ঝরা ফুল পর্ব ৭
লিখা: জামিয়া পারভীন তানি
__ “ ও এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবেনা, কথা টা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নে শ্যামা। আর যদি তোদের সবার প্রব্লেম হয় তাহলে আমি ওকে নিয়ে এই বাসা ছেড়ে চলে যাবো। ” বাসায় ঢুকে শ্যামলীর উত্তর দেয় শাওন।
__ “ আমি শ্যামার কথায় যাবোনা শাওন, আমার জন্য তোমাদের সম্পর্ক নষ্ট করোনা। আজ তো একটু অসুস্থ লাগছে, কাল থেকে বাসার রান্না টা না হয় আমিই করবো। আর পড়াশোনা ও কন্টিনিউ করতে চাই। প্রয়োজনে সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্না সেরে না হয় ক্লাসে যাবো। আর শাওনের ঘরে থাকলে যদি তোমাদের মনে হয় পাপ করছি, তাহলে না হয় তোমার ঘরেই থাকবো শ্যামা, আর তোমার যদি প্রব্লেম হয়! তাহলে স্টোর রুম তো আছেই। ”
__ “ অন্য কোথাও যেতে হবেনা, এই রুমেই থাকবে। আমার চোখের সামনে, যতক্ষণ আমি বাসায় থাকবো। ”
__ “ সব কিছু নিয়ে জেদ করতে নেই শাওন, তোমার ভয় নেই! আমি তোমাকে ছেড়ে যাবোনা এখন। আমি অনেক ভেবে দেখেছি, আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিবো তোমার সাথে। ”
শ্যামলী সব শুনে বেরিয়ে যায়, শাওন পর্দা ফেলে দিয়ে মৌরীর কানের কাছে এসে বলে,
“ ভালো বাসি প্রিয়, তুমি যেও না চলে।
রাখবো বেঁধে তোমায়, মায়ার আঁচলে। ”
মৌরী মুচকি হাসে, এরপর বলে,
__ “ চার টা মাস একটু কষ্ট করো শাওন, এরপর না হয় আমরা আবারো এক হবো। ”
শাওনের মনে খুশির দোলা লাগে, মন চাচ্ছে যেনো আকাশে উড়তে, প্রেমের সাগরে ভাসতে। মৌরী যে তার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেছে এটাই তার কাছে অনেক।
__ “ শুধু চার মাস না, সারাটা জীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবো মৌরী। ”
পরের দিন মৌরী খুব ভোরে উঠে সবার জন্য তরকারী রান্না করে, এরপর রুটি বানিয়ে ফেলে। ৮ টার মধ্যে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে ভার্সিটি চলে আসে। শ্যামলী ও অবশ্য একসাথে ই পড়ে, কিন্তু রিমনের ঘটনা জানার পর থেকে শ্যামলী ঠিক মতো মিশছে না মৌরীর সাথে। একই বাসাতে থাকার সুবাদের যেখানে ওরা একসাথে যাওয়া আসা করতে পারতো সেখানে মৌরীকে ফেলে শ্যামলী আগেই চলে যায় ভার্সিটি তে।
মৌরী ভার্সিটি পৌঁছাতে ই যেনো সবার মাঝে এক প্রকার কানাঘুষো শুনতে পাচ্ছে। নিজের মাঝে খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো তার, মনে হচ্ছিলো তাকে নিয়েই যেনো কথা হচ্ছে সবার মাঝে।
এক পর্যায়ে রেহান রাজু কে একটু জোরে করে ই বলে,
__ “ একই সাথে দুইজনের সাথে, আহহ কি মজা হইছে রে! ”
সবাই হো হো করে হেসে উঠে। এদিকে মৌরীর লজ্জ্বায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিলো।
কথায় তাই দিয়ে শোভা রেহান কে বলে,
__ “ বেহায়া দেখবি ভাই, দেখতে হলে আমার সামনে বসা নাক কাটা কে দেখ। ”
সবার মাঝেই হাসির রোল পড়ে যায়, ওদিকে শ্যামলী ও চটে গেছে। মৌরীকে পঁচাতে গিয়ে সবাইকে বলে দিয়েছে। এগুলো বললে নিজের ভাইয়ের ও যে অপমান হবে তা বুঝতে পারেনি ।
বুঝতে পেরেছে শ্যামলী, তাই উঠে ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
__ “ স্টপ ইট, আর যেনো সিরিয়াস বিষয় নিয়ে তর্ক না হয়। এক্সিডেন্ট যে কারোর সাথেই হতে পারে। তাই বলে তাকে নিয়ে মজা উড়াবি নাকি তোরা। এখন যদি তোদের ফ্যামিলির কারোও সাথে এমন হয় তোরা কি করবি?”
