কালো মেয়ের প্রতি অবহেলা শেষ পর্ব
লেখা-janntul ferdous
হঠাৎ করেই কেউ পিছন থেকে এসে চোখ চেপে ধরলো. চোখ চেপে ধরাতে শিমু ভয় পেয়ে গেলো.
শিমু-কে ছাড়ুন আমাকে.
জিহাদ-শিসসস,আমার স্পর্শ এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?
শিমু-তুতুমি কেনো আবার আআমার কাছে এসেছো?
জিহাদ-ভালোবাসা দিয়ে অবহেলা মুছতে.
শিমু-চাই না আমার তোমার তোমার ভালোবাসা.
জিহাদ-আমার চাই তোমাকে আর আমার মেয়েকে.
শিমু-ছাড়ো বলছি.
জিহাদ-আর একটু.
(কিছুক্ষন পর চোখ ছেড়ে দিতেই শিমু দেখলো একটা ছোট কাচের টেবিলে কেক, মোমবাতি আর বেলুন দিয়ে সাজানো চারপাশ)
শিমু-এসবের মানে কী?
জিহাদ-সরি(কানে ধরে)
শিমু-প্রয়োজন নেই.
জিহাদ-আমি আমার ভুল বুজতে পেরেছি।
শিমু-আচ্ছা এখন আমি স্মার্ট,আগের মত কালো না তাই???
জিহাদ-বিশ্বাস করো তোমাকে অনেক খুঁজেছি.কিন্তু পাইনি।পরে রিফাতকে পেলাম.
শিমু-ভাইয়া!!!!
রিফাত-শিমু তোকে বলছিলাম তো আমি একজনকে ভালোবাসি।আমি রিত্তকে আমি ভালোবাসি.তাই ওর ভাইয়ার সাথে কথা বলতে গেছিলাম. ওইখানে ওকে দেখে চিনতে পারি আমি.
শিমু-আমাকে সব লুকিয়ে গেলে ভাইয়া?
রিফাত-সরি বোন.ওখানে জিহাদ ক্ষমা চেয়েছে আমার কাছে,তুই প্লিজ ওকে ক্ষমা করে দে.
পরী-মাম্মাম বাবাই কে ক্ষমা করে দাও.
শিমু-একদম চুপ,কোনো কথা বলবা না তুমি.
জিহাদ-শিমু প্লিজ আমার রাগ ওর উপর উঠাবে না।
শিমু-তোমাকে আমার আর আমার মেয়ের মাঝে আসতে বলিনি।
জিহাদ-প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে।আজকের দিনটাতেই আমাদের বিয়ে হয়েছিলো,মনে আছে তোমার আজকের দিনটা.
জিহাদ-আমি কিছু মনে করতে চাই না।
পরী-মাম্মাম তুমি তাহলে প্রতিদিন বাবাই-র ছবি বুকে নিয়ে কাঁদো কেনো তাহলে?আমি তো সব দেখি.
শিমু-এত পাকা পাকা কথা বলতে হবে না তোমাকে. চলো আমার সাথে.
রিফাত-জিহাদ তোকে অনেক ভালোবাসে শিমু.
শিমু-তাহলে সোহানী কি ছিলো ওকেও তো ভালোবাসতো.৪টা মাসের একটা দিনও অবহেলা ছাড়া কিছু পাইনি আমি।তার আগেও শুধুই অপমান করে গেছিলো আমাকে।
জিহাদ-তোমাকে ছাড়া ৫ টা বছর কষ্ট পেয়েছি আমি. একবার পেয়ে অবহেলায় হারিয়েছি তোমায়,আবার হারাতে পারবো না শিমু।
শিমু-আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না.পরী চলো আমার সাথে.
(বলেই পরীর হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছিলো)
পরী-আমি থাকবো না তোমার সাথে.আমি বাবাই-র সাথে থাকবো.
(পরী দৌড়ে চলে গেলো.শিমু চোখে পানি নিয়ে তাকিয়েই পরীর চলে যাওয়ার দিকে)
জিহাদ-মামনি তোমার মাম্মাম তো কষ্ট পাচ্ছে.
শিমু-পরী চলে আসো.
পরী-আমি তোমাদের দুইজনের সাথেই থাকতে চাই.তুমি আর বাবাই ভাব করে নাও মাম্মাম.বাবাই আসো আমি তোমাদের ভাব করিয়ে দিবো.
