কালো মেয়ের প্রতি অবহেলা পার্ট-০৩
লেখা-jannatul ferdous
{দেহের সৌন্দর্য তো একদিন হারিয়ে যাবে কিন্তু মনের সৌন্দর্য অাজীবন থাকবে}
রিত্ত রুম থেকে নিজের রুমে চলে গেলো.শিমু জিহাদের মাথার নিছে একটা বালিশ দিলো।তারপর জুতা গুলো খুলে দিলো.
শিমু-উফফ কি সব খেয়ে এসেছে,কি রকম দুর্গন্ধ অাসছে।
(শার্টের বোতাম খুলতে গিয়েই হাত সরিয়ে পেললো)
শিমু-ইশশ এসব কী করছি অামি।কিন্তু পুরো শার্টের যা অবস্থা।
অাস্তে অাস্তে কাপা কাপা হাতে জিহাদের শার্ট খুলে গায়ের উপর কম্বল জড়িয়ে চলে যেতে চাইলেই শিমুর হাত ধরলো জিহাদ.শিমু অাড়চোখে তাকিয়ে দেখলো জিহাদ ঘুমোচ্ছে.ঘুমের মধ্যেই জিহাদ শিমুর হাত ধরলো.
শিমু-উফফ কেনো যে এখানে অাসতে গেলাম।
বলেই কোনো মতে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো.জিহাদের হাত ধরাতে শিমুর হার্টবিট বেড়ে গেছিলো.দৌড়ে এসে জোরে জোরে শ্বাস পেলছিলো.
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই নামাজ পড়লো শিমু.তারপর রুম থেকে বের হয়ে দেখলো এত সকালে তেমন কেউই ঘুম থেকে উঠে না.তারপর বাগানে গিয়ে কিছুক্ষন ঘুরলো.খুব সুন্দর ফুল ফুটে অাছে বাগানে।তাছাড়া সকালের মিষ্টি বাতাস মন ছুঁয়ে গেলো শিমুর।অাস্তে অাস্তে রহিমার রুমে গেলো.
শিমু-রহিমা অাপা.
রহিমা-অারে শিমু তুমি এত তাড়াতাড়ি উঠো।
শিমু-হুম
রহিমা-অামি ছাড়া কেউই এত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে না।
শিমু-ওহ.
রহিমা-কাজ অাছে অামার।অামি যাইতাছি।
শিমু-চলো অামিও যাবো।
রহিমা-অাইচ্ছা চলো।
সকাল ৯ঃ০০টায় সবাই নাস্তার টেবিলে অাসলো.
জিহাদের অাব্বু-শিমু মা তুমি কখন উঠলে।
শিমু-বড় অাব্বু অামি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠি।
রিত্ত-শিমু এত দেরিতে ঘুমালে এত তাড়াতাড়ি উঠলে কেনো?
শিমু-অামার অভ্যাস হয়ে গেছে।
রিত্ত-অামরা অাজকে শপিং করতে যাবো শিমু।
শিমু-অামাকে নিয়ে?
রিত্ত-হুম।
জিহাদ-একে নিয়ে গেলে তোর মান সম্মান কিছু থাকবে?
রিত্ত-ভাইয়া কালো বলে মানুষকে এত অবহেলা করো কেনো?
জিহাদ-শুধু কী কালো,কোনো রকম অাধুনিকতা এর মাঝে অাছে?
জিহাদের অাব্বু-চুপচাপ খেয়ে যাও এখান থেকে।শিমু সম্পর্কে তোমার কাছে কিছু শুনতে চাই না।
রিত্ত-মানুষকে অপমানিত করা একটু কম কর ভাইয়া।সবার মাঝে সবটা থাকে না যেমন তোর মাঝে মানুষকে সম্মান দেওয়ার ব্যাপারটাই নেই।
জিহাদ-রিত্ত(চিৎকার দিয়ে)
জিহাদের অাব্বু-চুপ রিত্ত একদম ঠিক বলেছে।
জিহাদ-একটা বাইরের মেয়ের জন্য তোমরা অামাকে কথা শুনাচ্ছো.
শিমু-সবাই থামুন অামার জন্য দয়া করে ঝামেলা করবেন না.
(বলেই চোখের পানি মুছে চলে গেলো)
জিহাদের অাব্বু-রহিমা.
রহিমা-জ্বি.
জিহাদের অাব্বু-শিমু কিছু খেয়েছে?
রহিমা-না বলছে অাপনারা অাসলে খাবে।
রিত্ত-দেখ এখনো সবার জন্য না খেয়ে বসে অাছে মেয়েটা।অার তাকেই তুই অপমানিত করোছ।
জিহাদের অাব্বু-রিত্ত যা তো মেয়েটাকে কিছু খাইয়ে অায়।
রিত্ত-ঠিক অাছে পাপা.
রিত্ত খাবার নিয়ে চলে গেলো.
জিহাদ-যত্তসব.
বলেই উঠে জ্যাকেটটা নিয়ে চলে গেলো.
_______________
কিছুক্ষন পর রিত্ত অার শিমু বের হলো।শিমু যেতে চাইছিলো না কিন্তু রিত্ত জোর করে শিমুকে নিয়ে বের হলো।
শিমু-অামাকে নিয়ে সবাই হাসবে রিত্ত.