মৌরী কোন কথা না বলে বাইরে চলে যায়, ক্লাসে টিচার আসলে ক্লাসে ঢুকে ক্লাস করেই আবার বেরিয়ে যায়।
মৌরীর রুটিন হয়ে গেছে এটা, প্রতিদিন ক্লাস করা, বাসায় রান্না টা করা, মাঝে মাঝে দুই একটা কথা শাওনের সাথে বলা। শ্যামলী সহ বাসার সবাই ধীরে ধীরে মৌরীকে মেনে নেওয়া শুরু করে। বাড়িতে সাধারণত একটা কুকুর পুষলেও যেমন মায়া জন্মে মৌরীও সব কথার ঝাজ সহ্য করে টিকে আছে বলেই হয়তো সবার মনে জায়গা করতে পারছে মেয়েটা।
এভাবে দেড় মাস কেটে যায়, একদিন রাতে শাওন ঘরে রেস্ট নিচ্ছিলো। শাওনের মা বাবা টিভি দেখাতে ব্যস্ত। শ্যামলীর ঘরে ছিলো মৌরী।
মৌরীর মাথাটা ঝিম ধরে আসছে, শরীর টা খুব খারাপ লাগছে। হটাৎ করেই রুমের ভিতরে গড়গড়িয়ে বমি করে ফেলে। শ্যামলী বমি করা দেখে শাওনের ঘরে দৌড়ে পালায়, ওর নিজের জান ঘাটছে এসব দেখে।
__ “ কিরে কি হয়েছে? ”
__ “ কি আবার হবে! তোর বউ বমি করে গোটা ঘর ভাসিয়ে দিয়েছে। ”
শাওন তাড়াতাড়ি করে মৌরীর কাছে যায়, বমি করার পর বিছানায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। বমির জন্য কেউ এই রুমে আসছেনা! তাই আগে রুম পরিষ্কার করে আগে। এরপর মৌরীর মাথা নিজের কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ মৌরীকে ডাক দেয়। মৌরীর সাড়া না পেয়ে মৌরীর মুখে পানির ছিটা দেয়।
জ্ঞান ফিরলেও মৌরী সারারাত অসুস্থ থাকে, শাওন খুব ভোরের দিকে মৌরীকে কোলে করে নিয়ে আসে হসপিটাল এ। অনেক গুলো পরীক্ষার পর রিপোর্ট আসে বিকেলে।
মৌরী মা হতে চলেছে, এটা কি আদৌও মেনে নিতে পারবে শাওন। সে তো মৌরীর ভালোবাসা পেলোই না, মৌরীর যদি সন্তান হয় তাহলে মৌরীর ও শাওন কে মেনে নেওয়া সম্ভব না।
কাউকে রিপোর্ট না জানিয়ে লুকিয়ে রাখে শাওন, রাতে সবাই যখন ঘুমে অচেতন। স্টোর রুমে মৌরীর মাথায় হাত বুলাতেই মৌরী উঠে পড়ে।
আধো আধো ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে মৌরী
__ “ এতো রাতে তুমি! কি হয়েছে বলো আমাকে! ”
__ “ তুমি কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে মৌরী?”
__ “ হটাৎ কি হলো তোমার? ”
__ “ বলো? ”
__ “ না যাবো না। ”
__ “ সত্যিই টা জানার পরও কি এটাই বলবে? ”
__ “ কি এমন সত্যিই! ”
__ “ তুমি মা হতে চলেছো! ”
মৌরী দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে, কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। চোখ লাল হয়ে আসছে, যেকোনো মুহূর্তে জল গড়িয়ে পড়বে।
শাওন আবার বলে,
__ “ যেও না আমাকে ছেড়ে, ও আমাদের সন্তান হিসেবে ই পরিচিত হবে। ”
__ “ তুমি তো ওর বাবা নও! তোমার কি আমার প্রতি এতটুকুও ঘৃণা হচ্ছেনা। ”
__ “ আমি তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি মৌরী, তোমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সব কিছু মেনে নিতে পারবো। ”
__ “ আর তোমার ফ্যামিলির কি হবে! তারা শুধু জানতো রিমনের সাথে বিয়ের একদিন পর ডিভোর্স হয়ে গেছে। যখন তারা জানবে এই বাচ্চার বাবা রিমন তখন তারা মানবে না। তার চেয়ে তুমি বরং রিমন কে বলে দাও। আমি জানি বাচ্চার কথা জানার পর রিমন আমাকে ঠিকই ফিরিয়ে নিবে। তাছাড়া বাচ্চা পেটে আসলে তো ডিভোর্স ও হয় না। প্লিজ শাওন! তুমি না আমায় ভালোবাসো! আমার আর আমার সন্তানের জন্য তুমি এইটুকু করতে পারবেনা? ”
এই ভয় টাই করছিলো শাওন, খুব ভালো করেই জানতো মৌরী চলে যেতে চাইবে। কথা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলো,