শিমু-আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না তাসফিহা.তুমি আসবে নাকি আমি একাই চলে যাবো.
পরী-যাও মামনি।
(পরী কান্না করে পেললো। শিমু গিয়ে।পরীকে টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছিলো)
রিফাত-সরি জিহাদ আমি হেরে গেলাম.পারলাম না তোমাদের এক করতে.
জিহাদ-না ভাইয়া তোমার জন্যই আমি ওদেরকে দেখলাম আবার.আমার মেয়েটাকে কাছে পেলাম.ওরা আমাকে ছাড়াই হয়তো ভালো থাকবে.
পুষ্প-দাঁড়া শিমু.
(শিমু পিছন ফিরে তাকালো)
পুষ্প-আমার বিয়েতে এসে তুই এভাবে চলে যেতে পারিছ না।
শিমু-তোর কী মনে হয় এটা কোনো বিয়ে বাড়ি নাকি আমাকে নিয়ে গেম খেলার জন্য সবাই মিলে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিস.
পুষ্প-তোর কী মনে হয় আমি তোর জীবন নিয়ে গেম খেলার জন্য এখানে এনেছি.
শিমু-আমার তো সেটাই মনে হচ্ছে.
পুষ্প-আজ তোদের বিয়ের ৬বছর হতে চললো.এই দিনটার কথাও তোর মনে নেই।আজকের দিনটার কথা মনে করে জিহাদ ভাইয়াকে শেষ বারের মত ক্ষমা করে দে প্লিজ.
(হঠাৎ করেই জিহাদ পুরো কাচের টেবিলটা ধাক্কা দিয়ে পেলে দিলো.টেবিলে থাকা কাচের গ্লাস গুলো,টেবিলটা টুকরো টুকরো হয়ে গেলো)
জিহাদ-হ্যা আমি করেছি সব.৪ টা বছর নিজের মেয়ের থেকে দূরে থেকেও আমার অপরাধের শাস্তি হয় নি.
যেদিন বুজলাম তোমাকে অবহেলা করার মাধ্যমেই আমি তোমাকে ভালোবেসে পেলছি সেদিন থেকে পাগলের মত তোমাকে খুঁজেছি.তোমাকে না পাওয়ার আগের রাতগুলোর প্রতিটা রাতেই কাটতো নির্ঘুম।তারপরেও আমার অপরাধের শাস্তি হয় নি.
ঠিক আছে এবার তোমার সামনে আমি নিজের শাস্তি বেছে নিয়েছি,তাতেও যদি আমাকে ক্ষমা করতে না পারো আরো শাস্তি দিয়ো আমাকে।(চিৎকার দিয়ে)
(বলেই খালি পায়ে কাচের টুকরো গুলোর উপর হাটা শুরু করলো।কাচ গুলো ডুকা শুরু করছিলো জিহাদের পায়ে,পা কেটে রক্ত বের হচ্ছিলো.তারপরেও হেটে যাচ্ছিলো)
পুষ্প-তুই তো এরকম ছিলি না,এতটা স্বার্থপর কীভাবে হলি তুই?
রিত্ত-শিমু প্লিজ এসব আটকাও.(রিত্ত কান্না করে দিলো)
পরশ-আমি তো আমার এই বোনটাকে চিনতাম না,আমার বোনটা তো সবাইকে ভালোবাসতো.নিজে কষ্ট পেলেও অন্য কাউকে কষ্ট দিতো না.
(হঠাৎ করেই একটা কাচের টুকরা জিহাদের পায়ে পুরো গেথে যাওয়াতে চিৎকার দিয়ে উঠলো জিহাা.এরকম দেখে আর থাকতে পারে নি শিমু)
জিহাদ-শিমু এসো না।
(অনেক গুলো কাচের টুকরো সামনে.দেখেও এসবের উপর দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো জিহাদের কাছে।গিয়েই জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো)
শিমু-এটা কী করছিলে তুমি.
জিহাদ-তোমার পাও তো কেটে গেছে.
শিমু-তুমি এরকম করলে কেনো?তোমার কষ্ট হলে যে আমারো খুব কষ্ট হয়.
জিহাদ-আমাকে ক্ষমা করেছো তো?
শিমু-এরকম পাগলামী করলে কী আর রেগে থাকা যায়।
জিহাদ-আই লাভ ইউ.
(শিমু লজ্জায় জিহাদের বুকে মাথা লুকালো।সবাই আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলো)
পরশ-এবার কী আমার বিয়েটা হবে?