রিত্ত-যে হাসবে তার নাক পাটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিবো।
শিমু-হিহি.
রিত্ত-উফফফ অাবার হাসে।
শিমু-তোমার কথা গুলো শুনেই তো হাসি অাসতেছে।
রিত্ত-ওকে চলো ওই দিকে যাবো।
শিমু-রিত্ত এসব কী?
রিত্ত-কি অার এসব ড্রেস।
শিমু-কে পরবে এসব.
রিত্ত-তুমি অার অামি।
শিমু-ওরে বাপরে অামি এসব পরবো না।
রিত্ত-এই যে ভাই হাসেন কেনো অাপনি?
ছেলেটা-এই কার্টুন টাকে কই থেকে অানলেন অাপু.
(এটা শুনেই শিমুর চোখে পানি চলে অাসলো)
রিত্ত-দূর এখান থেকে ড্রেসেই কিনবো না।শিমু কান্না করো না তো চলো.
শিমু-অাশেপাশের সবাই অামার দিকে অদ্ভূত ভাবে তাকাচ্ছে।
রিত্ত-চুপ.তোমাকে অামি একদম বদলে দিবো,তখন দেইখো তুমি নিজেকে নিজেই চিনতে পারবে না.
শিমু-না অামি বদলাবো না।
রিত্ত-চুপচাপ হাটো তো।পাপা তোমার সব দায়িত্ব অামাকে দিয়েছে।অার ভাইয়াকেও অামি দেখিয়ে দিবো।
শিমু-অাঅামি মামানে….
রিত্ত-হুম তুমি গ্রামের বলে এত অপমান করতেছে সবাই।তোমাকে অামি শহরের ফ্যাশনে অভ্যস্ত করবো।
শিমু-কি বলছো এসব?
রিত্ত-যা বলছি ঠিক বলেছি.চলো.
(শপিং শেষ করে রিত্ত,শিমু চলে অাসলো বাসায়)
বিকেলে……
রিত্ত-শিমু এই জুতো গুলো পড়ো তো।
শিমু-এগুলা এত উঁচু কেনো?
রিত্ত-তুমি এসব পড়েই হাটা শিখবে।
শিমু-অ্যা.
রিত্ত-অ্যা না হ্যা.এবার তাড়াতাড়ি পড়ো.
শিমু-অামি পারবো না(কাঁদো কাঁদো মুখে)
রিত্ত-সারাদিন পারবো না পারবো না করো না তো.তুমিই পারবে.
(জোর করে জুতা পরিয়ে দিলো শিমুকে।শিমু এক পা হাটে তো অারেক পা চলতে পারে না।
রুম থেকে বের হলো শিমু।সাথে রিত্ত ওর হাত ধরে ছিলো।হাত ছেড়ে দিতেই পরে যাচ্ছিলো শিমু।তখন জিহাদ তার রুম থেকে বের হয়ে অাসছিলো।হোচট খেয়ে জিহাদের উপর পরে দুইজনেই ফ্লোরে পরে গেলো)
জিহাদ-উফফফ এই ফালতু মেয়েটা কি যে শুরু করলো এসব।উঠো বলছি,যেটা করতে পারে না সেটা করতে অাসে.
শিমু উঠে দাঁড়ালো.
জিহাদ-শেষ অাগ্রহ?গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করা যায় না.
রিত্ত-ভাইয়া ইচ্ছে থাকলে যেকোনো কাজ করা যায়.
জিহাদ-রিত্ত তুই বেশি করছিস।অার এই মেয়ে তোমাকে না বলছি অামার চোখের সামনে অাসবে না,দূর মেজাজটাই খারাপ করে দিলো।
(বলেই চলে গেলো)
শিমু-কি জন্য যে রুম থেকে বের হতে গেলাম।
রিত্ত-বাদ দাও চলো.
শিমু-অাবার কি করতে হবে?
রিত্ত-অনেক কিছু করতে হবে।কলেজ খুলে গেলে তোমাকে ঠিক করা টাইম পাবো না,কলেজে সবাই তোমাকে অপমানিত করবে শিমু।
শিমু-করুক এটাই তো ভাগ্যে অাছে।
রিত্ত-এটাই বদলাতে হবে.
শিমু-রাতে বের হবে না?
রিত্ত-না অাজ থেকে সব বাদ.
শিমু-কেনো?
রিত্ত-তোমাকে ঠিক করার কাজে নেমেছি.
শিমু-ভালো.
রিত্ত-চলো তো.
রিত্ত শিমুকে নিয়ে চলে গেলো।এভাবেই কয়েকদিন কেটে গেলো।কলেজে ক্লাশ শুরু হওয়ার দিনও চলে অাসলো।কয়েকদিনে শিমুর মধ্যে পরিবর্তন অাসলেও পুরোপুরি পরিবর্তন অাসে নাই।
অাজকেই প্রথম কলেজে যাবে রিত্ত অার শিমু.রিত্ত জোর করাতে জিহাদ রিত্ত অার শিমুকে নিয়ে কলেজে যাবে।
চলবে………