইয়ার সামনে তার বোন কান্না করলে কোন ভাইয়ের ভালো লাগবে বলো তো।চোখের পানি মুছো,অার চলো অামার সাথে.

রিফাত শিমুকে নিয়ে তার বাসায় চলে গেলো।

শিমু-আপনার বাবা মা নেই?

রাহুল-প্রথমত অামাকে ভাইয়া বলে ডাকো তাই তুমি করে বলবে,অাপনি কথাটা দূরের মনে হয়।আর আমার মা বাবা নেই,একটা পিচ্চি বোন অাছে।

শিমু-কই সে?

রাহুল-স্কুলে অাছে।আজ থেকে এটা তোমার বাসা,তাই তুমি এখানে নিজের মত করে থাকবে।আর তোমাকে অাবার পড়ালেখা শুরু করতে হবে।অাগের কলেজে না এখান কার কলেজে.

(শিমু চোখে পানি চলে অাসলো.এত ভালোবাসাও তার ভাগ্যে ছিলো।সারাজীবন সবার কাছে অবহেলিত ছিলো,অার অাজ কত ভালোবাসা পাচ্ছে রিফাতের কাছ থেকে.নিজের ভাইয়াও এত ভালোবাসতে পারেনি অার অচেনা একটা মানুষ আজকে কত ভালোবাসা দিচ্ছে শিমুকে)

রিফাত-আবার কী হলো?

শিমু-আমার বড় অাব্বু,রিত্ত অামার জন্য চিন্তা করবে।ওদেরকে তো সুখবরটা দেওয়া হয়নি।

রিফাত-কী খবর?

(শিমু একটা রিপোর্ট দিলো রিফাতের হাতে)

রিফাত-আমি ভাবতেও পারছি না এত তাড়াতাড়ি মামা হয়ে যাবো।তাহলে তোমার নিজের খেয়াল রাখাটা অারো গুরুত্বপূর্ণ।তোমার মাঝে এখন অন্য কেউ অাছে,তাই ওখানে ফিরে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না।অার ওই ছেলেটা তোমাদের দুইজনের জন্যই ক্ষতিকর।বুজাতে পারলাম তো অামি তোমাকে?

শিমু-জ্বি ভাইয়া বুজেছি.

রিফাত-তাহলে ফিরে যাওয়ার কথাও বলবে না।অার তোমার কলেজ যাওয়ারও দরকার নেই,অামি বাসায় সব ব্যবস্থা করে দিবো।বাসায় পড়ালেখা করবে কেমন?

শিমু-অামাকে এত কিছু দিচ্ছেন ভাইয়া?

রিফাত-জানো অামার অাম্মুর খুব ইচ্ছে ছিলো তোমাদের মত মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর।কিন্তু অাম্মুর ইচ্ছে পূর্ণ হলো না,আমি না হয় একজনের পাশে দাঁড়াই।

শিমু- তোমার ঋণ শোধ করার মত কিছুই যে আমার নেই.

রিফাত-তোমাকে কেউ ঋন শোধ করতে বলছে?শুধু তোমার ভাই হয়ে ভাইয়ের দায়িত্বটা পালন করতে পারলেই হয়।এখন চলো তোমাকে তোমার রুম দেখিয়ে দেই.

রিফাত শিমুকে নিয়ে উপরে এসে একটা রুম খুলে দিলো শিমুকে.ধীরে ধীরে সময় চলে যাচ্ছিলো. রিফাত,রিমু অার টিচারের সহযোগীতায় শিমু অাগের থেকে অনেকটা বদলাতে শুরু করলো.

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে