ঝরা ফুল পর্ব ৮
লিখা : জামিয়া পারভীন তানি
মৌরীর পিছন দিক থেকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় শাওন,
__ “ কাল থেকে অনেক অপেক্ষা করেছো! আর কাঁদতে হবেনা তোমাকে। এখন থেকে আমার সাথে ই স্বপ্ন সাজাবে তুমি। আজই বাসায় জানিয়ে দিবো এই বাচ্চা আমার আর তোমার। ”
মৌরী রিমনের অপেক্ষা করতে করতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলো তখন শাওন এই কথা গুলো বলে।
__ মৌরী নিজেও শাওন কে শক্ত করে ধরে, “ কি ক্ষতি করেছিলাম তার বলো! কেনো সে বারবার এভাবে ঠকাচ্ছে?”
__ “ তুমি কোন ক্ষতি করো নি তার , সে ভালো ছেলে নয়। তোমাকে নিয়ে মজা করেছে, ভুলে যাও ওকে। কালই আমি জানতাম তোমার বাচ্চার কথা জানলে সে তোমাকে মেনে নিবেনা। ”
__ “ আচ্ছা! তুমি কি মেনে নিতে পারবে! আমার প্রতি কি ঘৃণাও আসেনা তোমার! ”
__ “ ভালোবাসার মানুষের জন্য এইটুকু না করতে পারলে ভালোবাসার দাম কি থাকে বলো? ”
মৌরী কে নিয়ে শাওন রিয়াদ আহমেদ এর সামনে আসে, মা বাবা বোনের সামনে বলে,
__ “ রিপোর্ট এর কথা কালই জানানো উচিৎ ছিলো, সুখবর লুকানো আমার মোটেও উচিৎ হয় নি। আসলে নতুন অতিথি আসছে আমাদের বংশে। ”
কথাটা মিথ্যে বলেনি অবশ্য, বংশের ই তো সন্তান। কথা টা শুনে সবাই একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। এমন নিউজ কেউ আশা করেনি অবশ্য।
….
__ “ যে মেয়েকে আমার ফ্যামিলি মেনে নিতে পারেনি তার পেটের সন্তান কে কিভাবে মেনে নিবো বল?”
রিমন তার ফ্রেন্ড নয়ন কে কথাটা বলে।
__ “ আরে ওসব বউ হাজার টা গেলে হাজার টা পাবি, বাচ্চা টা হয়ে গেলে নিজের কাছে নিয়ে চলে আসিস। ”
__ “ এটা তো অবশ্যই করবো, আমার বংশের সন্তান অন্যের কাছে রাখার কোন মানেই হয় না। ”
দুজনের বিয়ার খেতে খেতে হাসির রোল তুলে। রিমন এমন কোন পাপ নেই যা বিদেশের মাটিতে করেনা। জাহাজের বড় অফিসার হবার সুবাদে বিদেশী রমনীদের সাথে তার মেলামেশা। রাত কাটাতেও দ্বীধা করেনা তাদের সাথে।
….
শাওন ছাড়া এই বাড়িতে মৌরীর সাথে তেমন কেউ মিশে না ভালোভাবে। প্রেগন্যান্সির সময় মেয়েদের হাসিখুশি রাখতে হয় কিন্তু কিভাবে মৌরীকে হাসাবে সেই চিন্তায় মগ্ন হয়েছে শাওন।
ক্লাস নিয়ে ফিরে এসেই মৌরী কে শাওন একটা প্যাকেট ধরিয়ে দেয়।
__ “ কি এটা? ”
__ “ খুলেই দেখো! পছন্দ হলে একটু সাজিও এখন। ”
মৌরী দেখে আকাশী রঙের শাড়ি, সোনালী পাড়ের। সাথে সোনালী ব্লাউজ আর আকাশী ছায়া। সোনার এক জোড়া কানের দুল।
__ “ বাব্বাহ! তোমার চয়েস এতো সুন্দর! ”
__ “ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি, তুমিও রেডি হয়ে নাও। ”
__ “ তুমি এনেছো আর আমি পড়বোনা! তা কি হয়। ”
মৌরী শাওন কে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিয়ে ঝটপট শাড়ি পড়ে নেয়। ছোট থেকেই ওর শাড়ির প্রতি খুব নেশা, এরউপর পছন্দের রঙের শাড়ি। মন টা এমনি তেই খুশি হয়ে গেছে মৌরীর। কানের দুল টাও অনেক সুন্দর, উপরের দিকে ফুলের মতো নিচে ঝুমকো। দুল টা পড়ে নিতে নিতে শাওন এসে হাজির।
__ “ চোখ টা বন্ধ করো প্লিজ! ”
__ “ উঁহু! কেনো? ”
__ “ করোই না প্লিজ। ”
মৌরী চোখ বন্ধ করতেই শাওন হাত টা ধরে নিয়ে চুড়ি পড়িয়ে দেয়। মৌরী হাত নাড়িয়ে চুরির শব্দ করে খিলখিলিয়ে হাসে। শাওন তো এই হাসি টাই দেখতে চেয়েছিলো।
সবাইকে জানিয়ে মৌরীকে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী নদীর ধারে। বাতাসে চোখ বন্ধ করে নেয়।
__ “ এই মৌরী, নৌকায় উঠবে? ”
__ “ সত্যিই! ”
মৌরীকে ধরে ধরে নদীর একদম ধারে নামে শাওন,
__ “ ⛵ তে উঠিয়ে দিও। ”
মৌরীকে কোলে নিয়ে নৌকা তে বসিয়ে দেয় শাওন। দাঁড় বাওয়া নৌকায় বেশী মজা লাগে। শাওনের মনে দুষ্টুমি আসে,
নদীর পানি তুলে মৌরীর দিকে ছুড়ে দেয়। মৌরীও শাওনের দিকে পানি মারে। দুজনেই হাসতে থাকে, তখন শাওন বলে
__ “ একটা আবদার রাখবে? ”
__ “ বলেই দেখো!”
__” আমার বুকে মাথা রেখে শোবে, তোমার সাথে আকাশ দেখতে চাই। ”
মৌরী সংকোচ করলেও শাওনের কাঁধে মাথা রাখে,
__ “ হ্যাপি! ”
__ “ এভাবেই প্রতিটি মুহুর্ত তোমার সাথে সাজাতে চাই। ”
মৌরী চোখ বন্ধ করে শাওনকে অনুভব করতে থাকে। নিমিষেই মন টা খারাপ হয়ে যায়, শাওন তাকে কতো ভালোবাসে ছোট থেকে। রিমনের কারণ এ এক্সিডেন্ট এর জন্য আজ সে শাওনের সাথে বেশিক্ষণ খুশি থাকতে পারেনা।
__ “ এই মেয়ে! ঘুমাতে বলিনি, আকাশ দেখতে বলেছি। ”
শাওনের ডাকে হকচকিয়ে উঠে মৌরী। শাওন বুঝে গিয়েছিল মৌরী ঠিক নেই।
মৌরীর নাকে চিমটি কাটে আস্তে করে,
__ “ কি ভাবছিলে এতো! ”
__ “ তুমি কতো ভালোবাসো সেটাই। “
সন্ধ্যের আগে বাসায় ফিরে আসে ওরা, বাইরের খাবার খাওয়ায় না মৌরীকে, যদি ফুড পয়জনিং হয় সেই ভয়ে।
মৌরী চেঞ্জ করেই মামীর কাছে গিয়ে বলে,
__ “ আজ কি নাস্তা বানাবো মামী? ”
__ “ ভিতরে গিয়ে রেস্ট নাও, বাচ্চার কিছু হলে শাওন আবার বলবে আমরা মেরে ফেলেছি। ”
__ “ একদম রেস্ট নেওয়া যাবেনা তো, তাহলে সিজার করতে হবে। আমি অপারেশন করতে চাইনা তো। আমি টুকিটাকি কাজ করতে চাই, সব সময় রেস্ট নিতে ভালো লাগেনা তো। ”
__ “ গিয়ে নুডুলস আর চা করে এনে দাও সবাইকে। ”
সবাইকে নাস্তা খাইয়ে নিজেও খেয়ে নেয়।
রাত ১২ টা বাজে, মৌরী ওয়াশরুমে থেকে ফিরার পথে শ্যামলীর ঘরে ফিসিরফিসির শুনতে পায়। “ শ্যামলী এতো রাতে কার সাথে কথা বলছে! ”
দরজায় টোকা দিরে গিয়েও দেয় না, সকালে বলবে বলে চলে আসে।
….
__ “ এভাবে আর কতো দিন লুকিয়ে সম্পর্ক চালাবে শিপন?”
__ “ তুমি বুঝতে চাচ্ছো না কেনো? আমি এখনো জব পাইনি। একটা জব পেয়ে গেলেই বাসায় তোমার কথা জানিয়ে দিবো। ”
__ “ তুমি যা পারো তাড়াতাড়ি করো, আজ বাবা মা কে বলছিলো আমার বিয়ের ব্যপারে। ”
__ “ তোমার সাথে যখন কথা বলতে আসবে তখন তুমি বলিও সামনে পরীক্ষা, কিছুদিন পর বিয়েটা করতে চাও। ”
__ “ এই চলো না আমরা লুকিয়ে বিয়েটা সেরে রাখি, পরে না হয় বাসাতে জানিয়ে দিবো ।”
শিপন মৌরীর বড় ভাই, চুটিয়ে প্রেম করছে শ্যামার সাথে। আর শ্যামা বিয়ে করার জন্য অনেক পাগল হয়ে গেছে।
__ “ হুম! তা করা যায়! চলো তাহলে কালই বিয়েটা করে ফেলি। বাসায় না হয় পরেই জানাবো আমরা। ”
…..
বেডের মাঝে বালিশ দিয়ে সেপারেশন করছে শাওন,
__ “ ন্যাকামি করছো! ”
__ “ কেনো? ”
__ “ মাঝির সামনে আমায় জড়িয়ে রাখলে আর এখন আলাদা ব্যবস্থা করছো যে বড়ো। ”
শাওন একটু লজ্জা পেলেও বলে,
__ “ সেপারেশনেই থাকো কিছুদিন। ”
মুচকি হেসে বেডের অপরপাশে ঘুমিয়ে পড়ে মৌরী।
….
পরেরদিন সকাল ১০ টাই কোর্টে গিয়ে কোর্টের কাজীর মাধ্যমে বিয়ে করে, ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন ও করিয়ে নেয়। সাক্ষী হিসেবে থাকে শিপনের ২ জন ফ্রেন্ড আর শ্যামার এক বান্ধবী। শিপনের ফ্রেন্ড স্বপন এর বাসাতে দুজনে বসে আছে। স্বপনের বাবা মা বেড়াতে যাওয়ার সুবাদে শিপন সেখানে ই শ্যামা কে নিয়ে একান্তে সময় কাটাতে চাইছে।
চলবে………