পুষ্প-আগে এই দুই পাগলের পায়ের ব্যবস্থা করো.
রিত্ত-শিমু এসো তো আমার সাথে.
শিমু-কোথায়?
জিহাদ-কি যে বলোছ এ পা নিয়ে হাটবে কীভাবে শিমু?
রিত্ত-তুমি কীভাবে হাটবে তা দেখো.
রিফাত-ওকে আমি হেল্প করছি.
(কাচের টুকরো গুলো বের করে দুইজনকেই রুমে দিয়ে এলো রিত্ত আর রিফাত।ওইদিকে পুষ্প-পরশেরও বিয়ে হয়ে গেলো.বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতেই রিত্ত-রিফাত ছাদে গেলো.দাঁড়িয়ে কথা বলছে দুইজন.
রিফাত-রিত্ত আজ অনেকদিন পর খুব খুশি আমি.
রিত্ত-আমিও খুব খুশি.
রিফাত-এবার আমাদের বিয়েটা করে পেলি.
(বলেই রিত্তকে জড়িয়ে ধরলো,রিত্তও জড়িয়ে ধরলো রিফাতকে)
জিহাদ-শিমু হাতটা দাও তো.
শিমু-কেনো?
জিহাদ-অনেক দিন ধরেই এই দিনটার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম.
(শিমু মুচকি হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো।জিহাদ হাতে একটা রিং পরিয়ে হাতে একটা চুমু দিলো)
জিহাদ-তোমাকে আবার ফিরে পেয়েছি শুনলে পাপা খুব খুশি হবে.
শিমু-বড়আব্বু কোথায়?
জিহাদ-একা একা ভ্রমনে গেছে.
শিমু-ভালো
জিহাদ-পরী কই?
শিমু-মনে হয় পুষ্পের কাছে.
রিত্ত-না আমার কাছে.
জিহাদ-কই ছিলে এতক্ষন?
পরী-জানো বাবাই ফ্রেন্ড প্রেম করছিলো ফুপির সাথে.
শিমু-তা তুমি কেনো গেছিলে ওখানে?
পরী-আমি যায়নি তো খালামনিরা আমাকে নিয়ে গেছিলো.
শিমু-ওই দুই বান্দর কই?
পরশ-এই তো দুইজন.
জিহাদ-এদের কানে ধরে আছো কেন?
পরশ-এদের কাজের জন্য.
শিমু-কী করলো এরা.
পরশ-কী আর.খাটে ভূতের সাউন্ড রেকোর্ডার দিয়ে রাখছিলো.বসতেই বেজে উঠলো.এত ভয়ঙ্কর স্বর শুনে পুষ্প অজ্ঞান হয়ে গেলো.
(সবাই হেসে উঠলো)
শিমু-এখন জ্ঞান এসেছে?
পুষ্প-হুম আসলো.(পুষ্প এসে বললো)
পরশ-পানি ছিটিয়ে জ্ঞান আনতে পেরেছি.
শিমু-তুই এত ভীতু?
পুষ্প-দূর হঠাৎ শুনেছি তো তাই.
পরী-মাম্মাম আমরা তো বাবাই-র সাথে বাড়িতে ফিরে যাবো.
শিমু-হুম যাবো.
রিত্ত-আবার সব কিছু নতুন ভাবে শুরু করবো সবাই.
জিহাদ-আমার পাগলি বোনটারও বিয়ে দিবো খুন তাড়াতাড়ি.
রিত্ত-দূর.
লজ্জা পেয়ে দৌড়ে চলে গেলো রিত্ত.রিফাতও বের হয়ে গেলো.রিমু সাথী পরীকে নিয়ে চলে গেলো.পরশ-পুষ্পও বের হয়ে গেলো.
ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হলো।সব কিছু মিটিয়ে নতুন জীবন শুরু করলো দুইজন,সাথে রিত্ত-রিফাত,পরশ-পুষ্পেরও নতুন জীবন শুরু হলো.এবার আর কোনো অবহেলা নেই.ভালোবাসার খুনসুটি গুলো হয়তো লেগেই থাকে,কিন্তু ভালোবাসায় কোনো কমতি নেই.
সমাপ্ত.
বি.দ্র.-দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন.গল্পটা হয়তো সবার মন মত লিখতে পারিনি।ক্ষমা করবেন।
ধন্যবাদ.