ঝরাফুল পর্ব ১০

0
3233

ঝরাফুল পর্ব ১০
লিখা : জামিয়া পারভীন তানি

রিমন পরেরদিন শাওন দের বাসায় আসে, শ্যামলী দরজা খুলে রিমন কে দেখেই দরজা লাগিয়ে ফেলার আগেই রিমন ঢুকে পড়ে বাসায়।

__ “ কি ব্যাপার শ্যালিকা, থুক্কু আপা! দরজা লাগিয়ে দাও কেনো? মেহমানদারী করবেনা বুঝি? ”

মৌরী রিমনের গলা পেয়ে ছেলেকে ঘরে রেখে তালা দিয়ে দেয়। যেনো খুলতে না পারে রিমন সেই জন্য। ততক্ষণে রিমন শাওনের ঘরের কাছে চলে এসেছে।
__ “ জানতাম বাপ বেটা দুটো ই এই সময় চাকুরী তে থাকবে, সেইজন্যেই তো আসলাম। আর তুমি কিনা এভাবে দরজা লাগিয়ে ফেলছো? ”

__ “ খবরদার আমার ছেলেকে আমার থেকে আলাদা করার চেষ্টা করবিনা, নইলে তোকে আগে মেরে ছেলেকে নিয়ে মরবো। ”

__ “ তার আগে একটু আদর খেয়ে নাও! ”

__ “ তোর এতো বড় সাহস, আমাদের বাড়িতে এসে আমার ভাইয়ের বউয়ের উপর টর্চার করিস?এখুনি বেরিয়ে যা বলছি, নইলে পুলিশ ডাকবো। ” শ্যামা রাগী কণ্ঠে বলে।

রিমন যখন শ্যামার দিকে ঘুরে মৌরী রিমনের মাথায় হাতের পাশে থাকা টর্চের বাড়ি মেরে দেয়। রিমন এক হাতে মাথা চেপে ধরে, অন্য হাত দিয়ে মৌরীর গলা টিপে ধরে। মাথা থেকে হাত সরিয়ে মৌরীর হাত থেকে চাবি নিয়ে নেয়। মৌরীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে দরজা খুলে ফেলে।

শাওনের মা ওয়াশরুমে ঢুকেছিলো, চিল্লাচিল্লি শুনে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে। ঘটনা বুঝে শাওন কে ক করে,
__ “ কি হয়েছে আম্মু? এতো হাপাচ্ছো কেনো? ”
__ “ তাড়াতাড়ি বাসায় আয়৷ রিমন এসেছে এখানে। মেয়ে দুইটারে মেরেই ফেলবে বুঝি। ”

শাওন ফোন কেটে দিয়ে, তাড়াতাড়ি করে বাইক নিয়ে বেরিয়ে আসে কলেজ থেকে।

শ্যামা মৌরীকে তুলতে গেলে দেখে মৌরীর মাথা ফেটে গিয়েছে, মৌরীর মাথা চেপে ধরে তাড়াতাড়ি। রিমন শাকিব কে নিয়ে বেরোনোর সময় শ্যামার মা বাধা দিতে গেলে উনাকে ও ফেলে দেয় রিমন।

__ “ আমার ছেলে কে ফিরিয়ে আনুন মামী! ” বলতে বলতে ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মৌরী।

শাওন বাসায় চলে আসে, মৌরীকে হসপিটালে নিয়ে যায় তাড়াতাড়ি। রক্ত বন্ধ করা হয় প্রথমে এরপর ব্যান্ডেজ করা হয়। মৌরীর জ্ঞান ফিরে আসে বিকেলে, উঠেই শাঅন কে পাশে দেখে বলে,

__ “ আমার ছেলেকে এনে দাও! আমি থাকতে পারবোনা একা একা। দয়া করে এনে দাও তুমি। ”

__ “ দিবো এনে, এখন একটু রিলাক্স থাকো প্লিজ। ”

ঘুমের ইঞ্জেকশন দেয়া হয় মৌরীকে, যতক্ষণ জেগে থাকে শাকিব শাকিব বলে বিলাপ করতে থাকে মৌরী। মৌরী ঘুমিয়ে গেলে শাওন থানায় যায়, এক বছর আগের কেশ রি ওপেন করে। রিমনের নামে নতুন কেশ করে আজকের নামে এটেম্পট টু মার্ডার এর জন্য। দুই টা কেশ ই যথেষ্ট রিমনের সরকারি চাকুরী ধুলিসাত করতে।
__ “ রিমনের বাড়ি নিয়ে চলো আমাকে, আমি যেতে চাই আমার সন্তানের কাছে। ”

জ্ঞান ফিরলেই এই কথা বলে শাওনের মাথা ধরিয়ে দিয়েছে মৌরী, এক ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয় এবার।

__ “ বলছি তো একটু ধৈর্য ধরো, তোমার ছেলে তোমার কাছেই থাকবে। এতো জেদ করছো কিসের জন্য। তোমার ছেলে তোমার ছেলে, ওকে কি আমার ছেলে বলি না আমি, আমার কি ওর জন্য খারাপ লাগছে না?”