__ “ হুম রিমনের কাছে ফিরিয়ে দিবো, তবে একটা শর্ত আছে। ”
__ “ সব কিছু মানতে রাজি। বলো কি করতে হবে? ”
__ “ তুমি রিমন কে জানাবে! তার প্রতিক্রিয়া আগে জানবে ! কিন্তু সম্পুর্ণ ব্যাপার এখন কাউকে জানাতে পারবেনা। সবাইকে বলবে বাচ্চার বাবা শাওন। কারণ রিমন দেশে নেই। সে দেশে আসতে ৬ মাস বা এক বছর লাগবে। এতো দিন তোমাকে এখানেই থাকতে হবে। তোমার বড় মামা তোমাকে তার বাসায় তুলবে না । আবার রিমনের সন্তান জানলে এই বাসাতেও তোমাকে রাখবেননা কেউইই।
শর্ত একটাই, আমার বাচ্চার পরিচয় এ এই বাসাতে থাকতে হবে তোমাকে। যদি তুমি রাজি হও তাহলে তোমাকে রিমনের হাতে তুলে দিবো। আর হ্যাঁ! কাল থেকে আমার ঘরেই থাকতে হবে তোমাকে। প্রয়োজন এ আমি মেঝেতে ঘুমাবো কিন্তু স্বামী স্ত্রীর অভিনয় করতে হবে সবার সামনে। ”
শাওন আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। এর বেশি সময় মৌরীর সামনে বসে থাকলে শাওনের চোখের জল সে ধরে ফেলতো। রুমে এসেই শাওনের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে শুরু করে। ছেলেদের চোখে সহজে জল আসে না। কতো টা কষ্ট পেলে তারা কাঁদে শুধু তারাই বোঝে।
মৌরীর খুব কষ্ট হচ্ছে শাওনের অবস্থা দেখে, কতটা ভালো বাসে তাকে। অথচ সে কিছুই করতে পারছেনা। সন্তান পৃথিবীতে আসবে জানলে মেয়েরা অনেক খুশি হয়। নিজের পেটে হাত দিয়ে বলে, “ কেনো আসলি পৃথিবীতে তুই। তোর মা যে ঝরে যাওয়া ফুল , কোন সুবাস নেই তার। তুই কি এই পৃথিবীতে এসে সুখ পাবি? তোর বাবা কি তোকে মেনে নিবে? জানিনারে তুই সুখ পাবি কিনা। তোর জন্য আমি সব কিছু করতে পারবো রে। শাওনের ভালোবাসা দেখলে ওকে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু তোর জন্য ওকে কষ্ট দিতেও রাজি। কিন্তু এই সমাজ কি তোকে সুস্থ ভাবে বাঁচতে দিবে? ”
মৌরী ফেসবুকে লগইন করে রিমনের আইডি আনব্লক করে,
রিমন কে ছোট্ট করে টেক্সট করে,
“ জানিনা তুমি আমায় ভালোবাসো কিনা! বিশ্বাস করো কিনা! তবুও বলবো তুমি বাবা হতে চলেছো। তুমি কি তোমার সন্তান কেও অস্বীকার করতে পারবে? জানি শাওনের সাথে বিয়ে হয়েছে । ডিভোর্স এর পরে চার মাস না হলে পরবর্তী বিয়ে বৈধ না। আর বাচ্চা পেটে আসলে তোমার সাথে আমার ডিভোর্স ও বৈধ না। আমার জন্য না হোক আমাদের সন্তানের জন্য তুমি কি কিছু করবে? ”
মৌরী সারারাত না ঘুমিয়ে রিমনের জন্য ওয়েট করতে থাকে। কখন সে রিপ্লাই দিবে এই আশায়। সে কোন দেশে আছে কেউ জানে না। তাকে জানাতে ফেসবুক ই তার ভরসা। কিন্তু রিমন কি মেনে নিবে তাকে। উত্তরের আশায় সময় যেনো ফোরাচ্ছে না।
চলবে………….
Apu Apni l
Parun o botey very good choker joley naker joley kore charechen awesome story and pleas apu sex reletad kono khotha likh ben na Story ta ta holey nosto hoiya jai pleas make story romantic and sweet and your to kindly were sorry to force you to make story you do for us much and your very sweet were sorry we didn’t care you but we forc you sorry and try the best. OK all the best ageyai Jan Apni sweet apu and I’m just 17years old so please don’t give anything that give us problems because there many who loves your story so there are many age of people so please don’t make any story that problem for us you know that some age problem and very shy things pleas take care yourself and love you apu. ???????????????