ঝরাফুল পর্ব ৯
লিখা: জামিয়া পারভীন তানি
মৌরী বাসর ঘরে বসে আছে, ঘর যদিও পুরোনো তবুও তার মাঝে ভয় কাজ করছে। শাওন রুমে এসে প্রথমেই মৌরীকে জড়িয়ে ধরে, মাথা থেকে ওড়না টা সরিয়ে দেয়। গলাতে চুমু দিয়ে বলে,
__ “ আজ আমি পেয়েছি তোমাকে , সারাটা জীবন রাখবো আগলিয়ে। ”
মৌরী মুচকি হেসে শাওনের বুকে মাথা রাখে,
__ “ অনেক ভাগ্য করে পৃথিবী তে এসেছিলাম বুঝি । নইলে তোমার মতো স্বামী এই দুনিয়ায় পাওয়া যায় না সহযে। ”
শাওন আস্তে আস্তে আদরে ভরিয়ে দেয় মৌরীকে , আজ এতো দিনের চাওয়া পাওয়া পূর্ন হয় শাওনের। যাকে ছোট থেকে ভালোবেসে এসেছে তাকে নিয়ে সুখের সংসার গড়তে পারছে এটাই তার কাছে অনেক।
শ্যামার বিয়ের ১ বছর পর, শাওন আর মৌরীর নতুন করে বিয়ে হয়। মৌরীর ছেলেটার বয়স এখন ২ মাস ।
__ “ আজ শাকিব কে তোর কাছে রাখবি শ্যামা! ”
__ “ খুব ডিস্টার্ব দেয় বুঝি ও তোদের কে? ”
শাওন শ্যামাকে মৌরীর ছেলের দায়িত্ব একদিনের জন্য নিতে বললে শ্যামা এই কথা বলে । মৌরীর সাথে একান্তে সময় কাটাতে চাইছিলো বলেই শ্যামা কে শাওন এই কথা বলে। শ্যামা অবশ্য মৌরীর ছেলেকে নিজের কাছেই রাখে প্রায়ই কিন্তু খোঁচা দিতে ছাড়ে না ।
….
__ “ মৌরীর বিয়েটা তো ভালোভাবেই হয়ে গেলো! আমাদের বিয়ের খবর কবে জানাবে বাসায়? ”
ফোনে সিপন কে শ্যামা জিজ্ঞেস করলে সিপন এড়িয়ে যায়।
__ “ এতো কিসের তাড়া বলো? ”
__ “ তোমার তো এখন চাকুরী হয়েছে, আর কতো দেরি করবে তুমি? ”
__ “ তোমার সমস্যা টা কি? রোজ এতো তাড়া দিচ্ছো কেনো? ”
__ “ আমাকে বুঝতে চেষ্টা করো সিপন, আমার মাঝে আরেকজন বেড়ে উঠছে। আর কিছুদিন গেলেই বাসার সবাই জেনে যাবে? ”
__ “ জানলে তখন জানাবে! ”
__ “ তুমি এতো পাষান হচ্ছো কিভাবে, নিজের সন্তানের প্রতি মায়া দয়া নাই। নাকি দুনিয়ার অনেক সুন্দরীর ভিড়ে তোমার কালো বউ কে আর ভালো লাগছেনা? ”
__ “ ঠিক তাই!”
__ “ মানে? ”
__ “ জা শুনলে তাই, এখন আমি রাখছি। ”
সিপন ফোন টা কেটে দেয়, এখন কি করবে শ্যামা কিছুই বুঝতে পারছেনা।
….
__ “ ফিরতে এতো রাত হলো যে তোর, জাহাজ তো সেই দুপুরে ভিড়েছে। ”
__ “ দেশে আসলেই কি সাথে সাথে ফিরতে হবে এমন কোন কথা ছিলো নাকি? ”
__ “ কোথায় গিয়েছিলিস সেটা বলবি তো! ”
__ “ আমার যে একটা সন্তান আছে, তাকে ফিরে পেতে হবেনা নাকি? ”
__ “ তোর সমস্যা টা কি? ”
__ “ সমস্যা কিছুই না, আমার বাচ্চা আমি চাই, জাস্ট এইটাই। ”
__ “ যখন বিয়ে করলি, শয়তানি করে ডিভোর্স দিয়ে চলে আসলি, এরপর যখন শাওনকে বিয়ে করলো তখন তুই বললি ভালোবাসিস ওকে। আর এখন যখন শাওনের সাথে সুখে আছে তখন আবার ওকে বিরক্ত করতে চাচ্ছিস কিসের জন্য?”
__ রিমন ওর বাবা কে বলে, “
• আমি ওকে পছন্দ করে ফাঁদে ফেলে ইউজ করেছিলাম মাত্র, প্রতিশোধ নিতে।
• পরে অর কষ্ট দেখে মায়া জেগেছিলো তাই কাছে যেতে চেয়েছিলাম।
• কিন্তু বাইরের এতো সুন্দরী নারীর কাছে ও কিছুই না তাই আর ওকে চাচ্ছিনা।
• বিয়ে করার পর এক নারীতে আকৃষ্ট থাকার মতো ছেলে আমি না, বংশ রক্ষার্থে বাচ্চা টা নিয়ে আসতে চাই মাত্র।
আর কিছু শুনতে চাও তুমি? ”
…..
ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে উঠে মৌরী, শাওন উঠে মৌরীকে ডেকে তুলে, মৌরী দুঃস্বপ্ন দেখেছে বলে কাঁদতে থাকে।
__ “ কেঁদো মৌরী, এমন কিছুই হবেনা। তোমার ছেলেকে তোমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবেনা। ”
__ “ তুমিই তো আলাদা করে দিয়েছো! ”
__ “ কিভাবে? ”
__ “ আমার ছেলেকে আমার কাছে এনে দাও প্লিজ। ”
__ “ ওকে রিলাক্স, আর তোমার ছেলেকে তোমার থেকে দূরে রাখতে হবেনা। ”
শাওন শ্যামার ঘরে গিয়ে নক করার সাথে সাথে দরজা খুলে দেয় শ্যামা।
__ “ কিরে ঘুমাস নি! ”
__ “ নাহহ! তোমার ছেলে ঘুমাতে দিলে তো ঘুমাবো। ”
__ “ তোর চোখ ফোলা লাগছে কেনো? কাঁদছিলিস নাকি! ”
নিজেকে আড়াল করে নিয়ে বলে,
__ “ কই না তো! ঘুমায় নি, তাই হয়তো বা। ”
__ “ মনে হয় অন্য কারণ আছে, খুলে বল! ”
মৌরী ততক্ষণে শ্যামার ঘরে কথোপকথন শুনে শাওনের দিকে তাকিয়ে বলে,
__ “ ও কিছুদিন থেকেই ডিপ্রেশন এ ভুগছে, কোন অসুখ হলো কিনা! কালই ওকে ডক্টর দেখিয়ে এনো। ”
মৌরী শাকিবকে কোলে নিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে, তখন শ্যামাকে শাওন বলে,
__ “ এত মন খারাপ করে থাকিস কেনো সবসময়! হাসিখুশি থাকবি সব সময়। এখন ঘুমিয়ে পড়। ”
__ “ হুমম ”
পরের দিন, সকাল ১০ টাই শ্যামলী কে নিয়ে ডক্টর এর কাছে যায় শাওন, যদিও শ্যামা রাজি হচ্ছিলো না। কিন্তু মৌরীর জেদের বশে যেতে বাধ্য হয়েছে।
দুপুর ১২ টাই পোষ্ট অফিস থেকে লোক আসে, একটা চিঠি দিয়ে যায়। মৌরীর নামে চিঠি, একটু অবাক ই হয় সবাই। মৌরী প্রেরকের নাম দেখে রিমন ।
মাটিতে ধপ করে বসে পড়ে, মনের মাঝে হাজার কুচিন্তা হতে শুরু করেছে। শাওনের মা মৌরীর হাত থেকে চিঠি টা নিয়ে খুলে দেখে নিজেও হাঁ হয়ে সোফাতে বসে পড়েন।
শ্যামলীর অনেক গুলো পরীক্ষা করিয়ে শাওনে র ফিরে আসতে দুপুর ২ টা বেজে যায়। বাসায় এসে ঢুকে সবাই চুপ হয়ে বসে আছে দেখে, শাওন জিজ্ঞেস করে,
__ “ কি হয়েছে? ”
__ “ বাচ্চা টা রিমনের! এতো দিন লুকিয়ে রাখলি কিভাবে তোরা! নষ্ট করে দিতে পারিস নি? ”
__ “ কি হয়েছে সেটা বলো! আমি মৌরীকে নিজের সম্পদ ভাবি, ওর সন্তান আমারও সন্তান। এই নিয়ে আর জল ঘোলা না করাই বেটার হবে। ”
__ “ তুই না চাইলেও এবার সবাই জানবে! রিমন আপিল করেছে, ওর বাচ্চা ও ফেরত চায়। ”
__ “ কি যা তা বলছো! ”
__ “ তোর বউ তো পাগল হয়ে গেছে রে! গিয়ে দেখ আগে! ”
শাওন নিজের ঘরে গিয়ে দেখে মৌরী পাথরের মতো চুপচাপ বসে আছে। শাওন গিয়ে মৌরী বলে ডাক দিতেই শাওনের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।
ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা, কাঁদতে কাঁদতে বলে,
__ “ আমার ছেলে কে আমি দিতে পারবোনা, তুমি প্লিজ কিছু করো! ”
__ “ দিবোনা ওকে, কেঁদোনা আর। ”
মৌরীকে বুকের সাথে জড়িয়ে শান্তনা দিতে থাকে শাওন।
চলবে….
গল্পটা নাকি অনেকের ভালো লাগছে না, আর বেশি দিন এটা চলবেও না। ?