__ “ তুমিও এভাবে বকলে! ” হুহুহু করে কেঁদে উঠে মৌরী। ”

…..

মৌরীর খারাপ অবস্থার সুযোগে শ্যামার রিপোর্ট গুলোর কথা ভুলে গিয়েছিলো শাওন। শ্যামা রিপোর্ট তুলে আনার পর পরই কান্নায় ভেঙে পড়ে শ্যামা।
অনেকবার চেষ্টা করছে সিপন কে ফোন করছে, সিপন কিছুতেই ফোন ধরছে না।
একটার পর একটা রিং বাজতে বাজতে এখন সিপনের ফোন সুইচড অফ দেখাচ্ছে৷

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে চোখ মুছে দরজা খুলে দেয় শ্যামা।
__ “ কি হয়েছে আম্মু? ”

__ “ তোর কি হয়েছে সেটা খুলে বল? ”

__ “ কিছু হয়নি তো? ”

রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়ে দেখে শ্যামা প্রেগন্যান্ট। ওর মা ওর গালে চড় মেরে বসে,

__ “ এই জন্য আমি তোকে জন্ম দিয়েছিলাম? মান সম্মান সব ডুবাবি তাই? ”

__ “ বিশ্বাস করো! আমি পাপ করিনি! ”

__ “ তাহলে প্রেগন্যান্ট হলি কিভাবে? ”

__ “ বিয়ে করেছিলাম এক বছর আগে। ” বলেই কাঁদতে শুরু করে শ্যামা.

__ “ বিয়ে করেছিলিস? কাকে? ”

__ “ বিয়ের সব কাগজ ওর কাছে আছে, এখন অস্বীকার করছে। বলছে কোন বিয়েই নাকি হয়নি। ”

__ “ কে করেছে তোর এই সর্বনাশ? ”

__ “ সিপন ”

__ “ কিহহহহহহ! তুই এই ভুল কিভাবে করলি? ”

__ “ মৌরী এই বাসাতে আসার পর সে প্রোপজ করেছিলো ।“

• “ এই শ্যামা কই যাস? ”
• “ ভার্সিটি তে যাচ্ছি। ”
• “ আজ আমার সাথে চল! কাজ আছে একটা। “
• “ কি কাজ গো! ”
• “ গেলেই দেখতে পাবি!”
এরপর একটা রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে যায় সিপন৷

• “ কি ন্যাকামি করছো, ভার্সিটি গ্যাপ দিয়ে এখানে কি করতে এনেছো? ”
• “ ভিতরে চল। ”
• “ না যাবো না, চলে যাবো। “
• “ আরে চল না, গেলেই বুঝবি কি হবে? ”

গিয়ে দেখে ভিতরে কেক রাখা আছে একটা টেবিলে, সেখানে নিয়ে যায় সিপন। শ্যামা দেখে কেকের উপর সিপন + শ্যামা লিখা আছে।
• “ এসব কি? ”
• “ ভালোবাসি তাই “
• “ কাকে? ”
• “ তোকে রে গাধী! ”
• “ খবরদার গাধী বলবে না! ”
• “ ওকে বলবোনা, তার আগে বল হবি কি আমার জীবন সাথী। ”

শ্যামা লজ্জ্বায় মুখ নিচু করে নেয়, তার মতো শ্যম বর্ণের মেয়েকে কেউ ভালোবাসে তাও আবার এভাবে প্রোপজ করছে। ভাবতে পারছেনা শ্যামা।
• “ কিরে বস, এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে তো সবাই দেখছে আমাদেরকে। ”

শ্যামা তাও বসছিলো না, তখন সিপন শ্যামার হাত ধরে হাটু গু জে বসে হাতে একটা রিং পড়িয়ে দেয়।
• “ হবে কি তুমি আমার রাজ্যের রাণী,
সারা জীবন দেখতে চাই শুধু তোমার মুখখানি। ”

শ্যামা অবাক হয়ে বলে,
• “ সত্যিই তুমি আমায় ভালোবাসো, বিশ্বাস তো হয় না! ”
• “ সত্যিই ভালোবাসি, আমি অনেক যায়গায় সিভি জমা দিয়েছি, জব টা হয়ে গেলেই তোর বাসায় বিয়ের অফার করবো। আগে তোর মত জানা দরকার। উফফ সরি, তোমার মত জানা দরকার। তুমি কি রাজি?”
• “ আমার কোন সমস্যা নেই সিপন। তুমি তো এমনিতেই অনেক ভালো। ”

__ “ সেদিনের পর সিপনের সাথে রিলেশন শুরু করি, এরপর বিয়ে করে নিই। কিন্তু আমার কাছে আর কোনই প্রমাণ নেই এই বিয়ের। ”

এতক্ষণ মায়ের সামনে সব কিছু খুলে বলে শ্যামা, মায়ের মাথায় হাত। মা মেয়েতে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা।

….

দরজায় অনবরত কলিংবেল এর আওয়াজ শুনে খুলে দেয় রিমনের আম্মা৷ দরজা খুলে চমকিয়ে গিয়েছে একেবারেই,

__ “ সিপন তুই! ”
__ “ কেনো আসতে পারিনা বুঝি! মামি জান! ”

__ “ হাহা! না মানে! ”

__ “ আমার বোনের জীবন টা নরক বানিয়ে এখানে ফুর্তি করতে বসেছেন? তা কিভাবে করতে দিতে পারি বলুন? ”

__ “ আমি তো কিছুই করি নি! ”

__ “ আপনার গুণধর ছেলে করেছে! ”

নিচে চেচামেচি দেখে রিমন নেমে আসে, সিপন কে দেখে অবাক হয়ে যায়,

__ “ হটাৎ কি মনে করে শ্যালক বাবু? ”

__ “ শাকিব কে দিয়ে দে! নইলে তোর জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। ”

__ “ খুন করবে নাকি? ”

সিপনের ইশারায় ৫ জন পুলিশ চলে আসে, অফিসার বলেন,
__ “ রিমন সাহেব, একবার মিস মৌরী সুইসাইড করতে চাওয়ার অপরাধে আপনার নামে মামলা করা আছে আপনি হয়তো ভুলে গেছেন। এখন আবার উনার সন্তান কে ডাকাতি করে নিয়ে এনেছেন। মিসেস মৌরী আহমেদ কে আবারোও হত্যা করতে চাওয়ার অপরাধে আপনার নামে ওয়ারেন্ট আছে। ”

শাওন মৌরীর পাশে থাকবে বলে সিপন এসেছে পুলিশ সাথে করে নিয়ে।

__ “ আমি আজ কোথাও যেতে পারবো না, কাল কোর্টের ডেট আছে। সময় মতো চলে আসবেন আপনারা, আমিও চলে আসবো।

__ “ শাকিব কে দিয়ে দে, ওর মায়ের কাছে। আমাকে দে আমি নিয়ে যাবো ওকে। ”

__ “ তা তো সম্ভব নয়, যা প্রমাণ করার কাল কোর্টে প্রমাণ করে নিয়ে যাবি। ”

সিপন কে বাধ্য করে রিমন বের হয়ে যাওয়ার জন্য।

ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছে রিমন,
__ “ ইসসস কেনো যে মৌরীকে ডিভোর্স দিলাম, তাহলে তোকে নিয়ে এতো ঝামেলা ই হতো না। দিবোনা তোকে ওদের কাছে, কিছুতেই দিবোনা। ”

রিমনের মা এসে বলে,
__ “ তোর ছেলে দেখতে কিন্তু তোর মতোই হবে। ”
__ “ ঠিক বলেছো।“

বাচ্চা টা অনেক কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে, নার্স কিছুতেই থামাতে পারছে না শাকিব কে।

নার্স এসে বলে,
__ “ বাচ্চার মায়ের কাছে দেওয়া লাগবে, নইলে না খেতে পেয়ে মারাই যাবে। ”

__ “ কেনো তুমি খাওয়াতে পারছো না! ”

__ “ বাচ্চা তো দুই মাসের, বুকের দুধ ছাড়া কিছুই খায় না। তোলা খাবার কিছুতেই খাচ্ছে না। জোর করে খাওয়ালে খাবার শ্বাসনালী তে চলে যাবে। তখন বাচ্চা বাঁচবে না কিছুতেই। ”

__ “ এতো কিছু জানিনা, বাচ্চাকে যেভাবে পারেন খাওয়ান। ”
….

__ “ মুখ গোমড়া করে বসে থেকোনা মৌরী, কিছু তো খেয়ে নাও। ”

__ “ ইচ্ছে করছেনা। “

__ “ প্লিজ মৌরী।”

__ “ ও কাঁদছে তো। আমি কিভাবে খায় বলো? ”

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে